তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-২০

0
1670

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ২০

মাত্রই প্লেনে উঠলো মেঘলারা৷
শোভনের পাশের সিট টাই মেঘলার, আর হায়াত ঐশী এক সাথে৷
হায়াত পাশে তাই ঐশী কাচুমাচু করে বসে আছে, আর মনে মনে মেঘলাকে হাজার গালি দিচ্ছে৷ এমন করে বসে থাকতে দেখে হায়াত মুখ চেপে হাসছে, মেয়েটা মাত্রাতিরিক্ত ভয় পায় ওকে এতোটা ভয় পায় কেন এটাই হায়াত বুঝতে পারে না৷

হায়াত বাকা হেসে ঐশীকে বলে,
— “এভাবে মুখ করে আছো কেন?
আর আমাকে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে?
আমি তোমার উডবি হাসবেন্ড কোনো বাইরের ছেলে না৷”

উডবি হাসবেন্ড কথাটা শুনে ঐশীর বুকটা ধক করে উঠলো, কেন এমনটা হলো তা ঐশীর অজানা৷
সত্যি তো হায়াত তো ওকে আর এখন বকছে না তাহলে ভয় পাচ্ছে কেন?
ও মানুক আর নাই মানুক এই মানুষ টার সাথেই তো বিয়ে ঠিক হয়েছে, আর না মানারি বা কি আছে?
হায়াত কে দেখে যে কেউ নির্দিধায় বলবে ও একজন ভালো ছেলে, হয়তো মাঝে মাঝে একটু বকে কিন্তু ভালোবাসে বলেই তো বকে৷

ঐশী কে ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে হায়াত কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে,
— “এভাবে তাকিয়োনা হৃদয় হরনী পাগল হয়ে যাবো৷
এমনি তোমার ওই চোখের মায়ার পরে দিনে দিনে পাগল হয়ে যাচ্ছি এখন এমন পাগল করো না যাতে সেই পাগলের পাগলামি তোমাকে সারা বছর সামলাতে হয়৷ ”

ঐশীর ভিত চেহারা নিমেষেই লজ্জায় ভরে যায়৷
লজ্জায় মাথা নিচু করে অন্য দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে, যেই হাসি হায়াতের চোখ এরায়নি৷ যে হাসির প্রেমে আগেও অনেকবার পরেছে যে হাসি ক্ষনে ক্ষনে ওকে পাগল করে তুলছে৷
সে হাসি আজও হায়াতের বুকে তীরের মতো হয়ে লাগছে, হায়াত মুচকি হেসে হ্যালান দিয়ে চোক বন্ধ করে তৃপ্তি মাখা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে৷

মেঘলা হেডফোন কানে গুজে চোখ বন্ধ করে গান শুনছে৷
আর শোভন মেঘলাকে দেখে তিন মাসের তৃপ্তি মোচন করছে, শোভন মেঘলার দিকে তাকিয়ে শত বছর পার করে দিতে পারবে৷ মেঘলাকে বুকে নিয়ে শত কষ্ট মোচন করে বছর পার করে দিতে পারবে৷


প্লেন মাত্রই বাংলাদেশে ল্যান্ড করলো,
সারা, নিলয় (রাজি বেগমের ছেলে) গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷
মেঘলা নিলয় কে একটুও পছন্দ করে না ছেলেটা মোটেও ঠিক স্বভাবের না চট্টগ্রাম থাকে সবসময় এখন হয়তো ঢাকা এসেছে শোভন মেঘলার বিয়ের জন্য৷
নিলয় শোভন কে দেখেই এসে জড়িয়ে ধরে সারা মেঘলাকে জড়িয়ে বলে,
— “কত্তদিন পরে দেখলাম তোমায়,
জানো কতটা মিস করেছি৷ ”

মেঘলা হেসে বলে,
— “আমিও তোদের মিস করেছি৷ ”

নিলয় মেঘলার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে শোভনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— “ভাইয়া তোর সবসময় সুন্দর জিনিস টার উপরি নজর যায়?
দেখে দেখে মেঘলাকেই বেছে নিলি?”

শোভন রেগে কিছু বলতে যাবে মেঘলা থামিয়ে দিয়ে বলে,
— “ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন ছোট ভাইয়া আমি কোনো জিনিস না আর আমি তোমার সম্পর্কে ভাবি হই ছোট মামি কি তোমায় এটাও শিখায় নি বড় দের সাথে সুন্দর করে কথা বলতে হয়৷ ”

মেঘলার উত্তরে নিলয় বাকা হাসে, শোভন মেঘলার এমন উত্তরে বেশ খুশি হয়েছে৷
ভাবছে
“তার বউটা তাহলে আস্তে আস্তে তার মতই ডেঞ্জারাস হচ্ছে৷ ”

বাড়িতে আসতেই পরিবেশটা বেশ আমেজি হয়ে আছে,
এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে এখন থেকেই বাড়ি সাজানো শুরু হয়ে গিয়েছে৷ শোভনের মা মাথা নিচু করে আছে নিজের কাছে নিজেরই এখন লজ্জা লাগছে৷
মেঘলা উনার সামনে যেতেই জোরপূর্বক হাসি টেনে মেঘলাকে নিজের কাছে বসিয়ে বলে,
— “আমার পাগল ছেলেটা যে তোকে ছাড়া অচল এটা আমি তখন ভুলেই গিয়েছিলাম, আমি জানি তখন তোর সাথে ওইরকম করা ঠিক হয় নি তাই কি আমাকে ক্ষমা করা যায় না?”

মেঘলা জড়িয়ে ধরে বলে,
— “ক্ষমা চাওয়ার কিছুই নেই তুমি তোমার জায়গায় সঠিক ছিলে তোমার জায়গায় যে কেউ থাকলে একি কাজ করতো৷ ”

রেহানা বেগমের কিছুটা শান্তি লাগছে এখন লজ্জার আভাটা কেটে প্রশান্তির হাসি মেখে মেঘলাকে এক হাতে জড়িয়ে বলে,
— “আমার ছেলেটাকে ভালোবেসে আগলে রাখিস মা ও যে তোকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে৷ ”

রেহানা বেগমের উত্তরে মেঘলা মুচকি হাসে৷
রাজি বেগম মেঘলা আসার পর থেকেই লোক দেখানো খাতির করছে আর মনে মনে দুরছাই করছে৷
নিচে সবার সাথে কথা বলে মাত্রই উপরে এসে ফ্রেস হয়ে বসলো নিজের রুমে৷
এই রুমটা ছোট থেকে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে কত দিন পর আবার এলো, বিছানায় বসে বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করতে কেউ এসে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে৷
তাকিয়ে দেখে শোভন কোথা থেকে এসে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে৷
তারাতারি নিজের দিকে তাকাতেই দেখে উরনাটা নেই উরনার উপরি শুয়ে আছে শোভন৷
মেঘলা আমতা আমতা করে বলে,
— “আমার উরনাটা দাও৷ ”

শোভন টান দিকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে শুইয়ে চোখ বন্ধ রেখেই বলে,
— “আমার সামনে এতো ফরমালেটির কিছু নেই বাইরের কেউ না আমি৷
এখন কথা বলো না প্লিজ ঘুমাতে দাও৷ ”

মেঘলা শোভনের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলে,
— “তোমার রুমে যাও এখানে কেউ দেখলে কি ভাববে?”

— “তুমি আমার বউ, কে আবার কি ভাববে?
এখন কথা না বাড়িয়ে ঘুমাও আমাকেও ঘুমাতে দাও প্লিজ৷ ”

বলে মেঘলার বুকে মুখ গুজে আরেক হাতে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরে৷ শোভন এমন ভাবে মেঘলার বুকে মুখ গুজে শোয়ায় বেশ অসস্থি হচ্ছে মেঘলার৷ কিন্তু কিছু করার নেই এই ছেলে যা ঘার ত্যারা জীবনেও সরবে না, তাই আর সরতে বলে না মেঘলা৷
চোখ খিচে বন্ধ করে নিজেও ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তা আর হচ্ছে না কেউ এভাবে শুয়ে থাকলে কি আর ঘুম হয়?
এ লোক সারা জীবন যে উঠতে বসতে মেঘলাকে জ্বালাবে তা মেঘলা বুঝে গেছে৷
বেশ অনেকক্ষন পর মেঘলার চোখ লেগে আসে৷

চৈত্রের শেষ সপ্তাহ চলছে, রোদে যেন পুরো শরীর পুরে যায় বাইরে এলে৷ প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেঘ ছেয়ে যায় আকাশে বৃষ্টি আসবে বলেও আসে না যার কারনে আরো ভাপ্সা গরম লাগে৷
বিকেল চারটা বাজে তাও রোদের উত্তাপ কমবে বলে যেন আরো বারছে, বাড়ি ভর্তি লোকজন বাড়ি আরো বেশি গরম হয়ে আছে আর দুদিন পরই বিয়ে তিনদিন হলো UK থেকে এসেছে প্রথম দুইদিন সবসময় মেঘলার কাছে কাছেই ছিলো৷
কিন্তু বিয়ে যত না ঘনিয়ে আসছে শোভন আরো ব্যাস্ত হয়ে পরছে, নিজের বিয়ের কাজে নিজেই ব্যাস্ত৷
মেঘলা ছাদে বসে কফি খাচ্ছে, গরমের জন্য ছাদে এসেছিলো খোলা বাতাসে কিন্তু আরো বিপত্তি ঘটলো রোদ কমার নামই নেই যেন৷
ঐশী বেরিয়েছে সারার সাথে৷
আপাদত মেঘলা ছাদে একাই আছে,

শোভন কাজ সেরে নিচে মেঘলাকে না দেখতে পেয়ে ছাদে আসে দেখে দক্ষিনা আকাশ পানে মুখ করে ধোয়া উঠা কফিতে চুমুক দিচ্ছে৷
রোদের মধ্যেও মেঘলার কফি খেতে বেশ লাগে, এই জিনিসটার প্রতি একটু বেশি আকৃষ্ট, কফির প্রতি নেশা টা মেঘলার বরাবরই বেশি৷
শোভন ক্লান্ত হয়ে ঢুলু ঢুলু পায়ে মেঘলার দিকে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘারে আলতো ভাবে ঠোট ছোয়ায়৷
শোভনের এমন কান্ডে মেঘলা একটুও অবাক হয় নি সে জানে আর কেউ না এটা ওর শোভনি৷
পিছনে ঘুরে মুচকি হেসে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,
— “কোথায় ছিলে?
এখন তো তোমায় দেখাই যায় না৷ ”

উত্তরে শোভন মিষ্টি হাসে ক্লান্ত শরীরেও তৃপ্তি মাখা হাসি দেয় এই ভেবে তার প্রেয়সি তাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে শুধু মুখে বলার অপেক্ষা৷
শোভনের কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো উরনা দিয়ে মুছে দিয়ে বলে,
— “এই প্রথম কাউকে দেখলাম নিজের বিয়ের কাজ নিজে করছে৷ ”

শোভন ব্রু কিঞ্চিত উচু করে বলে,
— “কেন?
নিজের বিয়ের কাজ কি নিজের করতে নেই?”

মেঘলা বলে
— “আমি কি বলেছি নেই? আমি বলেছি তোমাকেই প্রথম করতে দেখলাম৷ ”

শোভন মুচকি হেসে বলে,
— “আমার জন্য তুমিটা এতো স্পেশাল যে তোমার জন্য নিজ দায়িত্বে সব কিছু স্পেশাল ভাবে করছি হুর পরি৷
ভালোবাসি যে তোমায়৷
আমার এ ভালোবাসার অসীমতা আছে কিন্তু সীমা নেই৷ আমার অনুভূতি জুরে তোমার কথা মিশে থাকে প্রতিক্ষন৷

চলবে কি???🙄

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে