তিনি এবং ও ! ২৩.

0
1935
তিনি এবং ও ! ২৩.
তিনি এবং ও ! ২৩.

তিনি এবং ও !

২৩.

পড়ন্ত বিকাল বেলায় অদ্রির মনে পড়লো রান্না করতে হবে। অবশ্য লিলি করে রেখেছে কিন্তু নিদ্র তার রান্না খেতে চেয়েছে।
গত দুই বছরের অভ্যেস কে ত্যাগ করে অদ্রি তার ঘর থেকে বের হলো।
সন্ধ্যের দিকে নিদ্র তার দুহাত ভরে সাদা গোলাপ নিয়ে বাসায় ফিরলো।
অদ্রি রান্নাঘরে শুঁটকিমাছ ভর্তা করছিলো।
নিদ্র বাসার মধ্যে প্রবেশ করার পর থেকে কেমন যেন পঁচা একটা গন্ধ তার নাকে আসছে। সে কোনোভাবেই গন্ধের উৎস খুঁজে পাচ্ছেনা।
রশিদ সাহেব সরাসরি তার বাসার দিকে চলে গেছেন।
নিদ্র তাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত যদি পা ভেঙে থাকে তাহলে একা একাই তাকে বের হতে হবে। একা বের হওয়াটা রিস্কি বহুত রিস্কি। আবারো যদি কুকুর তাকে নর্দমায় ফেলে ডুবিয়ে রাখে।
ফুলগুলো অদ্রির হাতে দিলেই ভালো হতো।
তার অনেক হিসেব এখনো বাকি। একটা গল্প তার মাথায় আছে। গল্পে কিছু মিসিং আছে। দুইয়ে দুইয়ে চার হচ্ছে না তিন হচ্ছে। কোনোভাবেই মিলছেনা। আজকের জমা শব্দে কিছুটা ঘাটতি কমলেও পুরোটা কমবে না।
ঘরে এসে নিদ্র ফুলগুলো বিছানার উপর রেখে সংগ্রহীত জিনিষ গুলো তার ব্যাগে রেখে দিলো।
সারাদিনের ক্লান্তিটা গোসল করে কিছুটা কমাতে হবে।
অদ্রি তাকে মিথ্যে বলেনি, কেউ মিথ্যে বললে খুব সহজে নিদ্র বুঝতে পারে। আর গল্পে যে মিসিং ছিলো, সেটা অদ্রি ইচ্ছে করেই করেছে। মিথ্যে সে বলতে চায়না, তাই এড়িয়ে গেছে। কিন্তু বলতে সমস্যা টা কই?
তবে অদ্রির তিনি মানুষ টা তেমন ভালো ছিলেননা। এলাকার মানুষ জন তার উপর বেশ বিরক্ত। তার বাড়ির আশেপাশেই কেউ যেতে চায়না।
কিন্তু তবুও রয়ে যায়। বৃদ্ধ কাজের লোক, তিনির বন্ধু আর অদ্রির পরিবার এদের সাথে কথা না বললে চার আর হবেনা।
মেয়েটার কোনো খারাপ দিক সে এখনো খুঁজে পায়নি। দুজন লোকের একজনও অদ্রি সম্পর্কিত তেমন কিছুই বলেনি। যদি থাকতো তাহলে অবশ্যই বলতো।
থানা থেকে কিছু তথ্য পেয়েছে তবে পুরোটা জানতে হলে ঘুষ প্রদান না করে উপায় নেই।
লিলি অদ্রিকে এসে জানালো
– ভাইজান আইছে আপামনি। সে তার ঘরে গ্যাছে।
অদ্রি হাত ধুয়ে চুলায় চায়ের পানি দিতে দিতে বলল
– তোর ভাইজান কই?
– বললামই তো ঘরে।
– মোবাইল টা নিয়ে আয় তো। বাড়িঘর নোংরা হয়ে আছে দুই বেগমের খোজ নেই। মাস হলে টাকা নেবার বেলায় ঠিকই ছুটে আসবে । আমার দ্বারা আর হচ্ছেনা।
খাবার টেবিলে গুছিয়ে দুকাপ চা ট্রে তে নিয়ে নিদ্রে ঘরের দিকে ধীর পায়ে এগোতে লাগলো। পুরো শরীর তার ব্যথা তারপরও সে ব্যাপার টা ভুলে থাকতে চাচ্ছে কিন্তু ব্যথা তাকে ভুলতে দিতে চায়না।
এভাবে তো আর থাকা যায়না তাই সে চেষ্টা করছে কাটিয়ে ওঠার।
ঘরে ঢুকে বিছানার উপর ট্রে রাখতে গিয়ে ফুলেরতোড়ার দিকে চোখ গেলো তার।
মেয়ে আর বাচ্চা এই দুটো জাত ফুল খুব পছন্দ করে। যারা খুব সাদামাটা তারাই সাদারঙ এর ফুল বেশি পছন্দ করে।
ফুলগুলো কি তার জন্য নাকি অন্য কারোর জন্য অদ্রি জানেনা। মন বলছে তার জন্য কিন্তু সেই মনই আবার বলছে না, তোর জন্য না।
কী আজব ! একটাই মন ক্ষুদ্র সময়ের ব্যবধানে ভিন্ন দুটো কথা বললো। সময়ের ব্যবধান আরেকটু বেশি হলে হয়তোবা এই সংখ্যাটাও বৃদ্ধি পেতো।
মাত্র ২ সপ্তাহ আগেও তার একই অবস্থা হয়েছিলো। সে ঘরে নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছিলো।
আজও একই স্বপ্ন, একই অনুভূতি, একই ব্যথা, একই মনের অবস্থা কিন্তু কিন্তু সে স্বাভাবিক ভাবেই আছে।
কারণ টা একটা শব্দ – নিদ্র।
হাসিখুশি সরল মনের মানুষ টার জন্য তার ক্ষুদ্র সময়ে কতোটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে।
নিদ্র গোসল করে বের হয়ে দেখলো, অদ্রি তার বিছানার উপর উবু হয়ে বসে ফুল দেখছে। চোখের পলক পরছে না।
নিদ্র আনমনেই নিঃশব্দে হাসলো।
নিদ্র একটু জোড়েই বলল
– চায়ের কাপটা নিতে পারি ম্যাডাম?
অদ্রির চিন্তায় ছেদ পরলো। সে কিছুটা অপ্রস্তুত ছিলো। ঘোমটা ভালো ভাবে ঠিক করে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল
– আপনার জন্যই আনা।
– দুকাপ চা আমার জন্য? আমার থেকে তো আপনাকেই বেশি ক্লান্ত লাগছে।
অদ্রি নিদ্রের দিকে তাকালো, নিদ্র ঠিক সেই প্রথম দিনের মতো ভয় পেলো।
অদ্রির চোখ লাল টকটক আর ফুলে আছে।
নিদ্র নিজেকে সামলে নিয়ে চায়ের কাপে ছোট্ট করে চুমুক দিলো।
অদ্রির হাতের রান্না যতোটা ভালো চা ঠিক তার চারগুণ খারাপ।
অদ্রি নীরবতা ভেঙে বলল
– আপনি সারাদিন কই ছিলেন?
– ওই একটু গবেষণা করতে বের হয়ে ছিলাম।
– আপনি এতো গবেষণা কেনো করেন?
– আপনার হাতের চা কিন্তু তেমন ভালো হয়না।
– তাহলে খাচ্ছেন কেনো?
– কই খাচ্ছি না তো? পান করছি!
কথাটা বলে নিদ্র চায়ের কাপে লম্বা এক চুমুক দিলো। অদ্রি নিদ্রের কথায় উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলো।

চলবে……!

#Maria_kabir