#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১৯
হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে দুজনেই তাকিয়ে দেখে হায়াত দাঁড়িয়ে আছে৷
মুখে বাকা হাসি, হায়াত কে দেখে ঐশী শুকনো ঢোক গিলে মেঘলার দিকে তাকায় মেঘলাও শয়তানি হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷
যাওয়ার আগে ফিসফিসিয়ে হায়াত কে বলে,
— “তোমার ভালোবাসা ও দেখে না তোমার ভালোবাসা টা দেখিয়ে দাও৷ ”
বলেই মেঘলা চলে যায়৷
হায়াত ঐশীর দিকে এগোতে এগোতে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
— “বুঝোনা কতটা ভালোবাসি তোমায়?
বুঝোনা তোমার উপর কেন এতোটা অধিকার দেখাই?
আমি যে তোমায় ভালোবাসি অনেকটা বেশি, সব কি বুঝিয়ে বলতে হয়?
কিছু কথা তো নিজের থেকেও বুঝে নিতে পারো তাই না?
ঐশী মাথা নিচু করে পিছনের দিকে এগোচ্ছে হঠাৎ হায়াত ঐশীর কোমর ধরে নিজের কাছে এনে বলে,
— ” ভালোবাসি ❤️”
হায়াতের প্রশ্নের উত্তর নেই ঐশীর কাছে তাই মাথা নিচু করেই আছে৷
হায়াত আবার বলে,
— “কাল আমাদের সাথে বাংলাদেশ যাবে তুমি,
তোমার সব ব্যাবস্থা আমি করবো৷
তোমার মা আর বড় ভাই কে ও আমি ম্যানেজ করবো৷ ”
মেঘলার সাথে যাওয়ার কথা শুনে, ঐশীর লজ্জা আর ভয় টা কেটে মুখে আনন্দের আভা ফুটে উঠে৷
উচ্ছাসিত কন্ঠে লাফিয়ে উঠে বলে,
— “সত্যি আমি যাবো?”
— “হুম”
হায়াত ছোট উত্তর দিয়ে ঐশীর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়৷
।
।
মেঘলা আনমনে হাটতে হাটতে কিছু ভাবছিলো৷
হঠাৎ হাতে টান পরায় ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে আসে পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে শোভন মিষ্টি হেসে দাঁড়িয়ে আছে৷
মেঘলা ফিরতেই শোভন মেঘলাকে প্রশ্ন ছুরে দেয় যা শুনে মেঘলা কিছুটা হকচকিয়ে যায়৷
শোভন বলে,
— “ভালোবাসো আমায়?”
আচমকা এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য মেঘলা সত্যি অপ্রস্তুত ছিলো৷
মেঘলা চায় না এমন করে এই উত্তর টা শোভন কে দিক৷ স্পেশাল কিছুর উত্তর তো স্পেশাল ভাবেই দেওয়া যেতে পারে৷
শোভনের কথা এরিয়ে গিয়ে শোভন কে পালটা প্রশ্ন করে বসে মেঘলা,
— “মামি রাজিতো বিয়েতে?
আমি গেলে কিছু বলবে না তো?”
শোভন বুঝতে পারে মেঘলা প্রশ্নটা এরিয়ে গেলো৷
মেঘলার এমন এরিয়ে যাওয়া দেখে শোভনের মনে ভুল ধারনার একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে, শোভন ভাবছে হয়তো মেঘলা এখনো তাকে ভালোবাসেনি৷ এতোদিন যা দূরত্ব ছিলো এমনটাই হয়তো হওয়ার কথা ছিলো৷
তার মায়ের কারনে আজ এমনটা হয়েছে, ও নিজের মা কে কখনই ক্ষমা করতে পারবে না৷
এতোদিন এমনটা না হলে মেঘলার মনে হয়তো একটু হলেও ভালোবাসা জন্মাতো তা ভাবলো শোভন৷
তিনটা মাস পাগলের মতো কাটিয়েছে৷ জ্ঞান ফেরার পর মেঘলাকে না দেখতে পেয়েতো সব ভাঙচুরই শুরু করে দিয়েছিল৷
মেঘলা এখনো যদি না ভালোবেসে থাকে না বাসবে তাতে শোভনের কিছু আসে যায় না৷
এসব ভেবেও হাল ছারবে না শোভন৷
না ছারবে মেঘলা কে কেননা মেঘলা যে ওর জীবনে প্রথম ও শেষ কথা, কিন্তু মেঘলা যে শোভন কে ভালোবাসে তা শোভনের অজানা৷
না জেনেই কত কিছু ভেবে ফেলছে৷
শোভন নিজে আর প্রশ্ন করে না দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মেঘলার প্রশ্নের উত্তর দেয়,
— “মা রাজি,
কিন্তু রাজি না হলেও আমার কিছু আসে যায় না এমনকি তুমিও যদি না করতে আবার জোর করে হলেও তোমাকে নিয়ে যেতাম কারন তুমি আমার৷ ”
এ ছেলে কখনো সোজা সাপটা উত্তর দিবে না৷
সবসময় ঘুরিয়ে পেচিয়ে উত্তর দিবে,
তাই আর কথা বাড়ালো না৷ এই ঘার ত্যারা মানুষ টা কে সারা জীবন কি করে সামলাবে তা নিয়েই মেঘলা ভাবছে৷
হঠাৎ শোভনের ফোন আসায় রিসিভ করে অন্য দিকে যেতে নিলেও ফোনটা হাত দিয়ে চেপে ধরে মেঘলার কাছে এসে বলে,
— “বিকেলে রেডি হয়ে থেকো বিয়ের শপিং করতে যাবো৷
সাথে হায়াত আর ঐশীও যাবে৷ ”
মেঘলা উত্তরে মুচকি হাসলো৷
মেঘলা ভাবছে সারা থাকলেও ভালো হতো, কিন্তু দেশে গিয়ে যেহেতু এক সপ্তাহ মধ্যেই বিয়ে ওখানে এতো ঝামেলা না করাই ভালো এখানে যখন আছে এখান থেকেই সবার জন্য কিনে নিয়ে যাবে৷
দেশে গেলেই হয়তো রাজি বেগম কথা শোনাবে৷
কিন্তু এবার মেঘলা মুখ বুজে শোনার পাত্রি না আগে ওদের বাড়িতে থাকতো বাবা ভাই কেউ কাছে ছিলো না তখন বিয়েটাও মানতো না এবার ওটা ওর নিজের বাড়ি৷
কেউ কিছু বললে শুনিয়ে দিবে৷
বিকেল চারটায় শপিং এ বেড়িয়েছিলো এখন রাত দশটা বেজে পনেরো মিনিট মাত্রই আসলো ক্লান্ত হয়ে যে যার রুমে চলে গেছে৷
কাল ঐশী মেঘলাদের সাথে যাবে তাই দুপুরে গিয়ে হায়াত আর মেঘলার বাবা গিয়ে ঐশীকে নিয়ে এসেছে৷
হায়াত আর ঐশীর বিয়ের কথাও বলেছে,
মেঘলার বিয়ের একমাস পরেই ওদের বিয়ে৷ কয়েকদিন পর ঐশীর ভাই আর মা দেশে ফিরবে৷
বিয়েতে ঐশী এখনো নিজের মতামত জানায় নি কিন্তু ভাই আর মা রাজি৷
ঐশীকে মেঘলার সাথেই ঘুমাতে বলেছিলো কিন্তু পরক্ষনে সবাই ঘুমাতেই শোভন এসে নিজের কাছে নিয়ে যায়৷
শোভন মেঘলাকে জড়িয়ে শুয়ে ছিলো হঠাৎ মেঘলা বলে,
— “আচ্ছা ওইদিন তোমাকে গুলি করেছিলো কে?”
শোভন বলে,
— “তা আমার আজো অজানা সব কিছু ভালোয় ভালোয় মিটুক ওইটা বের করবো ওইদিন কে এই কাজ করেছিলো৷ ”
মেঘলা আর কথা বাড়ায় না ঘুমের দেশে পারি জমায়৷ অনেক দিন পর এই বুকে ঠাই পেয়েছে আজ ভালোভাবেই ঘুম হবে৷
কতদিন এখানে ঘুমানোর জন্য মনটা বেকুল ছিলো৷
ফোনের এলার্ম এ ঘুম ভাঙে মেঘলার,
চার মাস আগে UK এসে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর এলার্মটা দিয়েছিলো এই চার মাস এলার্ম এর নিয়মেই ঘুম থেকে উঠতো৷
এই এলার্ম টা কাটতে ভুলে গিয়েছিলো তাই আজ এলার্মের নিয়মেই ঘুম ভাঙলো৷
বাংলাদেশ হলে পাখির কিচির মিচিরেই ঘুম ভেঙে যেতো৷
কিন্তু এখানে? সচারাচর পাখি চোখে পরে না আর গাছপালাও বাড়ির আসে পাশে খুব একটা নেই যে পাখি এসে বসবে৷
চোখ খুলে নিজের রুমে ঐশীর পাশে নিজেকে পায়৷
এটা দেখে মেঘলা খুব একটা অবাক হয় নি কারন জানে এটা হয়তো শোভনেরই কারসাজি৷
সে এসে হয়তো সকালে এখানে দিয়ে গেছে৷
এলার্ম টা এখনো বন্ধ না করে ভাবছিলো কথা ঐশী কানে বালিশ চেপে বিরক্ত মাখা কন্ঠে মেঘলাকে বলে,
— “উফফ মেঘু এলার্মটা বন্ধ কর না৷
নিজেতো সারা রাত ভালো করে বরের সাথে ঘুমিয়েছিস আমার তো একা ভয়ে ঘুমি আসেনি এখন প্লিজ ঘুমাতে দে না৷ ”
ঐশীর কথায় মেঘলা কিঞ্চিত হেসে এলার্মটা বন্ধ করে আরমোরা ভেঙে উঠে৷
নিচে নেমে ফ্রেশ হয়ে লাগেজ গোছাতে থাকে৷
আবার যে শোভনের সাথে দেশে ফিরবে তা মেঘলা ভাবতেই পারেনি৷
আবার ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকতে পারবে এটা ভেবেই মেঘলার মনটা আনন্দে ভরে যায়৷
চলবে,