তিনি এবং ও !
২০.
জ্বরের মধ্যে নিদ্রের মনে হলো তার মা পাশে এসে বসেছেন। মা তার কপালে হাত দিয়ে জ্বর মাপলেন তারপর বললেন
– অনেক গরম নিড্র।আমি কপালে হাত দিয়ে রাখি ঠিক হয়ে যাবে।
নিদ্র মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। তার মার শরীর দিয়ে সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসছে। এতো সুন্দর ঘ্রাণ শুধু মায়ের শরীরেই থাকতে পারে, নিদ্র এটাই বিশ্বাস করে। নিদ্রের ইচ্ছে করছে মাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতে। বাংলাদেশ যে কতোটা সুন্দর সেটা তার মা কি জানে? তার মা কি জানে সে একজন বিধবাকে পছন্দ করে ফেলেছে। ভালোলাগা টা কাজ করছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু বুঝতে পেরেছে বৃষ্টির সেই সময় গুলোতে। কেনো যে এমন হচ্ছে? মা কি উত্তর দিতে পারবে? নিদ্র তার মাকে বলল
– মা?তুমি জানো আমি এই বিধবাটাকে পছন্দ করি?
– জানি তো। তোর মনের খবর জানি। তাহলে লুসির কী হবে?
– আরে ওটা তো তেমন কিছুই না।
– বাঙালি বিয়ে করবি?
– তাছাড়া কী করবো? তা না হলে বাবার মতো আমাকেও অন্য কোনো ইংরেজ ছেড়ে চলে যাবে? বাবা তো সহ্য করেছেন কিন্তু আমি তা পারবো না।মা, আমার কথা কখনো মনে পড়তো না? তোমার নাড়ী ছেঁড়া ধন রেখে এসেছো, একবারো নাড়ীর টানও অনুভব করোনি? মা কখনো মনে পড়েনি ৯ মাস গর্ভে রাখা সন্তান কেমন আছে? মা, জানো আমার দাদী একজন খাঁটি মা। সে আজও তার সন্তানকে একা রাখেনি। সন্তান তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। কিন্তু সে কিন্তু করেনি। মা, ও মা কথা কেনো বলছো না?
দাদী বলেন,তুমি বাঙালি না তাই এভাবে ছেড়ে গেছো আমাকে।
কিন্তু মা, পিটারের মা তাহলে তার সাথে আছে কেনো?
অদ্রি চেয়ার পেতে নিদ্রের বিছানার পাশে বসে আছে। ডাক্তার একটু আগে এসে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে। ইনজেকশন দেয়ার আগ পর্যন্ত নিদ্র বিড়বিড় করে কথা বলছিলো। এখনো সে বিড়বিড় করে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর পর অদ্রি মা শব্দটা শুনতে পাচ্ছে। আর কোনো কথাই সে বুঝতে পারছেনা। ইনজেকশন এ এতক্ষণ কাজ হয়ে যাবার কথা কিন্তু হচ্ছেনা। অদ্রি খুব চিন্তায় পড়ে গেছে। খারাপ কিছু হয়ে গেলে সে রশিদ সাহেবকে কী বলবেন?
অদ্রি সকালের নাস্তাটাও করতে পারেনি ভালোভাবে। দুপুর এর জন্য রান্না করা দরকার। কিন্তু এরকম রোগীকে রেখে কীভাবে যাবে? আর লিলিটাও এসব বোঝেনা। দেখা গেলো বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়লো।
লিলিকে বরং ভাত আর ডিম ভাজতে বলে দেয়াই ভালো। আর নিদ্র কী খাবে সেটা পরে দেখা যাবে ঘুম ভাঙার পর।
একসময় নিদ্র ঘুমিয়ে পড়লো। অদ্রি বুঝতে পারলো ইনজেকশন কাজ করেছে। সে নিদ্রের গায়ে পরিষ্কার কাথা দিয়ে দিলো। জ্বরে ফর্শা মুখটা লাল হয়ে আছে।
কপালে হাত দিয়ে দেখলো আগেরমতো গরম নেই।
খুব আস্তে আস্তে ঘর থেকে বের হয়ে অদ্রি নিচে নেমে এলো।
রশিদ সাহেব সোফার উপর বসে বসেই ঘুমুচ্ছিলেন। অদ্রি তাকে জাগিয়ে দিয়ে বলল
– অনেক বেডরুম খালি পরে আছে। আপনি ঘুমুতে পারেন সেখানে।
রশিদ সাহেব বললেন
– আমি নিদ্রের ঘরেই ঘুমাবো।
– কিন্তু সেখানে খাট নেই এক্সট্রা। আর তার পাশেও ঘুমুতে পারবেন না।
– আমাকে ফ্লোরে বিছানা করে দিলেই হবে। আর একটা বালিশ। পরের ছাওয়ালের কিছু হলে আমি মুখ দেখাবো কীভাবে? এই ছাওয়ালরে হইলো পায়ে শিকল বাইধা রাখতে হবে।
আর বাইরে যাইতে চাইলে বেত দিয়ে পিটাইতে হবে।
কী কবো কও তো ওরে? মা ছাড়া পোলা মানুষ হইছে। বড় হবার পর মায়ের খোজ পাইয়া তার লগে দেখা সাক্ষাৎ করেছে। পোলাডার শুকিয়ে যাওয়া ঘাউ ওই ইংরেজি বেডি তাজা কইরা দিয়ে গেছে।
জানিস ওরে বাংলাদেশে ক্যান পাঠাইছে?
– না চাচা ।
– আরে ওইখানকার ওর মায়ের বয়সী ইংরাজি মহিলা দেখলে কান্দাকাটি করে, খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়ে চুপ করে বসে থাকে। নাজমুল ওই পোলার জন্য বিয়ে করেনি দ্বিতীয় বার। সৎ মা জ্বালাবে তাই। কিন্তু কী হলো? পোলা সেই কষ্টই পাচ্ছে। এইজন্যই তো পোলারে শাসন করার সাহস পাইনা।
আরে কপাল রে নিদ্র তোর….. আরে কপাল…..
রশিদ সাহেব এই কথা বলতে বলতে নিদ্রের ঘরে এসে ফ্লোরে বসে পরলেন। ঘুমন্ত নিদ্রকে কতো যে নিষ্পাপ লাগছে তা একমাত্র সেই বুঝতে পারছে।
চলবে…..!