তবু আছি কাছাকাছি (Doctors love) Part-29

0
3109

#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_29
?
.
.
দেখতে দেখতে সাতটা দিন পেরিয়ে গেছে সাদি ময়মনসিংহ এসেছে! সাদি বেচারা বিয়ের জন্য ছুটি নিলেও লাভ হয় নি। তাকে ময়মনসিংহ ফিরতে হয়েছে! প্রফেসর বলে কথা! এদিকে সুমুর ইন্টার্নি তাই সেও সাদির সাথে যেতে পারছে না। সাদির মনে হচ্ছে সে বিবাহিত হয়েও ব্যাচেলর! সাদি অনেক চেষ্টা করেছে তাদের সম্পর্কটা এগোতে কিন্তু কিছু না কিছু বাধা আসছেই! সেদিনের ঘটনা,

সন্ধ্যার দিকে সুমু রুমের জিনিসপত্র গোছগাছ করছিলো। তখনই সাদির ফোন এলো,

—আসসালামু আলাইকুম ডাক্তার সাহেব! বলো!

সাদিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি করো?

—হুম! এই একটু গোছগাছ করছি! ঘরটা এলোমেলো হয়ে ছিল।

সাদিঃ আমিও এলোমেলো হয়ে আছি! আজকে একটু গুছিয়ে দেবে?

—(লজ্জা পেয়ে) বাসায় আসো! একদম ঝাড়ু, ত্যানা নিয়ে রেডি আছি তুমি আসবে আর তোমাকে ধোয়া শুরু হবে!

সাদি সুমুর কথা শুনে হেসে দিলো। বেশ কিছুক্ষন কথা বলে সাদি ইমার্জেন্সিতে চলে গেলো। আর সুমু রুম থেকে বেরিয়ে সবার জন্য স্ন্যাকস তৈরি করলো। তারপর রাত ৯ টার দিকে সবাইকে ডিনার করালেও সুমু ডিনার করে না। কারন সাদি এখনো বাসায় আসে নি। প্রায় ১১ টা বেজে গেছে তাই সুমু বাধ্য হয়ে সাদিকে ফোন দিলো।

সাদিঃ(ব্যস্ত গলায়) হ্যাঁ সুমু বলো!

—বলো মানে কি? তুমি কই? ১১ টা বাজে!

সাদিঃ কি করবো জান? ইমার্জেন্সিতে ফেসে গেছি! এখনও একটা সার্জারী করতে হবে। ওটি রেডি করতেছে!

—তুমি তো ডিনারও করো নি। আসতে কতক্ষন লাগবে?

সাদিঃ ঠিক নেই সুমু! তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে যাও! জেগে থাকতে হবে না। আর ডোরটা কি লক করে রাখো। আমার কাছে এক্সট্রা কি আছে বাসার।

—হুম!(মন খারাপ করে)

সাদিঃ মন খারাপ করো না জান! আজকের রাতটা কষ্ট করো। আমি বুঝতে পারছি!

—সমস্যা নেই তুমি আসো। আল্লাহ ভরসা।

সাদিঃ হুম! আচ্ছা রাখছি! আল্লাহ হাফেজ।

—আল্লাহ হাফেজ।

সুমু এক গ্লাস পানি খেয়ে তার বইগুলো নিয়ে বসলো। যতই সব কম্পলিট হোক না কেন। সে যত চর্চা করবে তার ততই লাভ। রুমে স্টাডি টেবিলে পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে গেছে। অনেকটা গভীর রাত এখন।

.
রাত ২ঃ৪৫! সাদি বাসায় এসে কি দিয়ে ডোর খুলে লক করে ভিতরে গেলো। সবাই ঘুমিয়ে। সে নিজেও বেশ ক্লান্ত। সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে নজর গেলো তার রুমে। রুমের লাইট জ্বলছে! তার মানে কি সুমু সজাগ? সাদি আস্তে আস্তে এগিয়ে দেখে সুমু টেবিলে মাথা দিয়েই ঘুমোচ্ছে। সাদি এগিয়ে গিয়ে সুমুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। মেয়েটার জন্য খুব খারাপ লাগে। সে প্রতিদিনই মেয়েটাকে স্বপ্ন দেখায় এক অন্য জগতের কিন্তু বাধার জন্য তাকে নিয়ে যেতে পারে না। সুমু তাতে কখনোই অভিযোগ করে না। সাদি মাঝে মাঝে বেশ অবাক হয়। ভাগ্য করে এমন একটা বউ পেয়েছে সে। সাদি ফ্রেশ হয়ে সুমুকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মেয়েটার মুখ শুকনো লাগছে। নিশ্চিত কিছু খায় নি রাতে। এখন ডাকলে আবার মাথা ব্যাথা করতে পারে তাই সাদি কিচেনে গিয়ে ইনস্ট্যান্ট স্যুপ করে নিয়ে এলো রুমে। সুমুকে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু বেচারি ঘুমে কাদা! তাই বাধ্য হয়ে স্যুপটা খানিকটা ঠান্ডা করে সুমুকে অর্ধেক তুলে সুমুর মাথা নিজের বুকের সাথে ঠেকিয়ে স্যুপটা খাইয়ে দিলো। এমনিতেই মেয়েটার লো প্রেশারের সমস্যা আছে তাই রাতে না খেলে প্রেশার ফল করতে পারে। সুমুকে খাইয়ে দিয়ে ঠিকভাবে শুইয়ে দিলো। তারপর নিজেও কিছু খেয়ে সুমুর পাশে শুইয়ে পড়লো।

.
সকালে উঠে সুমু তার পাশে সাদিকে দেখতে পেলো ঘুমন্ত অবস্থায়। তার বিছানায় আসার কারণটাও বুঝতে পারলো। সাদিকে কি ডাকবে? নাহ থাক! কে জানে কোন রাতে বাসায় এসেছে। ঘুমোক। কিন্তু সুমুর তো উঠতেই হবে তার হসপিটাল যেতে হবে। আর কিছুদিন বাকি ইন্টার্নির তারপর ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সেটা সে নিজের ইচ্ছে মতোই নিতে পারবে কারন তার কাছে তখন লাইসেন্স চলে আসবে। সুমু ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো। তারপর সাদির কপালে বেশ কয়েকবার চুমু দিয়ে বেরিয়ে পড়লো। মামুনির সাথে দেখা হতেই জোর করে নাস্তা করিয়ে দিলো। তার এক কথা খালি পেটে কিছুতেই বাইরে যাওয়া যাবে না। সুমুও বাধ্য মেয়ের মতো নাস্তা করলো।

মামুনিঃ সুমু! সাদি কাল কখন ফিরেছে?

—(খেতে খেতে) জানি না মামুনি! আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টেবিলে, কোন রাতে এসে যেন আমাকে বিছানায় ট্রান্সফার করেছে।

মামুনি হেসে দিলো।

—আমি আর ডাকি নি। কখন না কখন ঘুমিয়েছে। ঘুমোক! মামুনি আমি আসছি। আর একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

মামুনিঃ আচ্ছা সাবধানে যা।

সুমু মামুনিকে একবার জড়িয়ে ধরে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

.
সাদি ঘুম থেকে উঠে সুমুকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। বিছানা ছেড়ে উঠে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কোথাও নেই। টেবিলের দিকে তাকাতেই সেখানে একটা চিরকুট দেখতে পেলো,
” ডাক্তারসাহেব এতো খোঁজাখুঁজি করতে হবে না। আমি হসপিটাল চলে এসেছি আর তাড়া ছিল বলে। তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই আর ডাকি নি।”

সেদিনই সাদির ময়মনসিংহ থেকে ফোন আসে তাকে আবার ময়মনসিংহ যেতে হবে। সুমুকে বক্তেই সে প্রচুর অভিমান করেছিল। কিন্তু পরে সমস্যা বুঝতে পেরে রাজি হয়ে যায়। এভাবেই সাদির জীবন কাটছে সুমু বিহীন। এতোদিন তো বিয়ের দোহাই দিয়ে নিজেকে সামলেছে কিন্তু বউ থাকা সত্বেও এই দহন আর মানতে চাইছে না মন। কিন্তু কিছু করার ও নেই সে ময়মনসিংহ এবং সুমু ঢাকা!

.
আজ একটু রাত হয়ে গেছে সাদির ফিরতে। বেশি না রাত ১০ টা বাজে। ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই কেমন যেন একটা ফিল হলো সাদির। আস্তে আস্তে রুমের দিকে যেতেই দেখে ডাইনিং টেবিলে খাবার ঢাকা দিয়ে রাখা। সাথে একটা ছোট কাগজ। যাতে লেখা,” পাশের রুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসো, ফাস্ট!”

সাদি অবাক হয়। চারপাশটা খেয়াল করে খুব সুন্দর গোছালো। তার বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি এসব কে করেছে। তাই সুমুর কথা মতো সাদি ফ্রেশ হয়ে খাটের উপর রাখা পাঞ্জাবি টা পড়ে নেয়। তারপর রুমে আসে। রুমের দরজা ভিড়ানো। হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। সারারুম ফুল দিয়ে সজ্জিত। কিন্তু সুমু কোথায়? ভাবতে ভাবতেও চোখ গেলো ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়। সেখানে আরেকটা কাগজে লেখা, ” খুঁজে পাচ্ছো না আমায়?,” সাদি হেসে দিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো। বারান্দার চেয়ারটায় একটা মায়াপরী বসা। লাল শাড়ি পরিহিত একটা মায়াজাল। চাঁদের আলোয় তাকে এতোই স্নিগ্ধ লাগছে যে সাদি চোখ ফেরাতে পারছে না। একি তার কল্পনা নাকি বাস্তব? সুমু এখানে কি করে?

,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে