তবু আছি কাছাকাছি(Doctors love) Part -24

0
3106

#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_24
?
.
.
রুমু যখন সাদিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ব্যস্ত তখন সুমু তাড়াতাড়ি দৌড়ে রাকিবের রুমে এসে ওর ফোন দিয়ে সাদিকে মেসেজ পাঠায়। সাদি ফোন কান থেকে সরিয়ে দেখে সুমুর মেসেজ! মেসেজটা পড়ে বুঝতে পারে আসল ঘটনা। তারপর রুমুকে সাদি কোনভাবে সামলে নেয়!

.
পরদিন বিকালে সাদি আর সুমু একসাথে বের হয়েছে ঘুরাঘুরির জন্য। সাদিকে গাড়ি আনতে মানা করেছে সুমু! কারন ঢাকাশহরের জ্যাম! লাগলে আর ছুটার নাম করবে না। তাই রিক্সা দিয়ে যাবে, জ্যামে পড়লেই নেমে হেঁটে যাবে। সাদি দ্বিমত পোষণ করতেই আগের দিনের করা প্রমিজ মনে করিয়ে দেয় সুমু। বেচারা সাদি সুমুর কথা শুনে চুপ হয়ে যায়। একটা রিক্সা নিয়ে পুরো শহর ঘুরতে থাকে। সুমু সাদিকে নিয়ে গাউছিয়া চলে যায়। সাদি সবসময়ই বড় শপিংমল থেকে জিনিসপত্র কেনে। তাই এইদিকটা তার পরিচিত নয়। সুমু সাদিকে সবটা ঘুরে দেখাচ্ছে। সাদিকে নিয়ে সুমু শাড়ির কর্নারে গেলো। খুব সুন্দর সুন্দর শাড়ি নিলো সুমু। আজ মামুনি, মা, ভাবী, সায়মা আপু সবার জন্য নিয়েছে। আহানা আর রুমুর জন্য খুব সুন্দর দেখে দুইটা লেহেঙ্গা নিয়েছে। হালকা কাজের মধ্যে। এগুলো পড়ে যেকোন পার্টি এটেন্ড করা যায়। আর আজ সুমু সাদিকে কোন টাকা দিতে দেয় নি। তাই দেখে সাদি বলল,

সাদিঃ তুমি আমাকে টাকা দিতে দিলা না কেন? এখন যে তোমার বাপের টাকায় কিনতেছো?

—কে বলছে আমি আমার বাপের টাকায় কিনতেছি?

সাদিঃ(ভ্রু কুঁচকে) তাহলে তুমি টাকা কই পাইছো?

—আমি কাজ করি! আমার নিজের টাকাই আছে। আমার একটা বুটিক শপ আছে। আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে করছি! ওখানে শ্রম দেওয়ার ফলে আমি নিজের খরচ নিজেই বহন করতে পারি।

সাদি হা করে সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে।

সাদিঃ আগে তো জানতাম না তোমার এই ট্যালেন্টও আছে!

—(ভ্রু কুঁচকে) কোন ট্যালেন্ট?

সাদিঃ এই যে কথা লুকানোর ট্যালেন্ট!

সুমু আর কথা না বাড়িয়ে নিজের ইচ্ছে মতো কেনাকাটা করলো। সাদিও কম যায় না। সুমু নিজের জন্য কিছুই কিনে নি। আর সাদি বেছে বেছে সব সুমুর জন্য কিনেছে কিন্তু সুমু সোজা বলে দিয়েছে বিয়ের আগে সে এগুলো কিছু নেবে না। তাই সাদিও বলেছে ওকে আমি এগুলো আমাদের কাবার্ডে রেখে দিবো। সুমুও আর কথা বাড়ালো না।

.
কেনাকাটা শেষ করে সাদি আর সুমু এক সাথে খাওয়াদাওয়া করলো। বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছে সাদি। এতো ঘুরাঘুরি মানুষ কেমনে করে? সুমুকে দেখে এখনো এক্টিভ লাগছে। একসাথে রিক্সায় উঠে। এখন সুমুর বেশ অস্বস্থি লাগছে তাই সাদিকে বলল রিক্সার হুকটা খুলে দিতে। রিক্সার হুকটা খুলতেই ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগলো। সাদির ও ভালো লাগছে। সুমু সাদিকে বলল,

—ডাক্তারসাহেব! আজ আপনার বাসায় যাবো!

সাদি চমকে সুমুর দিকে তাকালো। সুমু বিষয়টা খেয়াল করে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?

সাদিঃ তুমি আমাকে ডাক্তারসাহেব বললে এট লাস্ট। আজ খুব খুশি লাগছে।

সুমু মুচকি হাসি দিলো। রিক্সা এগিয়ে গেলো সাদির বাসার উদ্দেশ্যে। সাদির বাসায় পৌছোতেই সাদি কলিং বেল টিপ দেয়। আর সুমু সাদির পিছনে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। সাদি প্রথমে বুঝতে পারে না। দরজা খুলে দেয় সায়মা আপু! বেচারা সাদি ঘরে ঢুকতে যাবে তখন সুমু সাদির শার্ট টেনে ধরে। এরকম স্ট্যাচু হয়ে থাকতে দেখে সায়মা ভ্রু কুঁচকে বলে,

সায়মাঃ কিরে! সাদি! ভিতরে আয়! ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

পিছন থেকে সুমু বলে,

—কারন আমি ওনার শার্ট টেনে ধরে আছি!

সায়মা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সাদির জন্য সুমুকে একদমই দেখা যাচ্ছে না। সাদির দিকে তাকাতে দেখে সে মিটমিট করে হাসছে। এর মধ্যেই সুমু সাদির শার্ট ধরা অবস্থায় উকি দিয়ে সায়মাকে দেখে বলে,

—আমাকে ভিতরে যেতে দিবে না?

সায়মা অবাক হয়ে চিৎকার করে বলল,

সায়মাঃ সুমু?!!

সুমু সাদির পিছন থেকে বেরিয়ে সায়মাকে জড়িয়ে ধরে। ভিতরে গিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলল। আস্তে আস্তে রান্নাঘরের দিকে যেয়ে মামুনির চোখ চেপে ধরে। পাশের বুয়া তো সুমুকে চিনে না তাই চুপ থাকলো। এদিকে মামুনি ভাবছে এটা কে? সায়মা তো না। পরক্ষণেই বলে দিলো,

মামুনিঃ সুমু চোখটা ছাড়! নয়তো পিটুনি খাবি!

সুমু অবাক হয়ে চোখ ছেড়ে জিজ্ঞাসা করলো,

—তুমি কি করে বুঝলে?

মামুনি হালকা হেসে বলল,

মামুনিঃ এমনি এমনি কি মা হয়েছি!

—ডায়লগটা বেশি পুরোনো হয়ে গেলো না?

মামুনিঃ না হয় নি! আগে এটা বল আমার বাসায় আজ প্রথম এলি! আমাকে জানালি না কেন?

—ওমা! জানালে কি সারপ্রাইজ হতো?

মামুনিঃ উম্মম্ম! নাহ! তা হতো না। কিন্তু তোকে একটু বরণ তো করে নিতাম।

—পরে করো বরণ!

বুয়া খালাঃ ও আফা! ইনি কে?

মামুনিঃ(হেসে) এটা আমার আরেকটা মেয়ে! আমার সাদির বউ!

বুয়া খালাঃ মাশাল্লাহ! এতো দেখতে একদম সুন্দারি! খুবই সুন্দার!

সুমু হেসে দিয়ে বলল,

—ধন্যবাদ খালা! তুমিও খুব সুন্দর!

খালা লজ্জা পেয়ে একটু দূরে গেলো। সুমু হেসে মামুনিকে জড়িয়ে ধরলো।

—কি বানাচ্ছো মামুনি?

মামুনিঃ তুই কি রান্না বুঝবি, আজকালকার মেয়ে?

—তুমি বলো না। দেখে তো মনে হচ্ছে বিবিখানা পিঠা বানাচ্ছো!

মামুনিঃ তুই কি করে বুঝলি?

—ওমা! বুঝবো না কেন? আমি রান্না জানি! দাও আমি সাহায্য করি!

মামুনিঃ নাহ! একদম না। গিয়ে সায়মার সাথে আড্ডা দে। ওই দেখ আহানা এসে গেছে। সুমু নিচু হয়ে আহানাকে কোলে নিলো।

—কেমন আছে আমার আহানা পাখি?

আহানাঃ খুব ভালো মামি মা! তুমি কেমন আছো?

—আমিও ভালো আছি আম্মু!

সুমু আহানাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে যাওয়ার সময় মামুনিকে বলল তাড়াতাড়ি আসতে। মামুনিও হাতের কাজটা গুছিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। এসে দেখে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। সুমু সোফা থেকে উঠে সবাইকে একটা একটা প্যাকেট দিতে লাগলো। সবাই খুব খুশি। কিন্তু মামুনির মুখটা কালো হয়ে আছে। তা দেখে সুমু জিজ্ঞাসা করলো,

—আমার মামুনির শাড়িটা পছন্দ হয় নি?

মামুনিঃ তোরা এতো টাকা কেন নষ্ট করলি? শুধু শুধু?

—শুধু শুধু কোথায়? তোমার এই মেয়ের কামাইয়ের টাকায় তো কখনো কিছু দেই নি। আজ দিচ্ছি! নিবে না? আর আপনজনদের দিলে টাকা নষ্ট হয় না।

মামুনি হেসে বলল,

মামুনিঃ নিবো না কেন? আমার শাড়িটা খুব পছন্দ হয়েছে। আমি তো এমনিই চেক করছিলাম যে মন থেকে দিলি কিনা!

—মামুনি তুমিও না!

সুমু সন্ধ্যায় মামুনির হাতের বিবিখানা পিঠা খেয়ে বাসায় চলে গেলো। সাদি সুমুকে পৌছে দিয়ে এসে ফ্রেশ হওয়ার জন্য কাবার্ড খুলতেই দেখে হলুদ রঙের একটা প্যাকেট। প্যাকেট টা হাতে নিয়ে দেখে তাতে চারটা সুন্দর এমব্রোয়ডারি করা পাঞ্জাবি। সাথে একটা চিরকুট। তাতে লিখা,

” পাঞ্জাবিগুলো নিজ হাতে বানিয়ে দিলাম ডাক্তারসাহেব। প্রতি জুম্মার দিন পড়বেন। আর আমাকে মনে করবেন।”
—সুমু

সাদির ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। মনে মনে আল্লাহকে হাজার শুকরিয়া জানাতে লাগলো সুমুর মতো একজনকে তার জীবনে পাঠানোর জন্য।

,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে