তিনি এবং ও ! ২২

0
1840
তিনি এবং ও ! ২২
তিনি এবং ও ! ২২

তিনি এবং ও !

২২.
বাড়ির গেটের সামনে ‘ ই লাস ভবন ‘ লিখা। নিদ্র হিসাব মিলিয়ে নিলো খ টা কোনো কারণে গায়েব হয়েছে। বৃদ্ধ গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে বলল
– জোয়ান আছো বুঝলাম কিন্তু দাদাভাই একটু সাবধানে। আর দাদাভাই সন্ধ্যা যেন না হয়।
নিদ্র ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। বৃদ্ধ চলে গেলো।
রশিদ সাহেব খুব ঘামতে শুরু করেছেন। নিদ্র গেট খুলে ঢুকতে যাবে তখন রশিদ সাহেব হাত টেনে ধরে বললেন
– ছোটোবেলায় দাদীর কাছে রূপকথায় এরকম ভূতের বাড়ির কথা শুনেছি।
নিদ্র হাসতে হাসতে বলল
– চাচা এটা বাস্তব।
গেট থেকে সরু একটা রাস্তা বাড়ির মূল ফটকের দিকে চলে গেছে।
সরু পথটা শ্যাওলা পরে পিছলা হয়ে আছে। নিদ্র খুব সাবধানে পা ফেলে ফেলে যাচ্ছিলো। রশিদ সাহেব নিদ্রের পিছন পিছন বাড়ির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটছেন। এই বাড়িতে মাকড়শারজাল এতো পরিমাণ হয়েছে যে, যে কেউই বুঝতে পারবে এখানে অনেকদিন যাবত কেউ এখানে বসবাস করেনা।
ভাবতে ভাবতে আর দেখতে দেখতে রশিদ সাহেব খুব ভালোভাবে আছাড় খেলেন। নিদ্র শুনতে পেলো ধুপ করে একটা শব্দ। পেছনে তাকিয়ে নিদ্র হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছিলো না। হাসি চাপিয়ে রেখে রশিদ সাহেবকে টেনে তুললেন।

অদ্রি ফুলগুলো ফুলদানিতে রেখে পানি দিচ্ছিলো তখন লিলি এসে জানালো
– রঙিন ভাইজান কোথায় নেই।
অদ্রি ফুলগুলোকে ঠিক করতে করতে বলল
– সকালের খাবার খাওয়া হয়েছে?
– নাহ।
– রান্না করেছিস?
– হ্যা। টেবিলে রাখবো?
– রাখ, আমি আসছি।
দুপুরে রান্না শেষ করে অদ্রির খুব ক্লান্ত লাগছিলো। কোনোরকম গোসল করে ঘুমিয়ে পরলো ।
ঘুমের মধ্যে আবারো সেই বিশ্রী স্বপ্নটা সে দেখলো। মাঝে কিছুদিন এই স্বপ্ন তার পিছু ছেড়েছিলো কিন্তু সেটা তার ভুল ধারণা ছিলো। সে বারবার এই স্বপ্ন থেকে নিজেকে মুক্তি করতে কিন্তু পারেনি।
স্বপ্নের মধ্যেই সে কাঁদতে শুরু করে এবং কাঁদতে কাঁদতেই তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম আর আসেনা। নিদ্রাহীন ভাবে তাকে এর আগে ৩ দিনও কাটাতে হয়েছে। সে জানে এবার তাকে কতদিন কাটাতে হবে।
আচ্ছা, কোনো উপায় কি নেই? কেউ কি নেই এই শাস্তি থেকে তাকে মুক্তি দিবে?
কেউ একজন তাকে গলায়দড়ি দিয়ে বেধে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেয়। কী অসহ্য যন্ত্রণা কষ্ট। হাত পা ছুটাছুটি করে বাচার জন্য কিন্তু পারেনা। একসময় তার আর শক্তি থাকেনা হাত পা ছুটাছুটি করার। এমনকি নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। একসময় তার মৃত্যু হয়। কিন্তু তার অনুভূতি থাকে। কয়েকজন অচেনা মানুষ এসে তার দেহ নামিয়ে লাশকাটা ঘরে নিয়ে যায়।
এবং তার পোস্টমর্টেম করতে শুরু করে। ধারালো ব্লেডের প্রত্যেকটা টানে তার শরীর ব্যথ্যায় কুঁকড়ে উঠে।
একসময় কাটাছেড়া শেষ হলে ময়লা পাটি দিয়ে তাকে মুড়িয়ে ঘরের এক কোণায় ফেলে রাখে। বড় বড় সাদা ইঁদুর তার দেহকে ঠুকরে ঠুকরে খেতে থাকে।
কী অসহ্য ব্যথা! কী যন্ত্রণা! সে আজ ২ বছর যাবত সহ্য করেই যাচ্ছে।
এরকম হবার ১ সপ্তাহ পর্যন্ত তার পুরো শরীরে পানি পরলেও ব্যথা অনুভব হয়।
নিদ্র পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রত্যেকটা জিনিষ সে দেখছে।
মাঝেমধ্যে কিছু জিনিষ তার প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখছে।
রশিদ সাহেব ভাঙা চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছেন।
দুপুরের দিকে নিদ্রের কাজ শেষ হলো। রশিদ সাহেবকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এলো।
রশিদ সাহেব পায়ে বেশ ব্যথা পেয়েছেন। সে আশংকা করছেন,পায়ের মোটা হাড়টা ভেঙেছে জোড়ালো ভাবে।
নিদ্র বোঝানোর চেষ্টা করছে, ভাঙলে আপনি খুঁড়িয়েও হাটতে পারবেন না।
রশিদ সাহেব বললেন – বাবা ভুতুড়ে বাড়ি থেকে পালানোর জন্যই ভাঙা পা নিয়েই খোঁড়াচ্ছি।
অদ্রি কাঁদতে কাঁদতে ঘুম থেকে উঠে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো। হালকা বাতাস তার শরীরে আলতোভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ ধারালো ছুড়ি দিয়ে তাকে আঘাত করছে।
তার চোখ দিয়ে পানি অঝোর ধারায় পরতে শুরু করছে।
মুছে দিবে কে? কেউই নেই, নেই!

চলবে…….!

#Maria_kabir