#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১১
এখন মেঘলার শোভনের বলা কথাটাই মনে পরছে,
“আমি মরে গেলে খুশি হবে হুর পরি৷ ”
রাজি বেগম মেঘলার সামনে এসে বলে,
— “এখন খুশি হলি তো?
আমাদের বড় ছেলেটাকেও খেয়ে ফেললি, কতই না ভালোবাসতো তোকে কিন্তু তুই?
তুই ছেলেটাকে অবহেলা ছাড়া এই কয়েকদিন কি দিয়েছিস?
এটাই তো চেয়েছিলি তাই না?
কি করেছিলো ছেলেটা, ভালোবেসে জোর করে বিয়েই তো করেছিলো৷ ”
শোভনের মা বসা থেকে উঠে এসে বলে,
— ” কাল সকালেই এখান থেকে চলে যাবি৷
ওইদিন কতই না বুঝিয়েছি তোকে কিন্তু আমার কথার ও মান রাখলি না তুই? তোর জন্যই হয়তো বাইরে গিয়েছিলো তখন এই অবস্থা হয়েছে৷
নাকি তুই মেরেছিস এটা নিয়ে এখন আমার সন্দেহো হচ্ছে৷”
নিজের মামির মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বলে,
— “মামি৷ ”
মেঘলাকে থামিয়ে আবার বলে,
— “যা বলছি তাই করবি, তুই তো চেয়েছিলি এখান থেকে আমার ছেলে থেকে দূরে চলে যেতে কালই এখান থেকে তুই চলে যাবি আমার ছেলে সুস্থ হওয়ার পর যা হবে আমি দেখে নিবো৷ ”
শোভনের বাবা রেগে শোভনের মা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
— “কি বলছো এসব?”
শোভনের মা রেগে চোয়াল শক্ত করে বলে,
— “আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি,
এই মেয়ে যদি ওই বাড়িতে যায় তাহলে আমি ওই বাড়িতে যাবো না৷ ”
শোভনের বাবা বলে,
— “তুমি জানো না তোমার ছেলে ওর জন্য কতটা পাগল?
তাও কেনো এমন করছো?”
— “আমি আমার কথা জানিয়ে দিলাম৷ ”
মেঘলা একা বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে,
— ” আমার জন্যই এমনটা হয়তো হলো৷
বিকেলে ওইরকম ভাবে অবহেলা না করলে হয়তো বের হতো না, কিন্তু আমি যতইটাই দূরে দূরে থাকি না কেন এমন টা তো চাই নি৷
তাহলে এমনটা কেন হলো? আমি চাই শোভন ভাইয়া ভালো থাকুক৷
মা মারা যাওয়ার পর শোভন ভাইয়াই একমাত্র মানুষ ছিলো যে এতোটা ভালোবেসে আমায় আগলে রেখেছিলো কিন্তু এই কয়েকটা দিনে সব যেন এলোমেলো হয়ে গেলো৷ ”
হঠাৎ নার্স এর ছুটে আসায় ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে মেঘলা৷
নার্স এসে বলে,
— “আপনাদের পেসেন্ট রেসপন্স করছে৷
কিন্তু কাউকে একটা খুজছে কেউ একজন চলুন৷ ”
মেঘলা উঠে যেতে নিয়েও থেমে যায়, কারন মেঘলাকে শোভনের সামনে যেতে না করেছিলো৷
রেহানা বেগম ডক্টর এর সামনে যেতেই ডক্টর বলে,
— “মেঘলা কে?
পেসেন্ট মেঘলাকে খুজছে৷ ”
ডক্টর কে রেহানা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বলে,
— “মেঘলা নেই চলে গেছে৷ ”
— “কিন্তু৷ ”
— “আমি যাবো ও সুস্থ হলে আমি বুঝিয়ে বলবো আপাদত আপনি ওকে সুস্থ করুন৷”
ডক্টর কিছু না বলে চলে যায়৷
অন্ধকার রাত পোহাতেই দিনের আবছা আলো ফুটছে৷ তেমন শোভনও অন্ধকার মৃত্যুর মুখ থেকে একটু একটু করে ফিরে আসছে৷
আজান দিতেই হসপিটালে মেয়েদের নামাজের জায়গায় গিয়ে নামাজ পরে কেবিনের বাইরে থেকে এক নজর শোভন কে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে পরে৷
— “হয়তো আর দেখা হবে না, শোভনও হয়তো আর পাগলামি করবে না মায়ের কথা মেনে নিবে৷ সত্যি কি মেনে নিবে? ভুলে যাবে তার হুর পরি কে?
তাহলে এই বিয়ের কোনো ভবিষ্যত নেই?
আমার কাছে তো এই বিয়ের কোনো মূল্যই ছিলো না তাহলে আজ কেন আমি এই বিয়ের কথা ভাবছি?
আমি কি ভুলতে পারবো বিয়ের কথা?
ভুলতে পারবো শোভন ভাইয়ার এই #তিক্ত_ভালোবাসা কথা?
এতোদিন তো এসব আমার ভাবনার বাইরে ছিলো তবে আজ কেন ভাবছি? তাহলেকি শোভন ভাইয়ার #তিক্ত_ভালোবাসা নিকেকে অর্পণ করে দিলাম?
আজ মনের কোনে কেন এমন অদ্ভুত অনুভূতি নারা দিচ্ছে?
এ অনুভূতির নাম কি দিবো? #তিক্ত_ভালোবাসার তিক্ত অনুভূতি? ওর পাগল করা ভালোবাসা কি আমাকেও পাগল করে দিচ্ছে? কিন্তু কি লাভ?
আমার কারনেই হয়তো এই অনুভূতি, এই বিয়েটা সারা জীবনের জন্য দীর্ঘশ্বাস হয়েই রইলো৷ ”
______________________________________
ডাইরিটা বন্ধ করে করে ঐশী মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— ” ইসসস ইয়ার আমার তো শোভন কে দেখতে ইচ্ছে করছে,
তুই কি করে ৪ মাস এই সাইকো কে রেখে এই UK তে আছিস? ইসস আমি তো পরেই ওর উপর ফিদা হয়ে গেছি৷
কিন্তু জানিস ব্যাপার টা কেমন রহস্য রয়ে গেলো, কি হয়েছিলো চার মাস আগে?
কে শোভন ভাইয়াকে গুলি করেছিলো? আর বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিলো?
আচ্ছা মেঘু শোভন ভাইয়াকি জানে তুই UK আছিস তোর বাবার কাছে চার মাস ধরে?
জানলে হয়তো এখানেও এন্ট্রি নিতো যা সাইকো ছিলো৷ ”
ঐশীর কথা শুনে মেঘলা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জোরপূর্বক হাসি টেনে বলে,
— “হয়তো জানে মামি হয়তো সামলে নিয়েছে,
হয়তো আমায় ভুলে গেছে৷
আর ভুলবেই না কেন? আমি কম কষ্ট দিয়েছিলাম?
কতই না অবহেলা করেছি কিন্তু সে যা করেছে আমার জন্য৷
সবার ভালোবাসার ধরন এক হয় না কিন্তু আমি তো ওর ভালোবাসাই বুঝতে পারিনি৷ ”
ঐশী বলে,
— “সত্যি কি তাই?
আচ্ছা মেঘু তুই কি শোভন ভাইয়াকে ভালোবাসিস?
ঐশীর উত্তরে মেঘলা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে,
এটা ছাড়া ওর জীবনে আর কিছুই নেই হয়তো৷ নিজের দোষে হারিয়ে এখন নিজেকেই পস্তাতে হচ্ছে৷
না পারছে ঠিক মতো বাঁচতে না পারছে মরতে, সারাক্ষন শোভনের ভালোবাসার স্পর্শ, ভালোবাসায় মাখা কথা সেই তিক্ত শাস্তি যে মেঘলাকে ধাওয়া করে কিন্তু কেন?
কেন ভুলতে পারছে না? তাহলে কি ও নিজেও ভালোবেসে ফেললো?
ঐশী আবার বলে,
— ” শোভন হয়তো জানে না তুই এখানে আছিস৷
জানলে হয়তো UK এন্ট্রি নিবে আবার তোকে শাস্তি দিবে ইসসস আমি তো তখন দেখবো আর শিতি বাজাবো৷ ”
বলেই হাতে তালি দেয়৷
মেঘলা কিছুখন ব্রু কুচকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বিরবির করে ” আই উইস” কথাটা বলে ঐশীর সামনে থেকে প্রস্থান করে
সেদিন মেঘলা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে ওর ফুপির বাড়িতে উঠেছিলো সেখান থেকে পনেরো দিন পর বাবার কাছে UK চলে আসে ফুপাতো ভাই এর সাথে৷
চলবে,