তবু আছি কাছাকাছি(Doctors love) Part-20

0
3149

#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_20
?
.
.
সাদি কিছুতেই সুমুর অবহেলা সহ্য করতে পারছে না! সুমু যেন সাদিকে দেখেও দেখে না। এদিকে সুমু সব খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলো যে নিলা আসলেই অসুস্থ! কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাকে প্রশ্রয় দিতে হবে! অবশ্য নিলার কাজেই তার অসুস্থতা প্রমান হয়! যে নিজের বোনকেই খুন করতে চায় তাকে দিয়ে আর কি বা আশা করা যায়? তাই সুমু ঠিক করলো এই অসুস্থ রোগীর সাথে অযথা কথা বাড়িয়ে লাভ নেই! যা প্রতিশোধ নেওয়ার সাদির থেকেই নিবো। শালা আমার উপর ওর কোন ভরসা নাই তো প্রেম করতে আসছিল কেন? সেদিনের ব্যবহার এর কথা মাথায় আসতেই সুমু রক্ত টগবগ করে ওঠে।

কলেজে গিয়ে সুমু ক্লাসে ঢুকে দেখে ক্লাস ফাঁকা! একজন স্টুডেন্ট ও নেই! বিষয়টা খটকা লাগতেই সুমু নীলকে ফোন দিলো। কিন্তু নট রিচেবেল বলছে! মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেল। যেই ফোনটা কান থেকে নামিয়ে বাইরে বের হতে নিল তখনই সাদিকে ক্লাসে আসতে দেখলো সুমু! বিষয়টা আরো সন্দেহজনক। ইনি এখন এখানে কি করে?

সাদি সুমুর সামনে এসে বলল,

সাদিঃ কি হইছে তোমার? আমাকে এমন এভোয়েড করছো কেন?

—এক্সকিউজ মি স্যার! কি বলছেন এগুলো?

সাদিঃ স্যার!!,,,,আমি কবে থেকে তোমার স্যার হলাম?

—যখন থেকে আপনি আমাদের পড়ান!

সাদিঃ বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?

—বাড়াবাড়ি কেন হবে স্যা,,,,র!

সাদিঃ সুমু! তোমার মুখে আমি স্যার শুনতে চাই না!

—তার ব্যবস্থা হচ্ছে!

সাদিঃ(ভ্রু কুঁচকে) ব্যবস্থা হচ্ছে মানে?

—(থতমত খেয়ে) আব,,,,না কিছু না। আপনি সরুন! আমাকে যেতে দিন!

সাদিঃ নাহ! আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তুমি যেতে পারবা না!

—আপনি ঠেকাবেন?

সাদিঃ দরকার হলে তাই করবো!

সুমু একটু হেসে দিয়ে পিছনে তাকিয়ে বলল,

—ওই তো আপনার গার্লফ্রেন্ড নিলা চলে এসেছে! এখন তাকে আটকান! তাতেই লাভ হবে!

সাদিঃ সুমু! তুমি জানো ও অসুস্থ তাই নাটক করছি!

—খুব ভালো এখন সেটার বাস্তবিক রুপ দিন!

সাদিঃ সুমু,,,,,,

সুমু সাদির কোন কথা না শুনেই চলে গেলো। আর সাদি আজ ও তার ভাঙা হৃদয় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যেই নিলা এসেছে সাদির কাছে। সাদি একটা শ্বাস ফেলে নিলার সাথে চলে গেলো। সুমু বেরিয়ে এসে কৃষ্ণচূড়া ফুলগাছটার নিচে বসলো। কেন যেন এখন আর কাঁদতেও ইচ্ছে হয় না। এই কদিন মেনে নিতে কষ্ট হলেও কারো সামনে প্রকাশ করে নি সুমু। রাত হলেই ঘুমের মাঝে যেন কষ্ট গুলোর সব স্মৃতিচারণ হতো না চাইতেই। একটা শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে গাইতে লাগলো,

” প্রেমে পড়া বারণ,,,কারণে অকারণ! আঙুলে আঙুল রাখলেও,,,হাত ধরা বারণ!”

গাওয়া শেষ হতেই হেসে দিলো। জীবনে প্রথম প্রেমের ধোকা মানতে কষ্ট হলেও অসম্ভব ছিল না। অনেকেই মানতে পারে না। তাই হয়তো ভুলভাল পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। কিন্তু সুমু কাল্পনিক কথায় বা কাজে বিশ্বাসী নয়। সে বাস্তবিক ভাবতেই পছন্দ করে। সে তার পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য! পরিবারের বললে ভুল হবে সে তার গুষ্টির সবার মধ্যে ছোট! কিন্তু আল্লাহ যেন তার মধ্যে বয়সের আগেই ম্যাচুরিটি দিয়েছে। তার ভাই যখন প্রথম প্রেমে ধোকা খায় তখন সুমুই সামলেছিল। সেই থেকেই সবাই তাকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে! বাবাও কোন পরামর্শ করতে সুমুকেই আগে ডাকে। তার সাথে সে এমনিতেও সকলের চোখের মনি! তাই সেও চায় না তার জন্য তার পরিবার বিন্দুমাত্র কষ্ট পাক! সুমু কখনোই প্রেমে তেমন একটা বিশ্বাসী ছিল না। এই ধোকা জিনিটার জন্যই সবচেয়ে বেশি ভয় পেতো সে কিন্তু সেই ভয়টাই আজ ঝেঁকে বসলো। যতই ভাবুক সাদি নাটক করছে তবুও কেন যেন মন থেকে মানতে বড্ড কষ্ট হয়। প্রিয় মানুষটাকে অন্যকারো সাথে স্বাভাবিক ভাবে দেখার জন্য অনেকটা সাহসের প্রয়োজন হয়! তবুও ভিতরটা মনে হয় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সুমুর ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম নয়। যতই সে তাদের সামনে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুক না কেন, তার ওই হাসির মানে ভিতরে জ্বলতে থাকা দাউ দাউ আগুন! যা প্রতিনিয়ত তাকে ভিতর থেকে ভেঙে দেয়। তাই সে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

.
হালকা হেসে উঠে দাঁড়াল সুমু! খোলা চুলগুলো মাটিতে পড়ার কারনে ময়লা লেগেছিল তাই হাত দিয়ে ঝেঁড়ে নিয়ে একটা পনিটেইল বেধে নিলো। হাতে ব্যাগটা নিয়ে হাঁটা দিল।

কোন একটা কারনে হয়তো ক্লাস আজ স্থগিত হয়েছে! কিন্তু নীলটাও ফোন দিয়ে জানালো না। অবশ্য আজকাল নীলও ঠিকমতো কথা বলে না হয়তো অভিমানে! নিলার কেবিনে গিয়ে তাকে দেখতে না পেয়ে সাদির কেবিনের দিকে গেলো।ঠিক তাই!নিলা সাদির কোলের উপর বসে আছে! যা দেখে কিছুক্ষণের জন্য সুমু হ্যাং মেরেছিল। আবার বাস্তবটাকে মনে করে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। সাদিকে সে প্রচন্ড ভালোবাসে। কিন্তু আজ নিলা সুস্থ থাকলে জোর করে সাদিকে নিজের করতো সুমু। কিন্তু এক অসুস্থ রোগীর সাথে লড়াই করতে সুমুর মোটেই ইচ্ছে নেই। মাঝে মাঝে মনকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বলে যদি সাদি নিজে না চাইতো তবে কি কখনো সম্ভব ছিল তার মন ভাঙা? সুমু সাদির কেবিনের দরজায় একটু জোরেই নক করে! যাতে সেদিনের মতো বাজে পরিস্থিতি তৈরি না হয়!

সুমুকে দরজায় দেখে সাদি নিলাকে কোল থেকে উঠিয়ে দিল। নিলা খুব শান্ত ভাবেই বলল,

নিলাঃ কিছু বলবে? কোন দরকার ছিলো?

—ইয়েস ম্যাম! আসলে আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই!

সাদি এক ধ্যানে সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে৷ সুমু বুঝতে পেরেও কিছু না বলে নিলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করলো,

—আমি আপনাকে সরি বলতে এসেছি! এতোদিন আপনার সাথে খুবই বাজে ব্যবহার করেছি। আর কারণে অকারণে আপনার আর সাদি স্যারের মাঝে এসেছি! তার জন্য অনেক অনেক দুঃখিত! আমি আর আপনাদের মাঝে আসবো না। অন্যায় আবদার করবো না। সাদি স্যার আমি আপনাকেও সরি বলছি! মাফ করে দিয়েন! আপনাদের মাঝে আমার জন্য আর কোন সমস্যা তৈরি হবে না। নিশ্চিত থাকুন!

সুমুর কথা শুনে নিলা খুব খুশি। কিন্তু সাদির ভিতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে সে কিছু হারিয়ে ফেলতে চলেছে। কিন্তু নিলার সামনে কিছু বলতেও পারছে না।

নিলাঃ ঠিক আছে। তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো তাই যথেষ্ট। তুমি এবার যেতে পারো।

—থ্যাংক ইউ ম্যাম!

সুমু একটা মলিন হাসি দিয়ে চলে গেলো। দেখতে দেখতে সুমুর প্রফ শেষ। আজ তার রেসাল্ট দিবে। সুমুর ভাই রাকিবও এসেছে। তার প্রাক্তন কলেজ এটা। বোনের জন্য কলেজটাই ঘোরা হয়ে যাবে আর বোনের রেসাল্টও নিবে। যদিও সুমুও এসেছে।

—ভাইয়া! রেসাল্ট দিয়ে দিয়েছে। চলো বোর্ডে দেখে আসি!

রাকিবঃ হুম চল! তোকে দেখে মনেই হয় না তোর রেসাল্ট!

—(হালকা হেসে) বাইরে চাকচিক্য গড়তে শিখেছি ভাই!

রাকিবঃ মানে?

—কিছুনা ভাই চল!

রাকিব জানে তার বোন বরাবরই এমন। মনের কথা মুখ ফুটে বলতেই চায় না। আজও সেই ধাঁধার মতো উত্তর দিল। রাকিব বোর্ডের রেসাল্ট দেখতে গেলো। আর সুমু একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যেই সাদির দিকে নজর গেলো। সে আজ খুব খুশি। ঠোঁটে হাসি লেগেই আছে। সুমুর ঠোঁটেও হালকা হাসি ফুটে ওঠে। এর মধ্যেই রাকিব চিৎকার করতে করতে সুমুর দিকে এগিয়ে আসে। সুমু পুরো কলেজে টপ করেছে। আজ তার খুশির অন্ত নেই। রাকিবের চিৎকারে সবার দৃষ্টি রাকিবের দিকে। সুমু নিজেও হেসে দিয়েছে ভাইয়ের কান্ডে। সাদির হাসি আরো প্রশস্ত হয়েছে রাকিবকে দেখে। এগিয়ে এসে কথা বলতে লাগলো। নিলাও এসে সুমুকে কংগ্রেস করলো। সাদি আড়চোখে সুমুকে দেখে আবার রাকিবের সাথে কথা বলতে লাগলো। দূরে নীলকে দেখতে পেয়ে সুমু এগিয়ে গেলো।

—আজও কথা বলবি না? আজই তো শেষ দেখা এই ক্যাম্পাসে।

নীল সুমুর দিকে তাকাতেই সুমু ভয় পেয়ে গেল। নীলের চোখ অসম্ভব লাল! যদিও সুমু জানে কেন চোখ লাল।

নীল সুমুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।

—নীল! দেখ বাচ্চাদের মতো কেন কাঁদছিস?

নীলঃ যাস না! সুমু! বইন আমার, যাস না এই ভাইকে ফেলে! প্লিজ!

—এখানে থাকলে যে আমি শেষ হয়ে যাবো সেটা দেখতে পারবি ভাই হয়ে?

ব্যস! আর কিছু বলল না নীল সুমুকে। কিছু বলারও নেই। এই কদিন অনেক স্ট্রং থেকেছে সুমু আর হয়তী সম্ভব নয়। তাইতো এই কলেজ থেকে ট্রান্সফার নিচ্ছে।

রাকিব সুমুর দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

রাকিবঃ সুমু! আরেকবার ভেবে দেখ! তুই এখানে টপ করেছিস! তবুও ছেড়ে যাবি?

—ভাই এখানে থাকার কারণ নেই।

রাকিবঃ বোকার মতো কথা বলিস না। কতৃপক্ষ ছাড়তেও চাচ্ছে না।

—এর জন্যই টাকা দিয়েছি!

রাকিবঃ হইছে আমার বড়লোক বইন! তোর বাপ ভাইয়ের কম টাকা নাই যে তোর থেকে নিবো!

নীল রাকিবের কথায় অবাক! তাই জিজ্ঞেস করলো,

নীলঃ ভাইয়া! ওর টাকা মানে?

রাকিবঃ আরে তোর তো নিজের একটা বুটিক শপ আছে। নিজের হাতে গড়ে তুলেছে। ওর পড়াশোনার খরচ ও নিজেই চালায়। আমাদের দিতে হয় না। তাই আমি আর আব্বু ওর ব্যাংকে টাকা রেখে দি! নয়তো ও নিতে চায় না।

নীল অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এই কথা সে জানতো না। তবুও সুমুর কাজের কথা শুনে বেশ খুশি সে।

নীলঃ যদি ঢাকা গিয়ে ভুলে গেছিস না পেত্নী!!!! তোর খবর আছে!

—আমার মাথা খারাপ! তোকে ভুলে যাবো? ইম্পসিবল! আসি রে!

সুমু রাকিবের সাথে বাসে উঠে গেলো ঢাকার উদ্দেশ্যে।

এই কি সাদি আর সুমুর গল্পের শেষ নাকি নতুন কোন গল্পের সূচনা??

,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে