#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_17
?
.
.
সাদি আর সুমু একসাথেই কলেজে প্রবেশ করলো। সাদি আর সুমুকে একসাথে দেখে নীল একটু হাসলো। পরক্ষনে সুমুকে পিঞ্চ করে বলল,
নীলঃ ওও….তো এর জন্য আজকে আমাকে ফোন দিস নি!
—(আড়চোখে তাকিয়ে) একটা চড় লাগাবো ফাজিল!
সাদি নীলের কথা শুনে হেসে দিল। সাদি আগে নীলকে পছন্দ না করলেও এখন সে নীলকে যথেষ্ট পছন্দ করে। কেননা সে বুঝতে পেরেছে যে সুমু সাদি ও তার পরিবারের পরে নীলের কাছেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। তাই হবু শালা হিসেবে সেও নীলকে পিঞ্চ করে!
সাদিঃ আরে নীল কি বলো এগুলো? দেখোনা এমনিই সুমু ক্ষেপে আছে! আরো ক্ষেপালে কিন্তু তোমারই কপালে দুঃখ!
সুমু সাদির দিকে তাকিয়ে বলল,
—দুঃখ তো ওই পিশাচিনীর কপালে নাচতেছে! আপনার প্রানের নিলা!
সাদিঃ সুমু প্লিজ! আর টন্ট করো করো না!
সুমু মুখ ফিরিয়ে বলল,
—হুহ!
সাদি, সুমু ও নীল একসাথেই হেঁটে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে কথা বলতে বলতে তার মধ্যেই নিলা সাদি বলতে বলতে দোড়ে আসছে এদিকে। কিছু সেকেন্ডের ডিস্টেন্সে নিলা উপুত করে পড়ে গেলো। নীল তো নিজের হাসি কন্ট্রোলই করতে পারছে না। আর সুমু সাদির বাহু ধরা অবস্থায় মিটমিট করে হাসছে! আসলে ব্যাপারটা এমন যে, নিলা দোড়ে আসতে আসতে যেই সাদিকে ধরতে যাবে ওমনি সুমু সাদির বাহু ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়। ফলাফল নিলা নিচে মুখ থুবড়ে পড়েছে। সাদি বিষয়টাতে চরম অবাক! কি হলো বুঝতেই তার দুই মিনিট লেগেছে। ঘটনা উপলব্ধি করার পর সমানে হেসে যাচ্ছে! সাদির হাসির শব্দ শুনে নিলা নিচ থেকে উপরে তাকাতেই সুমু সাদিকে চিমটি কাটলো। সাদি সিরিয়াস হওয়ার ভান করে নিলার দিকে তাকালো। নিলা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলল,
নিলাঃ সাদি! তুমি আমাকে ফেলে দিলে?
সাদি কিছু বলার আগেই সুমু বলল,
—উনি কি বলবে? এমন ভাবে পরপুরুষের গায়ে ঢলে পড়লে শাস্তি তো পাবেই! কে বলছিল এমন দৌড়ায় আসতে?
নিলঃ তুমি ও তো সাদিকে স্পর্শ করে আছো!(রেগে)
—স্পর্শ করা আর ঢলে পড়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। আর এখন প্লিজ ন্যাকাদের মতো পা ভাঙ্গার মিথ্যা নাটক কইরেন না। আমরা সবাই জানি আপনার পা একটু মচকায়ও নি।
নিলাঃ(অবাক হয়ে) এই মেয়ে তুমি কি মন পড়তে জানো?
—মন পড়া লাগে না। আপনার হাবভাব দেখলেই বুঝা যায় আপনি ডাক্তারসাহেবের কোলে উঠার জন্য এই নাটকটা করতে পারেন!
সাদি আর নীল দুজনেই অবাক চোখে সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে! সুমু বিষয়টা লক্ষ্য করে বলল,
—(শান্ত ভাবে) কি? এ ভাবে তাকানোর কি আছে?
নিলা নিজের প্ল্যানে ফ্লপ হয়ে একাই উঠে গেলো কেননা কেউই তার দিকে হাঁত বাড়িয়ে দেয় নি। সুমু যাওয়ার আগে সাদির কানে ফিসফিস করে বলল,
—দেখলেন? দিলাম তো পেত্নীর হাত থেকে বাঁচায়ে!
সাদি সুমুর দিকে তাকিয়ে এক ভ্রু উচিয়ে মাথা ঝাঁকাল ঠোঁটে তার দুষ্টু হাসি! সুমু একবার তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো৷ যদিও সামনের দিকে তাকিয়ে সাদির অগোচরে একবার হেসেছিল।
.
এদিকে নিলা ভাবছে, সুমু কি করে বুঝলো যে নিলা সাদিকে জড়িয়ে ধরবে আর কি নিখুঁত ভাবে সাদিকে সময়মতো সরিয়ে নিলো! ইশ! একটুর জন্য সাদিকে হাগ করতে পারলো না! ভেবেই নিলার রাগ উঠে যাচ্ছে!
তিনটা ক্লাস শেষ করে সুমু নীলকে জোর করে উঠিয়ে চা খেতে নিয়ে এলো। সাদি ওদের খেয়াল করে নিজেও বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে।
সাদি সুমু আর নীলকে দূর থেকে ডাকতেই তারা ফিরে তাকালো। আর সাদি তাদের কাছাকাছি এসে বলল,
—কই যাও?
নীলঃ চা খেতে! যাবেন?
সাদিঃ যাইতে তো চাই! আমি কি তোমাদের সাথে যেতে পারি?
—না! পারেন না!
সাদিঃ(ভ্রু কুঁচকে) কেন?
—(ভাবলেশহীন ভাবে) কারন আপনার পিছন পিছনে ওই পেত্নীটাও হাজির!
সাদিঃ(একটু এগিয়ে গিয়ে) তাহলে তোমাদের সঙ্গেই যেতে হবে!
এর মধ্যেই নিলা হাজির!
নিলাঃ সাদিইইইই…..তুমি আমাকে ফেলে একা একা কই যাও?
সাদিঃ এমন ন্যাকামি করতেছো
কেন নিলা? চা খেতে যাই! সুমু নীল চলো!
নিলাঃ আমিও যাবো….
—তো যান! আপনাকে কে ধরে রাখছে?
নিলাঃ আমি সাদির সাথে যাব!
সাদিঃ(মেকি হেসে) কিন্তু আমি তো ওদের সাথে যাব! ওরা আজকে আমাকে ট্রিট দিবে!
—নীল! আমি কিন্তু অন্য কাউকে খাওয়াতে পারবো না!
নিলাঃ সাদি আমি শুধু তোমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবো! কিছু খাব না তবুও চলো….!!
অগত্যা এই নিলা ক্যাচাল ও ওদের সাথে টং এ গেলো। সুমু তিন কাপ চা অর্ডার করলো। এর মধ্যেই নিলা বলতে শুরু করলো,
নিলাঃ সাদিইইইইই….তুমি এই রাস্তার চা কেন খাচ্ছো! কি নোংরা পরিবেশ! ছিঃ!
এই নিলার কথা শুনে সুমুর মেজাজ ফোরটি নাইন হয়ে গেল। সাদি, সুমু, নীলের হাতে চা! আর নিলা উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করছে! সাদি কোন পাল্টা জবাব দিচ্ছে না তবুও নির্লজ্জের মতো কথা বলে যাচ্ছে! সুমু গরম চা টা এমন ভাবে নিচে ফেলল যে সেটা গিয়ে একদম নিলার পায়ে আঙুলে গিয়ে পড়লো আর কাপটাও ছিটকে রাস্তায় পড়ে ভেঙে গেল। নিলা তো নিজের পা ধরে নাচছে! আর সাদি চোখ বড় করে সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে! এখানে সাদির পাও ছিল কিন্তু একদম সঠিক নিশানা লাগিয়েছে! সুমু হয়তো সাদির মনের কথা বুঝতে পেরেছে! নিলাকে একবার সরি বলে দোকানিকে আরেককাপ চা দিতে বলল। আর সাদিকে ইশারায় এদিকে আসতে বলল। সাদি সুমুর কাছে আসতেই সুমু সাদির কানে ফিসফিস করে বলল,
—প্রাস কি এমনি এমনি শিখছি! প্রয়োগ করতেও জানি!
সাদি সুমুর কথা শুনে হালকা হেসে দিল। মনে মনে ভাবতে লাগলো, সুমুর হাত থেকে নিলাকে এবার কে বাঁচাবে?
নিলা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে। নিলা সাদির কোলে উঠতে চেয়েছিল, সাদিও হয়তো নিয়ে নিতো কোলে কিন্তু সুমুর দিকে তাকাতেই ভয়ে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো তার কোমড় ব্যাথা! সাদির অবস্থা দেখে সুমু মনে মনে অনেক হেসেছে!
.
কলেজ শেষে সুমু গেটের কাছে দাঁড়াতেই সাদি পাশে এসে দাঁড়ালো। নীল অনেক আগেই অনুর সাথে মিট করতে চলে গেছে। সুমু সাদিকে পাশে এসে দাঁড়াতে দেখে বলল,
—আপনি একা যে আপনার নিলা বেবি কই?
সাদিঃ(মুচকি হেসে) সে অনেক আগেই পায়ের ব্যাথার জন্য চলে গেছে!
—তা আপনি এখানে কি করছেন? রিক্সা নিয়ে চলে যান!
সাদিঃ সেটাই খুঁজছি! চলো একসাথে যাব!
—(ভ্রু কুঁচকে) কেন?
সাদিঃ এখন থেকে রোজ আমার সাথে আসবে আর আমার সাথে যাবে!
—কেন? আপনি চাকরি নিয়েছেন?
সাদিঃ উহুম! চাকরি না! নিজের জিনিস সেফ রাখছি!
—(ভ্রু কুঁচকে) আপনার জিনিস মানে?
সাদিঃ কিছুনা চলো! ওই যে রিক্সা চলে আসছে!
সুমু মনে মনে বলছে,” লোকটা আস্ত একটা জিলাপির প্যাঁচ!”
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।