তিনি এবং ও !
১৯.
জীবনটা নতুন সাজে সাজতে শুরু করলো। আশেপাশে মনে হচ্ছিলো কেউ সুখেরকাঁটা বিছিয়ে দিয়েছিলো।কিন্তু সমস্যা হলো খুব খারাপ ভাবে। আমি একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হলাম। জানেন নিদ্র তিনি আমাকে একবারো নিষেধ করেননি।
নিদ্র বলল
– নিষেধ করবেন কেনো?
– নিদ্র আপনি মনে হয় জানেন না, বাংলাদেশের গ্রাম আর মফস্বল শহর এমনকি শহরে বিয়ের পর মেয়েদের পড়াশোনা করতে দেয়া হয়না। অনেক সময় মেয়ে দের পড়তে দেয়া হলেও কড়া গার্ড এ রাখা হয়।
– তারপর কী হলো? সমস্যা টা তো বলবেন?
– ইভটেজিং বুঝেন? এলাকার কিছু চোর ছ্যাঁচড়া আমার পিছু লেগে গেলো। কলেজ যাওয়া আসার পথে কটু কথা, শিষ দেয়া শুরু করলো। আমার হাজবেন্ড থানায় কেস করলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। যেদিন পুলিশে থানায় নিয়ে গেলো সেদিন রাতেই ওরা বাসায় ঢিল মারতে শুরু করলো। বাসার দারোয়ানের মাথা ফাটিয়ে দিলো। বিশ্রী গালাগাল দিতে লাগলো চোর ছ্যাঁচড়া গুলা। তিনি নিচে গিয়ে দারোয়ান কে বাসার মধ্যে আনতে গেলেন, ওনার মাথাও ফাটিয়ে দিলো। নিদ্র আপনি বুঝতে পারবেন না, আমার অবস্থাটা তখন কেমন ছিলো! আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হতে লাগলো। আমার কারণে তার এরকম ক্ষতি হয়ে গেলো।
– আপনার কোনো ক্ষতি করেনি সেই ইভটিজার গুলো?
– তার আগেই পুলিশ এসে গিয়েছিলো।তার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগেছিল। আর পড়াশোনা আমি ছেড়ে দিলাম। যে,আমার জন্য এতোকিছু করলো তাকে কীভাবে দিনের পর দিন কষ্ট পেতে দেখি?
– বাহ কী যে বলেন? ইভটিজিং করতো আপনাকে, গালাগাল করতো আপনাকে, খারাপ লাগার কথা আপনার।
– আরে এলাকাজুড়ে তাকে কথা শুনাতো। আর আমাকে বলাতো তাকে বলা একই।
– তারপর কী হলো? রোমান্স হলো টলো না? তার জন্য আপনি এতো বড় স্যাক্রিফাইজ করলেন তারজন্য তো……………
– বাদ দিন। হাসিখুশি ভাবটা আমাদের সংসারে আবার ফিরে এলো। পুরো বাসায় একা একা থাকতে ভালো লাগতো না।একটা বাচ্চা থাকলে ভালো হতো। আমি প্রায়শই তাকে অন্যভাবে বোঝাতাম। একজন ছোট্ট সংগী দরকার। কিন্তু তিনি বুঝেও না বোঝার ভান করতেন।
– আপনারা কখনো ঘুরতে যেতেন না?
– নাহ, ওই চোর ছ্যাঁচড়ার ভয়ে বাসা থেকে বের হওয়া যেতো না।যেদিনই বের হতাম সেদিন রাতে বাসায় আবারো ওরা ঢিল মারতো, খুব জোড়ে জোড়ে গালাগাল করতো।আমার হাজবেন্ডের ব্যবসার পার্টনার এবং বন্ধু প্রায়শই বাসায় আসতেন। প্রথম প্রথম আমি তার সামনে যেতাম না। কিন্তু তিনি বললেন,আমার বন্ধুর সাথে তুমি কথাবার্তা বলতে পারো। ও বাসায় আসে আর তুমি যদি কথাবার্তা না বলো তাহলে তো খারাপ দেখায় তাই না?
তারপর থেকে উনি আসলেই বেশ আড্ডা হতো। আমাকে দাবা খেলা উনি শিখিয়েছিলেন। এমনকি রান্নাবাড়া ও শিখেছি ওনার কাছ থেকে।
তবে ওনার বাগানের ফুল গুলো ইউনিক। এরকম ফুলের বাহার আমি কোথাও দেখিনি।
নিদ্র বলল – আপনি তো বাসা থেকে বের হতে পারতেন না। তাহলে বাগান কীভাবে দেখলেন? মোবাইলে? কিন্তু আপনার চেহারায় তো প্রকাশ পাচ্ছে অন্যকিছু!
অদ্রি বলল – তার বাসায় আমরা প্রায়ই যেতাম।
– আপনি একা যেতেন নাকি আপনার হাজবেন্ডও যেতেন?
– প্রথমে তিনি যেতেন আমার সাথে পরে অবশ্য একাই যেতাম।
– উনি বিবাহিত ছিলেন তাই না?
– নাহ, বিয়ের প্রতি ওনার কোনো ইচ্ছে ছিলোনা। সবসময় বিয়ের নেগিটিভ সাইড নিয়ে তর্ক করতেন আমার সাথে।
– আপনারা দূরে কোথাও ঘুরতে যাননি কখনো?
অদ্রি অবাক হয়ে বলল
– ওনার সাথে আমি একা দূরে কোথাও কেনো যাবো?
নিদ্র হাসার চেষ্টা করে বলল
– আমি তো আপনাকে একা যেতে বলিনি! আপনারা উল্লেখ করেছি। তাতে তো আপনার হাজবেন্ডকেও উল্লেখ করা হয়।
নিদ্রের হঠাৎ করে খারাপ লাগতে শুরু করেছে। পুরো মাথা ঝিম ধরে আসছে। আর মনে হচ্ছে কে যেন কানের কাছে ঝিঝি ঝিঝি করছে।
নিদ্র বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে পড়লো। অদ্রির গল্পটা তার শুনতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু তার শরীর তাকে শুনতে দিতে চাচ্ছেনা। সে আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু শরীর তো কারোরই কথা শুনেনা, সে যে অবাধ্য…….!
চলবে…….!