তিনি এবং ও ! ২৭.

0
1828
তিনি এবং ও ! ২৭.
তিনি এবং ও ! ২৭.

তিনি এবং ও !

২৭.
অদ্রি এখন কী করছে? আমার জন্য অপেক্ষা? আমার জন্য কী কী রান্না করেছে?
হিমশীতল পানি শরীরে লেগে নিদ্র কেপে উঠলো। তার ভাবনা গুলো ভাবনায় রয়ে গেলো। পানিতে কেউ বরফ মিশিয়েছে কিনা কে জানে।
বাধ্য হয়ে তাকে গোসল করেই বের হতে হলো।
জানালার দিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে নিদ্র ভাবছে, অদ্রি এভাবে উদাসীন ভাবে তাকিয়ে কী দেখে?
আমার চোখে দেখতে পারছিনা কিন্তু অদ্রির চোখে হাজার হাজার মৃত স্বপ্নের পাল দেখে। মৃত স্বপ্নগুলো তাকে খুব কষ্ট দেয়। যদি আমি সেই কষ্টগুলোকে অনুভব করতে পারতাম। কষ্টগুলোকে তার খাঁচা থেকে বের করে দিতে পারতাম?
খাঁচার দুয়ার খোলার চেষ্টায় সে এখন এই ফাঁদে পরেছে। কী হবে কে জানে? এই কৃষ্ণ মেয়েটি তাকে বেশ জ্বালাবে। মেয়েটার কিছু একটা ক্ষমতা আছে মানে কাছাকাছি থাকলে নিজেকে অসহায় মনে হয়। মনে হয় সময় থমকে যাচ্ছে।
ক্ষমতা টমতা না, অন্যকিছু।
এই কৃষ্ণ সুন্দরী থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
অদ্রির হাতের বিরিয়ানি তো তৃপ্তি নিয়ে খেতে হবে। তবে নিমপাতা ভর্তাটা কখনওই ভুলতে পারবো না।
আর আর আর বৃষ্টির সেই রাত!
পাগল একটা মেয়ে, যখন হুট করে জড়িয়ে ধরলাম…. হার্টবিট এতো দ্রুত বাড়তে শুরু করলো অদ্রির। মনে হচ্ছিলো কেউ ঢোল পেটাচ্ছে।
অদ্রির উষ্ণ দেহের আবরণে শীতলতা কিছুটা কমেছিলো।
আরেকটু দেরি হলে হয়তোবা তার স্ট্রোকই হয়ে যেত।
অদ্রির প্রত্যেকটা স্পর্শ তার অনুভবে রয়ে গেছে।
মৌরি ধোয়া ওঠা এক কাপ চা এনে নিদ্রের ঘরের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বলল
– আকাশ দেখছেন?
নিদ্র কোনোরকম পিছনে না তাকিয়ে বলল
– তাছাড়া আর কিছুই তো দেখছি না।
– দেখার অনেক কিছুই আছে। আসলে আপনার চোখ খুঁজে পাচ্ছেনা।
– হতে পারে।
মৌরি ধীর পায়ে নিদ্রের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল
– রান্না হতে হতে অনেক দেরি। আপাতত খুদা নিবারণ করা প্রয়োজন। চা খেলে খুদা কম লাগবে।
– এখন আমি চা পান করবো না। ধন্যবাদ আপনাকে।
মৌরি ভেংচি কেটে বলল
– পান করবেনা? খেতেই হবে, এতো কষ্ট করে চা বানিয়েছি কি ফেলে দেবার জন্য নাকি?
– আপনি ফেলবেন কেনো? অন্য কেউ পান করলেই হয়।
– আপনার জন্য বানানো চা অন্য কেউই খাবে না। আপনাকেই খেতে হবে।
– দেখুন, আমি এখানে থাকতে আসিনি। আমি আমন্ত্রণ পেয়েও আসিনি। আমি একটা জরুরি কাজে এসেছি। কাজ শেষ হলেই চলে যাবো।
নিদ্রের রাগে গা কাঁপছে। তার ইচ্ছে করছে চায়ের কাপ ফেলে দিতে। কিন্তু ইচ্ছেটাকে সবসময় পূরণ করা যায়না। অন্ততপক্ষে সম্পূর্ণ অচেনা একজন মানুষের সাথে।
মৌরি মুচকি হেসে চায়ের কাপ বিছানার উপর রেখে চলে গেলো।
সুফি সাহেব ছাড়া আর কোনো অপশন তার ছিলোনা। বাধ্য হয়ে এই ফাঁদে পা দেয়া।
অদ্রির মোবাইল নাম্বার টাও নেই। এতদিন ওই বাসায় আছি কিন্তু মোবাইল নাম্বার টা নেয়া হয়নি। রশিদ চাচাকে বললে উনি কিছু একটা করতে পারেন।
নিদ্র চায়ের কাপের চা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো। তারপর চেয়ারে বসে রশিদ সাহেবের নাম্বারে কল দিলো।
রিং বেজেই যাচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করছেনা।
সেদিনকার পর তিনি খুব বেশি ভয় পেয়ে গেছেন। নাকি অসুস্থ হয়ে আছেন?
৮ বার রিং বাজার পরও যখন ফোন রিসিভ হলো না তখন নিদ্র ফোন বিছানার উপর রেখে দিলো।
খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তার মুক্তির স্বাদ নেবার ইচ্ছা জাগলো। সে কী করবে বুঝতে পারছেনা।
অদ্রি তার ওয়ারড্রব এর সব জামাকাপড় বের করে দেখছিলো রঙিন কোনো থ্রিপিচ আছে কিনা?
আজকাল তার সাদারঙ টা বেশ অসহ্যকর লাগে। অনুশোচনা বোধটা আর আগের মতোন তীব্র নেই।
ভেতরটা তার তীব্র দহনে পুড়ে ছাই হয়ে আছে।
লিলি বলল
– আপা আপনার তো সাদা ছাড়া কোনো রঙের জামাই নেই।
অদ্রি হতাশ সুরে বলল
– তাই তো। আমি না বানালে আসবে কোথা থেকে?
– আপা, ৩০ মিনিটের পথ পার হলেই নিউমার্কেট আছে। চলেন যাই, অনেক দিন নিউমার্কেট যাওয়া হয়না।
অদ্রি এর আগেও নিউমার্কেট ঘুরে এসেছে তবে নিতান্ত প্রয়োজন ছিলো বলে।বাসায় তার এমন কেউ নেই যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র কিনে তাকে সাহায্য করবে।
তাকেই বাধ্য হয়ে বাসার বাইরে বের হতে হয়।
সাদারঙ না হোক হালকা গোলাপি বা বাসন্তী রঙ বা হালকা নীল রঙের পোশাক পরিধান করা যাবে। ইসলামে এতো কঠোরতা নেই বিধবাদের নিয়ে।
বিধবা – এই মাত্র ২২ বছরে সে একজন বিধবা। ২০ বছর বয়সেই তাকে বিধবা নামক শিকলে পা বাধতে হয়েছে। পায়ে সেই শিকলের দাগ গাঢ় ভাবে লেগে আছে। অদ্রি ছাড়া কেউই তা দেখতে পায়না।
রাত ১০ দিকে সুফি সাহেব নিদ্রকে ছাদে ডেকে নিয়ে গেলেন।
ছাদে পাটি বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। দুটো বালিশ, খাবার পানি, পান, সিগারেট, চায়ের ফ্লাক্স, টোস্ট বিস্কুট সবকিছু সুন্দর ভাবে সাজানো। পাটিতে বসে সুফি সাহেব বললেন – আসলে আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাচ্ছিলাম না। তাছাড়া উপায়ও নেই। সবাই এখন ঘুম, আমি শান্তিতে যা জানতে চাইবেন বলবো।
নিদ্র বালিশ কোলে নিয়ে খুব ক্ষীণস্বরে বলল
– না না আমার আবার কীসের কষ্ট? ভালো আছি তো।
দুপুরের খাবার বিকালে টেবিলে খাবার সময় সেই কৃষ্ণ সুন্দরী তাকে কম হেনস্তা করেনি। বহুত জ্বালিয়েছে। চা ফেলে দিয়েছি বুঝতে পেরে তো আরো বেশি রকম করেছে। এর থেকে অদ্রির নিমপাতা ভর্তাও অনেক ভালো। অন্ততপক্ষে শান্তিতে খেতে পারা যায়।
সুফি সাহেব কিছুক্ষণ কেশে গলা পরিষ্কার করে বললেন
– আমার শালী আপনাকে খুব জ্বালাতন করছে আমি বুঝতে পারছি। আসলে আপনি অনেক সুন্দর আর সাদামাটা মানুষ তো তাই আরকি তার…. যাইহোক কিছু মনে করবেন না।
সিগারেট হাতে নিয়ে নিদ্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
– লাগবে?
নিদ্র বলল
– না, আমার এসবের অভ্যেস নেই।
– আমার আবার দারুণ অভ্যেস। আমি এখন অনেক গুলো খাবো। ২-৩ প্যাকেট ও হতে পারে। আপনাকে কষ্ট করে সহ্য করতে হবে।
– না না সমস্যা নেই।
– চা খাবেন?
– আমি আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করবো। আপনি তার সঠিক উত্তর দিবেন। কোনো কিছু গোপন করবেন না।
– আচ্ছা করুন। না থাক। আমি আদি অন্ত বলি। তার মধ্যে থেকে আপনার উত্তর খুঁজে নিবেন। ওই প্রশ্ন ট্রশ্ন আমার সহ্য হয়না।
– আচ্ছা বলুন।
– ইখলাস সাহেব আমার বন্ধু ছিলেন না। তিনি আমার থেকে প্রায় ১০ বছরের বড়। আমার বাবার সাথে তার পার্টনারশিপ ছিলো। বাবা মারা যাওয়ার ঠিক আগে আমাকে বলে গেলেন, যেমনেই হোক পার্টনারশিপ টা ভেঙে ফেলতে। মানে আলাদা হতে। আমি তখন ব্যাপার টা গুরুত্ব দেইনি। মৃত্যু শয্যায় কী না কী বলতেছে, মাথা ঠিক আছে নাকি?
নিদ্র বলল
– কেনো বলেছিলো ব্যাপার টা জেনেছিলেন?
– আবার জিগায়। চোখের সামনে দেখেছি।ঠাণ্ডা মাথার শয়তান যদি না দেখে থাকেন তাহলে ওনাকে দেখলেই দেখা হয়ে যেতো। আর গুণাগুণ জানা না থাকলে ওনার গুণাগুণ জানলেই যথেষ্ট।

নিদ্র খুব সাবধানে তার মোবাইলের রেকর্ডিং সিস্টেম অন করলো। হিউজ পরিমাণ জায়গা আছে। সারারাত ধরে বললেও জায়গা ফুল হবেনা।

সুফি সাহেব সিগারেটের ধোয়া অন্য দিকে ছেড়ে দিয়ে বললেন
– শুনুন, একবার আমি অফিসে গিয়েছি জরুরী কাজে। ওনার রুমে যদি ঢুকতে পারি পুরো রুম ধোয়ায় পরিপূর্ণ। আর ধোয়া দিয়ে চকলেটের ঘ্রাণ। বুঝতেই পারছেন ইয়াবা মানে বাবা সেবন করছেন।
আমার সিগারেটের নেশা আছে তাছাড়া আর কোনো ধরনের কোনো নেশা নেই।

চলবে……!

#Maria_kabir