তিনি এবং ও ! ১৮.

0
1907
তিনি এবং ও ! ১৮.
তিনি এবং ও ! ১৮.

তিনি এবং ও !

১৮.
অদ্রি মুচকি হেসে বলল
– কখনো জানা হয়নি আসলে কি সে কখনো বলেনি।
নিদ্র বলল
– ভালবাসার কথাটা বলতে হয়না সেটা আসলে ফিল করার ব্যাপার। যেমন ধরুন মা আমাদের কখনওই তেমনভাবে বলেননা যে, ভালবাসেন। কিন্তু আমরা জানি মা আমাদের সবথেকে বেশি ভালবাসেন। ছোটোবেলায় আমরা যখন কথা বলতে পারতাম না মাকে কখনওই বলতে পারিনা যে ভালবাসি। কিন্তু মা বুঝতে পারেন। টেলোপ্যাথি একটা বিষয় আছে। আদিম মানুষেরা নাকি টেলোপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগ করতো। তবে এটা জাস্ট ধারণা।
নিদ্র লিলিকে বলল
– আমার জন্য কড়া লিকারের চা নিয়ে আসো।
অদ্রি বলল
– আরে না। জ্বর একটু কমেছে কেবল তার উপর রাতে খাওয়া হয়নি আপনার। এখন কড়া লিকারের চা কোনোভাবেই খাওয়া যাবেনা।
নিদ্র চোখ বন্ধ করে বলল
– অদ্রি পান করবো চা!
– হয়েছে হয়েছে। আমি আপনার জন্য যা এনেছি এগুলোই খেতে হবে।
টেলোপ্যাথি বিষয়টা অদ্রির জানা নেই। জিনিষ টা সে কোনোভাবেই বুঝতে পারছেনা।
অদ্রি জিজ্ঞেস করবে কিনা নিদ্রকে বুঝতে পারছেনা। নিদ্রকে জিজ্ঞেস করেই বসলো অদ্রি
– আচ্ছা টেলোপ্যাথি কী?
নিদ্র খেতে খেতে বলল
– আপনি যার কথা ভেবে ঘুমোতে যান ,তিনিও আপনার কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমোতে যান । সাইকোলজিক্যাল ভাষায় এটাকে বলে, টেলোপ্যাথি। আরেকটা ধারণা আছে, সেটা হচ্ছে ইংরেজিতে এটা noun
the supposed communication of thoughts or ideas by means other than the known senses.

synonyms:mind reading, thought transference. বাংলায় এটা
বিশেষ্য

জ্ঞানের অর্থে ব্যতীত অন্য অর্থ দ্বারা চিন্তাধারা বা ধারণাগুলির অনুমতিক্রমে যোগাযোগ।

প্রতিশব্দ: মন পড়া, চিন্তা স্থানান্তর।

অদ্রি ইতস্ততভাবে বলল
– আমি ঠিক কিছুই বুঝলাম না।
নিদ্র পরে বলল
– ভুলটা আমারি, আমিই আপনাকে বোঝাতে পারছিনা ভালোভাবে। যাইহোক একদিন ভালোভাবে বুঝিয়ে বলবো।আজ থাকুক। এমনিতেই আপনি অন্য চিন্তায় হারিয়ে আছেন। তা না হলে আপনি অনেক আগেই ব্যাপার টা বুঝে যেতেন।
– আমি আর কার চিন্তায় হারাবো?
– আপনার গল্পটা বলুন শুনি।বললে মন হালকা হবে আপনার। দেখুন না আমার মায়ের গল্পটা আপনাকে বলেছি ব্যাস মন হালকা হয়েছে। আপনিও বলে ফেলুন।
– আমার জন্ম হয় পাড়াগাঁয়ে। দরিদ্র পরিবারে জন্ম আমার। ৩ ভাইয়ের পর একমাত্র মেয়ের জন্ম হওয়াতে বাবা মা খুব খুশি হয়েছিলেন। বাবা ছোটোখাটো চাকরী করতেন।আমার বয়স যখন ১৮ তখন পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলো। ভাইয়েরা সবাই শহরে পড়তে গেলো তাদের খরচ জোগাতে বাবাকে হিমসিম খেতে হচ্ছিলো।
আমি যে হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেছিলাম তার হেডমাস্টার আমাকে খুব ভালবাসতেন, খুব স্নেহ করতেন। আমার পড়াশোনা টা বন্ধ হয়ে যায়। ভালো রেজাল্ট করেও যখন কলেজে ভর্তি হতে পারলাম না তখন তিনি একটা উপায় খুঁজে আনলেন।
স্যার ই আমার বিয়ের প্রস্তাব টা আনেন। আসলে স্যার চেয়েছিলেন, এমন একজনের সাথে আমার বিয়ে হোক যে আমার ভরণপোষণ করবে এমনকি আমাকে পড়াবেও তার উপর আমার পরিবারকেও টানবে।

নিদ্র বলল
– এরকম বর পাওয়া যায়? আমার তো বিশ্বাস হয়না।
অদ্রি বিরক্ত হয়ে বলল
– তিনি একজন মহান মানুষ ছিলেন। আপনার বিশ্বাস অবিশ্বাস দিয়ে তো তার মহত্ত্ব কমে যাবেনা।
– আমি তো এমনি বললাম। আপনি রাগ করবেন না প্লিজ।
– আমার যেদিন বিয়ে হলো সেদিন খুব গরম ছিলো। বিয়ের রাতে খুব ভয় পাচ্ছিলাম সম্পূর্ণ অচেনা অজানা একজন মানুষের সাথে কীভাবে থাকবো?
বিয়ের দিনই তিনি আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে এলেন। বাসায় আসার পর বুঝতে পারলাম তার কোনো আত্মীয় স্বজন নেই। বুড়ো এক কাজের মহিলা আছেন। উনিই সবকিছু করেন।
বাসররাতে আমাকে বললেন – যতদিন
তুমি আমাকে পুরোটা না জানো ততদিন আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না।
একজন মানুষ কতোটা ভালো হলে এভাবে বলতে পারেন? জানেন?
– নাহ, বিয়ে মানেই শরীরের বৈধতা ভেবে নেয়।

চলবে…….!

#Maria_kabir