#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_25
?
.
.
আর এক সপ্তাহ বাকি আছে সুমু আর সাদির বিয়ের। সবাইই মোটামুটি ব্যস্ত! সুমুর খুব খেয়াল রাখছে পুরো পরিবার। তাদের একটামাত্র মেয়ে বলে কথা। কোনকিছুতে কোন কমতি রাখবে না। ইমার্জেন্সি ছাড়া সুমুর ভাই ভাবী ঘর থেকেই বের হয় না। রাকিবকে তো বিভিন্ন কাজে যেতে হয় কিন্তু তা সুমুর বিয়ে রিলেটেড। আর বেচারি সুমু এদের অতিরিক্ত আদরে অতিষ্ঠ। নিজের রুমে ঘুমাচ্ছিলো সুমু! এর মধ্যেই এক চিৎকারে ঘুম থেকে ধড়ফড় করে উঠলো। চোখ ঢলে নিয়ে মাথার পাশে থেকে ওড়না নিয়েই নিচে এলো। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে নিচে নীলকে দেখেই বেচারি উল্টো দৌড় দিয়েছিল কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। নীল দৌড়ে সিড়ির কাছে এসে সুমুর বেনুনি ধরে টান মারলো।
নীলঃ শয়তানের খালাতো বইন! শাকচুন্নির সতিন! তোরে আজকে কি করমু আমি!(রেগে)
—(মেকি হেসে) কি হইছে ভাই! এমন করোস কেন?
নীলঃ এমন করি কেন না? অসভ্য মহিলা! তোর বিয়ের খবর কেন আমাকে ভাইয়া জানাবে? তুই মরছিলি?
—শালা! চুল ছাড় আগে! আরেকবার চুল ধরলে তোরে টাক বানাই ফেলবো!
নীলঃ আগে আমার কথার জবাব দে!
—কিইইইই…..আজব তো! আমি কি আমার বিয়ের কথা নিজে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলবো? মানুষ আমারে নির্লজ্জ কইবো! সর!
সুমু কথা শেষ করেই নীলের পিঠে ধুম করে লাগিয়ে দিলো এক থাপ্পড়! আর নীলও কম যায় না সুমুর বেনুনি ধরে টান মারলো। এর মধ্যেই সুমুর মা এসে বলতে শুরু করলো,
মাঃ এই সুমু! কি শুরু করলি রে? ছেলেটা আসতে না আসতেই মারামারি শুরু করছিস?
নীলঃ দেখছো? আম্মু! তোমার মাইয়া কেমন শয়তান! আসতে না আসতেই মারতেছে আমারে!
—ওরে বাটপার! আমি আগে শুরু করছি না তুই?
নীল থুতনিতে আঙুল দিয়ে ভাবার এক্টিং করে বলল,
নীলঃ তুই!
ব্যস আর কি লাগে, দিলো সুমু নীলকে তাড়া! সারাবাড়ি চড়কার মতো ঘুড়ছে!
.
এদিকে সাদি পাগলের মতো পায়চারী করছে! কারনটা সুমু! সুমুকে সে কমসে কম ২৫ বারের উপরে ফোন দিয়েছে কিন্তু সে এখনো লাপাতা! মেসেজও দিয়েছে কিন্তু তা সিন করেনি! তাই বাধ্য হয়েই ছুটলো হবু শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে। সাদি সুমুদের বাসায় পা রাখতেই শুনে ধুম ধুম করে আওয়াজ আসছে যেন কেউ কাউকে ধোলাই দিচ্ছে। সামনে তাকিয়ে অবাক! সুমু নীলকে একটা মারছে তো নীল সুমুকে একটা! এসব দেখে সাদির চোখ বড় হয়ে গেলো। সুমুর মা সাদিকে দেখে সুমুকে ধাক্কা দিলো।
—কি হইছে আম্মু ধাক্কাও কেন?
মাঃ সাদি এসে দাঁড়ায় আছে দেখিস না?
সুমুর সাদির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে যে আসলে সাদি তার দিকে এমনভাবে কেন তাকিয়ে আছে!
সাদিঃ ফোন কই সুমু?(দাঁতে দাঁত চেপে)
—(মেকি হেসে) ওটা তো রুমে আছে! আর আমি নি,,চে! আ,,আপনি ব,সুন না ডাক্তারসাহেব!
সাদি সামনে এসে সুমুর হাত ধরে সবাইকে এক্সকিউজ মি বলে ওর রুমে নিয়ে গেলো। এদিকে নীল পেটে হাত দিয়ে হাসছে। সুমুর মাও মিটমিট করে হাসছে। কারন সুমু অসহায় দৃষ্টি দিয়ে সবাইকে বাঁচাতে বলছে কেননা সাদি আজ একদফা ঝাড়বে সুমুকে!
.
রুমে এনে সাদি সুমুকে খাটে বসিয়ে দিলো। নিচে হাঁটু ভর করে বসে সুমুর দুইপাশে হাত রাখলো। সুমু একদম কাঁচুমাচু হয়ে বসেছে যা দেখে সাদির ভ্রু কুঁচকে এলো। ডানদিকে ফিরে হালকা হেসেও দিল। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো সুমুর দিকে। সুমুর নজর এদিক সেদিক। তা দেখে সাদি শান্ত স্বরে বলল,
সাদিঃ তাকাও আমার দিকে!
সুমু আড়চোখে তাকাতেই সাদি বলে,
সাদিঃ কি হইছে এমন করতেছো কেন?
— আপনি প্লিজ একটু দূরে সরুন! অস্বস্থি লাগছে।
সাদিঃ আমি তোমার হবু বর! তবুও কিছুই করছি না আমি!
—(মিনমিন করে) হ্যাঁ তো হবু বর! হয়ে যাওয়া বর তো আর না!
সাদিঃ ওকে দ্যান রেডি থাকো বিয়ের পর তোমাকে আর কোন সময় দেওয়া যাবে না। উঠতে বসতে আমার রোমান্স চলবে!
সুমু সাদির কথা শুনে বিষ্ফোরিত চোখে তাকালো।
—(চোখ বড় করে) তাহলে আমি বিয়েই করবো না!
সাদিঃ(দাঁতে দাঁত চেপে) বিয়ে করবে না? তাহলে তো ডাবল রোমান্স চলবে! রাস্তাঘাটে যেখানেই নজরে আসবে আমি তোমাকে তুলে নিয়ে যাবো আমার বাড়িতে!
—(অসহায়ভাবে) আপনি এতো নির্লজ্জ কেন? পুরোই বেহায়া টাইপ! বেশরমের মেইন ব্রাঞ্চ!
সাদিঃ(অবাক হয়ে) বেশরমের আবার মেইন ব্রাঞ্চ আছে নাকি?
—হ্যাঁ আছে তো!
সাদিঃ কোথায়?
—এই যে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসা!
সাদি এবার হেসে দিলো। আর সুমুর চোখে তাকিয়ে বলল,
সাদিঃ আমি এমনিই আর যেমনিই হই পুরোটাই তোমার! যেমন তুমি আমার পাগলনি!
—হুহ!
.
আজ সুমুর গায়ে হলুদ! পুরো বাড়ি মানুষের সমাগম। রাকিব যেমন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত তেমন নীলও বসে নেই! এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে এটা সেটা করেই চলেছে। সুমু বেচারি একদম ক্লান্ত! ওকে নিয়ে টানাটানি চলছে। পাশে কিছু ন্যাকার দল ওকে নিয়ে মশকরা আর ন্যাকামো করছে যা সুমুর একদম পছন্দ হয় না। কিছু বলাও যাবে না কারন এরা সাদির বাড়ি থেকে এসেছে। অনেকগুলো ঢালা সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। যদিও এগুলো কি বলে সুমু জানে না। খুব ঝাঁকঝমকভাবে সুমুর হলুদ সন্ধ্যা পালন হয়। অনুষ্ঠান শেষ হতেই কোনমতে সুমু রুমে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তার পক্ষে আর সম্ভব না। বিয়ে মানুষে করে? ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। বিয়েতে এতো প্যারা জানলে সুমু কিছুতেই বিয়ে করতো না। দুইদফা হলুদ হয়েছে তার। সকালে ঘরোয়া ভাবে মা খালারা মিলে হলুদে চুবিয়েছে পুরো আর সন্ধ্যায় আরেকদফা। যদিও এবার অল্পই লাগিয়েছে তবুও একে একে করে হলুদ দেওয়ায় সুমুকে হলুদ পরী লাগছিল। হঠাৎ দরজার শব্দে সুমু তাকাতেই দেখে সাদি ওর ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে যা দেখে সুমু লাফ দিয়ে খাটে উঠে বসলো। সাদি সুমুকে একবার স্ক্যান করে নিয়ে বাঁকা হাসলো। সুমু সাদিকে এভাবে তাকাতে দেখে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার দুপাট্টা খাটে পড়ে রয়েছে তাড়াতাড়ি ওটা নিয়ে পড়ে নিলো তা দেখে সাদির ভ্রু কুঁচকে এলো,
সাদিঃ তোমার কি মনে হয়? তোমাকে ওড়না ছাড়া প্রথম দেখছি?
—মানে? আর আপনি এখানে কি করছেন? এখানে এলেন কিভাবে?
সাদিঃ কি করবো? তোমার বারান্দায় ফুল গ্রিল দেওয়া, তাই এখানে অনেক কষ্টে এসেছি।
—তা কি করতে এসেছেন? ফ্রেশ হতে তো নিশ্চয়ই আসেন নি!
সাদি হেসে দিলো। সুমুর টেবিলের উপর থেকে হলুদের বাটি নিয়ে সুমুর দিকে এগিয়ে গেলো।
— আমার সারা গায়ে হলুদ আর লাগাতে হবে না।
সাদিঃ অবশ্যই লাগাতে হবে। আমার বউ আর আমিই হলুদ লাগাবো না তা তো হতে পারে না। আমি অবশ্যই হলুদ লাগাবো! এই তোমার জামাটা একটু উঠাও পেটে লাগিয়ে দি!
—এই না! যান এখান থেকে লাগাতে হবে না হলুদ!
সাদি কোন কথা না বলে এক টানে সুমু নিজের কাছে নিয়ে এলো। সাদির দৃষ্টি সুমুর চোখের দিকে। এক হাত দিয়ে সুমুকে ধরে রেখেছে আর এক হাত দিয়ে সুমুর জামাটা উঠিয়ে পেটে হলুদ লাগিয়ে দেয়। এক বারের জন্যও সাদি সুমুর শরীরের দিকে তাকায় নি। ওর দৃষ্টি সুমু সারা হলুদমাখা মুখে। সাদি মুচকি হেসে সুমুর থেকে দূরে সরে এলো। বেচারি এখনো কাঁপছে! তা দেখে সাদি সুমুর লজ্জা বাড়িয়ে দিতে বলল,
সাদিঃ এখনই এতো কাঁপছো জান! পরশু তোমার কি হবে? আমি কিন্তু আর অপেক্ষা করতে পারবো না। এমনিই প্রায় আড়াই বছর তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। আর সম্ভব নয়। তাই বি রেডি জান!
সুমুর এখন জান যায় যায় অবস্থা! এই লোক আসলেই বেশরমের মেইন ব্রাঞ্চ!
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।