তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
1809

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ০৫

মেঘলা কাপা কাপা হাতে সাইন টা করে দেয়৷ শোভন ও বেহায়ার মতো খুশি খুশি সাইনটা করে দেয়৷
কি অদ্ভুত একটা সাইনেই জীবন টা পালটে গেলো কয়েকটা দিকে জীবনটা কেমন অগোছালো হয়ে গেলো৷
যার বুকে মাথা রেখে শান্তিতে থাকতে পারতো মেঘলা আজ তাকে দেখলেই ভয় করে৷
মেঘলা অন্য দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
— “জোর করে বিয়ে করে নিলেও তোমাকে কখনো ভালোবাসবো না আমি শোভন ভাইয়া,
এমনটা না করলেও পারতে৷ ”

শোভন বাকা হেসে বলে,
— “আমি কি করবো না করবো এটা নিশ্চয়ই তোমার কাছে শিখতে হবে না৷ ”
শোভন ইশারা করে লোকদের প্রিয়াকে ছারতে বলে৷


শোভন মাত্রই মেঘলাকে নিয়ে নিজের বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো,
মেঘলার ভেবেই খারাপ লাগছে বাড়ির ভিতরে গেলে সবাই কি রিয়েকশন করবে৷
বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখে সবাই সোফায় বসে আছে৷
আজ মেঘলার বাবাও এসেছে দেশের বাইরে থেকে, এতোদিন পর বাবা কে দেখে দৌরে গিয়ে ঝাপটে ধরে ফুপিয়ে কাদছে৷
শোভনের মা মাথা নিচু করে মেঘলা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
— ” এভাবে কাদিস না মা!!
আমার ছেলেটা একটু রাগী মানিয়ে নিস প্লিজ৷
যত যাই করুক ও তোকে ভালোবাসে একটু মানিয়ে নিস৷ ”

মেঘলা রেহানা বেগমের কথা শুনে অবাক তার মানে সবই জানে?
খুনের কথা কী জানে?
মেঘলা রেগে বলে,
— “মামি তুমি জানো না তোমার ছেলে খু,,,৷ ”

শোভন মেঘলা কে থামিয়ে রেগে কটমট করে বলে,
— “অনেক ধকল গেছে রুমে আয়৷ ”

বলে মেঘলার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়,
মেঘলা রেগে বলে,
— “এখানে নিয়ে এলে কেন?আর নিচে কিছু বলতে দেও নি কেন?”

শোভন বলে,
— “সব কৈফিয়ত কি তোকে দিতে হবে নাকি?
আর এসব কথা নিয়ে বারাবারি করলে পরিনাম খারাপ হবে৷
আর তুই আমার বউ এখানে থাকবি না তো কোন রুমে থাকবি?”

— “আমি তোমার সাথে কিছুতেই থাকবো না এক রুমে৷ ”

শোভন কিছু বলবে এর আগেই শোভনের মা রেহানা বেগম বলে,
— “ঠিক বলছে মেঘলা এখনো যথেষ্ট ছোট তা ছাড়া কয়েক মাস পরই ওর ফাইনাল পরিক্ষা৷
পরিক্ষা শেষে তোদের আমি আবার বিয়ে দিবো, ততোদিন তোমরা আলাদাই থাকবে৷ ”

রেহানা বেগমের কথায় যেন মেঘলা খুশি হয়ে গেলো৷
— “কয়েক মাস পর এই খুনিকে বিয়ে করবে কে?
আমি তো পালাবো৷ ” (মনে মনে)
মেঘলা বাকা হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷

রুমে গিয়েই জামাকাপর নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় এই কয়েকটা দিন কতোই না থাপ্পড় খেয়েছে৷
গাল গুলো এখনো লাল হয়ে আছে৷
লম্বা সাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াসরুমের বাইরে পা রাখতেই হেচকা টান দিয়ে হাত চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে কোমর চেপে ধরে বলে,
— “মায়ের সামনে কিছু বলিনি বলে মনে করিস না আমি আলাদা থাকবো, সময় হলে ঠিক তোর কাছে চলে আসবো আর কেও টেরও পাবে না৷ ”

মেঘলা ধাক্কা দিতে দিতে বলে,
— “আমি এক্ষুনি মামি কে বলছি দাড়াও৷
আর তুমি এতোটা নির্লজ্জ হলে কবে থেকে?
অন্য একটা মেয়ের সাথে ঘুমাতে তোমার লজ্জা করবে না?”

শোভন বাকা হেসে বলে,
— “তুই অন্য একটা মেয়ে হলি কি করে?
তুই তো আমার বউ৷
তাছাড়া ওইদিন রাতে ভয় পেয়ে কিন্তু আমায় জরিয়ে ছিলি মনে আছে?
ওইদিন তোর লজ্জা করেনি?”
বলেই চোখ টিপ দেয়, মেঘলার এখন সত্যি অসস্তি হচ্ছে৷ ওই দিন ভয় পেয়ে জরিয়ে ছিলো এখন এটা বলার কি আছে?

লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে শোভন কোমর চেপে আরেকটু সামনে এনে সামনে থাকা চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
— ” হুর পরি!!
তোমার এই সামনে থাকা কাটা কাটা চুল থেকে টপ টপ করে পানির ফোটার উপর কতটা হিংসে হয় আমার জানো?
কেমন মুখ বেয়ে গোলাপের পাপরির মতো ঠোঁট গুলো কে বেহায়ার মতো ছুয়ে দেয়,
তোমার ঠোঁটের নিচে থাকা তিলটা কতটা আকৃষ্ট করে আমায় তা কি তুমি জানো? বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে কোমর ছাড়ানো চুল গুলো যখন দোলে বুকের মাঝে কতটা ঝড় সৃষ্টি হয় তুমি জানো?
খুশি হয়ে যখন ঝাপটে জরিয়ে ধরো আমার মনের উথাল পতন কি তুমি শুনতে পাও না?
তখন আমার প্রতিটা হৃদ স্ফন্দন যে বলে “ভালোবাসি হুর পরি”
তুমি যখন তোমার টিয়া পাখিটাকে হাতে নিয়ে আদর করো আর সে যখন তোমার ওই কাধে এসে বসে ওই পাখিটার উপর বড্ড রাগ হয় আমার,
কেননাও যে তোমায় ছোয়া দেয়৷
ইচ্ছে করে ওকেও শেষ করে দেই কারন তুমি যে পুরোটা আমার৷
তোমাকে ছোয়ার অধিকারও আমার তোমাকে ভালোবাসার অধিকারও আমার আমার ভালোবাসায় মেশানো শাস্তি গুলো দেওয়ার অধিকারও আমার৷
যেখানে একটা পাখি তোমাকে ছুলে সেটাও সহ্য করতে পারিনা কোনো ছেলে তোমাকে ছুলে সহ্য করবো কি করে?”

মেঘলা তিক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
— “এই জন্য খুন করবে?
আকাশ ভাইয়া না তোমার আপন চাচাতো ভাই হয়?
এ কেমন ভালোবাসা শোভন ভাইয়া?
এ ভালোবাসা আমি চাই না যে ভালোবাসায় শুধুই হিংস্রতা বিরাজ করে৷
আমার কাছে আসবে না তুমি,
আমাকে ছোবে না তোমার ছোয়ায় আমার শরীর ঘিন ঘিন করে আমি ঘৃনা করি তোমায়৷ ”

শোভন রেগে শক্ত করে মেঘলার কোমর চেপে ধরে বলে,
— ” তুই আমার আমি তোকে ছুয়ে দিবো,
ভালোবাসবো শাস্তিও দিবো এতে তুই যাই বল তোর কথা আমি শুনবো না কারন তোর উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে৷
তুই আমার বউ৷ ”
বউ কথাটা শোনার সাথে সাথেই মেঘলার বুকটা ধক করে উঠলো,
মেঘলা মানুক আর নাই মানুক মেঘলা তো সত্যি শোভনের বউই৷

মেঘলা শোভন কে ধাক্কা দিয়ে বলে,
— “প্লিজ আমায় একা থাকতে দাও একটু৷ ”

শোভন সামনে গিয়ে কোমর ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে গভীর ভাবে ঘাড়ে ঠোট ছুইয়ে মুচকি হেসে বাইরে চলে যায়৷
রাতে বারান্দায় বসে ব্যস্ত শহরের কোলাহল পূর্ন পরিবেশ দেখছিলো আর জীবনের সমীকরণ মেলানোর চেষ্টায় ছিলো কিন্তু ফল সরুপ প্রতিবারই গভীর চিন্তায় পরে যাচ্ছে৷
কি হবে ভবিষ্যত?
এ বিয়ের ভবিষ্যত কী?
ভাবছে চলে যাবে কিন্তু তা কী আদৌ সম্ভব?
হ্যা সম্ভব হবে না কেন?
নিশ্চই হবে একজন খুনির সাথে কখনোই সংসার করা যায় না৷
কিন্তু পালাবেই বা কি করে? শোভন সাথে থাকলে কখনোই সম্ভব না৷

পিছন থেকে কেও জরিয়ে ধরায় মেঘলার ভাবনার ছেদ পরাতেই পিছে ঘুরে তাকায়, প্রথমত ভয় পেলেও পরক্ষনেই রেগে বলে,
— “এমন জরিয়ে ধরেছো কেন?
সরো পিছন থেকে অসস্তি হচ্ছে৷ ”

মেঘলার গলায় ঠোট ছোয়াতে ছোয়াতে শোভন বলে,
— “আগে যখন হুট হাট জরিয়ে ধরতি, আমার বুকে মাথা রেখে মন শান্ত করতি বুকের মাঝে যে ঝর তৈরি হতো তখন তো তোকে বলিনি সরতে৷
তাহলে কেন এমন করছিস?
তোর এমন দূরে দূরে থাকাটা আমার কতটা কষ্ট হয় তা কি তুই বুঝিস না?”

— “যে বুকে আমি সুখ খুজে পেতাম সে বুকে মাথা রাখলে ভয় হয় আমার শোভন ভাইয়া৷
তুমি যে আর আগের তুমি নেই৷ ”

শোভন কিছু না বলেই দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বাইরে চলে যায়৷
মেঘলা সেখানে বসেই ফুপিয়ে কাদতে থাকে৷
রেহানা বেগম শোভন কে এমন চলে যেতে দেখে ঘরে গিয়ে কিছু একটা নিয়ে মেঘলার রুমে আসে৷
মেঘলার সামনে বসে একটা বক্স থেকে দুটো চুরি আর নাকের ফুল মেঘলাকে পরিয়ে দিয়ে বলে,
— “আমি জানি আমার ছেলেটা আর আগের মতো নেই আর আকাশের মৃত্যুর জন্য ও কোনো না কোনো ভাবে আমার ছেলেটা জরিয়ে আছে৷
আমি আমার ছেলেকে নিরঅপরাধী বলবো না অপরাধী ও বলবো না৷
আমি জানি না কি করছে ও
কিন্তু একটা কথা কি জানিস মা সব কিছুর পিছনে কোনো না কোনো কারন থাকে, সেটা হয়তো তুই আমি বা কেউই জানি না যখন জানবো হয়তো ভুল গুলো বুঝতে পারবো৷
একটাই কথা বলতে চাই আমার ছেলেটা সত্যি তোকে খুব ভালো বাসে জানি না তুই কখনো ভালো বাসতে পারবি কি না কিন্তু ওর থেকে দূরে চলে যাস না মা ও মরে যাবে৷”

মেঘলা কোনো উত্তর দেয় না হয়তো রেহানা বেগমের কথাগুলো ওর ভালো লাগছে না৷


সময় কিভাবে চলে যায় বোঝাই জায় না,
ফাল্গুন মাস পেরিয়ে চৈত্র মাসের প্রথম দিক ভাপ্সা গরম পরেছে সকাল বেলা রোদ থাকলেও বিকেলের দিকটা আকাশ অন্ধকার হয়ে আসে৷ বৃষ্টি আসবে আসবে করেও আসে না যার কারনে আরো বেশি গরম লাগে৷
গধুলির শেষ প্রহর মেঘলা ছাদে বসে পূর্ব দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে বিয়ের আজ তিন দিন হতে চললো প্রথম দিন শোভন সারাদিন বাড়িতে থাকলেও দুদিন যাবত ভালো করে দেখা হয় না৷
মেঘলা খুব শান্তিতেই আছে এই জন্য,
কিন্তু মেঘলার সব দিক দিয়ে খেয়াল রাখে ফোন করে আর মেঘলা ফোন দেখে বিরক্ত নিয়ে রেহানা বেগমের হাতে দিয়ে আসে৷
মেঘলার এমন ইগনোর শোভনের সহ্য হয় না কাল থেকে আবার কলেজে যাবে মেঘলা৷ হঠাৎ পিছন থেকে কেও চুল টেনে ধরায় আতকে উঠে মেঘলা কিছু বলবে এর আগেই দেখে দুটো মেয়ে সামনে দাড়িয়ে আছে মেয়ে দুটো কে দেখে খুশি হয়ে জরিয়ে ধরে বলে,
— “সারা, কাব্য তোরা?
কখন এলি?”

সারা শোভনের বোন আর কাব্য মেঘলার ছোট মামি রাজির মেয়ে,
সারা বলে,
— “এইতো ভাবিজি মাত্র এলাম৷ ”

মেঘলা ব্রু কুটি করে বলে,
— “ভাবিজি? কে ভাবি হুম?”

— “কে আবার তুমি৷ ”

মেঘলা হাত ভাজ করে বলে,
— “এই ভাবি টাবি বললে মারবো আপুই বলবি,
তো এতোদিন পর আসার কথা মনে পরলো তোদের?”

সারা বলে,
— “আমরা একা না কয়েক দিন পর ইরিনা আপু ও আসবে৷
তোমার জামাইটারে সামলে রেখো জানোই তো ইরিনা সাকচুন্নির আমার ভাইটা উপর নজর বেশি৷ ”

মেঘলা উত্তরে কিছু বললো না বাকা হাসলো৷
আজ কে রাত টা ওদের সাথে ভালোই কাটলো মেঘলার সাথে ওরা দুইজন সোয়াতে শোভনের জালা গুলো সহ্য করতে হয়নি৷


আজ সকাল সকাল উঠেই মেঘলা শাড়ি পরে রেডি হয়ে নেয়৷
কলেজে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী দের নবীন বরন অনুষ্টান অতিথি হিসেবে শোভন দের ও ডাকা হয়েছে৷
শোভনের বাবার বন্ধু প্রিন্সিপাল আবার শোভনের ও রাজনীতি তে নাম ডাক আছে৷
শোভন নীল পাঞ্জাবি পরে চুল ঝারতে ঝাড়তে মেঘলার রুমে এসে বলে,
— “হুর পরি তারাতারি রেডি হয়ে নাও শাড়ি পরার প্রয়োজন নেই তুমি একদম শাড়ি সামলাতে জানো না৷ ”
বলতে বলতে সামনে তাকাতেই দেখে মেঘলা নীল শাড়ি পরেই আছে৷
আয়নার দিকে তাকাতেই শোভনের ঘোর লেগে যায় ভেবেছিলো একটু বকবে কিন্তু তা আর হলো কই?
শোভন কে এভাবে এগোতে দেখে মেঘলা বলে,,

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে