#তাসের ঘর
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০৮
দোলাঃ আই ওয়ান্ট জাস্টিস।রিপনের শাস্তি চাই।আমাকে ঠকানোর শাস্তি,দিনের পর দিন আমার উপর অত্যাচার করার শাস্তি,আমাকে মেরে ফেলতে চাওয়ার শাস্তি,দিনের পর দিন ঘরে বউ রেখে এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ার চালিয়ে যাওয়ার শাস্তি,আমাকে ডিবোর্সের জন্য বাধ্য করার শাস্তি চাই।
রিপনঃ এ..এসব তুমি কি বলছ?আমি এসব করেছি?মাই লর্ড দোলা মিথ্যা বলছে একটাও সঠিক না।ও আমার উপর মিথ্যা আরোপ দিচ্ছে।বিশ্বাস করুন মাই লর্ড।
দোলাঃ আমি একটাও মিথ্যা কথা বলছি না মাই লর্ড।সব সত্যি।
জর্জঃ দোলাদেবী আপনার কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে?বিনা প্রমাণে আপনি রিপন বাবুর উপর এলিগেশন আনতে পারেন না।
রিপনঃ কোনো প্রমাণ নেই মাই লর্ড।দোলা একটা জঘন্য মহিলা।একাধিক পুরুষের সাথে ওর সম্পর্ক ছিল।আমি অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলে দোলাও বেরিয়ে যেতো ওর বয়ফ্রেন্ডদের সাথে।কখনো কখনো তো আমার অনুপস্থিতিতে বাসায়ও নিয়ে আসত।এই যে দীপ,ও আমার ছেলে কি না আমি শিওর নই।তাই তো দীপের দায়িত্ব নিতে চাই না।আমার দৃঢ় বিশ্বাস দীপ আমার ছেলে না দোলার কোনো পাপের ফসল।দোলা নিজের দোষ ঢাকতে আমার উপর মিথ্যা আরোপ দিচ্ছে।(একশ্বাসে বলে ফেলল)
দোলা ঘৃণার দৃষ্টিতে রিপনের দিকে তাকাল।রিপনের কথা শুনে গা গুলিতে আসছে।মানুষ এতটা নিকৃষ্ট কি করে হতে পারে।নিজে অন্যায় করে কি সুন্দর অন্যকে ব্লেম করতে পারে।
দোলাঃ মাই লর্ড আমি মিস্টার রিপনের নামে মানহানির মামলা করতে চাই।উনার কাছে কি প্রমাণ আছে এসবের?বিনা প্রমাণে উনি আমার চরিত্রে প্রশ্ন তুলেছেন।
রিপনঃ হ্যাঁ আমার কাছে প্রমাণ নেই।তোমার কাছেও তো নেই।কিন্তু মাই লর্ড আমি যা বলছি সব সত্যি।যদি আপনার বিশ্বাস না হয় তাহলে আমাদের নিচের ফ্লাটের রাত্রীকে জিজ্ঞেস করুন।রাত্রী সব জানে।
জর্জঃ মিসেস রাত্রীকে ওয়েটনেস বক্সে ডাকা হলো।
রাত্রী এসে গীতা স্পর্শ করেঃ “যাহা বলিব সত্য বলিব।সত্য বহি মিথ্যা বলিব না।”
রিপনের পক্ষের উকিলঃ মিসেস রাত্রি আপনার পরিচয়?
রাত্রীঃ আমি রাত্রী দাস।অনিক দাসের ধর্মপত্নী।দোলাদের নিচের ফ্লাটে থাকি।
রিঃ উকিলঃ আপনি দোলা সম্পর্কে কি জানেন?
রাত্রীঃ এটা যে দোলা একজন অসতী মহিলা।নিজের স্বামী থাকা সত্ত্বেও অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন।রিপনদা বাসা থেকে যাওয়ার পর পরই উনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান।আমি আমার মেয়েকে নিয়ে পার্কে গেলে প্রায়ই দোলাকে বিভিন্ন পুরুষের সাথে পার্কে ঘুরতে দেখি।তাছাড়া মাঝে মধ্যে বাসায়ও অন্য পুরুষ নিয়ে আসেন।ঘণ্টার পর পর ঘণ্টা তালাবদ্ধ হয়ে বসে থাকেন।উনি প্রায়ই রিপনের সাথে যেচে ঝামেলা করতেন।রিপন অফিস থেকে ফিরলে এটা ওটা নিয়ে রিপনকে বিরক্ত করতেন।বিয়ের পর থেকে একটা দিনের জন্যও রিপনকে শান্তি দেন নি।রোজ রোজ ঝগড়া করতেন।
দোলার উকিলঃ তাই নাকি?তা ওদের বাসায় কি হতো আপনি কি করে জানতেন?আপনি কি উনাদের বাসায় বসে থাকতেন নাকি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধ বাসায় কি হচ্ছে তা আড়ি পেতে শুনতেন?
রাত্রী থতমত খেয়ে যায়।কি বলবে খুঁজে পায় না।
রিঃ উকিলঃ অবজেকশন মাই লর্ড।আপনার বিপক্ষের উকিল রাত্রীদেবীকে কনফিউজড করতে চাইছেন।রাত্রীদেবী যতটুকু জানেন তাই বলছেন।
দোঃউকিলঃ মাই লর্ড আমার বিপক্ষের বন্ধু আমার কাজে বাধা দিচ্ছেন।রাত্রী দেবী এসব কিভাবে জানলেন আমি তো শুধু তাই জানতে চাইছি।উনি নিচের ফ্লাটে থেকে উপরের ফ্লাটে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কি চলছে জানবেন কিভাবে?
জর্জঃ অবজেকশন ওভার রুট।
রিঃ উকিলঃ মাই লর্ড(বলে মাথা নত করে সম্মান দেখিয়ে নিজের জায়গায় বসলেন)
দোঃউকিলঃ থ্যাংক ইউ মাই লর্ড।(মাথা নত করে সম্মান দেখিয়ে)
তা মিসেস রাত্রী আপনার কাছে কি উত্তর আছে?
রাত্রীঃ আম..আমি দেখেছি দোলাকে বাইরে..
দোঃউকিলঃ নো মিসেস রাত্রী আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি রিপনবাবু আর দোলাদেবীর মধ্যে কি নিয়ে ঝামেলা হতো,কে কাকে বিরক্ত করত এসব পারশনাল কথা আপনি কি করে জানলেন?
রাত্রীঃ রি..রিপন হ্যাঁ রিপন বলেছে।ও বলেছে ও নিজের স্ত্রীর উপর কতটা বিরক্ত।
দোঃউকিলঃ কিন্তু রিপনবাবু এসব কথা আপনাকেই কেন বলতেন?বিল্ডিংয়ের অন্য অনেকেই তো ছিলেন সবাইকে ছেড়ে আপনাকেই কেন?
রাত্রীঃ কারণ..কারণ আমি রিপনের শুভাকাঙ্ক্ষী।ও আমাকে বিশ্বাস করত।নিজের সুখ দুঃখের কথা আমার সাথে শেয়ার করত।আমিও ওর সাথে সব শেয়ার করতাম।
দোঃউকিলঃ তো আপনি বলতে চাইছেন আপনার সাথে রিপনের সুসম্পর্ক ছিল?
রাত্রীঃ হ্যাঁ।অফকোর্স।রিপনের সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক।ভালোবা..
দোঃউকিলঃ ভালোবাসার সম্পর্ক?
রাত্রীঃ হ্যাঁ ভালোবাসার সম্পর্ক।আমি রিপনকে ভালো…
উকিলের কথায় পড়ে রাত্রী সত্যটা বলে দিল।যখন রিয়েলাইজড হলো তখন থেমে গেল।
দোঃউকিলঃ আপনি বলতে চাইছেন আপনি রিপনকে ভালোবাসেন?
রাত্রীঃ না..নাহহ আমি কেন রিপনকে ভালোবাসব।আমার স্বামী আছে আমি অনিককে ভালোবাসি।
দোঃউকিলঃ কিন্তু আপনিই বলেছেন আপনাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক আছে।
রিঃউকিলঃ অবজেকশন মাই লর্ড।আমার বিপক্ষের বন্ধু রাত্রীদেবীকে কনফিউজড করে নিজের কথা উনার মুখে বসাচ্ছেন।
দোঃউকিলঃ মাই লর্ড উনি যদি বারবার আমার কাজে বাধা সৃষ্টি করেন তবে আসল সত্য কীভাবে বের হবে?
জর্জঃ অবজেকশন ওভার রুট।আপনি নিজের জায়গায় বসুন।(রিপনের উকিলকে)আর আপনি নিজের কাজ চালিয়ে যান(দোলআর উকিলকে)
দোঃউকিলঃ আচ্ছা মিসেস রাত্রী রিপনের সাথে আপনার খুউব ভালো সম্পর্ক ছিল।আপনাকে উনি সব কথা শেয়ার করতেন তাই না?
রাত্রীঃ হ..হ্যাঁ (একটু ভয়ে ভয়ে)
দোঃউকিলঃ তো রিপনবাবু কি আপনাকে বলেন নি যে উনি রোজ রোজ দোলাদেবীকে মারতেন?
রাত্রীঃ না মাই লর্ড রিপন রোজ রোজ দোলাকে মারত না মাঝে মাঝে মারত,রোজ রোজ তো বকাবকি করত, মারত না(গড়গড়িয়ে)
রাত্রী আবার উকিলের জ্বালে পা দেয়।রিপনের নিজের মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে কেন রাত্রীকে সাক্ষীর জন্য ডাকল।
দোঃউকিলঃ মাই লর্ড রিপনের পক্ষের সাক্ষী মিসেস রাত্রীই নিজের মুখে স্বীকার করলেন রিপনবাবু দোলাদেবীকে মারতেন।
রাত্রীঃ না মাই লর্ড আমি তা বলতে চাই নি।আমি তো..উকিলবাবু আমাকে দিয়ে বলিয়েছেন।রিপন দোলার গায়ে কোনোদিনও হাত দেয় নি।(উত্তেজিত হয়ে)
দোঃউকিলঃ মাই লর্ড রাত্রীদেবী কিন্তু একটু আগেই বলেছেন উনার আর রিপনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল আর রিপনবাবু দোলাদেবীকে মারতেন।আসল কথা এটাই,বিয়ের পরও রিপনবাবু এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ার চালিয়ে যান।বউ থাকা সত্ত্বেও রাত্রীদেবীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখেন।দোলাদেবী তা জানতে পারেন বলেই দোলাদেবীর উপর রিপন বাবু অকথ্য অত্যাচার করতেন।দিনের পর দিন নিজের সংসার বাঁচানোর জন্য রিপনবাবুর সব অত্যাচার সহ্য করে এসেছেন কিন্তু উনিও একজন মামুষ।যখন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে তখন উনি রিপনবাবুর এগেইনস্টে মামলা করেন।
রিপন+রাত্রীঃ সব মিথ্যে।
রিঃউকিলঃ মাই লর্ড আমার লার্নেড ফ্রেন্ড নিজের ক্লাইন্ডকে বাঁচাতে কিছু মিথ্যা কথা বলছেন।রিপনবাবু আর রাত্রীদেবী ভালো বন্ধু।উনি সেই পবিত্র সম্পর্কে কালিমা লাগাতে চাইছেন।
দোঃউকিলঃ মাই লর্ড বিবাহিত কেউ যদি স্বামী/স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অন্য পুরুষ/মহিলার সাথে এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ার চালিয়ে যায় আর সেই সম্পর্ককে যদি পবিত্র বলা হয় তবে অপবিত্র কোনটা?ন্যায় কোনটা?
রিঃউকিলঃ মাই লর্ড রিপনবাবু আর রাত্রীদেবীর মধ্যে যে এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ার আছে তার কি প্রমাণ আছে?
পূজাঃ প্রমাণ আছে মাই লর্ড।
পূজার কথায় সবাই অবাক।
(চলবে)