তিনি এবং ও !
১১.
অন্যথা আমাকে যেতে হলো। বেশ বড়সড় বাড়িতে মহিলা আমাকে নিয়ে গেলেন। ভয়ভয় লাগছিলো আবার চিন্তিতও ছিলাম। কোনোভাবেই মাথায় আসছিলো না আমার মা কোথা থেকে আসলো।
অদ্রি বলল
– সত্যি কি আপনার মা ছিলেন?
নিদ্র বলল
– আহ, গল্পের মাঝে কথা বলবেন না। আমাকে বসতে দিয়ে মহিলা বাড়ির দোতলায় গেলেন। প্রায় ৩০ মিনিট পার হয়ে যায় কেউ আসলো না। এদিকে বাসায় যেতে আমার দেরি হচ্ছিলো। আমি উঠে চলে আসবো তখন পেছন থেকে আমাকে বলল
– হেই, কোথায় যাও?
পেছন ফিরে দেখি মধ্যবয়সী একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বললাম
– আমার দেরি হয়ে যাচ্ছিলো। বাবা রাগ করবে।
মহিলা সোফায় বসে বলল
– নাজমুল তো সবসময়ই বেশি সময় মেনে চলে। তুমি বসো আমার পাশে।
আমি তার উল্টো পাশের সোফায় বসাতে মহিলা বললেন
– মায়ের পাশে বসতেও লজ্জা লাগে?
– আপনি আমার মা নন। আমার মা অনেক আগেই মারা গেছেন।
– নাজমুল তোমাকে এই কথা বলেছেন?
– বাবা, সত্যিটা আমাকে বলেছেন। বাবা মিথ্যা বলেন না।
– তোমার মায়ের ছবি আছে তোমার কাছে?
– না, তার কোনো স্মৃতি আমার কাছে নেই।
– কিন্তু তোমার স্মৃতি আমার কাছে আছে।
তারপর একটা ছবি আমার হাতে দিয়ে বললেন
– নাজমুল, আমি আর আমার কোলে যে ছোট্ট শিশু সেটা তুমি।
ছবিটা হাতে নিয়ে আমি উঠে চলে আসবো তখন উনি বললেন
– ছবিটা দিয়ে যাও। এই একটাই স্মৃতি আমার।
আমাকে জড়িয়ে ধরে মহিলা ডুকরে কেঁদে ফেলল। এই প্রথম কোনো নারীর কান্না আমি গভীরভাবে অনুধাবন করলাম। আমার বুকের মধ্যে ব্যথা করছিলো। অদ্রি এই মধ্যবয়সী মহিলা আমার মা কিনা তখনো জানতাম না। কিন্তু তার স্পর্শ আমাকে মায়ের অনুভূতি দিচ্ছিলো।
অদ্রি বলল
– তারপর কী করলেন?
নিদ্র মুচকি হেসে বলল
– বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম। বাবা আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন, ও ও ওই মহিলার সাথে তোমার সাক্ষাৎ ঘটেছে?
আমি বললাম, হ্যা। বাবা বললেন, সে তোমার জন্মদাত্রী। এখন কথা হচ্ছে, সে মা কিনা আমার সন্দেহ আছে। তা না হলে সে তোমাকে ১ মাসের রেখে চলে যেতেন না পুরোনো প্রেমিকের হাত ধরে।
এমনিতেই আমার অবস্থা ভালো ছিলোনা। এতদিন জেনে আসা সত্যটা হুট করে মিথ্যে হয়ে গেলো। বাবা যা বললেন তাতে তো আরো অবস্থা খারাপ হলো। বাবা আমার অবস্থাটা হয়তোবা কিছুটা বুঝেছিলেন। তাই বললেন – তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর ঠাণ্ডা মাথায় সব শুনবে।
আমি বললাম
– নাহ, এখনি শুনবো।
– তাহলে শুনো। আমি এখানে পড়তে এসে তোমার জন্মদাত্রীর প্রেমে পড়ি।আমি খুব কালো তাই সাদা চামড়ার প্রেমে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। আমি এখানে খুব ভালো একটা পজিশনে যাই। তারপর তোমার মাকে বিয়ের কথা বলি। সে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা বাধলো যে, বিয়ের ১ মাসের মাথায় তোমার জন্মদাত্রী তোমাকে গর্ভে ধারণ করে।
সমস্যাটা তখনি হলো তোমার মা তোমাকে রাখতে চাইলেন না। শেষে অনেক ঝামেলার পর রাজি হলো। তোমার জন্মের ১ মাসেই সে ডিভোর্স নিয়ে চলে গেলেন।
আমি বললাম – কারণ তো আছেই। মা তো অকারণে ছেড়ে যাননি।
– ছেলে মাকে পেয়ে বাবার সাথে তর্ক জুড়ে দিচ্ছো? সমস্যা নেই সত্য জানার অধিকার তোমার আছে।আসলে তোমার মায়ের পুরোনো প্রেমিক তখন এসে হাজির হয়েছিলো। ব্যাস চলে গেলো।
আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাবা আমাকে বললেন – তুমি এখন যাও। আমার ভালো লাগছেনা।
আমি বের হবার সময় বুঝতে পারলাম বাবা তার চোখ মুছছেন।
এই প্রথম আমি বাবাকে কাঁদতে দেখলাম। আমার আসলে মায়ের কথাটা জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হয়নি।
চলবে……!