#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১০
কোনো রকম ভাবে হাতাটা উঠিয়ে সে জায়গাটা দেখেই বুকের ভেতর ছেত করে উঠে মেঘলার৷ জায়গাটা বেন্ডেজ করা বেন্ডেজের উপর দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে৷
কিন্তু কি হয়েছে?
শার্টের কয়েকটা বোতাম খোলা বাম পাশে কাধ থেকে কিঞ্চিত নিচে আবছা রক্তের দাগ বাকি বোতাম গুলো খুলে যায়গাটা উনমুক্ত করার পর মেঘলা আবার আতকে উঠে অনেকটা কাটা দাগ৷
শোভন বাড়ি থেকে অন্য শার্ট পরে বের হয়েছিলো কিন্তু এই শার্ট শরিরে কেন?
আর কি বা হলো এভাবে হাতে গুলি লেগেছে কি করে?
ও আরো তিন কি চার ঘন্টা আগে বের হয়েছিলো এতোখন কোথায় ছিলো?
ওর তো চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিলো তাহলে?
মেঘলার মাথায় কিছুই ঢুকছে না কি হয়েছেজ রাস্তায় কি কোনো বিপদ হয়েছিলো?
হাতের তালু দিয়েও রক্ত পরছে তখন ফ্লাওয়ার বাস্কটা ভেঙে নিজের হাতে চেপে ধরেছিলো যার কারনে অনেকটা কেটে গেছে৷
শোভনের এমন অবস্থা দেখে মেঘলার বুকের ভেতর কেমন চিন চিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে, কিন্তু কেনো?
শোভনের এই অবস্থায় মেঘলার কষ্ট হচ্ছে কেন?
মেঘলা হন্তদন্ত হয়ে ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে শোভনের রক্ত মুছে দিতে লাগে৷ কিন্তু রক্ত মুছার সাথে সাথে আরো বেরিয়ে আসছে৷ বুকের ক্ষতটা অনেক,
কি করবে মেঘলা বুঝতেই পারছে না৷
ডেস্কের উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে শোভনকে পানির ছিটা দিচ্ছে কিন্তু চোখ খুলছেই না৷
মেঘলা ফুপয়ে ফুপিয়ে কাদছে আর বলছে,
— “শোভন ভাইয়া প্লিজ চোখটা খুলো৷ ”
মেঘলা এতো ডাকছে তাও শোভন চোখ খুলছে না৷ আবারো পানির গ্লাসটা নিয়ে পানির ছিটে দেয় কিন্তু কিছুই হচ্ছে না৷
এখন কাউকে ডাকতে হবে একা কিছু করতে পারছে না৷ মেঘলা ছুটে বাইরের দিকে যেতে নিলেই ওর ওরনায় টান পরে পিছনে তাকিয়ে দেখে শোভন ধরে আছে৷
চোখ পুরোপুরি খোলা না হাত দিয়ে ধরে আছে৷
শোভনের সামনে গিয়ে বসে বলে,
— “ভ ভাইয়া কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার?
বলো প্লিজ৷ ”
শোভন চোখ বন্ধ রেখেই জোর পূর্বক হাসি টেনে বলে,
— ” আমি মরে গেলে খুশি হবে হুর পরি?”
শোভনের এমন কাপা কাপা কন্ঠে এমন কথায় ধক করে উঠে বুকটা,
পুরো শরীর কেপে উঠে৷
শোভন আবার বলে,
— “আমি তো তোমায় এতোদিন কতই না কষ্ট দিলাম,
এই জন্য আজ আমার থেকে পালাতেও চাইছিলে তাই না?
চিন্তা নেই আর পালাতে হবে না৷
আমারি হয়তো আর বাচা হবে না এবার তুমি মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে উরতে পারবে বাধা দেওয়ার জন্য এই শোভন থাকবে না৷
এতো দিন তোমাকে অনেক মেরেছি পারলে ক্ষমা করে দিও৷ ”
শোভন একটু থেমে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে দেখিয়ে আবার বলে,
— ” অনেক কষ্ট হচ্ছে ঠিক এইখান টায়৷
তবে কষ্টটা এই ছুরি দিয়ে আঘাত করা এই দাগের নয় কষ্টটা তোমার দেওয়া৷
কেন যানো?
আমি খুব ভরসা করে তোমাকে এখানে রেখে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম৷ কিন্তু আমার ভরসা পুরো পুরি ভুল ছিলো৷
যাওয়ার আগে ভেবেছিলাম হয়তো আমার হুরপরি আমার রাগ গুলোকে আপন করতে শিখছে৷
আমার হুর পরি পালাবে না৷
কিন্তু আমি সম্পুর্ন ভুল ছিলাম তুমিতো কখনো আমাকে ভালোই বাসো নি হয়তো আর বাসবেও না তাই না?
তবে যে এই গুলিটা আর ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে সে অজান্তেই আমার অনেক উপকার করলো৷
এইসব না করলে হয়তো বাড়িতে আসতে পারতাম না আর তোমায় আটকাতেও পারতাম না৷
খুব ইচ্ছে ছিলো তোমায় নিয়ে বাচার জোর করে হলেও তোমাকে নিজের কাছে রাখতাম৷ হয়তো তা আর হওয়ার নয়৷
আমি যদি মরে যাই তুমি মুক্ত৷
কিন্তু কোনো মতে আমি যদি বেচে যাই তবে তোমাকে যে আবার আমার যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে হুর পরি৷ ”
বলেই বাকা হেসে শোভন আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে৷
মেঘলা এক ধ্যানে কথা গুলো শুনছিলো হঠাৎ থেমে যাওয়ায় শোভনের দিকে তাকায় দেখে শোভনের কোনো সারা শব্দ নেই৷
আবার পানির ছিটে দেয় কিন্তু না মেলছে না৷ হাতের থেকে অনেকটা রক্ত ক্ষরন হচ্ছে এখনো৷
মেঘলা শোভনের মুখ চাপরে বলে,
— “শোভন ভাইয়া চোখ খুলো৷
প্লিজ চোখটা খুলো৷ ”
শোভন আর এবার চোখ খুলছে না৷ তাহলে কি শোভনের কিছু হয়ে গেলো?
মেঘলা ছুটে বাইরে বেরিয়ে শোভনের মা আর বাবা কে ডাকতে লাগে৷ কিন্তু পরক্ষনেই মনে পরে বাড়িতে তো কেউ নেই৷
কি করবে একা এখন?
মেঘলা ড্রাইভ ও ভালো পারে না৷
নিচে গিয়ে ড্রাইবারকে ডেকে তুলে গাড়ি বের করে উপরে আসতে বলে৷
উপরে এসে দেখে আরো বেশি রক্ত পরছে৷
অপরেশন থিয়েটারের সামনে মেঘলা পাথরের ন্যায় বসে আছে৷
কি হয়ে গেলো কিছু জানে না৷
বাড়ির সবাইকে ফোন করেছে তারা আশ্রম থেকে বেরিয়েছে৷
।
।
শোভনের মা আসতেই কান্নাকাটি জুরে দিয়েছে৷
রাজি বেগম মেঘলার আসার পর থেকেই ঠেস মেরে মেরে কথা বলছে৷ বাড়ির সবাই বসে আছে৷
মেঘলা দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে৷
দীর্ঘ চার ঘন্টা পর অপরেশন থিয়েটার থেকে চিন্তিত মুখ নিয়ে বেরিয়ে আশে ডক্টর৷
ডক্টর কে দেখেই শোভনের বাবা বলে,
— “আমার ছেলে ঠিক আছে?”
ডক্টর গম্ভীরমুখে বলে,
— ” হাত আর বুক থেকে অনেকটা রক্ত ক্ষরন হয়েছে যার কারনে এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না৷
আদৌ কি বাচাতে পারবো কি না এটা নিয়েও বেস সন্দেহে আছি৷ আপাদত আইসিইউতে সিফট করে দিচ্ছি৷ ”
বলেই ডক্টর অন্য দিকে চলে যায়৷ মেঘলা দাঁড়ানো থেকে ফুপিয়ে কেদে উঠে সেখানেই বসে পরে৷
এখন মেঘলার শোভনের বলা কথাটাই মনে পরছে,
“আমি মরে গেলে খুশি হবে হুর পরি৷ ”
চলবে৷