তিনি এবং ও!
২১.
নিদ্রের ঘরের টেবিলের উপর পরে থাকা সাদা গোলাপের তোড়া আর তার পাশে ছোট্ট চিরকুট দেখে বেশ বিরক্ত হলো। মাত্র ২ দিন হয়েছে নিদ্রের জ্বর সেরেছে আর আজকেই সে আবার ঘুরতে বের হয়েছে। অদ্রি অনিচ্ছাসত্ত্বেও চিরকুট হাতে নিয়ে ভাজ খুলে পড়তে শুরু করলো। বড়ো বড়ো করে লিখা
– অদ্রি সাদা ফুল গুলোর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন। মন শান্ত হবে। রাগ জমিয়ে রাখবেন না। আমি এবার একা নই, রশিদ চাচা আছেন।
বিঃ দ্রঃ বাঙালী খাবার রান্না করে রাখবেন। একসাথে রাতে খাবার খাবো।
অদ্রি চিরকুট ওড়নার সাথে বেধে রাখলো। ফুলগুলো হাতে নিয়ে তার ঘরে চলে গেলো।
রশিদ সাহেব কিছুই বুঝতে পারছেন না, নিদ্র তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। রশিদ সাহেব নিদ্রকে জিজ্ঞেস করলেন
– বাবা, আমরা কই যাইতেছি?
নিদ্র বলল
– চাচা এই বার দিয়ে আপনি ১১ বার একই প্রশ্ন করলেন। আর আমিও ১১ বার উত্তর দিলাম, পরে বলবো। আমি আপনাকে মেরে ফেলবো না।
রশিদ সাহেব বললেন
– ইয়ে মানে আশেপাশে তেমন কিছুই চিনি না তাই একটু চিন্তিত।
– চাচা না চিনলেও সমস্যা নেই। এখানকার ওসি বাবার চেনা। তার সাথে আমি কথা বলেই এসেছি। হারিয়ে গেলে একটা ফোনকল ব্যাস।
– ওর আবার ওসি ফ্রেন্ড কীভাবে হলো?
– আপনি রশিদ চাচা চুপ করেননা? প্লিজ?
– বাবা খুব খিদে পেয়েছে!
– চাচা ৩০ মিনিট হলো আপনি ৫ টা পরোটা আর ২ টা ডিম ভাজা খেয়েছেন।
– আসলে বাবা ভয় লাগলে আমার খুদা লাগে বারবার।
বাস থেকে নেমে নিদ্র একজন লোককে ডেকে জিজ্ঞেস করলো
– এখানে ‘ ইখলাস ভবন ‘ টা কই?
প্রশ্নটা শুনে লোকটার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। আমতাআমতা করে বলল
– ওখানে কী কাজ?
নিদ্র হেসে বলল
– ট্যুরিস্ট তো বুঝেনই।
লোকটা চটে গিয়ে বলল
– অতো হাইসেন না আর সাহস কম দেখান। ওই বাড়ি আর বাড়ি নাই।
রশিদ সাহেব নিদ্রের হাতে চিমটি কেটে কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন কিন্তু নিদ্র সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে লোকটিকে বলল
– বাড়ির কী হয়েছে? বললে উপকার হতো।
– শুনেন, বহুত খারাপ একটা মানুষ গলায়দড়ি দিয়ে মরছিলো। ওই বাড়ি এখন আছর হইয়া আছে। কেউ ভুলে ওই বাসায় পা দেয়না।
– ওনার আত্মীয় স্বজন ছিলোনা?
– নাহ, আমি তো শুনিনি কোনোদিন । বউ ছিলো তাও ১ সপ্তাহ এর মাথায় কোথায় যেন চলে গেলো।
– সন্ত্রাসের ভয়ে?
– নাহ, এইখানে আবার বিধবাকে কে জ্বালাবে?
– যুবতী মেয়েদের জ্বালায় না?
– নাহ, বখাইটা পোলাপান আছে কিন্তু মাইয়াগো জ্বালাতন করেনা।
– বাড়িটা একটু দেখিয়ে দিবেন?
– আমি ও বাড়ির আশেপাশেই যাবোনা।
লোকটা দ্রুত পা চালিয়ে চলে গেলো। নিদ্র পিচঢালা পথের কিনার ধরে হাটতে শুরু করলো। বেশ ব্যস্ত এলাকা, নতুন দুজন মানুষ এভাবে বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার দিকে কেউ ভুলেও ফিরে তাকাচ্ছেনা।
এদিকে রশিদ সাহেবের খুদা লেগেছে বিশ্রী ভাবে।
অনেকক্ষণ হাটার পর একটা চায়ের দোকান দেখে নিদ্র সেখানে রশিদ সাহেবকে বসিয়ে দিয়ে বললেন
– আপনার যদি ইচ্ছে হয় তাহলে চায়ের দোকানটাকেই খেয়ে ফেলতে পারেন।
– আমি কি হাঙ্গর মাছ বাবা?
– নাহ, আপনি যেভাবে খাবো খাবো করছিলেন তাতে তো মনে হচ্ছিলো এই চায়ের দোকানটাও কম হয়ে যাবে।
তিন কাপ চা আর ৫ টুকরা পাউরুটি খাওয়ার পর রশিদ সাহেব হেসে বললেন
– আপাতত পেট ভরেছে।
নিদ্র চায়ের দোকান থেকে ১ প্যাকেট পাউরুটি নিয়ে নিলো।
গুগোল ম্যাপ দেখে দেখে এসব এলাকায় বাড়িঘর খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। একজন মানুষ পেলে খারাপ হয়না।
একজন বয়স্ক মানুষ কে অনেক অনুরোধ করার পর সে রাজি হলো তবে সে দূর থেকে দেখিয়ে দেবে।
লোকটার সাথে সাথে যাওয়ার সময় নিদ্র অদ্রির বলা কথা গুলো ভাবছিলো। অদ্রির গল্পের শেষ কথা গুলো ছিলো এমন – তিনি আমাকে ছাদের রুমে ডেকে নিয়ে গেলেন। তাকে এতো বেশি চিন্তিত আমি কখনো দেখিনি।আমার দিকে না তাকিয়ে বললেন, ” তুমি আর তুহিন একসাথে বেশি ভালো থাকবে। আমার সাথে কখনওই তোমাকে অতোটা হাসতে দেখিনি যতোটা ওর সাথে তুমি হাসো। আমি তোমাকে সুখ দিতে পারিনি কিন্তু তুহিন পারবে। ”
তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, তুমি এখন আসতে পারো।
আমি বের হয়ে এলাম। তিনি দরজা আটকে দিলেন। আর খোলেননি। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ওনার লাশ বের করলেন।
নিদ্র বলল – আপনি তার সাথে সম্পর্ক এ জড়িয়ে পড়েছিলেন?
অদ্রি বলল – না, তুহিন ভাই আমার ভালো ফ্রেন্ড ছিলেন।
– তাহলে এমন ভাবার কারণ?
– আমি নিজেও কখনো খুঁজে পাইনি।
চলবে….!