তিনি এবং ও !
১৩.
সময়ের সাথে সাথে প্রত্যেকটা মানুষের জীবন বদলে যায়। কিন্তু বদলে যাওয়া জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি গুলো রয়ে যায় অগোচরে। কখনো সেটা কাদায় কখনো হাসায়। নিদ্রের জীবনে * মা * সম্পর্কিত যে স্মৃতি গুলো জমে আছে, সেগুলো তাকে শুধুই কাদায়।সারারাত নিদ্র তার মায়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিলো।
সকালের প্রথম আলো যখন তার ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলো তখন নিদ্র তার বিছানায় বসে পরলো। কী করবে? এভাবে কোনো কাজ ছাড়া বসে থাকতেও তার ভালো লাগছে না। ঘুমও আসেনা। কী করা যায়? ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলো। এতো ভোরে তেমন কোনো মানুষ জন রাস্তায় নেই। কেবল সূর্য তার আলো ছড়াচ্ছে।
নিদ্র হাঁটতে শুরু করলো। তার বাবা বলেছিলেন – সকালের বাতাস বিশুদ্ধ হয়। বাবা তুমি প্রতিদিন সকালে হাঁটবে।
বাবার এই আদেশ আর পালন করা হয়নি।
আজ না হয় পালন করা হোক। মোবাইল টা রুমে রেখে আসাটা ঠিক হয়নি। এই সুন্দর দৃশ্যপট স্থিরচিত্রে ধরে রাখা গেলে ভালোই হতো। বাবাকে দেখানো যেত তার মাতৃভূমির রূপ। তবে আমি পিতৃ সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। জন্মসূত্রে ইংল্যান্ড এর নাগরিক। বাবা বলেছেন, সবাইকে যেন ব্যাপার টা না জানাই। তা না হলে ফাঁসিয়ে আমাকে বিয়ে করিয়ে দিবে। তারপর আরো ইতিহাস…….
রাস্তার দু ধারে সারি সারি সবুজ গাছ গাছালি। নিদ্র সেই সবুজের মাঝে মিশে যেতে চাচ্ছে। যেন সবুজে মিশে আছে তার প্রাণ তার আত্মার শান্তি।
অদ্রির ঘুম ভাংলো লিলির ডাকে। লিলির এভাবে চেঁচামেচি তে অদ্রি বিরক্ত হয়ে বলল
– হয়েছে টা কী? শুনি যে এভাবে চেঁচামেচি করতে হবে?
লিলি হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বলল
– আপা, সেই রঙিন চুলওয়ালা কে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
অদ্রি বলল
– বাগানে আছে হয়তোবা।
– না আপা কোথাও নেই। ওনার ঘরে বিছানার উপর মোবাইল ফেলে রেখে কোথায় যেন চলে গেছে।
– কী সব বলছিস আছে কোথাও।
অদ্রি বিছানা থেকে নেমে মাথায় ঘোমটা ঠিক করে নিদ্রের ঘরে গেলো।খাটের নিচে খুঁজে দেখলো। পুরো বাড়ির চিপা চাপা সব জায়গা খুঁজে যখন নিদ্রকে পেলো না তখন রশিদ সাহেবকে কল করলো। রশিদ সাহেব কল রিসিভ করে বলল
– আরে অদ্রি মা, আমি তোমাকে ফোন করবো আর তুমি করলা।
– নিদ্র আপনার ওখানে গেছেন?
– নাহ তো। ও তো আমার বাসা চিনেই না আসবে কীভাবে?
– ওনাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
– ও কি এলাকা চিনে?
– না।
রশিদ সাহেব আর লিলি পুরো এলাকা পাশের এলাকা খুঁজে যখন নিদ্রকে পেলো না তখন থানায় গিয়ে নিখোঁজ ফাইল লিখিয়ে অদ্রির বাসায় আসলেন।
প্রায় দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে যাচ্ছে নিদ্রের কোনো খোজ নেই। অদ্রি সকাল থেকে এক ফোটা পানি পর্যন্ত পান করেনি। একজন মানুষ এভাবে উধাও হয়ে যেতে পারে তার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
অদ্রির মনে হচ্ছে, নিদ্র তার ঘরেই ঘুমিয়ে আছে। ঘুম ভাংলেই নিচে এসে খেতে চাবে।কিন্তু খাবার তো বানানো হয়নি। খানিকক্ষণ পর তার মনে পড়ে, মানুষ টা সকাল থেকে নিখোঁজ।
রশিদ সাহেব অদ্রির পাশে বসে নিদ্রের বাবাকে কল করলো।
নাজমুল সাহেব ফোন রিসিভ করলেন। রশিদ সাহেব বললেন
– নাজমুল তোর ছেলেটার কি মাথা খারাপ টারাপ আছে?
নাজমুল সাহেব বললেন
– ওটা আমার ছেলে তোর না যে মাথা খারাপ থাকবে।
– দ্যাখ, আমার ছেলেপুলের মাথা খারাপ নাই। তোর ছেলেরই আছে।
– কী হয়েছে বল।
– আরে সকাল থেকে নিখোঁজ। কোথাও নেই।
নাজমুল সাহেব শান্ত ভাবেই বললেন
– সে সবুজের মাঝে হারিয়ে গেছে হয়তোবা বা পাখির গানে মেতে আছে।
– বাদ দে সাহিত্য। সারাদিন খুঁজতে খুঁজতে আমরা হয়রান। তার উপর কেউই কিচ্ছু খাইনি।
– দ্যাখ ভাই, ও চলে আসবে। তোরা খেয়ে দেয়ে রেস্ট নে।
– আশেপাশের অবস্থা ভালো না। এটা বাংলাদেশ এখানে মানুষ জনকে কয়েকটা টাকার জন্য খুন করে।
– এটা চিন্তার বিষয়। থানায় গেছিলি?
– ওখান থেকেই তো আসলাম।
– যা এখন খেয়ে নে। যদি রাতে না আসে আমাকে আবার ফোন করিস।
– হ্যা করবানি।
অদ্রি রশিদ সাহেবকে বলল
– কী বললেন উনি?
– ও আর কী বলবে? একমাত্র ছেলের প্রতি কোনো চিন্তা নাই। মোটা চামড়ার শালা।
অদ্রি চুপ হয়ে গেলো। রশিদ সাহেব লিলিকে ডাকলেন। লিলি বলল
– রান্না করেছি। খাবেন?
রশিদ সাহেব বললেন
– টেবিলে দে।
অদ্রিকে বলল
– চল মা খেয়ে নেই।
– নাহ আপনি খান। আমার ভালো লাগছেনা।
অদ্রি ঘোমটা টেনে ঠিক করে দোতলায় তার রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।
ওয়াশরুমে ঢুকে ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলো। চাপা কষ্ট কান্নার শব্দে রূপান্তরিত হচ্ছে। একজন ভালো বন্ধু কে এভাবে হারিয়ে যাবে তার জানা ছিলোনা। জীবনের প্রিয় মানুষ গুলো হয়তো এভাবেই হারিয়ে যায় জীবন থেকে।
চলবে…….!