#তবু_আছি_কাছাকাছি (Doctors love) ?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_extra
?
.
.
ব্যস্ততার মাঝেই কেটে গেছে তিন মাস! সাদি এখন খুবই ব্যস্ত থাকে। মাঝে মাঝে রাতে বাড়ি ফিরতে ফিরতেই এতো দেড়ি হয় যে ডিনারও করা হয় না।
.
সাদির মা অনেকবার ছেলেকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে মেয়েটাকে ভালোবাসলে যেন তাকে জানায়! কিন্তু নাহ! এই ছেলেকে নিয়ে পারা যাবে না। সে এখনো কনফিউশনে আছে।
মামুনিঃ তুই কনফিউশনে আছিস তাতেই তিন মাসে তোর এই অবস্থা! না জানি নিজের ভালোবাসা বুঝতে পারলে কি করবি!
সাদিঃ আমি ওকে ভুলে যেতে চাই আম্মু! ও জাস্ট আমার ক্রাশ! আর কিছু না।
মামুনিঃ(অবাক হয়ে) সাদি কি বলছিস? দেখ নিজের ভালোটা বুঝতে শিখ!
সাদিঃ(মনে মনে) আমি বুঝতে পারছি না, এই তিন মাসে না ওর সাথে আমার দেখা হয়েছে আর না কোন কথা হয়েছে। এমন কি ও কোথায়, কেমন অবস্থায় আছে তাও জানি না আমি। আসলে আমি তো কখনো জানতেই চাই নি। তারপরও কেন ও মাথা থেকে বের হচ্ছে না।
মামুনিঃ তাহলে তো একটা রাস্তাই খোলা আছে।
সাদিঃ(ভ্রু কুঁচকে) কি?
মামুনিঃ বিয়ে কর!
সাদিঃ আম্মু তুমি ঠিক আছো? এখন কিসের বিয়ে করবো?
মামুনিঃ আমি ঠিকই আছি। তোর যে বয়স হয়েছে, ভুলে গেছিস? একে তো ডাক্তারি পড়তে পড়তে এতো সময় লাগলো আর এখন কোন বাহানা চলবে না।
সাদিঃ আম্মু কেন বুঝো না!
মামুনিঃ আমি আর কিছু শুনতে চাই না। আরো পরে বিয়ে করলে বাচ্চা নিবি কবে? বুড়ো বয়সে?
সাদিঃ(করুন ভাবে) আম্মু!
মামুনি সাদির আর কোন কথা না শুনেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
.
পরদিন সকালে সাদি হাসপাতালে পৌছাতেই তার কাছে একটা অ্যাপোয়েন্ট লেটার এসেছে! আসলে সাদি যেই মেডিকেল কলেজে পড়েছে সেখানে টপ স্টুডেন্টদের প্রফেসর হিসেবে রাখা হয়। সাদি যদিও চাইতো এমন কিছু কিন্তু এখন সে নিজেই অনেক ব্যস্ত, প্রফেসর হিসেবে জয়েন করলে আরো বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বে। কেননা প্রফেসররা খুব কষ্টে সময় বের করে তারপর ক্লাস নেয়!
.
সাদির কলেজ ছিল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ। সেই সুত্রে তাকে সেখানে জয়েন করতে হবে।
.
সাদি লেটারটা চেক করছিল তখনই সাদির ফোনে ফোন এলো!
সাদিঃ আসসালামু আলাইকুম!
ওপাশঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। ড. সাইমান সাদি?
সাদিঃ ইয়েস! স্পিকিং!
ওপাশঃ চিনতে পেরেছো?
সাদিঃ জ্বি! স্যার!(হেসে)
ওপাশঃ লেটার পেয়েছো?
সাদিঃ ইয়েস স্যার! বাট স্যার আমি তো,,,,,,
ওপাশঃ কোন কথা শুনবো না সাদি! তুমি ছিলে তোমাদের ব্যাচের সবচেয়ে ব্রাইট স্টুডেন্ট। তাই সব কিছু বিবেচনা করেই বলছি ইউ শুড বি এ প্রফেসর।
সাদিঃ বাট স্যার!
ওপাশঃ এই আবদারটা রাখতে হবে। প্লিজ আমাদের কলেজ জয়েন করো! লেটারে বলে দিয়েছি জয়েনিং ডেট!
সাদিঃ(একটা শ্বাস ফেলে) ওকে স্যার।
.
ফোনটা কেটে সাদি আবারও কিছুক্ষন লেটারটার দিকে তাকিয়ে ছিল। মুখে বললে কি হবে সাদি নিজেও খুব খুশি হয়েছে, আবার সে তার ক্যাম্পাসে যেতে পারবে কিন্তু এবার প্রাক্তন স্টুডেন্ট হয়ে নয় সেখানের শিক্ষক হয়ে যাবে সে।
.
সপ্তাহখানেক পর সাদির জয়েনিং ডেট। তাই তাড়াহুড়োর মধ্যেই সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সাদি পরিবারের কেউই মানা করে নি। কিন্তু মামুনির মনটা একটু খারাপ। যতই হোক একটামাত্র ছেলে তার। আগে তো ময়মনসিংহে পড়াশোনারর জন্য এতো বছর ছিল। এখন আবার সেখানেই পড়াতে যাবে। সাদির মাও সেখানে ছেলের সাথে যেতে চাইছিল কিন্তু তার স্বামী মহোদয় একা একা থাকতে পারবে না বিধায় সেও যেতে পারছে না। সাদির বাবা একজন বিজনেসম্যান। তাই চাইলেও সব ছেড়ে সেও যেতে পারবে না।
.
অবশেষে যাওয়ার দিন চলে এলো। যদিও ময়মনসিংহ ট্রেনে করে যাওয়া যায় কিন্তু ময়মনসিংহের ট্রেনের পরিস্থিতি থাকে খুবই বাজে। তাই সাদি বাসে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো। সকাল ৯: ২০ এর বাস।
.
সবার থেকে বিদায় নিয়ে সাদি বাসে উঠে পড়লো! ৯: ২০ এর গাড়ি কিন্তু সাদির একটু লেট হয়ে গিয়েছিল। আসতে আসতেই ৯: ২৫ বেজে গিয়েছিল কিন্তু এটা তো বাংলাদেশ, এখানে ৯ টার গাড়িও ছাড়তে ছাড়তে ৯: ৩০ বাজে। তাই সাদিও ধীরেসুস্থে এসেছে।
.
বাসে উঠে নিজের সিট খুঁজতেই দেখলো তার সিটে একটা মেয়ে বসা! মেয়েটা কানে ইয়ারফোন লাগয়ে জানালার বাইরে মুখ দিয়ে আছে যার জন্য তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না।
.
সাদি মেয়েটাকে কয়েকবার ডাকতেই মেয়েটা ফিরতে ফিরতে বলল,
—যদি কিছু মনে না করেন তো,,,,,,,
মেয়েটা ফিরতেই সাদিও চমকে গেলো আর মেয়েটাও। মেয়েটার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো,
—ডাক্তারসাহেব!
সাদির কেন যেন সুমুকে দেখে এতো খুশি হলো। হাতটা মুখে শক্ত করে চেপে অন্যদিক ফিরে হেসে দিল। তারপর নিজেকে সামলে বলল,
সাদিঃ ওটা আমার সিট!
সুমু একটু মাথা নিচু করে বলল,
—আসলে আমি জানালার পাশ ছাড়া বসতে পারি না। আর বাসে উঠে দেখি ওইসাইডে আমার সিট। অনেকজনকে বলেছিলাম সিটটা চেঞ্জ করতে কিন্তু কেউই রাজি হয়নি। তাই আমার পাশের সিটটা খালি দেখে বসে পরেছিলাম।
সাদিঃ ভার্টিগো আছে?
—অতোটা না। খোলা বাতাসে থাকলে কিছু হয় না।
সাদিঃ আচ্ছা তাহলে ওইখানেও বসো!
—(মৃদু হেসে) অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সাদিও উত্তর দিয়ে সুমুর পাশে বসে পড়লো। সুমু খেয়াল করলো সাদি তিন মাসে অনেকটা অগোছালো হয়ে গেছে। কিন্তু তবুও যেন তাকে অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, এলোমেলো চুল আর সুন্দর করে একটা সাদা শার্ট পরেছে আর চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। তাকে যেন এই লুকেই সবচেয়ে বেশি মানিয়েছে।
.
সুমু খেয়াল করলো সাদি সিটে বসার পর থেকেই সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে আছে। আর তার ঠোঁটে রয়েছে অস্বাভাবিক এক মুচকি হাসি। যেন কিছু অপ্রত্যাশিত কিছু পেয়েছে। সুমু কিছুক্ষন তাকিয়ে আবার সে কানে ইয়ারফোন দিয়ে জানালার বাইরে তাকালো।
আর এদিকে সাদি চোখ বুজে ভাবছে,
সাদিঃ(মনে মনে) মুখে বললেও শুধু আমি জানি এই তিন মাস আমি তোমাকে পাগলের মতো খুঁজেছি। আর আজ অপ্রত্যাশিত ভাবে তোমাকে পেয়ে গেলাম। ভাবতেই মনটা নেচে উঠছে। সুমুর ভাই সিনিয়র দেখে তাকে এতোদিন সুমুর কথা জিজ্ঞাসা করে নি। যতই হোক সিনিয়র বলে কথা আর তাছাড়া কি নিয়েই বা সুমুর কথা জিজ্ঞাসা করতো?
.
সাদি মনে মনে ভাবছে আর মুগ্ধ চোখে সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে। এই তিন মাসে মেয়েটা অনেক শুকিয়ে গেছে। কিন্তু মানুষ শুকিয়ে গেলে নাকি তাকে দেখতে খুব বাজে লাগে কিন্তু সাদির তেমন কিছু মনে হচ্ছে না। বরং সুমুকে সাদির কাছে আরো আকর্ষণীয় লাগছে। কি সুন্দর জানালার দিকে ফিরে চোখ বুঝে একমনে গান শুনছে! হঠাৎ সাদির কথায় সুমু সাদির দিকে ফিরলো।
সাদিঃ তুমি ময়মনসিংহের কোথায় যাচ্ছ?
—(মুচকি হেসে) আমি তো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ি। তাই সেই সুত্রে সেখানে থাকা। ঢাকায় ছুটিতে এসেছিলাম। সেকেন্ড ইয়ার প্রফ শেষ তাই।
সাদি এখনো ঘোর কাটাতে পারছে না। সে কি ঠিক শুনেছে? সুমু তারই ভার্সিটির স্টুডেন্ট! সাদি কিছু না বলে আবারও চোখ বন্ধ করে সিটে গা এলিয়ে দিল।
.
সুমু বেচারি সাদির আচরণ বুঝতে না পেরে সেও তার গান শোনাতে কনসেন্ট্রেড করলো।
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।