তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৮

0
1772

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১৮

হসপিটালে সারা শরীরে ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় শুয়ে আছে ইরিনা৷
পাশেই শোভন বসে আছে কালকে রাতে কেউ ইরিনার চোখ বেধে খুব বাজে ভাবে মেরেছে৷
হাত পা তো পুরো ভেঙেই গেছে মাথাতেও অনেক চোট পেয়েছে৷
ইরিনার এখনো জ্ঞান ফিরেনি৷
ইরিনার বড় বোন ছাড়া UK তে আর কেউই নেই, বোন ওর পাশে বসে ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়েছে৷
সকাল থেকে শোভনের মোবাইলে মেঘলা ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু শোভনের কোনো খবরি নেই, মেঘলা জানে শোভন হসপিটালে আছেন তাই মেঘলাও হসপিটালে আসে৷
ইরিনার কেবিনে ঢুকেই বাকা হাসে মেঘলা৷

মেঘলা কে দেখে শোভন বলে,
— “তুমি এখানে?”

— “তোমাকে সেই সকাল থেকে ফোন করছি,
তুললে না কেন?”

— “ফোন তোলার প্রয়োজন মনে করিনি তাই তুলি নি৷ ”

শোভনের এমন কথায় বেশ খারাপ লাগে মেঘলার৷
তাই না দাঁড়িয়ে রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে পরে, শোভন ও মেঘলার পেছন পেছন ছুটে আসে৷
মেঘলার বাহু ধরে আটকিয়ে বলে,
— “তুমি ইরিনাকে মেরেছো?”

মেঘলা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
— “হুম তো?
আমার দিকে যখন কোনো ছেলে তাকায় ছোয় তাকে তো তুমি জানে মেরে দাও ওর ভাগ্য ভালো যে ওকে আমি জানে মারিনি৷ ”

শোভন রেগে বলে,
— “এটা একটু বেশি হয়ে গেলো না?”

— “বেশি হয়েছে মানে?”

মেঘলা রেগে বলে,
— “বেশি হয়ে যাচ্ছে মানে ও তোমার ফ্রেন্ড বলে?”

শোভন কিছু বলবে এর আগেই মেঘলা থামিয়ে বলে,
— “ইরিনাকে আমি একে বারে মেরে দেইনি,
কিন্তু তুমি? আকাশ ভাইয়া কে তো একে বারেই মেরে দিয়েছিলে তাও খুব বাজে ভাবে৷
ইরিনা তোমার ফ্রেন্ড কিন্তু আকাশ ভাইয়া তো তোমার ভাই ছিলো৷ ”

শোভন রেগে মেঘলার গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,
— “আমার কথা না শুনেই নিজের মতো বকে যাচ্ছো আমি একবারো বলেছি ও আমার ফ্রেন্ড বলে না মারতে?”
মেঘলা গালে হাত দিয়ে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে অনেক মানুষ তাকিয়ে আছে৷
ছলছলে চোখে একবার শোভনের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায়৷
শোভনও বুঝতে পারছে একটু বেশি করে ফেলেছে এটা করা ঠিক হয় নি৷

ভালোবাসার মানুষটাকে কেউই অন্যের সাথে দেখে সহ্য করতে পারে না৷
মেঘলাকে যদি এমন করে কেউ জড়িয়ে ধরতো এতোক্ষনে শোভন তাকে জানে মেরে দিতো৷ কিন্তু মেঘলা এমন করায় শোভন অকারনেই মেঘলাকে মারলো, নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে শোভন মেঘলার পিছনে ছুটে যায়৷
কিন্তু নিচে এসে মেঘলাকে পায় না৷
তাই গাড়ি নিয়ে নিজেই বেরিয়ে পরে৷

মেঘলার বাড়িয়ে এসে মেঘলার রুমের দরজা অনবরত ধাক্কাচ্ছে কিন্তু মেঘলা খুলছেই না, হায়াত ও বেশ রেগে গেছে শোভনের উপর৷
শোভন দিশা না পেয়ে রাতের মতো পাইপ বেয়েই মেঘলার রুমে আসে৷
রুমে ঢুকে দেখে নিচে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে৷
মেঘলার সামনে গিয়ে বসে বলে,
— “হুর পরি,,,,৷ ”

মেঘলা তাও কোনো কথা বলছে না৷
শোভন আবার বলে,
— “সরি ভুল হয়ে গেছে একটু বেশি করে ফেলেছি৷ ”
বলেই মেঘলার হাত ধরতে যাবে মেঘলা হাত ছিটকে ফেলে বলে,
— “ছোবে না আমায়,
কোন অধিকারে ছোও? অকারনে মারলে নিজের বেলা হলে তো আমায় শাস্তি দেও৷ ”

— “সরি বললাম তো৷ ”

— “কেন সরি বলছো লাগবে না কারো সরি,
চলে যাও এখান থেকে৷ ”

— “এবার একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সরি বললাম তো৷ ”

মেঘলা রেগে বলে,
— “প্রয়োজন নেই তোমার সরি,
আর সরি বলছো কেন?আমি তো তোমার স্টুডেন্ট, আমি তো তোমার বোন৷ ”

এবার আরো রেগে যায় শোভন রেগে আবারো থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷
মেঘলা রেগে বলে,
— “কেন এসেছো আবার আমার জীবনে?
মারতে? এতোদিন দূরে ছিলাম শান্তিতে ছিলাম আমি আবার চলে যাবো প্রয়োজন নেই তোমার৷ ”

মেঘলার মুখ চেপে ধরে বলে,
— “অনেক বুলি ফুটেছে মুখে?
এতোদিনের শাস্তির কথা কিন্তু আমি ভুলিনি৷
আর ওই মেয়ের জন্য তোমায় মারিনি আমি, আমি চাই নি তোমার হাতে কোনো কারো ক্ষতি হোক তা ছাড়া আমি অন্য কারনে রেগে ছিলাম কাল এতো রাতে ওখানে গিয়েছিলে তোমার ও বিপদ ঘটতে পারতো৷
আর হ্যা কি বললে? তুমি আমার স্টুডেন্ট? এর মানে কি?”

মেঘলা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
— “এর মানে তুমি জানো না?
তুমি তো ইরিনার কাছে পরিচয় দিয়েছো আমি তোমার স্টুডেন্ট, বাংলাদেশে তোমার বন্ধুর কাছে পরিচয় দিয়েছিলে আমি তোমার বোন৷”

শোভন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,
— “তখনতো তুমি আমায় এবং বিয়েটা মানতেই না তাই বলেছিলাম,
আর কলেজে তুমি আমার স্টুডেন্ট তাই ইরিনা কে বলেছিলাম, আর তোমার এই জেলাস টা দেখার জন্যই বলেছিম৷
আর তুমি বলো ওকে কি এভাবে মারা ঠিক হয়েছে? এতো রাতে কেউ যদি দেখে ফেলতো বা অন্য বিপদ হতো তোমার? তখন কে সামলাতো? আর আমি জানতাম ও না৷ ইরিনা কে মারার জন্য তোমায় মারিনি তোমার উপর রাগ হচ্ছিলো যে তোমাকে ও কিছু করে দিলে ও যেই রকম মেয়ে৷
প্লিজ সরি আম রেলি সরি জান৷ ”

মেঘলার কিছুটা রাগ কমেছে সত্যি কাল যদি ওর কিছু হয়ে যেত তখন কে বাঁচাতো? শোভন ও ছিলো না৷
আর সত্যি তো তখন ও বিয়ে টা মানতো না তাই হয়তো তখন বোন বলেই পরিচয় দিয়েছিলো৷
কিছু না বলে শোভনের সামনে থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে শোভনের সাথে কোন রকম কথা না বলে শুয়ে পরে৷



সকাল হতেই ফ্রেস হয়ে মেঘলা নিচে এসে দেখে হায়াত আর শোভন বেশ হেসে হেসে কথা বলছে৷ পাশে ঐশী মুখ গোমরা করে বসে আছে ভাবলো হায়াত হয়তো কিছু বলেছে৷
কিন্তু এতো সকালে ঐশী এখানে কি করছে? কলেজও তো কিছুদিন অফ৷
আর হায়াতেরি বা কি হলো শোভনের সাথে এমন হেসে হেসে কথা বলছে, পাশেই মেঘলার বাবা কারো সাথে ফোনে কথা বলছে৷
নিচে আসতেই ঐশী এসে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে,
— “মেঘু আমাকে ছেড়ে চলে যাবি?
আমি তোকে ছাড়া থাকবো কি করে?”

মেঘলা ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না তাই ব্রু কিঞ্চিত উচু করে বলে,
— “কোথায় যাচ্ছি আমি?”

হায়াত হেসে বলে,
— “বিয়ের পরে এতোদিন কেউ বাপের বাড়ি থাকে নাকি?
আমরা বাংলাদেশে যাচ্ছি আবার শোভন আর তোর বিয়েটা দিয়ে ওখানেই রেখে আসবো৷ ”

মেঘলা বেশ অবাক হয়ে শোভনের দিকে তাকায়, শোভন মিষ্টি হেসে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে৷
মেঘলার বাবা ফোন রেখে মেয়ের সামনে এসে বলে,
— “তোমার মামা আর মামির সাথে কথা বললাম ওনারাও চাচ্ছে তোমাদের বিয়েটা আবার হোক তাছাড়া আমাদের তো বয়স হয়েছে তাই না এবার তো নাতি নাতনি দের সাথে খেলার সময়, তোমরাও নিজেদের ভুল শুধরে নতুন ভাবে শুরু করবে৷ ”

বাবার এমন কথায় মেঘলা বেশ লজ্জা পেয়ে যায়৷
তাই এখানে আর দাঁড়ায় না ঐশী কে নিয়ে উপরে হাটা দেয়৷
মেঘলা ঐশীকে বলে,
— “আমাদের সাথে তুইও চল৷
আমার সাথে তোর বিয়ে টাও হয়ে যাবে৷ ”

মেঘলার কথায় যেন ঐশী বোকা বনে গেলো ব্রু কুটি করে বলে,
— “আমার বিয়ে?
তুই কি পাগল হয়ে গেছিস আমি কাকে বিয়ে করবো?”

মেঘলা মিষ্টি হেসে বলে,
— “কেন আমার ভাই টা কে কি তোর চোখে পরে না?
ওর ভালোবাসা তোর চোখে পরে না?”

ঐশী মুখ ফুলিয়ে মেঘলাকে বলে,
— “তোর ভাই আমাকে ভালোবাসেন?
কখনোই না ও তো পারেই শুধু বকতে৷ ”

— “ও তাই নাকি?”

হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে দুজনেই তাকিয়ে দেখে হায়াত দাঁড়িয়ে আছে৷
মুখে বাকা হাসি, হায়াত কে দেখে ঐশী শুকনো ঢোক গিলে মেঘলার দিকে তাকায় মেঘলাও শয়তানি হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷
যাওয়ার আগে ফিসফিসিয়ে হায়াত কে বলে,
— “তোমার ভালোবাসা ও দেখে না তোমার ভালোবাসা টা দেখিয়ে দাও৷ ”

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে