তিনি এবং ও ! ২৫.

0
1967
তিনি এবং ও ! ২৫.
তিনি এবং ও ! ২৫.

তিনি এবং ও !

২৫.
– আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই!
নিদ্র বেশ ভারী কণ্ঠে বলল।
অদ্রি অবজ্ঞার স্বরে বলল
– আমাকে?
– জি আপনাকে।

ইখলাস সাহেবের ( অদ্রির মৃত স্বামী) সেই বন্ধুর নাম, ঠিকানা অনেক কষ্টে অদ্রির কাছ থেকে পাওয়া গেছে। নিদ্র রাত ২ টা পর্যন্ত পরিকল্পনা করেছে কীভাবে কী করা যায়। অদ্রি তার স্বামীকে এতোটাই বিশ্বাস করেন যে, প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছাড়া তার তিনির কুকর্ম বিশ্বাস করতে চাইবে না। প্রত্যক্ষ প্রমাণ হলেও খুব জোড়ালো প্রমাণ হতে হবে। তা না হলে বিষয়টা ভিন্ন দিকে মোড় নিবে।
এমনিতেই সন্ধার কথা কাটাকাটিতে অদ্রি বেশ বিরক্ত হয়েছেন তার প্রতি।
ইখলাস সাহেবের বন্ধুর নামটা শুনলে মনে হয়, মানুষ টা খুবই ভালো। অবশ্য ইখলাস নামটাও তো সেরকমই কিন্তু যতটুকু তথ্য যোগাড় হয়েছে তাতে তাকে ভালো মানুষ বলা চলেনা।
মানুষের কতো রূপ হতে পারে সেটা চিন্তার অতীত।
আর হিসাবের এই খাতাটা অদ্রিকেই দিয়ে যেতে হবে, নিদ্র ভেবে রেখেছে।
মেয়েটা কে সাহায্য করতে পারলে শান্তি পাওয়া যাবে।
নিদ্র ভাবতে ভাবতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। স্বপ্নহীন ঘুম ভাঙলো অদ্রির ডাকে।
বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে নিজেকে সামলে নিলো। তারপর বিছানার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে থাকা জিনিষ পত্রগুলো তার লাগেজে রেখে দিলো। চোখ মুছতে মুছতে দরজা খুলে দিলো।
অদ্রির চোখ এখনো লাল তবে গতদিনের তুলনায় কিছুটা কম।
অদ্রি খাবারের ট্রে নিয়ে ছোট্ট টেবিলের উপর রেখে আবার চলে গেলো।
নিদ্র চাচ্ছিলো অদ্রি তার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করুক। কেনো যেন তার সাথে গল্প করতে নিদ্রের খুব ভালোলাগে। কেনো ভালোলাগে সেটা নিদ্রের জানা নেই। আর জানার ইচ্ছেও নেই।
এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে যাদের সাথে কোনো কারণ ছাড়াই কথা বলতে ভালো লাগে। অদ্রি, নিদ্রের সেই কিছু মানুষের একজন।
নিদ্র তাকে ডাকলেও হয়তোবা অদ্রি আসতো। আবার নাও আসতে পারে। না আসার কারণ অনেক আছে। তার তিনিকে নিয়ে যে নিদ্র অপ্রীতিকর কথা বলেছে। অপ্রীতিকর হলেও বাস্তব, অতিবাস্তব।
কিছু মানুষ থাকবেই যারা সহজে বাস্তবতাকে মেনে নিতে চায়না বা অন্ধ, বধিরের মতো বসে থাকে।
এদেরকে বোঝানোর জন্য চোখ টেনে খুলতে হয় আর কানের টিমপেনিক পর্দায় বৃহৎ কম্পনের সৃষ্টি করতে হয়।
অদ্রির জন্য তাকে দুটো পদ্ধতি এপ্লাই করতে হবে।
দাঁত ব্রাশ করার পর নিদ্র কিছুটা শান্তি ফিরে পেলো। দাঁতে মনে হচ্ছিলো মণ খানিক ময়লা জমে ছিলো। প্রতিদিন ব্রাশ না করার অভ্যেস তার নেই। তারপরও সেই নিমপাতা খাবার পর থেকেই মনে হচ্ছিলো তার।
শান্তভাবে নাস্তা খাবার পর তাড়াতাড়ি বাসার পোশাক ছেড়ে খুবই মার্জিত পোশাক পড়লো।
এমন ভদ্র ব্যবহার করতে হবে যাতে সুফি সাহেব মুগ্ধ হয়ে যান। ইখলাস সাহেব আর সুফি সাহেব নামে প্রচুর মিল আছে।
অদ্র যেভাবে বলেছে তাতে নিদ্রের কিছু বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা হয়েছে সুফি সাহেবের ব্যাপারে।
অদ্রির তিনির একমাত্র বিশ্বস্ত বন্ধু আর ব্যাবসার পার্টনার। খুবই খোলামেলা মনের মানুষ। প্রচুর কথা বলেন আর বিয়ে বিদ্বেষী। বাগানপ্রিয় মানুষ।
নিদ্র তার প্রয়োজনীয় জিনিষ ছোট্ট কাধ ব্যাগে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পরলো।
চোর যেভাবে চুরি করার পর বাসা থেকে বের হয়ে আসে নিদ্রও ঠিক সেভাবেই বের হলো। সে কোনো চুরি করেনি কিন্তু যাওয়ার পথে অদ্রি বা লিলি কেউ থাকলে ঝামেলা হতে পারে।আবার নাও হতে পারে।
অদ্রির ঠিকানা অনুযায়ী তাকে অন্ততপক্ষে ৩ ঘণ্টার জার্নি করতে হবে।
তারপর পায়ে হেটে ৩০ মিনিটের পথ আর কপাল ভালো থাকলে ভ্যানগাড়ি পেয়েও যেতে পারে।
কারেক্ট ৩.৩০ মিনিট পর নিদ্র তার গন্তব্যস্থান এ পৌঁছালো। বিশাল উঁচু গেটের সাথে নিচু পাঁচিল। খুবই উদ্ভট আর
হাস্যকর হাস্যকর। এতো উঁচু গেট প্রথমে কেউ দেখলে ভাববে বাইরের লোকজন থেকে ভেতরকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে চাচ্ছেন বাড়ির মালিক। কিন্তু পাঁচিল এর দিকে তাকালে উল্টো চিন্তা মাথায় আসবে। বাড়ির মালিক চাচ্ছেন, আপনি বাড়িতে ঢুকে খুব আনন্দের সহীত ঘুরতে পারেন।
গেট এর পাশে কলিংবেল এ কয়েকবার বাজানোর পরও কেউই গেট খুললো না। নিদ্র আবারো কলিংবেল এ চাপ দিলো প্রায় সাথেসাথে ৩০-৩৫ বছরের একজন সুঠাম দেহের পুরুষ একরাশ বিরক্তি নিয়ে গেট খুলে ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল
– কে ভাই আপনি? এতোবার কেউ কলিংবেল বাজায়?
নিদ্র বলল
– আমি ভাবলাম কেউ হয়তোবা শুনছেনা তাই।
– বলেন কী ভাই? এই বিখ্যাত বেল বাজবে না জোড়ে? আমার ইলেকট্রন মানে আমার স্ত্রী পুরো ১ মাস ধরে প্রায় ৫০০ টা দোকানের বারোটা বাজিয়ে এটাকে কিনেছে। এটাতে শব্দ না হয়ে কই যাবে বলেন ভাই?
নিদ্র ৬০% শিওর ইনিই সুফি সাহেব কিন্তু উনি তো বিয়ে বিদ্বেষী। তাহলে স্ত্রীর কথা বলেছেন কেনো?
লোকটি আবারো বলল
– আপনি কে? একজন অপরিচিত দের সাথে এভাবে বেশিক্ষণ কথা বলা ঠিক না। দেখা গেলো আপনি আমাকে ক্লোরোফম দিয়ে বেহুঁশ করে আমার বাগানের গাছ চুরি করলেন। তখন কী হবে?
নিদ্র খুব কষ্টে হাসি চাপিয়ে রাখলো কিন্তু সে শেষ পর্যন্ত হেসেই ফেলল।
লোকটি ভ্রু আরো বেশি কুঞ্চিত করে বললেন
– হাসেন ক্যান মিয়াঁ?
নিদ্র ৯০% শিওর যে ইনিই সুফি সাহেব। ১০% তো বাকিই রয়ে গেলো।
নিদ্র বিনয়ী স্বরে বলল
– আমি সুফি সাহেবের সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
লোকটি মৃদু হেসে বললেন
– আমিই আপনার কাঙ্ক্ষিত সুফি সাহেব। বলুন কী বলবেন?
– আমি আসলে অদ্রির বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
সুফি সাহেবের হাস্যোজ্জ্বল মুখ গভীর বিষাদে ছেয়ে গেলো।
আপনি বাড়ির মধ্যে আসুন সুফি সাহেব নিদ্রকে বললেন।

চলবে…..!

#Maria_kabir