তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
1765

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ০৪

সাজ্জাদের কথা শুনেই শোভনের মাথায় রক্ত চরে যায়,
রেগে জোরে মেঘলার গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,
— “বার বার না করেছি তোমার মুখে আমি অন্য ছেলের কথা শুনতে চাই না তাও তুমি ওই সাজ্জাদের কথা বলছো?
এর পরিনাম কত ভয়াবহ হবে তুমি জানো?
ওই সাজ্জাদ কে আমি শেষ করে দিবো, বাঁচতে দিবো না…

বলেই আরো বেশি রেগে মেঘলার মুখ চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে, মেঘলা হাত দিয়ে সরাতে চাইলে হাত মুচড়ে পেছনে ধরে বলে,
— ” খুব তেজ হয়েছে?
এই তেজ আমি শেষ করবো৷
কতবার বলেছি তুমি শুধু আমার,
হ্যাঁ তুমি শুধু এই শোভনের৷ আমার থেকে পালানোর চেষ্টা করো না মারবো না তোমায় কারন তোমায় মারলে নিজেই শেষ হয়ে যাবো৷
তোমায় শাস্তি দিবো কঠিন ভাবে৷ ”

মেঘলা এমন আর দাড়াতে পারছে না ব্যাথায় কুকরে উঠছে ডুকরে কেঁদে উঠে বলে,
— “শোভন ভাইয়া আমার লাগছে৷ ”
বলেই জোরে জোরে কেঁদে উঠে, শোভন উত্তেজিত হয়ে ছেড়ে দিয়ে বুকে চেপে ধরে৷

মেঘলা ছিটকে শোভন কে দূরে সরিয়ে বলে,
— “ভেবেছিলাম তুমি অনেক ভালো,
কিন্তু আমি ভুল ছিলাম প্রতিবার কারন তুমি ভালো না যে খুন করতে পারে সে কখনো ভালো হতে পারে না৷
কেন এমন করছো?
কেন এতোটা কষ্ট দিয়ে আবার নিজেই বুকে টেনে নিচ্ছো?”

শোভন কিছু না বলেই কোথাও একটা বেড়িয়ে যায়৷
মেঘলা ধপ করে নিচে বসে কাঁদতে থাকে,
কেন এমন করছে শোভন?
কখনো ওর চোখে এতোটা হিংস্রতা মেঘলা দেখেনি যে চোখে তাকালে সবসময় মায়ায় পরে যেতো সেই চোখ দেখলে মেঘলার আজ ঘৃনা হচ্ছে, সেই চোখে আজ কোনো মায়া নেই আছে শুধু হিংস্রতা৷

রাত ১০টা,,,,,
মেঘলা এখনো মাথা নিচু করে মেঝেতেই বসে আছে,
শোভন কোথাও থেকে এসে কয়েকটা ব্যাগ মেঘলার সামনে ছুরে দিয়ে বলে,
— “কাল দুপুরে আমাদের বিয়ে রেডি হয়ে থাকবি,
এর বাইরে কোনো কথা বললে খারাপ হয়ে যাবে৷ ”

মেঘলা ব্যাগ গুলো ছুরে ফেলে বলে,
— “শুনবো আমি তোমার কথা,
থাকবো না এখানে আমি চলে যাবো৷ ”

শোভন মেঘলার সামনে বসে ঘাড়ের নিচ দিয়ে চুল গুলো মুঠি করে ধরে বলে,
— “হুর পরি, আমার কথার খেলাপ করো না
আগেই বলেছি পরিনাম খারাপ হবে৷ ”

মেঘলা ঘৃনার দৃষ্টিতে শোভনের দিকে তাকিয়ে ওর পাশ কেটে ওয়াশরুমে চলে যায়৷
মেঘলা এখন আর কিছু বলতে চায় না যা করার কালই করবে৷
ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে শোভন খাবার নিয়ে বসে আছে৷
মেঘলা বিছানায় উঠে শুয়ে পরতে নিলেই শোভন বলে,
— “খেয়ে ঘুমো৷ ”

মেঘলা রাগ দেখিয়ে বলে,
— “আমি তোমার আনা কিছুই খাবো না৷ ”

শোভন উঠে হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে মেঘলাকে উঠিয়ে এনে সোফায় বসিয়ে বলে,
— “ভালো করে বলছি খেয়েনে৷ ”

— “খাবো না আমি বললাম তো৷ ”
শোভন খাবার হাতে নিয়ে মুখ চেপে ধরে মুখে খাবার পুরে দেয়৷
মেঘলা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে৷

শোভন জোরে ধমক দিয়ে বলে,
— “চোখ মুছ৷”

মেঘলা তাও কাঁদছে, শোভন আবার রেগে বলে,
— “চোখ মুছ বলছি,
আজকের পর থেকে চোখে পানি যেন না দেখি৷ ”

মেঘলা তাও কেঁদেই যাচ্ছে আবার গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,
— “আমার হাতের চড় না খেলে তোর ভালো লাগে না তাই না?”

মেঘলা আর কিছু না বলে চুপ চাপ খেয়ে নেয়৷
খেয়ে বিছানায় গিয়ে শুতেই চোখে ঘুম নেমে আসে,
আজ সারাদিন অনেকটা ধকল গেলো তাছাড়া শোভনের এলোপাথাড়ি থাপ্পড় তো আছেই৷

মেঘলা ঘুমাতেই শোভন গিয়ে মেঘলার পাশে বসে,
গাল টা লাল হয়ে আছে সারাদিন অনেক শাস্তি দিয়েছে৷ ও নিজেই বা কি করবে রাগ টা কিছুতেই সামলাতে পারে না, না করা শর্তেও ওই ছেলেটার নাম বলছিলো৷
ওকে উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে গালে কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে দেয়৷


আরো এক ঘন্টা আগে মেঘলা ঘুম থেকে উঠেছে,
শোভন আবার ব্যাগ গুলো হাতে দিয়ে করা ভাবে বলে গেছে রেডি হয়ে থাকতে৷
শোভন বাড়িতে গেছে কিছু প্রয়োজনে আর নিচে অনেকগুলো গার্ড রেখে গেছে মেঘলার জন্য৷
মেঘলা কনে সেজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মুখে বাকা হাসি৷

মেঘলা বিড়বিড় করে বলে,
— “কনে তো সাজলাম কিন্তু তোমার না সাজ্জাদের৷ ”
বলে জোরে জোরে হাসতে থাকে৷
আয়না থেকে সরে বারান্দায় গিয়ে দেখে নেয় গার্ডরা কোথায় কিন্তু দেখেই মন টা খারাপ হয়ে যায় অনেকগুলো সুঠাম দেহের গার্ড এদের সাথে জীবনেও পেরে উঠবে না৷

কিছু একটা ভেবে সিড়ি বেয়ে ছাদের দিকে হাটা দেয়৷ এই বাড়িটির ছাদ ঘেসে আরেকটা ছাদ আছে এখান থেকে যেতে মেঘলার খুব একটা কষ্ট হবে না৷
শাড়ির আচলটা কোমরে বেধে ছাদ টপকে অন্য ছাদ দিয়ে নেমে যায়,
নিচে এসে কোন মতো বাড়ির বাইরের গার্ড গুলো চোখ এড়িয়ে একটা দোকানে ঢুকে
সাজ্জাদ কে ফোন করার জন্য৷
মেঘলাকে কনে বেশে দেখে প্রথমত দোকানের মালিক ফোন দিতে চায়নি পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে দিয়েছে৷
অনেকবার ফোন করার পরেও সাজ্জাদ কে পায় না তাই ভাবে সাজ্জাদের বাড়িতেই যাবে৷
কিন্তু কি করে যাবে?
দোকান থেকে বেড়িয়ে হাটা ধরে, কিছুদূর যেতেই প্রিয়াকে দেখে একটা রেস্টুরেন্ট এর ভিতর৷
প্রিয়াও মেঘলাকে দেখে বেরিয়ে এসে বলে,
— “কিরে মেঘু তুই এখানে?
আর কনের সাজে কেন?”

এতোদূর হাটায় মেঘলা হাপাচ্ছে, হাপাতে হাপাতে প্রিয়াকে বলে,
— “পরে সবটা বলবো আগে সাজ্জাদের ফ্লাটে নিয়ে চল আমায়৷ ”

প্রিয়া বলে,
— “আমি এখানে একটা কাজে এসেছি যেতে পারবো না তোকে গাড়ি করে দেই তুই যা,
কিন্তু কি হয়েছে এটাতো বল৷ ”

মেঘলা প্রিয়াকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে,
— “এখন না পরে সবটা বলবো৷ ”

প্রিয়া গাড়ি করে দেওয়ার পরই মেঘলা উঠে সাজ্জাদের বাড়িতে আসে৷
ফ্লাটের সামনে এসে দেখে দরজাটা খোলা ভিতরে যেতেই দেখে সোফায় বসে বসে ড্রিংক করছে৷
মেঘলাকে এই সময় এখানে দেখে কিছুটা ভরকে যায় মেঘলা বলে,
— “কি করছো তুমি?
ড্রিংক করছো?”

সাজ্জাদ হকচকিয়ে কিছু বলবে এর আগে মেঘলা বলে,
— “তোমাকে তো আমি ভালো ভেবেছিলাম আর তুমি?”

হেলে দুলে মেঘলার হাত ধরে নিজের কাছে এনে বলে,
— “ও বেবি এটা কিছুই না একটু আধটু এমন হয়েই থাকে৷ ”

মেঘলা ধাক্কা দিতে সরিয়ে দিতে চাইলে সাজ্জাদ আরো বেশি জোরে চেপে ধরে বলে,
— “অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো তোমাকে কাছে পাওয়ার দুইবছর কতই না ঘুরেছি তোমাকে ভালোবাসার জালে ফাসানোর জন্য কিন্তু সব বৃথা গেছে৷
আর আজ তো নিজ থেকেই ধরা দিলে পাখি৷ ”

বলেই মেঘলার উরনাটা সরিয়ে দিবে তখনি পিছন থেকে কেও সাজ্জাদের পিঠ বরাবর গুলি করে আর সাজ্জাদ নিচে ঢলে পরে৷
শোভন এসে মেঘলাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে আরো কয়েকটা গুলি সাজ্জাদের বুকে করে৷
চোখের সামনে এমন খুন দেখে মেঘলা থম মেরে নিচে বসে পরে৷

বর্তমান,,,,,

মেঘলা এখনো বসে বসে কাঁদছে৷
কিভাবে মানুষ এমন খুন করতে পারে?
সাজ্জাদের ভুল ছিলো কিন্তু ভুলের শাস্তি এমন? এটা কি ঠিক?

কিছুক্ষন পর এসে মেঘলার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়িতে এনে বসিয়ে আবার ওই বাড়িতে নিয়ে আসে৷


মেঘলা মাথা নিচু করে বসে আছে,
আর শোভন বার বার একটা কথাই বলছে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করো৷
মেঘলার উত্তর প্রতিবার একই “শোভন কে বিয়ে করবে না”
এই পর্যন্ত অনেকগুলো থাপ্পড় খেয়েছে তাও মেঘলা নিজের কথা পালটায় নি গাল বেয়ে রক্ত পরছে৷
শোভন রেগে চিৎকার করে বলে,
— “সাইন করতে বলছি নয়তো তোমার জন্য খুব একটা ভালো হবে না৷ ”

মেঘলা বলে,
— “কি করবে মেরে ফেলবে মেরে ফেলো৷ ”

শোভন বাকা হেসে মেঘলার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
— “পেছনে তাকাও৷ ”

পিছনে তাকিয়ে আতকে উঠে প্রিয়াকে অচেতন অবস্থায় একটা চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে পাশেই রিভালবার নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে আছে৷
শোভন বলে,
— “এবার করবে তো?”

মেঘলা কাপা কাপা হাতে সাইন টা করে দেয়৷ শোভন ও বেহায়ার মতো খুশি খুশি সাইনটা করে দেয়৷
কি অদ্ভুত একটা সাইনেই জীবন টা পালটে গেলো কয়েকটা দিকে জীবনটা কেমন অগোছালো হয়ে গেলো৷
যার বুকে মাথা রেখে শান্তিতে থাকতে পারতো মেঘলা আজ তাকে দেখলেই ভয় করে৷

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে