Monday, October 6, 2025







তানিয়া ম্যাম

আমি জানি আমার এই লেখাটা পড়লে তানিয়া ম্যাডাম খুব রাগ করবেন। আমার সাথে হয়তো বা আর কখনো কথাই বলবেন না। আমাকে হয়তোবা ভয়ও পাবেন। মোট কথা তানিয়া ম্যাডামের সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। তবু আমি গল্পটা লিখছি। কারণ তানিয়া ম্যাডামের কাছে আমার সব অপরাধ স্বীকার করতে হবে আজ রাত বারোটার মধ্যে। নয়তো তানিয়া ম্যাডাম মারা যাবেন। ব্যাপারটা বেশ উভয় সংকটের। আমি যদি আজ তানিয়া ম্যাডামের কাছে সবকিছু স্বীকার না করি তবে তিনি মারা যাবেন আর যদি করি তবে তিনি আমাকে অনেক খারাপ ভাববেন। আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেবেন।
ভাল কিছু পেতে হলে কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হয়। আজ নাহয় আমি তানিয়া ম্যাডামের জীবনের জন্য তার সাথে যোগাযোগটা ছিন্ন করি। তাইতো আমার এ লিখতে বসা কাগজ কলম নিয়ে। গল্পটা তবে শুরু করা যাক। তানিয়া ম্যাডামের সাথে আমার প্রথম দেখা আমি যখন কাস ইলেভেনের ছাত্র। প্রথম দেখাতেই তাকে এতো ভাল লেগে গেল যে আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম তিনি আমার দৃষ্টির বাইরে যাবার আগ পর্যন্ত। আমি তখনও অবশ্য জানতাম না যে তিনি এই কলেজের একজন টিচার, ছাত্রী নন। এত বয়েসেও বয়স যে কুড়িতে ধরে রাখা যায় তা আসলে উনাকে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। অবাক হলাম তাই। সেই সাথে খেলাম হোঁচট। তবু দমিয়ে গেলাম না। আমার প্রথম ভাল লাগাকে আমি যে করে হোক স্বার্থক করে তুলব- পণ করলাম। প্রতিজ্ঞা করা যতটা সহজ, বাস্তবে তা অর্জন করা ঠিক ততোটাই কঠিন। আমার ক্ষেেত্র এ তো আরো দু:সাধ্য। কারণ, ম্যাডাম অর্থনীতি পড়ান আর আমি পড়ি সায়েন্সে! তাই ম্যাডামের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা ম্যাডাম কে পাঁচটা মিনিটের জন্য চোখের দেখাটাও কঠিন হয়ে যায়। তবু মাঝে মাঝে আমি আমার খুব ইম্পর্টেন্ট ক্লাসগুলা বাদ দিয়ে, সাহস করে অর্থনীতি কাসে ঢুকে পড়ি। আর ম্যাডামকে দুচোখ ভরে দেখি। যত দেখি ততো মুগ্ধ হই। আমার মুগ্ধতা ধীরে ধীরে এমন একটা পর্যায়ে পৌছে যায় যে, ম্যাডাম কে দেখার জন্য প্রতিটা মুহূর্ত ব্যাকুল হয়ে অেপক্ষা করি। ম্যাডামের সাথে কথা বলারও ইচ্ছে জাগে। কিন্তু ম্যাডাম আমার সাথে কথা বলবেনই বা কেন? দুজন যে দুই জগতের মানুষ। তার উপর বয়েসের এতো ব্যবধান! উপায়ান্তর না পেয়ে একদিন তাকে গিয়ে বললাম, ম্যাডাম, আমি আপনার কাছে পড়তে চাই। একটা সময় দেন। হাতে রাখা ডায়েরীটার কয়েকটা পাতা উল্টিয়ে তিনি বললেন শনি, সোম, বূধ বারের ব্যাচে একটা সিট খালি আছে। সকাল আটটার ব্যাচ। আমি বললাম, কিন্তু ম্যাডাম আমি তো সায়েন্সের স্টুডেন্ট। ম্যাডাম অবাক হয়ে ভ্রু উল্টালেন, তবে অর্থনীতি পড়বে কেন? অর্থনীতি না ম্যাডাম, বাংলা পড়ব। বাংলায় আমি খুব কাঁচা। আপনি যাস্ট আমাকে পড়া দেবেন, আর নেবেন। প্লিজ ম্যাম আমার এইটুকু উপকার করেন। আমার কাতর অনুনয় শুনেই কি না জানি না, উনি আমাকে পড়াতে রাজী হলেন।
শনিবার থেকে শুরু হল আমার ক্লাসে যাওয়া । পড়ানোর রুমে বড় একটা টেবিল। টেবিলের চারপাশ জুড়ে এগার জন ছাত্র। আমি বারোতম। বসলাম ম্যাডাম যে চেয়ারে বসেছেন তার ঠিক উল্টো দিকে। টপিকটা চাহিদা ও যোগান। চাহিদা বাড়লে যোগান বাড়ে, চাহিদা কমলে যোগান কমে। মনে প্রশ্ন জাগে, অর্থনীতি কি আমার চাহিদার কোন যোগান দিতে পারবে? যাই হোক, এভাবে নিয়মিত যেতাম ম্যাডামের কাছে। শনি, সোম, বূধ। শনি, সোম, বূধ। ভাবতাম সপ্তাটা যদি তিন দিনে হত! ম্যাডামের সামনে বসে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতাম ম্যাডামের চোখে। একটা মানুষ কিভাবে এতো সুন্দর হয়! কিভাবে একটা মানুষ এতো সুন্দর করে কথা বলে! ম্যাডামকে দেখতাম আর স্বপ্নের দেশে চলে যেতাম তাকে নিয়ে। ম্যাডাম কিন্তু এর কিছুই বুঝত না। অথচ আমি চাইতাম ম্যাডাম আমার মনের কথাগুলো বুঝুক। আবার ভাবতাম, বুঝলে যদি আমাকে ধমক দেয়, আমাকে তাড়িয়ে দেয়। তাই আমার কাছে ম্যাডামকে পাওয়া মানে ছিল, কেবল ম্যাডামের সামনে মাত্র এক ঘন্টা বসার সুযোগ পাওয়া-এর বেশী কিছু না। কিন্তু কথায় আছে না, বসতে দিলে মানুষ শুতে চায়। আমার কেবল ম্যাডামকে এক ঘন্টা দেখে হচ্ছিল না। আমি আরো বেশী কিছু চাইছিলাম। ম্যাডামের সাথে কথা বলতে চাইছিলাম। ম্যাডামের সাথে ঘুরতে চাইছিলাম। ম্যাডামকে আরো, আরো কাছে পেতে চাইছিলাম। তাই মাঝে মাঝে, পড়ার সময় ছাড়া অন্য সময়ও, পড়াশুনা সংক্রান্ত টুকিটাকি প্রবলেম নিয়ে ম্যাডামের বাসায় যাওয়া শুরু করলাম। ম্যাডামের ৪ বছর বয়েসের মেয়েটার সাথেও খাতির জমানো শুরু করলাম। আরো একটা কাজ শুরু করলাম আমি। শুনলে আপনারা কে কিভাবে নেবেন জানিনা, আমি কিন্তু কাজটা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছিলাম। কাজটা কি তা বলা যাক। একদিন ইন্টারনেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাত একটা সাইট খুঁজে পেলাম যাতে লেখা: Whether it be power money fame revenge love or hate… the universe can be bent to our will and it can all be achieved with spells and magic. হ্যা, সাইটটা ব্ল্যাক ম্যাজিকের। কথাগুলা আমার অপরিণত মনে খুব দাগ কাটলো। আমরা সব কিছুই পেতে পারি ম্যাজিক দিয়ে! এমনকি আমি আমার তানিয়া ম্যাডামকেও পেয়ে যেতে পারি এই ম্যাজিকের জোরে! কোন কিছু না ভেবেই আমি ম্যাজিকের চর্চা শুরু করে দিলাম। সাইটটা তে এতো চমতকার ভাবে সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে, এতো চমতকার ভাবে বলে দিচ্ছে কখন কি করতে হবে, আমি পুরোপুরি অভিভূত হয়ে গেলাম। যিনি সাইটটি তৈরী করেছেন তার মতো করে আমিও ভাবতে থাকলাম আমার দ্বারা, মানে আমার ম্যাজিকের দ্বারা এখন সবকিছুই করা সম্ভব। প্রতিদিন রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ত তখন আমি দরজা জানালা লাগিয়ে শুরু করতাম আমার ম্যজিক চর্চা। যতই দিন যাচ্ছিল ম্যাজিক করায়ত্ব করায় আমার দতা ততই বাড়ছিল। প্রথম ধাপে স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণে দ হয়ে গেলাম। আমি প্রতি রাতেই ম্যাডামকে স্বপ্নে দেখতে পারতাম। বাস্তবের না পারা কাজগুলা স্বপ্নে করতে পারতাম অবলীলায়। ম্যাডামকে নিয়ে আমার পরিচিত এমন কোন জায়গা নাই যেখানে ঘুরতে যাইনি। দুজন হাত ধরে হাটতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। আমি যেমন ম্যাডামকে স্বপ্ন দেখতাম, আমি ও চাইতাম ম্যাডামও যেন আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। এজন্য আমি প্রতি রাতে ঘুমুবার আগে একটা মন্ত্র পড়তাম। এ কাজে আমাকে প্রতিদিন গোলাপী রংয়ের কাপড় দিয়ে একটা ছোট বালিস তৈরী করতে হত যার ভেতরে তুলা ছাড়াও থাকত গোলাপ এবং জুঁই গাছের তাজা পাতা। আর থাকত এক টুকরো কাগজ যাতে গোলাপী রঙের কালিতে লেখা ম্যাডামের নাম। তারপর মেঝেতে একটা ম্যাজিক বৃত্ত এঁকে তার ভেতরে দাঁড়িয়ে নিচের মন্ত্রটি পড়তাম তেরোবার: Blessed mother, Holy Goddess Send Tania a dream And awaken her mind Carry my voice far and galore To the place where even sleep lays ashore Send Tania this message loud and clear This is not just a prayer mere. তেরোবার এই মন্ত্রটি পড়ে তারপর আমি ঘুমুতে যেতাম। মন্ত্র তো ঠিকই পড়তাম কিন্তু ম্যাডামকে তো আর জিজ্ঞেস করতে পারতাম না ম্যাডাম আমাকে স্বপ্নে দেখেছেন কিনা। ছাত্র হয়ে কিভাবে একথা জিজ্ঞেস করা যায় আপনারাই বলূন। সাহস করে বেশ কয়েকদিন চেয়েছিলাম জিজ্ঞেস করি। কিন্তু অতোটা সাহসী বা অভদ্র কোন ক্যাটাগরীতেই আমি পড়ি না যে! তবে হঠাত একদিন ম্যাডাম নিজেই বললেন, হাসতে হাসতে বললেন, তোমরা জানো, কাল না আমি রাজুকে স্বপ্নে দেখেছি। শুনে আমি তো খুশিতে আত্বহারা। লজ্জায় খানিকটা লালও হয়ে গেলাম বোধহয়। ম্যাডাম বললো, দেখলাম, আমি না রাজুকে খুব করে পেটাচ্ছি। বলেই সে কি হাসি। কি যে মধুর লাগছিল ম্যাডামকে তখন! স্বপ্নে যাই দেখুক না কেন আমার মন্ত্র যে কাজ করছে তাতেই আমি সন্তুষ্ট হলাম, আর তন্ত্র-মন্ত্র আরো বিপুল বিক্রমে চালিয়ে গেলাম। আমার বিশ্বাস আরো বেড়ে গেল। এখন আমি জানি আমি ঠিকমতো মন্ত্র পড়তে পারলে একদিন না একদিন আমার ম্যাডামকে আমি পাবোই পাবো। একমাস পরপর আমি আরো একটা মন্ত্র পড়তাম। মন্ত্রটা শুরু করতাম শুক্রবার থেকে। ভালোবাসার দেবী ভেনাসের এই দিনটা খুব নাকি পছন্দের। মন্ত্রটা পড়তে হতো পরপর সাত রাত। এই মন্ত্রটা পড়ার উপকরনগুলা হলো: ১. হার্ট আকৃতির একটা লাল কাপড়। ২. একটা লাল রঙের মোমবাতি। ৩. একটা আয়না। ৪. একটা সাদা কাপড়। ৫. সাতটা পিন। ৬. গোলাপ জল। পদ্ধতি: গোলাপ জল মেশানো পানিতে গোসল করে সারা গায়ে আতর লাগিয়ে আপনার রুমে একটা ম্যজিক অ্যারিয়া বাছাই করে সেখানে সাদা কাপড়টি বিছিয়ে দেন। কাপড়টির উপর আসন পেতে বসে হাতে হার্ট আকৃতির লাল কাপড় নিয়ে মোমবাতিটি জ্বালান। কাপড়টি আগুনে পুড়াতে থাকুন আর বলতে থাকুন: I call thee beloved one To love me more than any one Seven times I pierce my heart Today the magic of Venus starts I bind thy heart and soul to me As I do will, so let it be. সাতবার মন্ত্রটি পড়ুন আর প্রতিবার পড়া শেষে একটা করে আলপিন নিজের বুকে ছোঁয়ান। দেখবেন কাজ হবেই। আমার বেলাও হচ্ছিল। কাজ যে হচ্ছিল এ বুঝতে পারতাম ম্যাডাম যখন আমার সাথে পড়াশুনা ছাড়াও বাইরের অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলতেন। তার বাবুকে নিয়ে কথা বলতেন। তার টিচারদের নিয়ে। তিনি যে টিচার হতে চান নাই এটাও বলেছিলেন একদিন। কথাগুলা ব্যাচে সবাই যখন পড়তাম তখন বলতেন আবার, মাঝে মাঝে আমি যখন একা পড়তে যেতাম তখনও বলতেন। রবীন্দ্র সংগীত নিয়েও একবার অনেক কথা হল। ম্যাডাম রবীন্দ্র সংগীত খুব ভালবাসতেন। একদিন তো ম্যাডাম আমাকে নিজের হাতে নুডুলস বানিয়ে খাওয়ালেন। এভাবে যখন আমি আমার তন্ত্রমন্ত্রের কল্যানে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ একদিন আমাদের মাঝখানে ভিলেন হয়ে আসলেন তানিয়া ম্যাডামের হাজব্যান্ড। হঠাৎ একদিন আমরা সবাই যখন ব্যাচে পড়ছি, তখন ম্যাডাম বলে উঠলেন, তোমাদের সাথে সম্ভবত এটাই আমার শেষ কাস। আমি আর বাসায় প্রাইভেট পড়াব না। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। অন্যরাও বোধহয় বিষয়টা মানতে পারছিল না। সবার মন খারাপ দেখে বিষয়টা ম্যাডাম এক্সপ্লেইন করলেন। বললেন, শোনো, কলেজ আর প্রাইভেটে সারাদিন ব্যস্ত থাকায় আমার মেয়েটাকে আমি সময় দিতে পারছি না। আর আমার পড়ানোর ব্যাপারটাও তোমাদের ভাই সহজে নিতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়েই এ সিদ্ধান্ত। ম্যাডাম দু:খ প্রকাশ করে আমাদের বিদায় দিলেন।
জানি, ম্যাডাম বাধ্য হয়ে তার জামাইয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন। কিন্তু আমি কেন মানব। ম্যাডামের জামাই আমার তো আর কেউ না। আর আমি বুঝতে পারছিলাম আমাকে সরানোর জন্যই ম্যাডামকে এভাবে বাধ্য করা। আমার সাথে যে ম্যাডামের ঘনিন্ঠতা দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে -এ নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন ভদ্রলোক। ম্যাডাম যেদিন আমাকে আদর করে নুডুলস খেতে দেন তখন,বোধহয় তার হাজব্যান্ড বাসায় ছিলেন। যাই হোক আমি কিন্তু দমিয়ে যাওয়ার পাত্র নই। হাজার হোক আমি এখন একজন পুরোদস্তুর কালো জাদুকর। সারারাত ঘুম হলো না। এতটা মন খারাপ বোধহয় এর আগে আর কখনো হয়নি। এখন থেকে ম্যাডামের দেখাটাও পাব না। টেস্ট পরীক্ষা শেষ। কলেজে কোন ক্লাস নাই। ম্যাডামের হাজব্যান্ডের জন্যই আজ এই অবস্থা। কোন ভাবে যদি পথের কাঁটাটাকে সরাতে পারতাম! নিশ্চয়ই পারব। আমি তো এখন আমার ম্যাজিকের জোরে সব, সব কিছু করতে পারি। শুরু করলাম পথের কাঁটা সরানোর প্রজেক্ট। আসলে এতোদিন যে ম্যাজিকগুলা করছিলাম সেগুলাকে পুরোপুরি ব্ল্যাক ম্যাজিক বলা যায় না। কারণ ওগুলা আমি কারো কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে করিনি। কিন্তু এখনকার ম্যাজিকটা সত্যিই ব্ল্যাক ম্যাজিক। ভায়াবহ ব্ল্যাক ম্যাজিক। এজন্য যা করতে হবে তা হলো: কোন এক অমাবস্যার রাতে ঘড়িতে বারোটা বাজার পাঁচ মিনিট বাকি যখন তখন একটা কালো রংয়ের বিড়াল খুন করতে হবে। তারপর সেই বিড়ালের রক্ত দিয়ে নিজের দুই হাত রাঙিয়ে দিতে হবে। তারপর ঘুটঘুঁটে অন্ধকারের মধ্যে কালো রঙের একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দিতে হবে। একটা তের ইঞ্চি বাই তের ইঞ্চি কাগজে যার বিরূদ্ধে আপনার ম্যাজিক তার নামটি লিখুন তারপর বিড়ালের রক্ত দিয়ে নামটি কাটুন আর কাগজটি ধীরে ধীরে মোমবাতিতে পুড়াতে থাকুন। আর বলতে থাকুন Sand from lands far away Mr. Rajib (যাকে তাড়াতে চাচ্ছেন তার নাম)will go and I will stay Both of us, happy will be With Rajib far from me. পুরো কাগজটা পুড়ে গেলে মোমবাতিটা নিবিয়ে ফেলুন। তারপর পরপর তের রাত ঠিক রাত বারোটায় তিনবার করে মন্ত্রটা জপুন। আপনার আদিষ্ট লক্ষ্য পূরণ হবেই। কিন্তু ম্যজিকটি শেষ হবার পর আরো মাস দুয়েক গেল। আমার পথের কাঁটা দূর হচ্ছিল না দেখে আরো কিছু তন্ত্রমন্ত্র করলাম যার বিশদ বর্ণনায় আর না যাওয়াটাই ভাল হবে। এভাবে করতে করতে হুট করে একদিন খবর পেলাম ম্যাডামের হাসব্যান্ড নাকি রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। খবরটা শুনে আমার খুশি আর ধরছিল না। আমি অবশেষে সফল হয়েছি। অথচ আশেপাশের সবাই হাপিত্যেস করা শুরু করল। লোকটা নাকি খুব ভাল ছিল। কচু ছিল। আমার ম্যাডামকে আমার কাছে থেকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল। কত বড় সাহস। ব্ল্যক ম্যাজিক পুরোপুরি আয়ত্ব করে নেয়া একজনের মনের মানুষকে নিয়ে সুখের সংসার গড়ার মজা বুঝুক এখন। সবাই মিলে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার পোস্টমর্টেম শুরু করে দিল। কলেজের ছাত্ররা মিলে সড়ক অবরোধের ডাক দিল। কেউ কেউ সরকারের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা শুরু করল। করবেই তো। কেউ তো আর আমার ক্ষমতা সম্পর্কে জানে না। কেউ তো জানে না চরম অধ্যবসায়ের দ্বারা আজ আমি কিরকম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে গেলাম। যাই হোক পরদিন আর সবার সাথে আমি গেলাম ম্যাডামের বাসায় তাকে দেখে আসতে। কি আর বলব। ম্যাডামের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। এক দিনে ম্যাডামের সব রূপ লাবণ্য কোথায় যে হারিয়ে গেছে! ছোট বাচ্চাটা যখন আমাকে দেখে দৌড়ে এসে জিঞ্জেস করল, আমার আব্বু কই চাচ্চু? আমার বুকের ভেতরটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠল। আমি আর থাকতে পারলাম না। বাসায় চলে আসলাম। তার আরো কয়েকদিন পর, ম্যাডাম যখন একটুখানি স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলেন, তখন মাঝে মাঝে, মানে সপ্তাহ দশদিন পরপর ম্যাডামের বাসায় যেতাম। এটা সেটা খোঁজ খবর নিতাম। ম্যাডামও মাঝে মাঝে আমাকে দিয়ে বিভিন্ন নিত্য ব্যবহার্য জিনিস আনিয়ে নিত। এভাবে আমাদের যোগাযোগটা যখন বেশ বেড়ে যাচ্ছিল তখনই আমি স্বপ্নটা দেখলাম। ভয়াবহ রকমের মন খারাপ করা স্বপ্ন। দেখলাম কেউ একজন আমাকে নির্দেশ দিচ্ছে ম্যাডামের কাছে আমার সব দোষ স্বীকার করতে। যদি না করি তবে ম্যাডাম এক সপ্তাহের মধ্যে মারা যাবেন। স্বাভাবিক মানুষ মাত্রই এ স্বপ্নের কথা হেসে উড়িয়ে দিবে জানি। কিন্তু আমি তো সাধারন কেউ না। ব্ল্যাক ম্যাজিকে বিশ্বাসী। জগতটাইতো সৃষ্টিকর্তার ক্ষণিকের একটা জাদু। জগতের সবকিছুই সম্ভব ম্যাজিক দ্বারা। একজন ম্যজিশিয়ান হিসেবে স্বপ্নের প্রতি রয়েছে আমার অগাধ বিশ্বাস। এই স্বপ্নের জোরেই তো আমি যখন ইচ্ছে কাছে পেতাম আমার সবচাইতে প্রিয় মানুষটাকে। তাই আমি চরম উভয় সংকটে ছিলাম এই ছয়দিন। এই লেখাটা লিখতে বসার একটু আগেই সিদ্ধান্ত নিলাম ম্যাডামের কাছে সবকিছু স্বীকার করব। আফটার অল, ম্যাডাম বেঁচে থাকলে (ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ থাক বা না থাক) আমি ম্যাডামের সৌন্দর্য্যটাতো দূর থেকে হলেও দেখতে পাব। ম্যাডামের সামনে গিয়ে এসব কথা বলার সত্ সাহসটা আমার নাই। তাই আমি আজ এই গল্পটা লিখে বাংলা একটা ব্লগে প্রকাশ করব। আমি জানি ম্যাডাম একজন নিয়মিত ব্লগার। তারপর ম্যাডামকে কল করে বলব লেখাটা পড়ে নিতে। আজই যেহেতু শেষ দিন কাজটি আজকেই করতে হবে। ম্যাডাম, আমি জানি আমি যে অপরাধ করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য। আমাকে মাপ করতে হবে না ম্যাডাম। চাইলে আমাকে পুলিশের হাতে ধরিয়েও দিতে পারেন। কেবল প্রার্থনা এটুকুই, আপনি ভাল থাকেন। শরীরের প্রতি যত্ন নিবেন। আর অমন মনমরা হয়ে থাকবেন না। আপনার মুখে কেবল হাসিটাই মানায়। ভাল থাকবেন। আপনাকে অনেক ভালবাসি। ……………………………………………………………………………….. পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই রাজু ব্লগ খুলে বসল। উদ্দেশ্য ম্যাডামের প্রতিক্রিয়া বুঝার চেষ্টা করা। ব্লগ খুলেই রাজু দেখতে পেল ম্যাডাম লিখেছেন, তোমার লেখার হাত ভাল। সুন্দর লিখেছ।। হ্যাপি ব্লগিং।
পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ