তিনি এবং ও !
১৪.
রশিদ সাহেব খাওয়া দাওয়া করে সোফায় উপর বসে ঝিমুচ্ছিলেন। তার মনে হলো বাসার মধ্যে কেউ খুব দ্রুত প্রবেশ করলো। সে চোখ খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আপাদমস্তক কাদামাটি তে মাখা মানুষ কে দেখে ভয়ে চিৎকার দিলেন।
রশিদ সাহেবের এইরকম গগন ফাটানো চিৎকারে কাদামাটি মাখা মানুষ টাও চিৎকার দিলো। অদ্রি তার রুম থেকে চিৎকার শুনে দৌড়ে নিচে নেমে এলো। অদ্রি কাদামাটি মাখা মানুষ টাকে দেখে রাগীস্বরে বলল
– নিদ্র, আপনার কিন্তু এরকম করাটা ঠিক হয়নি!
রশিদ সাহেব অদ্রির কথা শুনে কাদামাটি মাখা মানুষ টাকে ভালোভাবে দেখলো।
নিদ্র হাসতে শুরু করলো। রশিদ সাহেবের বুঝতে বাকি রইলো না এই মানুষ টাই নিদ্র। রশিদ সাহেব বললেন
– বাবা, আমি দূর্বল হার্টের মানুষ। আমাকে এভাবে ভয় দেখানোটা ঠিক হয়নি।
নিদ্র বলল
– আমি ভয় দেখাতে চাইনি।
– তাহলে বাবা এভাবে কাদামাটি মেখে কী করবা?
– আমি ইচ্ছে করে মাখি নি।
নিদ্র কী যেন বলতে যাচ্ছিলো তখন অদ্রি বলল
– আপনার ঠাণ্ডা লেগে যাবে। তাড়াতাড়ি গোসল করে আসুন।
নিদ্র বলল
– পুরো বাড়ি কাদায় মেখে যাবে।
অদ্রি এতক্ষণ পর খেয়াল করলো তার ড্রয়িংরুম কাদায় মাখামাখি অবস্থা। ১ সপ্তাহ যাবত বাসায় কাজের লোক ছুটিতে। সে কোনোরকম পরিষ্কার করে রেখেছিলো। লিলি টাও তেমন একটা পারেনা। এখন কীভাবে কী করবে? অদ্রি বেশ চিন্তিত হয়ে পরলো। তার পক্ষে এতোটা কাজ করা সম্ভব না। সারাদিন কিছুই তার পেটে পরেনি।
নিদ্র বলল
– আপনি চিন্তা করবেন না। আমি পরিষ্কার করে দিবো।
অদ্রি বলল
– না না আমিই পারবো। আপনি আপনার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।
নিদ্র তার রুমে চলে গেলো। অদ্রি লিলিকে ডাকলো। লিলি ঘুম ঘুম চোখে অদ্রির সামনে এসে দাঁড়াল।
অদ্রি বলল
– যা বালতি ভরে পানি নিয়ে আয়, সাবান এর গুড়া আর স্যাভলন লিকুইড নিয়ে আয়। ঘর দিয়ে গন্ধ ছুটছে কাদামাটির।
অদ্রি আর লিলি পরিষ্কার করতে শুরু করলো।
ড্রয়িংরুম পরিষ্কার করে সিঁড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখলো নিদ্র চুল টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে নিচে নেমে আসছে।
নিদ্র অদ্রিকে বলল
– আপনি এখন বিশ্রাম নিন। আমি করে দিচ্ছি।
অদ্রি বলল
– আপনি মেহমান।
– তো কী? আমিই তো অকাজ টা করেছি আর আমার অভ্যেস আছে।
– না না আপনি খেয়ে নিন। আমি করছি।
– আপনিও তো খান নি। আপনার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে।
– আপনি খেয়ে নিন।
পুরোটা পরিষ্কার করতে অদ্রি আর লিলির বেশ সময় লেগে গেলো। সন্ধ্যার সময় পুনরায় গোসল করে খেতে বসলো।
অদ্রি বলল
– কিছু মনে করবেন না। আজকে তেমন কিছুই রান্না হয়নি। সকাল থেকে আপনাকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। চিন্তায় কারোরই খাওয়া দাওয়ার প্রতি কোনো হুশ ছিলো না।
নিদ্র বলল
– আমি ইচ্ছে করে কাজটা করিনি। রাতে ঘুম হলো না। খুব সকালে হাটতে বের হলাম।
– পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন?
– আরে না। অনেকক্ষণ হাটার পর একটা মাঠের মধ্যে কয়েকটা কুকুর ছানা দেখলাম। কী পরিমাণ কিউট আপনি ধারণাও করতে পারবেন না। আমার বাসায়ও এরকম একটা কুকুর ছানা আছে। আমার খুব মনে পড়ে গেলো। কাছে গিয়ে কুকুরছানার একটাকে কোলে নিয়ে আদর করতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম কয়েকটা বড় আকারের কুকুর আমার দিকে ছুটে আসছে।
দিলাম দৌড়। দৌড়াচ্ছি তো দৌড়াচ্ছি আর পথও শেষ হয়না আর কুকুর গুলোও পিছু ছাড়ছেনা।
একটা সময় পঁচা নর্দমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলাম। না হয় আমাকে কুকুরের কাছে নিজেকে সমার্পন করতে হবে আর না হয় পঁচা নর্দমায়!
অদ্রি বলল
– আর আপনি পঁচা নর্দমায় ডুব দিলেন। তো এতসময় কই ছিলেন?
– আরে কুকুর গুলো তো যায়ই না। চলে যাবার পর আমি উঠে সোজা বাসায় চলে এলাম। রাস্তায় কতো মানুষ আমাকে দেখে ভয় পেলো।
– এতো সময় থাকলেন কীভাবে?
– কী করার বলুন?
– খাওয়া শেষ হলে আপনার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়বেন। আমি গরম দুধ হলুদ দিয়ে নিয়ে আসবো।
– আচ্ছা।
– আর দয়া করে এরকম করবেন না।বলে যাবেন কোথায় যাচ্ছেন।
– কাউকে বিরক্ত করতে চাচ্ছিলাম না।
– আপনি যথেষ্ট বিরক্ত করেন আমাকে। সুতরাং জরুরী কাজে বিরক্ত করলে কিছুই হবেনা।
নিদ্র বলল
– সারাদিন না খেয়ে থাকার পর এই শুকনো খিচুড়ি ই বিরিয়ানি মনে হচ্ছে।
– আপনি বিরিয়ানি পছন্দ করেন?
– পছন্দের মানে? ভালবাসা, ভালোলাগা সব সব আমার ?
খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিদ্র তার রুমে গিয়ে অদ্রির কথামতো বিছানায় শুয়ে পরলো।
অদ্রি রশিদ সাহেবকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো। আর বলল
– একটু বাজার থেকে ঘুরে আসুন। একটা লিস্ট দিচ্ছি সেই অনুযায়ী বাজার করে আনুন।
রশিদ সাহেব বললেন
– আজ আমি এখানেই থাকবো।
– আচ্ছা।
চলবে……!