তিনি এবং ও !
২.
নিদ্র চায়ের মগে চুমুক দিয়ে ভাবতে লাগলো,আজ দাদী থাকলে সে খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করতে পারতো। দাদী মুখের দিকে তাকিয়ে খুব সহজে মনের অবস্থা বলতে পারে। কীভাবে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে দাদী বলেছেন – চেষ্টা কর পারবি।
নিদ্র চেষ্টা অবশ্য তেমন করেনি।
কী দরকার একজন মানুষের অবস্থা জানার? জানলে আরো বিপদ। সেই মানুষটার কষ্ট তার সহ্য হবেনা। শুধুশুধু কষ্ট পাওয়া।
নিদ্রের ভালো কাটছে না সময়। তার বাবা তাকে লুসির থেকে দূরে রাখার জন্য এখানে পাঠিয়েছে। লুসির সাথে যোগাযোগ করতে পারে এমন পথও রাখেননি। পুরাতন মোবাইল কেড়ে নিয়ে নতুন মোবাইল কিনে দিয়েছেন। এমনকি সিম কার্ড ও চেঞ্জ।
লুসি এতো ভালো একটা মেয়ে কিন্তু কেনো বাবা তাকে পছন্দ করেননা ভেবেই বের করতে পারেনা।
এই সুন্দর সকালে তার লুসির কথা খুব মনে পড়ছে।
অর্ধেক চা ফেলে দিয়ে দোতলায় নিজের রুমে ফিরে এসে মেঝেতে বসে পরলো।
হাতের ছোটো আংটির দিকে তাকিয়ে লুসির কথা ভাবছে। লুসি এখন কী করছে? হয়তোবা এখন ঘুমের মধ্যে খুব খিদে পাওয়া যাওয়াতে সে কিচেনে একাই নুডুলস রান্না করে খাবে।
সাথে সাথে নিদ্র লাফিয়ে উঠে তার ব্যাগের কাছে এগিয়ে গেলো। ২ টা মিনি নুডুলস প্যাকেট নিয়ে রান্নাঘরের খোঁজে বের হলো রুম থেকে। সাধারণত নিচতলায় রান্নাঘর থাকে। রান্নাঘরের দরজায় পর্দা দেয়া থাকেনা – এই যুক্তিটাকে কাজে লাগিয়ে সে রান্নাঘর খুঁজে পেলো। সে এ বাড়িতে আসার পর কয়েকটা ব্যাপার খেয়াল করেছে। তারমধ্যে কয়েকটি হচ্ছে
– এই বাড়িতে লোক সংখ্যা খুব কম।
– যারা থাকে তারা তাদের নিজেদের রুমে থাকতে পছন্দ করে।
– এদের খাদ্যের প্রতি তেমন আকর্ষণ নেই।
– এদের কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই। একজন অতিথি এসেছে বাসায় সেদিকে খেয়াল নেই।
তবে এতে নিদ্রের ভালোই হয়েছে অন্ততপক্ষে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে। তা না হলে সারাক্ষণ বাবার মতো ঘাড়ে কেউ চেপে থাকবে এটা খুবই বিরক্তিকর।
রান্নাঘরও তেমন গোছানো না। অনেকক্ষণ খোঁজার পর একটা ছোটো পাতিল পেয়েছে। তার দাদীর ঠিক এমন একটা পাতিল আছে। তবে সেটা অনেক পুরাতন।
পাতিলে পানি দিয়ে চুলায় দিবে তখন নিঃশব্দে নিদ্রের পেছনে এসে কেউ একজন দাঁড়ালো। নিদ্র বেশ বুঝতে পেরেছে তার পেছনে কেউ আছে। না বোঝার ভান করে পাতিল চুলায় দিয়ে চুলা জ্বালিয়ে দিলো।
– আপনি আমাকে বললেই পারতেন।
নিদ্র স্বাভাবিক স্বরেই বলল
– আপনাকে পাবো কোথায়?
– আসলে আমি অনেক দুঃখিত, অনেক বেশি।
নিদ্র নুডুলসের প্যাকেট গুলো হাতে নিয়ে তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির হাতে দিয়ে বলল
– যেহেতু আপনি এতো দুঃখ প্রকাশ করছেন সেহেতু রান্না করেই দিন।
মেয়েটি নিদ্রের দিকে তাকালো চোখ বড়বড় করে। মেয়েটির লাল টকটকে চোখ দুটোতে তার চোখ পরাতে সে ভয় পেয়ে গেলো। তার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। দুটো চোখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাই তো এই মেয়ে। মেয়েটা চোখ সরিয়ে নিলো। নিদ্র বলল
– আপনি অসুস্থ?
মেয়েটি বলল
– না তো।
– তাহলে চোখের এই অবস্থা যে?
মেয়েটি কঠিন স্বরে বলল
– আপনি ডাইনিং রুমে বসুন। নুডুলস আমি নিয়ে আসছি।
নিদ্র যেন শুনেও না শোনার ভান করে বলল
– আপনার চোখ এতো লাল কেনো?
মেয়েটি এবার আগের তুলনায় বেশি কঠিন স্বরে বলল
– আপনি যান এখান থেকে। দয়া করে অভদ্র আচরণ করতে বাধ্য করবেন না।
নিদ্র চুপচাপ ডাইনিং রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।
অভদ্র আচরণের কী করেছে সে? যে এভাবে কঠিন স্বরে কথা বলতে হবে?
খুব সাধারণ প্রশ্ন করেছে তাতেই এতো রাগ।
চলবে…….!