#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_14
?
.
.
সাদি আর সুমু ফুচকার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে! সুমু তো আয়েশ করে ফুচকা খাচ্ছে বেচারা সাদি হাতে প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তো সুমুকে দেখেই কূল পায় না খাবে কখন। সুমু এমনভাবে ফুচকা খাচ্ছে যেন এই প্রথম ফুচকা খাচ্ছে! মুখ দিয়ে উম্ম উম্ম শব্দ করছে তার সাথে পুরো নাকমুখ লাল করে ফেলেছে ঝাল খেয়ে!
সাদিঃ সুমু! আস্তে খাও! কেউ তোমার ফুচকা নিয়ে যাচ্ছে না! ধীরে ধীরে খাও!
—ধুর!ধীরে ধীরে খেয়ে মজা নেই। আমি তো ফ্রেন্ডসদের সাথে চ্যালেঞ্জ নিয়ে খাই তাই অভ্যাস হয়ে গেছে।
সাদিঃ তবুও দেখো তুমি ঝালে হোসাচ্ছো!
—এতটুকুতে কিচ্ছু হবে না। আপনি তো ঝালই খান না বুঝবেন কিভাবে ঝাল খাওয়ার মজা!
সাদিঃ তুমিও কাল সকালে বুঝবে ঝাল খাওয়ার মজা!
সুমু আড়চোখে সাদির দিকে একবার তাকিয়ে আবার ফুচকা খাওয়ায় মনোনিবেশ করলো। সাদিও একবার সুমুকে দেখে হালকা হেসে ফুচকা খেতে শুরু করলো। ফুচকা খাওয়া শেষ করে দুজনে বেশ অনেক্ষন ঘুরাফিরা করলো। দুজনে পাশাপাশি হাঁটছে। হঠাৎ সুমু বলে উঠলো,
—ডাক্তারসাহেব! চলুন টং এ চা খাই!
সাদিঃ তুমি কি সবসময়ই টং এ চা খাও?
—মনের ইচ্ছানুযায়ী।
সাদিঃ এখন কি ইচ্ছা করছে টং এ চা খেতে? নয়তো চলো কোন রেস্টুরেন্টে যাই।
—একদম না! টং-এ ই চা খাবো! এমনিতেও আকাশটা বেশ মেঘাচ্ছন্ন! টং এর ধোয়া ওঠা চা খেতে বেশ লাগবে! চলুন তো!
সাদিও মুচকি হেসে সুমুর পিছন পিছন টং এ গেলো।
—ডাক্তারসাহেব! চা কিন্তু আমি খাওয়াবো! ফুচকার বিলটা তো দিতে দিলেন না!
সাদিঃ তুমি এতো বেশি বুঝো কেন?
—মানে?
সাদিঃ মানে তুমি কি চাকরি করো?
—না তো! বাপের হোটেলে খাই! কেন?
সাদিঃ তাহলে এতোই যখন আমাকে খাওয়ানোর ইচ্ছা তো নিজে কামাই করে খাইয়ো! তোমার বাপের টাকায় খাবো না। কিন্তু আমি তো আমার টাকায় খাই তাই তোমাকেও খাওয়াবো।
—এটা কোন জাতি লজিক?
সাদিঃ(দাঁত কেলিয়ে) আমার জাতি লজিক!
—বেশি খাওয়ানোর ইচ্ছা জাগছে না! চলুন আজকে আপনাকে ফতুর বানিয়ে ছাড়বো!
সাদিঃ(ভাবলেশহীন ভাবে) অল ইয়োরস! জান!
—(ভ্রু কুঁচকে) মানে?
সাদিঃ মানে দেখবো আপনি কত খরচ করতে পারেন!
—(বাঁকা হাসি দিয়ে) ওকে।
চা খেতে খেতে সুমু সাদিকে জিজ্ঞাসা করলো পরিবারে আন্টি আর আংকেল বাদে কে কে আছে?
সাদিঃ আমার বড় বোন, বোনের জামাই, আর আমার একটা পিচ্চু ভাগ্নী আছে!
—ছবি আছে ওদের?
সাদিঃ থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে! দেখবা?
—(খুশি হয়ে) হুম!
সাদি তার ফোন বের করে একে একে সবার ছবি দেখালো। সুমুও বেশ খুশি! সাদি সুমুকে আহানার ভিডিও দেখালে সুমুর রিয়েকশন এমন ছিল যে সে ফোনের ভিতর থেকেই পিচ্চিটাকে আদর করবে! খুশিতে বলে ফেলল,
—কয়দিন পর আমাদের বাসায়ও এমন একটা পিচ্চু আসবে! আমি তো চাই একটা মেয়ে বেবী আসুক!
সাদিঃ(চিন্তিত সুরে) কিন্তু আমি তো এখনো কিছু করিই নি!
—আপনি কি করবেন? বেবী তো আমাদের বাসায় আসতেছে!
সাদিঃ হ্যাঁ সেটাই তো! আমাদের বাসায়!(দুষ্টু হেসে)
সুমুর এবার খেয়াল হলো যে এই লোক ওকে নিয়ে মজা করছে! তাই বেশ গম্ভীর ভাবে বলল,
—(দাঁতে দাঁত চেপে) আমাদের বাসায় মানে আমি ভাইয়া ভাবীর কথা বলছি! ভাবী প্রেগন্যান্ট!
সাদিঃ ওয়াও! ভাবী প্রেগন্যান্ট??? ইশ কবে যে আমারটা হবে!!
—আপনার আবার কি হবে?
সাদিঃ কেন? আমার বউ প্রেগন্যান্ট হবে!
সুমু একটা শ্বাস ফেলল। এই লোকের সাথে কথা বলাই বৃথা! তাই চা টা তাড়াতাড়ি শেষ করে সাদিকে বলল,
—এখন আমরা শপিং করতে যাব!
সাদিঃ শপিং????
—হ্যাঁ! বলছি না আজকে আপনাকে ফতুর বানাবো।
সাদি সুমুর কানে ফিসফিস করে বলল,
সাদিঃ(বাঁকা হেসে) কার্ড আর পকেট মিলে লাখ দুই টাকা আছে! দেখি কেমন ফতুর বানাও!
সুমু তৎক্ষনাত ভীষম খেলো। এই লোক পকেটে এতো টাকা নিয়ে কেন ঘুরে?
—(হালকা হেসে) দিনে আমার পকেটে পাশশো টাকাও থাকে না!
সাদিঃ থাকবে কেমনে? যে হারে ফুচকা খাও! সবটাকা তো ফুচকাওয়ালার পকেটে যায়!
—এই! এই! একদম আমার ফুচকা খাওয়ায় নজর দিবেন না! এমনিতেই খাওয়া কমে গেছে!(দুঃখী মুখ করে)
সাদিঃ একবারে তিন প্লেট শেষ করছেন! খুব খাওয়া কমছে!
—আপনি আমার ফুচকা খাওয়ায় নজর দিছেন?? কে বলছিল খাওয়াইতে?(কান্না কান্না ভাবে)
সাদিঃ না! জান! কান্না করো না! আবার ফুচকা খাইলে চলো! আবার খাওয়াই!
—জ্বি না! এখন শপিং এ চলেন!
সাদি একটু হেসে সুমুকে নিয়ে শপিংমলে চলে গেলো। প্রথমেই একটা শাড়ির দোকানে গিয়ে সুন্দর দেখে সুতি জামদানীর বেশ কয়েকটা শাড়ি নিল। কালারগুলো বেশ সুন্দর, পিয়াজ কালার, মিষ্টি কালার, হালকা নীল আরো বেশ কয়েক রঙের! তারপর গেলো একটা কুর্তির দোকানে। যে কয়টা জামা নিল প্রত্যেকটা সুমুর থেকে ১ সাইজ বড় কিনলো। সাদি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে৷ তার মাথায় কিছুই আসছে না। এতো এতো শাড়ি এতো এতো জামা কার জন্য! তারপর বেবী কর্নারে গিয়ে আহানার জন্য তিনটা পার্টি ফ্রক আর বেশ কয়েকটা কম্ফোর্টেবল জামা নিল। সাদি কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই সুমু বলেছে চুপ থাকতে। এরপর জেন্টস কর্নারে গিয়ে সাদির জন্য সুন্দর সুন্দর শার্ট নিল। প্রত্যেকটা শার্টই হালকা রঙের। যেহেতু সাদি কলেজে একজন টিচার তাই তাকে হালকা রঙের কাপড়েই সুন্দর লাগবে। তারপর সাদির বাসায় পড়ার জন্য কয়েকটা টি-শার্ট নিল। সাদি মজা নেওয়ার জন্য সুমুর কানে কানে বলল,
সাদিঃ সুমু! আমার তো আন্ডারওয়্যার ও লাগবে! ওইটা কিনে দিবে না?
সুমু রাগীভাবে তাকাতেই সাদি ফিক করে হেসে দিল। আসলে সুমু বেশ লজ্জা পেয়েছে সাদির কথায়! কি বাজে লোক! সুমুকে আন্ডারওয়্যার কিনতে বলে!
সাদির জন্য কেনা শেষে সুমু সাদির বাবার জন্য কয়েকটা পাঞ্জাবী নেয়৷ আর সায়মার হাসবেন্ড এর জন্যও একটা স্যুট নেয়!
সবার জন্য কেনাকাটা করে সুমু সাদিকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যায়। এতো এতো শপিং সব সাদির হাতে ধরিয়ে দিয়েছে! আর সাদি অসহায়ের মতো সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে।
—এই যে ওয়েটার মামা! এখানে দুইটা লাচ্ছি, আর দুইটা ৫৬ নাম্বার ডিনার প্যাকেজ দিয়ে দিন!
ওয়েটারঃ ওকে ম্যাম!
—লাচ্ছিটা আগে দিয়েন!
ওয়েটারঃ ইয়েস ম্যাম!
সাদি সবগুলো ব্যাগ এখনো ধরে বসে আছে। ওয়েটার এসে লাচ্ছি দিয়ে গেলে সুমু খেতে থাকে কিন্তু সাদি বসে রয়েছে দেখে সুমু বলে,
—কি হলো? বসে আছেন কেন? লাচ্ছিটা খান!
সাদিঃ খাবো কিভাবে হাতে কতকিছু দেখছো!
—ওগুলো পাশের চেয়ারে রেখে দিন!
সাদিঃ(বাঁকা হেসে) নাহ! যদি পড়ে যায়! তার থেকে বরং তুমি আমাকে খাইয়ে দাও!
—(জোরে) কিহ!!!!!
সাদিঃ থাক তাহলে আমি বরং নাই খেলাম!
সুমুর বেশ খারাপ লাগলো। তাই বাধ্য হয়েই সাদির সামনে গ্লাস ধরে স্ট্র এগিয়ে দিল!
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..