তিনি এবং ও !
২৪.
– আপনার চোখ এরকম লাল কেনো?
নিদ্র চায়ের কাপ ট্রের উপর রেখে বলল।
অদ্রি উত্তর দিবে কি দিবে না সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা। উত্তর টা জানার পর সে বিশ্বাস করবেনা। এরকম আজগুবি স্বপ্ন কেউ দেখে নাকি কখনো?
সরাসরি পাগল না বললেও মনে মনে বলতেও পারে।
নিদ্র আবার প্রশ্ন করলো
– আপনি অনেক অসুস্থ মনে হচ্ছে এবং চিন্তিত। যদি বাইরের কাউকে বলার মতো না হলে বলতে হবে না।
আসলে, প্রথম যেদিন আপনাকে দেখলাম সেদিনও আপনার চোখ এরকম ছিলো। আর বেশ বিষণ্ণ ছিলেন। কারণ টা জানার ইচ্ছা সেদিন থেকেই।
অদ্রি মৃদুস্বরে বলল
– আপনি গবেষণা করে বের করুন।
নিদ্র দাঁত বের করে হেসে বলল
– আমার মাথায় তো জট নেই যে, আপনার মনের খবর জানতে পারবো। আর থাকলেও মেয়েদের মন তো পানির মতো। কখনো এসিড হিসেবে আচরণ করে, কখনো ক্ষার হিসেবে আবার কখনো নিরপেক্ষ আচরণ করে। এখন আমি তো এতো মহাজ্ঞানী নই যে, এই তিন অবস্থা বুঝতে পারবো।
– আপনি অনেক বেশি কথা বলেন। প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা বেশি বলেন।
– জানি তো। আসলে সামনের জন তো প্রয়োজনেই কথা বলেনা তাই আমি…..
অদ্রি ট্রে নিয়ে চলে গেলো। অদ্রির চলে যাওয়াটা নিদ্র খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।
প্রতিদিনের মতো আজকের হাটায় অনেক পার্থক্য। আজকে কেমন যেন পা টিপে টিপে হাটছে। প্রত্যেকটা পদক্ষেপ খুব সাবধানে ফেলছে।
কী এমন ঘটেছে? মৃত স্বামীর কথা মনে পড়েছে? মনে পড়লেও এরকম হবে কেনো?
নিদ্রের মাথাধরা শুরু হয়ে গেলো। ক্ষুদ্র এই মস্তিষ্কে এতো প্রশ্ন রাখা যায় নাকি? উত্তর ও পাওয়া যাচ্ছেনা।
কী যে অবস্থা!
নিদ্রের এক মুহূর্ত এর জন্য মনে হলো, এখানে আসাটা ঠিক হয়নি। শুধুশুধু ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া।
পরক্ষণে মনে হলো, না ঝামেলা না। একটি সাদা ফুল কে তপ্ত মরুভূমির বালির মাঝে পরে আছে। তপ্ত বালির স্পর্শে ফুলের পাপড়ি গুলো উমম পাপড়িগুলো…… ধ্যাৎ মনে পড়ছে না।
রাতে খাবার টেবিলে নিদ্র অবাক থেকে অবাক হচ্ছে।
পুরো টেবিল জুড়ে বিভিন্ন ভর্তা। ২-৩ টা বাদে একটারও নাম তার জানা নেই।
নিদ্রের দিকে ছোট্ট বাটি এগিয়ে দিয়ে অদ্রি বলল
– এটা নিমপাতা ভর্তা। আগে খান, ভাত ঠাণ্ডা হয়ে গেলে স্বাদ পাবেন না।
– মানে, আমি তো জানতাম এটা খুব তিতা।
– আপনার জানাটা সঠিক।
– তাহলে খাবো যে……আমার তো তিতা খাওয়ার অভ্যেস নেই।
– আপনি বাঙালি খাবার খেতে চেয়েছিলেন।
– কিন্তু……
জানালার ধারে অদ্রি দাঁড়িয়ে কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে ধীরেধীরে বলতে শুরু করলো
– একটা ভয়ানক স্বপ্ন। আমার পিছু ছাড়েনা।
নিদ্র বলল
– ২ বছর যাবত তাই তো?
– হ্যা।
অদ্রি তার স্বপ্নের সবটুকু নিদ্রকে জানালো।
নিদ্র বলল
– আমি একটা তত্ত্ব পেয়েছি আপনার স্বপ্নবিষয়ক।
– কীরকম শুনি?
– আপনার বর এর পোস্টমর্টেম হয়েছিলো তাই তো?
– হ্যা, অপমৃত্যু হয়েছিলো তাই।
– আপনি এই পোস্টমর্টেম নিয়ে অনেক গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন। আপনার বরের আত্মহত্যার জন্য নিজেকে দায়ী করেন। আপনার চিন্তাটা এতোটাই গভীরে চলে গিয়েছে যে, পোস্টমর্টেম থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা ধাপের জীবন্ত অনুভূতি আপনি অনুভব করতে পারছেন।
নিজেকে দায়ী করা বন্ধ করুন। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন। এরকম অস্বাভাবিক জীবন আর কতো দিন?
অদ্রি বলল
– আমিই দায়ি।
– ভুল আপনি অদ্রি সম্পূর্ণ ভুল ভেবে বসে আছেন।
চলবে…….!