তিনি এবং ও ! ১৫.

0
1915
তিনি এবং ও ! ১৫.
তিনি এবং ও ! ১৫.

তিনি এবং ও !

১৫.

নিদ্র চায়ের মগে চুমুক দিয়ে ভাবছিলো চিৎকার দিবে কি দিবে না?
এতো তিতা আর গরম মসলার গন্ধে ভরপুর।
অদ্রি খেয়াল করলো নিদ্রের চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর নাক কুঁচকে যাচ্ছে যখনি চায়ে চুমুক দিচ্ছে।
অদ্রি বলল
– চিনি লাগবে চায়ে?
নিদ্র বলল
– মানে, আমার মনে হচ্ছে আপনি আমার চায়ে আদা, জিরা, তেজপাতা, মরিচ, দাড়ুচিনি, লবঙ্গ ইত্যাদি দিয়েছেন।
– এটা চা কোনো তরকারী না নিদ্র। আপনি খান তো চা।
– অদ্রি চা কেউ খায় না, পান করে।
– হয়েছে অনেক হয়েছে এখন আপনি এটা পান করুন। সারাদিন নর্দমায় থেকে আপনার মাথা আওলায়ে গেছে। এখন প্লিজ রেস্ট নেন।
– বিরিয়ানি কখন পাবো?
অদ্রি অবাক হয়ে বলল
– বিরিয়ানি???
– হ্যা, আপনি তো রান্না করছেন। তাই জিজ্ঞেস করলাম।
– এই চা না খেলে এক দানাও পাবেন না।
– বললামই তো চা খায় না পান করে।
– পান করুন।
– বিরিয়ানির জন্য এই মশলা যুক্ত চা পান করা তো কোনো ব্যাপারই না।

বিরিয়ানি খাওয়ার সময় রশিদ সাহেব বললেন
– নাজমুল একটা গাধা।
নিদ্র বলল
– তা আজকে জানলেন?
– আরে একমাত্র ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না। আর সে ঠাণ্ডা মেজাজে আছেন।
– আসলে বাবা আমাকে ভালো ভাবে জানেন তো তাই।
– তোমরা বাপ ছেলে কী না কী করো আল্লাহ জানে।
– তবে আজকে আমি ইচ্ছে করে করিনি।
অদ্রি বলল
– খান তো আপনারা চুপ করে। উঁহু এতো কথা বলতে পারেন আপনারা।
রশিদ সাহেব বললেন
– নিদ্র আজকে তোমার জন্য এই মেয়েটাকে খুব কষ্ট করতে হয়েছে। ইশ মেয়েটার শরীর খারাপ করেছে মনে হয়।
অদ্রি বলল
– নাহ, আমি ঠিক আছি।
রাত ১২ টার পর ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পরতে শুরু করলো।
অদ্রি তার জানালা দিয়ে এইসময় বৃষ্টি হতে দেখে একটু বিরক্ত হলো। সাধারণত এই সময় বৃষ্টি হয়না। বর্ষাকাল এমনকি কালবৈশাখী ও অনেক দেরি। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া তার তেমন একটা ভালো লাগেনা। রোদ থাকে না জামা কাপড় শুকাতে চায় না।
অদ্রি ছাদের দরজা খোলার আওয়াজ পেলো। প্রথমে মনে হলো, না হয়তোবা ভ্রম। পরে তার কানে সেই শব্দটা আবারো ভেসে এলো।
এইসময় কে ছাদের দরজা খুলছে? চাবি তো আমার কাছেই থাকে।
অদ্রি মাথায় ঘোমটা ঠিক করে ছাদের দিকে দৌড়ে গেলো। ছাদের দরজা হা করে খোলা। বৃষ্টির পানিরছিটা এসে সিঁড়ি ভিজিয়ে দিয়েছে। গুটি গুটি পায়ে ছাদের দিকে এগিয়ে গেলো অদ্রি।
ছাদে ঢুকে দেখলো নিদ্র দু হাত টান টান করে দাঁড়িয়ে ভিজছে।
ছাদের লাইটের হালকা আলোতে সেই দৃশ্য অপরূপ লাগছে।
অদ্রিও ভিজে যাচ্ছে কিন্তু তার ছাতা আনার খেয়াল ছিলো না। নিদ্র বুঝতে পারলো অদ্রি তার পিছনে বরাবরের মতো এসে দাঁড়িয়েছেন। নিদ্র বলল
– আপনি এখন ছাদে?
– আমি ভাবলাম চোর আসলো নাকি।
– বৃষ্টি হচ্ছিলো, ছাদও খোলা পেয়ে গেলাম
ব্যাস সুযোগের সৎ ব্যবহার করলাম।
– আমাকে একবার বললেই পারতেন। অন্ততপক্ষে আমাকে এভাবে ভিজতে হতো না।
– এই বয়সেই তো ভিজবেন।
নিদ্র অদ্রির কাছে এসে দাঁড়ালো। পুরো শরীর তার ভেজা। বৃষ্টির পানিতে ভিজে তার শরীর ঠাণ্ডায় কাঁপছিল।
অদ্রি বলল
– আপনি কাঁপছেন ঠাণ্ডায়।
– এটাই তো মজা অদ্রি। কিন্তু আপনি তো কাঁপছেন না?
– আমি তো সারাদিন নর্দমায় বসে ছিলাম না।
– উফ অদ্রি আপনি না….
– কী?
নিদ্র অদ্রির আরো কাছে এসে বলল
– অসম্ভব সুন্দরী।
অদ্রি লজ্জায় মাথা নিচু করে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে, নিদ্র তার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
অদ্রির কানে কানে বলল
– সুন্দর মুহূর্ত কে আরো সুন্দর করে তুলতে পারেন আপনি। এজন্যই আপনাকে আটকে রাখলাম।
অদ্রি নিদ্রের হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছিলো। কী হচ্ছে? কেনো হচ্ছে? কী করছে সে? কিছুই বুঝতে পারছে না অদ্রি!

চলবে……!

#Maria_kabir