#তাসের ঘর
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ১০(অন্তিম পর্ব)
জর্জঃ সব তত্ত্ব-প্রমাণ বিচার বিবেচনা করে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে যে রিপন আর রাত্রী দুজনেই দোষী।আদালত দোলা দাস এবং রিপন দাসের ডিবোর্স মঞ্জুর করছে এবং দীপের কাস্টাডি দোলাদাসকে দিচ্ছে।রিপন দাস চাইলেও কোনোদিন দীপ দাসকে নিজের কাছে আনতে পারবেন না।
অন্যদিকে অনিক দাস চাইলে রাত্রীদাসকে বিনা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ডিবোর্স দিতে পারেন।অত্রি দাসের কাস্টাডিও অনিক দাসকে দেওয়া হলো।অত্রি দাসের উপর রাত্রী দাসের কোনো অধিকার থাকবে না।
আদালত ধোঁকা,নারী নির্যাতন ও খুনের চেষ্টা এবং এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ারের জন্য *** ধারা মোতাবেক রিপন দাসকে ২০বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০লক্ষ টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করছে।সেই সাথে উনাকে বিসিএস ক্যাডার তালিকা বর্হিভুত করছে।আদালত রিপন দাসের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করছে।দীপ দাস বড় হয়ে যদি সেসব চায় তাহলে দীপ দাসকে সসম্মানে নিজের প্রাপ্য দেওয়া হবে।
এবং ধোঁকা,অন্যকে খুন/অত্যাচারের জন্য উস্কানো,আদালতে দাঁড়িয়ে মিথ্যা সাক্ষ্যদান এবং এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ারের জন্য *** ধারা মোতাবেক রাত্রী দাসকে ১৫বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৫লক্ষ টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করছে।
আজকের মতো কোর্টের কাজ এখানেই শেষ।
আদালতের রায়ে রিপন-রাত্রী আর তাদের উকিল ছাড়া সবার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল।
🍁
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে রিপন,রাত্রী আর অনিক।অনিকের ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি।রিপন ভাব শূণ্য।রাত্রী করুণ চোখে অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে।
রাত্রীঃ অনিক বিশ্বাস করো আমার সাথে রিপনের কোনো সম্পর্ক নেই।সব দোলার চাল।ও আমাকে ফাঁসিয়েছে।দোলা তো আমাকে কোনোদিনও সহ্য করতে পারত না।তাই এভাবে ফাঁসিয়েছে।প্লিজ অত্রির মুখের দিকে তাকিয়ে আমাকে বিশ্বাস করো।আমি যদি জেলে চলে যাই অত্রির কি হবে?ও যে এই বয়সে মা-হারা হয়ে যাবে।আচ্ছা তুমিই বলো আমাদের এমন একটা মেয়ে থাকা সত্ত্বেও আমি কি অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারি?আমাদের তো প্রেমের বিয়ে।তোমাকে ভালোবেসে আমি নিজের মা-বাবাকে ছেড়ে এসেছি।এখন তুমিই আমাকে বিশ্বাস করবে না?অনিক প্লিজ বিলিভ..
বাকিটা বলার আগেই অনিক রাত্রীর গালে ঠাস্ করে একটা চড় বসিয়ে দেয়।রক্তচক্ষু নিয়ে রাত্রীর দিকে তাকিয়েঃ আর কত নাটক করবি?বল?তোর মতো নাগিন আমি জীবনে দুইটা দেখি নি।রিপনকে কি দোষ দেব আমি নিজেই তো মায়া জ্বালে ফেসে গেছি।তোর জন্য নিজের ঘর-পরিবার সব ছেড়ে এই শহরে পাড়ি জমিয়েছি।আর তুই?তুই আমাকে বিশ্বাস ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিস।তোর কি মনে হয় অনিক বোকা।কিচ্ছু বুঝে না।যেখানে বিল্ডিংয়ের সবাই জানত তোর আর রিপনের অ্যাফেয়ারের কথা সেখানে আমি অন্ধের মতো কিছুই জানতাম নাহ?
রাত্রী চমকে অনিকের দিকে তাকাল।
অনিকঃ(দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আমি তোমাদের সম্পর্কের কথা অনেক আগেই জানতে পারি।কিন্তু কিচ্ছু বলি নি ভয় হচ্ছিল যদি আমাকে আর অত্রিকে ছেড়ে চলে যাও।যেভাবেই থাকো আমাদের কাছেই তো ছিলে।ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম কিনা?ভেবেছিলাম রিপন তোমার মোহ একদিন নিজের ভুল বুঝতে পারবে।কিন্তু না তা আর হলো না।বরং দিনকে দিন তোমার প্রতি আমার ঘৃণা সৃষ্টি হলো।তোমাকে যতটা ভালোবাসতাম তার থেকে কয়েক গুণ বেশি ঘৃণা করি।ইউ নো তোমার সাথে একই বাসায় থাকতে আমার রুচিতে বাঁধত।যখন রাতে আমি আর অত্রি ঘুমিয়ে পড়লে তুমি ফোনে প্রেমালাপ করতে তখন মন চাইত তোমার গলাটা চেপে ধরি।হাহ তুমি কি ভেবেছ কিচ্ছু জানতাম না?তুমি আমার খাবারে ঘুমের ঔষধ মেশাবে আর আমি জানিতে পারব না?প্রথম কয়েকদিন যখন আমার ঘুম বেড়ে গেছিল তখন সন্দেহ হয়।পরীক্ষা করে জানতে পারি তুমি আমার খাবারে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দাও।তাই আমি ঔষধ চেঞ্জ করে দেই।ভুলে যেও না আমি ঔষধ কোম্পানিতেই কাজ করি।তুমি ভাবো আমি ঘুমিয়ে পড়েছি কিন্তু আমি তোমাদের সব কথা জানতাম।ভাবছ তাও কেন ভালোবাসতাম?না ভালোবাসতাম না ঘৃণা করতাম।কিন্তু কিচ্ছু বলতাম না।তুমি যেমন ভালোবাসার নাটক চালিয়ে গেছ আমিও তেমন নাটকই করেছি।অন্ধ ভালোবাসার নাটক।আর হ্যাঁ ডিবোর্স পেপার আমি অনেক আগেই রেডি করে রেখেছি।শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা করেছি।তুমি যে মহিলা তোমাকে ডিবোর্স দিতে গেলে আমাকেই ফাঁসিয়ে দিতে।কিন্তু আজ পারবে না।আজ যে সঠিক সময়।তোমার আমার গড়া #তাসের_ঘর ভেঙে দেওয়ার সুবর্ণ মুহূর্ত।জানো আমি খুব করে চাইতাম দোলা রুখে দাঁড়াক।তোমাদের অন্যায়ের শাস্তি দিক।নিজের অধিকার বুঝে নিক।আজ দিয়েছে তোমাদের শাস্তি।আজ আমি খুব খুশি।আজকের বাতাসে আমি আনন্দের ঘ্রাণ খুঁজে পাচ্ছি।কারণ আজ তোমাদের মুখোশ খুলে গেছে।আজ আমার #তাসের_ঘর ভেঙে যাবে।এর থেকে খুশির আর কি হতে পারে।চিন্তা করো না আমি আর আমার মেয়ে খুব ভালো থাকব।মেয়ের জন্য নতুন মাও নিয়ে আসব।মেয়ে ঠিকও করে ফেলেছি।জানো কে?তোমার বেস্টফ্রেন্ড।হ্যাঁ তোমারই বেস্টফ্রেন্ড অর্না, যে কোনোদিনও মা হতে পারবে না জেনে স্বামী ছেড়ে দিয়েছে বলে তুমি সবসময় অপমান করতে।কথা শুনাতে।সেই হবে তোমার সতীন।উহ সতীন না।তোমার এক্স হাসবেন্ডের বর্তমান স্ত্রী আর তোমার মেয়ের মা।চিন্তা করো না তোমাকে রেখে বিয়ে করব না।কোর্ট থেকে স্পেশাল অর্ডার এনে বিয়ের দিকে তোমাকে নিয়ে যাবো।তোমার সামনেই আমরা বিয়ে করব।দোলার সংসার ভাঙ্গতে চাইছিলে না।দেখবে তোমার সামনেই কি করে তোমার সংসার অন্য কারো হয়ে যায়।
রাত্রি বাকরুদ্ধ।
🍁
পুলিশ রিপন আর রাত্রীকে নিয়ে যাচ্ছিল সামনে দাঁড়ায় দোলা।রিপন রাত্রী দুজনেই দোলার দিকে তাকায়।দোলার চোখে আজ একরাশ ঘৃণা যেন ঘৃণার আগুনে দুজনকে জ্বালিয়ে দেবে।দোলা কিছু না বলে রিপন-রাত্রী দুজনের গালে ঠাস্ করে চড় বসাতে থাকে।থামার নামই নেয় না।লেডি কন্সটেবলরা অনেক কষ্টে দোলাকে থামান।
দোলাঃ এই চড়গুলো অনেক আগে দেওয়া উচিত ছিল আমার।তাহলে অন্তত আজকে ভরা আদালতে আমার চরিত্রে কালিমা লাগানোর চেষ্টা তোমরা করতে না।নিজেরা তো চরিত্রহীন অন্যের চরিত্র দাগ লাগাতে লজ্জা করে না?আর রিপন তোমার সাহস কি করে হয় আমার ছেলের জন্ম নিয়ে কথা তুলার।তুই কাপুরুষের মতো নিজের ছেলেকে স্বীকার করবি না করিস না।নিজের রক্তকে দুষিত বলতে একটুও বুক কাঁপল না।শুনে রাখ তোকে স্বীকার করতে হবে না।আজ আমি বললাম দীপ শুধু আমার ছেলে।ওর কোনো বাবা নেই।মরে গেছে ওর বাবা।দীপের বাবা আমার আর দীপের জন্য মৃত।
রিপনঃ দোলায়ায়ায়া
দোলাঃ চুপপপ।গলা নামিয়ে(রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে)অনেক দেখিয়েছিস তোর পুরুষত্ব।আর দেখাতে আসিস না।কারাগার পর্যন্ত জীবিত যেতে পারবি না।আর এই যে রাত্রী তুই(রাত্রীর চুলে ধরে)একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সংসার ভাঙ্গতে তো লজ্জা করে নি কিন্তু ভরা সভায় তার চরিত্র মিথ্যা কালি লাগাতে লজ্জা করল না।তুই কি মেয়ে?নিজে তো স্বামী সন্তান রেখে অন্যের স্বামীর দিকে নজর দিয়েছিস।তোর মতো কি সবাই নাকি যে তুই আমার চরিত্রে আঙুল তুলিস?দুশ্চরিত্রা মেয়ে,কুলটা কোথাকার।(রাগে হিসহিস করতে করতে)
পূজাঃ(দোলাকে ছাড়িয়ে)ছেড়ে দিন আন্টি।কেঁচো মেরে হাত গন্ধ করবেন না।এদের ছুঁলেও পাপ লাগবে।এই যে আংকেল আন্টি আপনারা নিজেদের এই অবৈধ সম্পর্কের জন্য নিজেদের সন্তানদের ছেড়ে দিতে চাইছিলেন না?একদিন এই সন্তানের জন্য কাঁদবেন।পাবেন না।ঈশ্বরের অশেষ কৃপা আপনাদের ফুটফুটে দুইটা সন্তান দিয়েছেন।আগলে রাখতে পারলেন না ঈশ্বরের আশীর্বাদ।ফল তো ভোগ করতেই হবে।
🍁
রিপন রাত্রীকে পুলিশ ভ্যানে তোলার আগেই কয়েকজন ঘেরাও করল।ছেলেরা রিপনের মুখে আর মেয়েরা রাত্রীর মুখে চুনকালি মাখিয়ে ভিডিও করছে।দুজনের গলায় জুতোর মালা পড়িয়ে দিল।পুলিশ উৎসুক জনতাকে অনেক কষ্টে শান্ত করল।কিন্তু রিপন-রাত্রীর যা সম্মানহানি হওয়ার তা তো হয়ে গেছেই।
আড়ালে দাঁড়িয়ে দোলার ছোটভাই দিশান বাঁকা হাসল।দিশানই নিজের ভার্সিটির দলকে ডেকেছে রিপন-রাত্রীকে শায়েস্তা করার জন্য।
🍁
আজ অনিক আর অর্ণার বিয়ে ছিল।অনিক অনেক চেষ্টা করে রাত্রীকে বিয়েতে আনিয়েছে।রাত্রীর সামনেই অনিক অর্ণাকে বিয়ে করে।চোখের সামনে স্বামীকে থুরি প্রাক্তন স্বামীকে নিজেরই বেস্টফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে দেখে রাত্রীর বুক জ্বলে যাচ্ছিল কিন্তু টু শব্দও করতে পারে নি।অত্রিও আজ মায়ের কাছে আসে নি বরং ঘৃণায় দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে।ছোট্ট অত্রি মায়ের কালোরূপটা জানে।মেয়েকে ঘৃণার চোখে তাকাতে দেখে রাত্রীর মনে হয়েছিল মরে যেতে।কিন্তু হাত-পা বাঁধা।রাত্রী ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারছে কি হারিয়েছে।কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে।চাইলেও কিচ্ছু ফেরত পাবে না।এখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছু করণীয় নয়।
🍁
কেটে গেছে বাইশটা বছর।আজ দীপের বিয়ে।দীপ আজ অনেক বড় ডাক্তার।বিয়েও করছে একজন ডাক্তারকে।মেয়েটাকে অবশ্য দোলাই পছন্দ করেছে।দোলা পেরেছে ছেলেকে মানু্ষ করতে, একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যত দিতে।এখন ওর আর কোনো আফসোস নেই।দোলা এখন একটা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক।ডিবোর্সের পর দোলা মুভ অন করে।সেবছরের প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়।দোলার মাস্টার্স কমপ্লিট ছিল।বয়সও যায় নি তাই মায়ের কাছে দীপকে রেখে পুরোদমে প্রিপারেশন নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং সাফল্য লাভ করে।দোলা আর বিয়ে করে নি।দীপকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিয়েছে।দোলা একাই ভালো আছে।ছেলে-পরিবার আর স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে থেকে কখনো একাকীত্ব বোধ করে না।দোলার ভাইরা বিয়ে করলেও দোলা ভাইদের সাথে থাকে।দোলা স্বাবলম্বী তাই ভাইয়ের বউরাও কিছু বলে না।বরং সম্মান করে।তাছাড়া দোলার বাবা নিজের জমিজমার এক তৃতীয়াংশ দোলার নামে করে গেছেন।
রাত্রী ১৫বছর পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরে আসে।স্বামী না পাক মেয়েকে পাওয়ার আশায় কিন্তু অত্রি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়।অত্রি ভালো আছে বাবা আর নতুন মার সাথে।রাত্রীকে ওর প্রয়োজন নেই।না তো অনিকের আছে।অনিক অর্ণাকে নিয়েই সুখে আছে।অর্ণার যেহেতু নিজের বাচ্চা কাচ্চা নেই তাই অত্রিকে আপন সন্তানের মতো বড় করেছে।অত্রিরও ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে।স্বামী সংসার নিয়ে সুখেই আছে।
সবাই ভালো আছে শুধু ভালো নেই রিপন আর রাত্রী।অতীতের পাপ বড্ড পোড়ায়।মেয়ে ফিরিয়ে দেওয়ায় এক বুক কষ্ট নিয়ে রাত্রী কোথাও হারিয়ে যায়।তবে তার আগে অনিক আর দোলার পায়ে ধরে ক্ষমা চায়।তারাও ক্ষমা করে দেয়।
দুবছর আগে রিপন জেল থেকে ছাড়া পেলে দোলা আর দীপকে খুঁজে।পায় নি।এই বিশ বছর দোলা আর দীপের স্মৃতি বড্ড পুড়িয়েছে।বিশ বছরের জীবনে কোথাও রাত্রী ছিল না।শুধু ছিল দোলা আর দীপের স্মৃতি।রিপন বুঝতে পেরেছে দোলা আর দীপ ওর লাইফে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।দুবছর অনেক খুঁজেছে ওদের।অবশেষে দীপের বিয়ের কথা জানতে পেরে সেখানে উপস্থিত হয়।দীপ আর দোলা আর দীপের বউ অঞ্জলি গেস্টদের এটেন্ট করছিল তখন রিপন ওদের সামনে আসে।রিপনের আগের জৌলুশ আর নেই।গায়ের রঙটা চাপা হয়ে গেছে।চামড়া কুঁচকে গেছে।চুলে পাঁক ধরেছে।অনেকটা শুকিয়ে গেছে।একলা জীবন পার করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে।দীপ রিপনকে না চিনলেও দোলা ঠিকই চিনতে পেরেছে।এতবছর পর প্রাক্তন স্বামীকে দেখেও দোলা অনুভূতি শুন্য।কিন্তু রিপন কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে।
দীপঃ কে আপনি?
রিপন কাঁপা কাঁপা হাতে দীপের গালে হাত রাখল।টলমল চোখে রিপনঃ দ..দীপ সোনা আ..আমি তোর বাব..বাবা।
দীপ বুঝতে পারল এটা রিপন।দীপ মেচুর হওয়ার পর দোলা দীপকে রিপনের কথা সব বলেছে।দীপ এখন রিপনকে শুধু ঘৃণা করেছে।তাছাড়া দীপের মস্তিষ্কে এখন আছে নিজের মায়ের মার খাওয়ার দৃশ্য।দীপ একবার দোলার দিকে তাকাল।
দীপঃ বাবা?কিন্তু আমার বাবা তো মারা গেছে।
দীপের কথা শুনে রিপনের হাত খসে পড়ল।মনে হলো ওর কলিজায় কেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
রিপনঃ ক..কি বলছিস দীপ?বাবা দেখ আমি তো বাবা।দোল.দোলা এই দোলা ওকে বলো না আমি ওর বাবা।
দোলাঃ আপনি ওর বাবা?কবে থেকে?একদিন তো ভরা কোর্টে দাঁড়িয়ে অস্বীকার করেছিলেন আজ দীপের বাবা কি করে হলেন।আমার জানামতে দীপের বাবা মৃত।দীপের বাবা আর যেই হোক না কেন আপনি নন।
রিপনঃ জানি দোলা তুমি আমার উপর অভিমান করে এসব বলছ..
দোলাঃ অভিমান?তাও আপনার উপর?অভিমান তো আপনজনদের উপর করা হয়।আপনি আমার কে যে আপনার উপর অভিমান করব?
দোলার কথায় রিপনের বুকটা ক্ষতবিক্ষত হলো।
রিপনঃ জানি অনেক অন্যায় করেছি শেষ বারের মতো ক্ষমা করে দাও।আচ্ছা ক্ষমা করতে হবে না।আমার কাছে ফিরেও যেতে বলব না।শুধু দীপ সোনা একবার বাবা বলে ডাক না।
দীপঃ সরি মিস্টার দাস।আমি যাকে তাকে বাবা বলি না।এই যে দেখছেন আমার মা,উনিই আমার মা-বাবা উভয়।আমার আর কাউকে চাই না।আপনার জন্য আমি বাবা শব্দটাকে ঘৃণা করতে চাই না।আজ আমার লাইফের একটা বিশেষ দিন।আপনি যেহেতু বিনা নিমন্ত্রণে এসেই পড়েছেন তখন খেয়েই যাবেন।আপনাকে অতিথি হিসেবে আপ্যায়ন করতে সমস্যা নেই।দয়া করে আমার আর আমার মায়ের লাইফে ইন্টারফেয়ার করার চেষ্টা করবেন না।আপনাকে ছাড়াই আমরা ভালো আছি ভালো থাকতে দেন।রিপন নামের কোনো কালো অতীত আমাদের জীবনে ছিল সেটা আমরা ভুলে গেছি।আপনি ভুলে যান।নমস্কার।(হাত জোর করে)
বলে একহাত দিয়ে মায়ের হাত আর অন্যটা দিয়ে বউয়ের হাত ধরে সেখান থেকে চলে গেল।রিপন ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।দু চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।ভাবতে লাগল ও যদি ঠিক থাকত তাহলে এই পরিবারের একজন হতে পারত।
স্ত্রী-সন্তান তো এই জন্যই।শেষ সময়ে পাশে পাওয়ার জন্য।সুখে দুঃখে ঢাল হওয়ার জন্য।রিপনের দুর্ভাগ্য একটা সুন্দর পরিবার পেয়েও পেল না।হাজারও মানুষ এমন ভুল করে।কিন্তু ভুলটা বুঝতে বুঝতে সব শেষ হয়ে যায়।সমাজে এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ার যতদিন থাকবে হাজার সোনার সংসার ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।যা কোনো একদিন জোড়া লাগলেও দাগ থেকে যাবে।
(সমাপ্ত)