যে অফিসে কাজ করতাম৷ সেখানে একটা মেয়ে ছিলো। হুমায়ুন আহমেদ পড়ে তাঁর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো! রোজ ছুটির সময় বলতো, “ জয় সাহেব, রোগামত একটা গরীব কোনো ছেলেকে আপনি চিনেন? গরীব ছেলেরা বর হিসেবে ভালো হয়। টাকার অভাব ভালোবাসা দিয়ে পূরণ করে দেয়! ”
তখন আমি ধানমন্ডিতে থাকি। বাবার কোন মামাতো ভাইয়ের ছেলের সাথে। এক রুমের একটা বাসা। একটা চৌকি ছিলো। আমার কোনোদিন সে চৌকিতে শুয়ে একটি রাতের অন্ধকার ভোর করার সাহস হয়নি!
অনেক দিন হয়ে গিয়েছে তারপর। মেয়েটাকে কোনো গরীব ছেলে খুঁজে দিতে পারলাম না! কোনো গরীব ছেলেকে বললে সে হাসতো নয়তো আমার দিকেই আঙুল তুলতো!
তারপর তাঁকে একদিন স্পষ্ট বলে দিয়েছিলাম। এই ব্যাপারে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারবো না।
হুমায়ুন আহমেদের অনেক বড় ভক্ত ছিলো সে। হয়তো এর থেকেও বেশি কিছু। তাঁর কাছে সবসময় কোনো না কোনো বই থাকতোই হুমায়ুন আহমেদের।
শাড়ি পড়তো, লম্বা চুল, চোখে কাজল আর কপালটা ছোট ছিলো৷ একদিন কী কারণে যেন তাঁকে আমার বাসায় আসতে হলো।
কারণটা সঠিক মনে নেই তবে এটুকু আন্দাজ হয় যে অফিসের বস কোনো কাজ দিয়েছিলো।
আমার তো কোনো বাসা ছিলোই না। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, বাসায় ঢুকে আমার মনে হলো এটা তো আমার বাসা না!
এক রুমে এক চৌকি। তাছাড়া একটা টেবিল পর্যন্ত নেই! দুজনের কাপড়চোপড় ওখানেই এলোমেলো পড়ে আছে। কোনো শার্ট এক সপ্তাহ হয়ে গেছে বাতাসের অভাবে শুকাচ্ছে না! একটা ফ্যান কিনবো কিনবো করে আর টাকা হয় না।
যেদিন সে প্রথম এলো সেই বাসায়। আমি বসতে বললাম। সে অবাক হয়ে বলেছিলো, “ এখানে আপনি থাকেন? ”
আমি লজ্জা পাইনি। যা সত্য তা বলতে মানুষের লজ্জা পাওয়া উচিৎ নয়। বলেছিলাম শুধু আমি না। আরো একজন থাকে। আমি আরো আশ্চর্য হয়েছিলাম যখন সে বললো, “ আপনার বাসাটা দারুণ! ”
আমি মুচকে হেসে মুখের উপর বলেছিলাম, “ দারুণ বলতেই হয়৷ কারণ রাত্তিরে বৃষ্টি হলে, ফুঁটো দিয়ে কপালে তো আর পড়ে না। তবে এই দারুণ বাসাটা আমার নয়৷ ”
মেয়েটা মনে হয় তখন হতবিহ্বল হয়েছিলো! কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেছিলো, “ আমার জন্য আর আপনাকে ছেলে খুঁজতে হবে না। আমার মনের মতো একজনকে পেয়ে গিয়েছি! ”
“ কী বলেন? কখন? কোথায়? ”
সে কিছুটা ভেংচি দিয়েই বলেছিলো, “ নিজেকে কী ধনবান মনে হয়? ”
আমি মাথা নাড়ালাম। ভুলেও মনে হয় না!
নিজের জন্য প্রতিদিন ত্রিশ টাকা খরচের থাকতো। মাঝে মাঝে না খেয়ে দিন পার। তখন এটা আমার খুব শক্ত একটা অভ্যাস ছিলো।
পরেরদিন অফিসে গেলাম। সবাই আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে!
ব্যাপারটা কিছুই বুঝলাম না। মেয়েটা এলো। বললো, “ আজকে আমাদের বিয়ে৷ আর আপনি পাঞ্জাবি পড়ে আসেননি কেনো? ”
আমাকে নিয়ে কোনো মজা হচ্ছিলো ভেবে আমি চুপ থাকলাম। বুঝতে পারছিলাম না কী উত্তর দিবো। এর মাঝে বস এলো৷ অফিসের বস মেয়েটাকে খুব পছন্দ করতো। কোটি কোটি টাকার যত লেনদেন আছে সব তাঁর হাতেই দিতো।
বস এসে বললো, “ জয়, ব্যাপারটা খুব খারাপ হয়েছে। আমাদের কমপক্ষে ভদ্রতা রক্ষা করার জন্য হলেও জানানোর দরকার ছিলো। তবুও আমরা মনে কিছু করিনি। দুজনেরই আজকে ছুটি, বিয়ের পরে যেদিনই অফিসে আসবেন সঙ্গে করে অবশ্যই মিষ্টি নিয়ে আসবেন। ”
তারার যেন তাড়াহুড়োর শেষ নেই।
চলুন চলুন, দুপুর হয়ে যাচ্ছে। এই গরমে রিকশায় একসাথে বসে থাকতে ভালো লাগবে না। ”
ওহ, তাঁর নাম আসলে তাহিরা তাবাসসুম। তাহিরার মাঝখান থেকে ‘ হি ‘ টা সবাই বাদ দিয়ে দিয়েছে। সবাই তারাই ডাকে।
আমি তখন কোনোরকম বললাম, “ কী করছেন এগুলো? মানুষ হাসিয়ে ভালো লাগছে? ”
সে আমার কোনো কথাই শুনলো না। হাতে ধরে বললো, “ টেনে নিয়ে যেতে চাচ্ছি না! ”
সে যেই মুহূর্তে আমার হাতটা ধরলো। আমার দুনিয়াটাই যেন পাল্টে গেলো। কোনো মেয়ের হাতে এরকম সাংঘাতিক কারেন্ট থাকতে পারে আমার আগে জানা ছিলো না।
সেই মুহূর্তে মনে হলো, না এই মেয়ের হাতের কারেন্টে আমার রোজ শখ খাওয়া লাগবে। আমি কেমন যেন সব ভুলে গেলাম! কোথা থেকে এসেছি। আমার কী করা দরকার। বিয়ের পর কী হবে সব ভুলে গেলাম আমি মুহূর্তেই।
চব্বিশে ডিসেম্বর আমাদের বিয়ে হয়েছিলো।
সেদিন যা গরম। সকাল এগারোটা বাজতেই রাস্তায় বের হওয়া যাচ্ছিলো না।
কাবিন হয়েছিলো এক হাজার এক টাকা! সাক্ষী ছিলো কাজী অফিসের পাশে যে খাবার হোটেলটা আছে, সেখানের দুই কর্মচারী। নামগুলো আমার এখনো মনে আছে তাঁদের। তরিকুল আর অপু।
আসলে বিয়ের আগে আমাদের খুবই ক্ষিধে লেগেছিলো। হোটেলে খেতে খেতেই দুজনের সাথে পরিচয় এবং তাঁদের সাক্ষী হওয়া।
খাওয়া শেষে শার্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম ষোলো টাকা আছে! খাওয়ার বিল এলো বিশ টাকা!
আর এই আমিই কিনা কিছুক্ষণ পরেই বিয়ে করে ফেলেছি!
আরো একটা অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে। বিয়ের আগ পর্যন্ত আমি তারার বাড়ি কোথায়, কোথায় থাকে এসব কিছুই জানতাম না।
সে বড় হয়েছে দৌড়ের উপর! দৌড়ের উপর বলতে বাবা মা নেই। মামার কাছে মানুষ হয়েছিলো। ভদ্রলোক খুবই গম্ভীর মানুষ ছিলেন বিধায় পড়া, খাওয়া, ঘুম ছাড়া আর কিছুই সে বুঝে উঠার সময় পায়নি!
সেসব তখন পুরনো কথা।
বিয়ে তো করেই ফেললাম। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলাম না নতুন বধূকে নিয়ে উঠবো কোথায়? কমপক্ষে বিয়ের প্রথম রাতটা তো অন্যের বাসাতে কাটানো যায় না!
আবার যদি আমি যেখানে থাকি সেখানে নিয়ে যাই, এক চৌকিতে দুজন, নাবিদ ভাইয়ের থাকার জায়গা হবে না!
খুবই মুশকিলে পড়েছিলাম। কিন্তু কী এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছিলো। অস্থিরতাও ছিলো। মনে হচ্ছিলো তারাকে নিয়ে থাকতে হলে রাস্তাই একমাত্র ঠাঁই!
সন্ধা হয়ে যাওয়ার পর তারা বলেছিলো, “ চিন্তা হচ্ছে খুব? ”
ব্যাপারটা এরকম, কাউকে খনখনে শীতের মাঝে পুকুরে ফেলে দিয়ে জিজ্ঞেস করছেন, ঠাণ্ডা লাগছে আপনার?
“ হওয়ার কথা নয়? ”
সে কিছুক্ষণ হেসে বললো৷
“ আমার কাছ থেকে টাকা ধার নিতে পারেন৷ তবে বেতন পাওয়ার পর পরেই দিয়ে দিতে হবে! ”
আমি তখন কী বলবো? নতুন চারটে এক হাজার টাকার নোট বের করে হাতে দিয়ে সে বললো, “ বাসাটা আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। আমি গেলাম। ”
সেদিনই শেষ মামার বাসায় গিয়েছিলো তারা। কারণ পরেরদিন আমি ছোট্ট একটা বাসা পেয়ে গিয়েছিলাম। সেখানেই উঠে পড়েছিলাম দুজন। সে দিনগুলোর কথা আর কী বলবো!
না ছিলো একটা খাট, না ছিলো রান্না করার একটা পাতিল, না ছিলো পানি! হাইরে ঢাকা শহর!
তবুও দিন শেষে আমরা খুশি! কোথায় যে খাচ্ছিলাম আর কোথায় যে ঘুমুচ্ছিলাম আমরা, বুঝতেই পারছিলাম না। দিন কেটে যাচ্ছিলো। দেখা যাচ্ছে তারার কাছ থেকে আমার মাস শেষে মোট ধার হয়ে গিয়েছে সতেরো হাজার৷ আমার বেতনের চেয়েও বেশি তখন!
ঘুরেফিরে আমার টাকা আমার হাতেই আসে। মাঝখান থেকে সে হিসাব করে রাখে। এরও আবার একটা সুন্দর কারণ আছে। মাঝে মাঝে টুকটাক এটা সেটা আনতে বললে যদি আমি না বলি। স্পষ্ট বলে দিবে সে আমার কাছে এখনোও এতো টাকা পায়, সুতরাং নিয়ে আসতেই হবে।
বাড়িওয়ালীর একটাই মেয়ে৷ বেশিরভাগ সময় মেয়েটা বাবার কাছেই থাকতো। দুটো ফুটফুটে বাচ্চা তাঁর। একটা ছেলে একটা মেয়ে।
ছোট্ট মেয়েটা মায়ের কাছেই থাকতো। কিন্তু ছেলেটা তারার কাছেই থাকতো।
দুজনের মধ্যে কীসের যেন একটা যোগাযোগ ছিলো। যেমন ছেলেটা কারো কোলেই হিসু করবে না! যখনই তারা কোলে নিবে ইনশাআল্লাহ সে এই কাজটি করতে ভুলবে না! তারার কাপড় নষ্ট করা যেন ছেলেটার অধিকার!
ছেলেটা দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ একদিন বাড়িওয়ালীর মেয়ে শ্বশুরবাড়ি যায় আর আসেনি! কী নিয়ে যেন ঝগড়া হয়েছিলো বাবার সাথে।
এরপরে তারার কী কান্না! বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় তো আর সে মা হতে পারছে না! মন খারাপ করে বসে থাকে। সত্যিই কোনো বাচ্চার সাথে ভাব জমে গেলে তাঁর সাথে বিচ্ছেদ হলে খুবই খারাপ লাগে।
সময় তো আর থেমে থাকে না। সেও একদিন মা হলো৷ কিন্তু ছেলে আর হলো না। খুব ইচ্ছে ছিলো প্রথমে একটা ছেলে হয় যেন তাঁর। ছেলে তো হলোই না উল্টে যমজ দুটো মেয়ে হয়েছে!
মানুষ বলে মেয়েরা বাবার মতো হয় কিন্তু দুটো মেয়ের একটিও আমার মতো হয়নি! নাক মুখ হাত পা কিছুই না!
আমার দুঃখ নেই, তাঁদের আম্মাজানই চাঁদের মতো। তাঁরা যার পেটে ছিলো তাঁর মতোই হয়েছে!
দুবোনের নাম রেখেছিলো নাবিদ ভাই। রুবাইরা আর হুরাইরা। যমজ হলে যেমন হয়। ছেলে হোক আর মেয়ে। মা তো মা’ই। চুমু দিতে গেলে আগে রুবাইরা না না আগে হুরাইরা! গোসল করাতে গেলে আগে রুবাইরা না আগে হুরাইরা! কী যে একটা দুটানায় মধ্যে পড়তে হয়!
দুজনে একসাথে অফিস। একসাথে আসা যাওয়া। সবকিছুর মাঝে আবার পুচকো দুটোর খেয়াল রাখা।
অস্পষ্ট শব্দ তাঁদের মুখে। ছোট ছোট হাত পা। দুজনের বুকে দুবোনের ঘুম। মাঝ রাতে হঠাৎ বেদরম কান্না! আবার শান্ত! এভাবেই দিন যাচ্ছিলো।
আমারা যখনই কোনো বিপদে পরেছি। এহতেশাম সাহেব হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। চরম ভদ্রলোক। তিনি পরলোকীত হবার পরে অফিসে তাঁর ছেলে আফতাব যোগ দিয়েছিলেন।
চমৎকার একজন ছেলে। সবার সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। বন্ধুসুলভ ব্যবহার। সবারই অনেক ভালো লাগতো। কিজানি তারার মনে হয় একটু বেশিই ভালো লেগে গিয়েছিলো!
হঠাৎ করেই তাঁর এটা লাগবে, ওটা লাগবে! আগে এমন কখনোও বলতো না। বারবার আকারে ইঙ্গিতে ইশারায় বুঝিয়ে দিতো যে আমি তাঁর যোগ্য নই। আমার কাছে যা চায় তা সে পায় না। আমি সব বুঝেও কিছু বলতাম না।
আবেগ মানুষের বেশিদিন থাকে না। একটা গরীব ছেলের সাথে সংসার করার মজা বোধহয় সে এতোদিনে বুঝে ফেলেছিলো!
তাতেও সমস্যা ছিলো না। ভুল আমারও ছিলো। নাহলে হুট করেই বিয়ে করে ফেলতাম না। কোনো মেয়ে হাতে ধরেছে এই খুশিতেই! সবকিছু একদিকে ফেলেও তো দুটো মেয়ের কথা ভাবতে হয়! এখনো হাঁটতে শিখেনি বাচ্চাদুটো। এর মাঝেই তাঁরা মাকে হারালে খুব বিপদে পড়ে যাবে।
বাবা তো আর মায়ের মতো খেয়াল রাখতে পারে না শত হলেও। আমি অফিসে উপস্থিত থাকা সত্যেও সে ঘন্টার পর ঘন্টা আফতাব সাহেবের সাথে এক রুমে সারাদিন!
দিন শেষে আমি হেসেই কথা বলেছি তাঁর সাথে। দুটো মেয়ে কেন আমার ভুলের সাজা ভোগ করবে এতো পিচ্চি থাকতেই!
তবে আর হলো না। জোর করে নৌকায় উঠা যায়, মেঘ বৃষ্টি তো আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না!
সে চলেই গেলো। স্পষ্ট বলে দিয়েছে আর সহ্য করতে পারছে না সে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। এতো ছোট্ট ঘরে চার চারটে মানুষ থাকতে পারে?
তাঁর অভিযোগগুলো সব সত্যি ছিলো। আমি অভুযোগের মুখে অসহায় আসামী। তাঁর কষ্টের দিন শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে।
অনেক দিন হয়ে গেছে তাঁর খবর পাই না। শুনেছিলাম একবার কানাডায় গিয়েছিলো। বিয়ের পরে স্বামী স্ত্রী যেখানে ইচ্ছা সেখানেই যেতে পারে যদি টাকা থাকে।
এতে তো দোষের কিছু নেই! কিন্তু এর মধ্যে একবারও কী দুটো মেয়ের কথা মনে হয়না? দশটা মাস দুটো প্রাণ যে পেটে রেখেছে। মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করে দুনিয়ার আলো দেখিয়েছে। তাঁদেরকে কী চাইলেই ভুলা যায়?
হয়তো যায়। মানুষ চাইলে দুনিয়াতে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আমি ভালোই আছি। পুচকো দুটো বড় হয়েছে অনেক। মাছে মাম্মাম্মা বলে উঠে। বাচ্চারা প্রথম যে শব্দটা শিখে তা তো আর না বলে থাকতে পারে না!
জীবন চলতেই থাকে। কেউ থাকুক বা না থাকুক। এরাও একদিন বড় হবে। যত্ন পেয়ে হোক বা অযত্নে। জীবন জীবনের গতিতেই চলে। দুঃখ এটুকুই, আকাশের যে তারাটাকে নিজের ভেবেছিলাম। কে জানতে তাঁর সূর্যের সাথে ভাব হবে?
| সিয়াম আহমেদ জয়
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.