#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_13
?
.
.
সাদি যখন বেশ সিরিয়াস হয়ে কথাগুলো বলল তখন অবাক হয়ে সুমু মাথা নাড়ায়! পরক্ষনের হো হো করে হেসে দেয়। সে এক প্রান খোলা হাসি! সাদি প্রথমে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ফেললেও কিছুক্ষন পর মুগ্ধ হয়ে সুমুর হাসি দেখতে শুরু করে! কি প্রানবন্ত তার সুমু! সুমুর হাসি দেখে সাদি আনমনেই বলে ওঠে,
সাদিঃ সুহাসিনী,,,,,,,,,,,!!
সুমু কোনমতে হাসি থামিয়ে সাদির দিকে তাকায়! কিন্তু সাদি তো এখনো সুমুর দিকে তাকিয়েই আছে! তা খেয়াল করে সুমু তার চোখের দৃষ্টি নিচু করে ফেলে হয়তো লজ্জায় বা বিব্রতবোধ করে! আবার সাদির দিকে তাকিয়ে বলে,
—ডাক্তারসাহেব! ভয় পেলেন নাকি? আমার কিন্তু আপনাকে ভয় দেখানোটাই উদ্দেশ্য ছিল। দেখুন ডাক্তারসাহেব! একটা সত্যি কথা বলি আমি এসব ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না। কেউ কাউকে কখনোই নিজের থেকে বেশি ভালোবাসতে পারে না। তাই আমার থেকে পজিটিভ আন্সার মনে হয় না পাবেন!
সুমু সাদিকে কথাগুলো বলে চলে আসতে নিলে সাদি বলে ওঠে,
সাদিঃ আছে! ভালোবাসা নামক অনুভূতি পৃথিবীতে আছে নয়তো এই দুনিয়া টিকতো না। তুমি ভালোবাসায় বিশ্বাসী নও কারন তুমি ভালোবাসার আসল মানেই জানো না। ভালোবাসা মানে শরীরের কামুকতা নয়! ভালোবাসা মানে একে অপরের জন্য বিশ্বাস, ভরসা! অনুভূতির এক অনন্য মিশ্রন হলো ভালোবাসা! আর বললে না কেউ কখনো নিজের থেকে বেশি ভালোবাসতে পারে না? পারে! একজন প্রকৃত প্রেমিক পারে! হ্যাঁ জানি আজকালকার বেশিরভাগ ভালোবাসা মানেই স্বার্থ! কিন্তু এই স্বার্থের বাইরেও প্রকৃত প্রেমিক আছে। কে বলে শুধু মানুষে মানুষেই প্রেম হয়? প্রেমের জন্য সুন্দর একটা মন দরকার হয়!
সাদি যখন কথাগুলো বলছিল তখন তার নজর নিচু ছিল কিন্তু শেষের কথাগুলো সুমুর দিকে তাকিয়ে বলেছে।
—তা আপনি আমার মধ্যে কি দেখতে পেলেন যে ভালোবেসে ফেললেন? কতটুকু চেনেন আমাকে?
সাদিঃ(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে) তোমার থেকে বেশি!
—আমার থেকে বেশি মানে?(অবাক হয়ে)
সাদিঃ সময় হলেই বুঝতে পারবে! এখন ল্যাবে চলো!(বাঁকা হেসে)
সুমু অবাক হয়ে সাদির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তার পিছুপিছু ল্যাবে চলে গেল।
.
ল্যাবে যেতেই সুমু দেখে নীল তারজন্য জায়গা রেখেছে! সে তাড়াতাড়ি নীলের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে! নীল সুমুকে এক পলক দেখে মৃদু হাসে।
নীলঃ কিরে! ঢুংগি! এতো দেড়ি হলো ক্যান?
—পরে বলবো এখন চুপ থাক!
নীল ও আর কথা না বাড়িয়ে ক্লাস শেষ করে।
ক্লাস শেষ হতেই সুমু নীলকে সবটা বলে। নীল সব কথা শুনে সুমুকে বলে,
নীলঃ দেখ! সুমু আমার মনে হয় স্যার তোকে সত্যিই ভালোবাসে। কারন প্রথমদিনই যখন তুই স্যারের সাথে ধাক্কা খাইলি, আমি তোকে ধরে উঠানোয় স্যারের অনেক রেগে গিয়েছিলেন। তখনই বুঝতে পেরেছি যে স্যারের মনে তোর জন্য কিছু আছে।
সুমুর মাথায় সাদি আর নীলের কথা ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু সুমু কখনোই না জেনেশুনে কোনরকম সিদ্ধান্ত নেবে না। কি করবে তাই ভাবছে সুমু। হোস্টেলে ফিরেও একদফা এই বিষয়ে ভেবেছে। কিন্তু ঘুমের জন্য বেশি ভাবতে পারেনি। ঘুমিয়ে পড়েছিল বেচারি।
.
পরদিন খুব ভোরেই সুমুর ঘুম ভেঙে যায়। গতরাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্য এতো তাড়াতাড়ি ঘুমটা ভেঙে গেছে। যদিও আগে খুব ভোরে উঠে সুন্দর সকালের সৌন্দর্য অবলোকন করতো! কিন্তু এখন পড়ার চাপ বাড়ায় দেড়ি করে ঘুমাতে হয় আর ফলাফল হিসেবে দেড়ি করে ঘুম ভাঙে। আজ তাড়াতাড়ি উঠতে পেরে বেশ ভালোই লাগছে। গায়ে একটা পাতলা শাল জড়িয়ে বেরিয়ে এলো হোস্টেল থেকে। হাঁটতে হাঁটতে হোস্টেল থেকে কিছুটা দূরে একটা পার্ক আছে সেখানে চলে এলো। এই পার্কে আগেও এসেছে কিন্তু আজ পরিবেশটা একটু বেশিই ভালো লাগছে। এগিয়ে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসলো। হঠাৎ দোলনার দিকে চোখ যেতেই সেখানে চলে গেলো, দোলনায় বসে দোল খেতে লাগলো! ঠোঁটে এক রাশ হাসি! আজকে সুমুর মনটা অনেক বেশিই ভালো হয়ে গেল। এর মধ্যেই কিছু বাচ্চা দোলনায় চড়তে চাইলে সুমু দোলনাটা ছেড়ে দেয় যদিও বা তার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না দোলনাটা ছাড়ার। কিছুটা মন খারাপ নিয়েই আবার বেঞ্চিতে বসলো।
.
সুমু বেঞ্চের দুই সাইডে হাত রেখে মাথা নিচু করে আছে। হঠাৎ তার সামনে দুহাত ভর্তি শিউলি ফুল দেখে নিজেকে আটকাতে পারলো না। পুলকিত হয়ে পাশে ফিরতেই সেই চেনা সুর,
সাদিঃ মন কি খুব বেশি খারাপ? শিউলিফুলেও ভালো হবে না?
সুমু অবাক হয়ে সাদির দিকে তাকিয়ে আছে। সে কিভাবে জানলো যে সুমুর শিউলিফুলে মারাত্মক অ্যাট্রেকশন আছে?
—আপনি কি করে জানলেন,,,যে,,
সাদিঃ আগেই বলেছি আমি তোমাকে তোমার চেয়ে বেশি জানি।
—আমি তো আপনাকে কখনো বলি নি যে আমার শিউলি ফুল পছন্দ! তাহলে আপনি জানলেন কীভাবে? আমার ফ্রেন্ডসরাও জানে না ইভেন নীল ও জানে না!(অবাক হয়ে)
সাদি সুমুর কথা শুনে হেসে দিল। তারপর বলল,
সাদিঃ তুমি জানতে চেয়েছিলে না তোমার মধ্যে কি দেখতে পেয়ে আমি তোমার প্রেমে পড়লাম?
সুমু মাথা ঝাঁকাল।
সাদিঃ আমি তোমার মধ্যে একটা প্রকৃতি প্রেমী মন দেখেছি। একটা সুন্দর মন যেটা চাইলেও যে কেউ অনুভব করতে পারবে না।
সাদি সুমুর দিকে ফুলগুলো বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
সাদিঃ এগুলো তোমার জন্যই এনেছি। হাতের দিকে তাকিয়ে না থেকে এগুলো নাও।
সুমু খুশি হয়ে তার দু’হাতে ফুলগুলো নিল। মুগ্ধতার সাথে ফুলের সুবাস নিতে শুরু করলো আর সাদি তাকে মুগ্ধ চোখে দেখছে। সুমু চুলগুলো ছাড়া রেখেই চলে এসেছে হাঁটতে। আর ছাড়া চুলগুলো নিয়মহীন ভাবে আপন তালে উড়ে চলেছে। সুমু হঠাৎ সাদিকে প্রশ্ন করলো,
—আচ্ছা! ডাক্তারসাহেব আপনি কি করে জানলেন আমি এখানে?
সাদি একটু থতমত খেয়ে বলল,
সাদিঃ জেনেছি কোন এক ভাবে!
—(ভ্রু কুঁচকে) সেটাই তো জিজ্ঞাসা করছি কিভাবে জানলেন?
সাদিঃ(মৃদু হেসে) তাড়াতাড়ি হোস্টেলে যাও! ৬ঃ ৩৬ বাজে!
সুমুর খেয়ালই ছিল না সময়ের কথা! ফোনও নিয়ে আসে নি। সাদি তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেল। আর সুমুও হাতের ফুলগুলো থেকে ঘ্রাণ নিতে নিতে হোস্টেলে ফিরলো। ফুলগুলো টেবিলের উপর রেখে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিল। নিজেকে একবার আয়নায় দেখে বেরিয়ে পরলো কলেজের উদ্দেশ্যে। মন টা আজ তার বেজায় খুশি৷ কোন কারণ ছাড়াই।
,,
,,
,,
,,
(চলবে)…….