#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_28
?
.
.
সাদি সুমুর কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না।
সাদিঃ তাহলে কি তুমি চাচ্ছিলে আমি মাঝরাতে আসবো?
—সা,,ধারনত তো তাই হয়! না মানে আপনি এতো জলদি কিভাবে রুমে আসলেন? আপনাকে কেউ আটকায় নি?(দরজার দিকে উকি দিয়ে)
সাদিঃ(ভ্রু কুঁচকে) আমাকে কেন আটকাবে? তাও আমার রুমে আসতে?
—হ্যাঁ? আটকাবে না কেন? বাসর ঘরে ঢুকতে দেওয়ার আগে তো টাকা নেয়! সায়মা আপু কই?
সাদি এবার হেসে দিয়ে এক পা এক পা করে সুমুর দিকে তাকাচ্ছে। তা দেখে সুমুর চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। সে ছটফট করতে করতে পিছনে যাচ্ছে। তার সাথে সাথে তার নুপুর ঝুনঝুন করে শব্দ করছে। সাদি সুমুকে এভাবে পিছাতে দেখে বলল,
সাদিঃ তুমি এভাবে ছটফট করতে করতে পিছাচ্ছো কেন?
—তো আপনি কেন আগাচ্ছেন? আমিতো দূরত্ব মেইন্টেইন করতে পিছাচ্ছি!
সাদিঃ আজকে রাতেও দূরত্ব রাখতে চাও? আমার যে একদম ইচ্ছে নেই কোন দূরত্ব রাখার!
সুমুর সাদির কথা শুনে যেন ফ্রিজ হয়ে রয়েছে। আর পা ও খুব ধীর গতিতে চলছে। বারবার ঢোক গিলছে সুমু। চোখের পলকে সাদি একদম কাছে চলে এসেছে।
—ডা,,ডাক্তার,,সাহেব! বলছিলাম,,, কি!,,,,
সাদিঃ(ঘোরের সুরে) হুম! কি বলছিলে?
—চলুন না আমরা আজকে আমরা একটা খেলা খেলি!
সাদিঃ হুম খেলবোই তো!
—(ভাবার ট্রাই করে) খেলবেন? কিন্তু আমি তো এখনো কিছু বললামই না!
সাদিঃ মানে?
—চলুন আমরা গানের কলি খেলি!
সাদি সুমুর কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না বেচারা! এই রাত ১২ঃ৩০ টায় তার গানের কলি খেলতে মন চাইছে! যেখানে সাদি ভাবলো তার সাথে রোমান্টিক কথা বলবে আর সে কি বলছে!
সাদিঃ জান! এটা আমাদের বাসর রাত! একটু তো লিহাজ করো!
—(এইদিকে বাসর রাতে কি করে সেটা না জানা আমি!) তো কি করবো? আসল কথা বলি আজকে আমি বহুত ক্লান্ত, তাই ওইসব পারবো না!(করুন সুরে)
সাদি সুমুর কথা শুনে মুচকি হেসে সুমুর বামগালটা টেনে বলে,
সাদিঃ আরে পিচ্চি বধু! এতো বুঝো কেন? আর তোমাকে কে বললো বাসর রাতে ওইসব করে!
—(খুশি হয়ে) করে না?
সাদি হেসে সুমুর মেহেদী রাঙা হাত ধরে সোফায় বসলো। সুমুর হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বলল,
সাদিঃ সুমু! এখন তুমি আমার স্ত্রী! আর আমি তোমার স্বামী! তাই আমাদের মধ্যে কোন সিক্রেট থাকা উচিত নয়। আর আজ তোমাকে আমি সব বলবো। আমি জানি তোমার মাথায় উল্টো পাল্টা কথা ঢুকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমি কিছু কথা বলি!
১. তুমি কখনো আমার থেকে কিছু লুকোবে না। হোক সেটা তোমার যতই পারসোনাল! যেমন আজ যে তোমার পিরিয়ড চলছে সেটাও কিন্তু তুমি কাউকে জানাও নি। বলবে কি করে জানলাম! তাহলে বলি আমি একজন ডক্টর! আর তোমার এতো হেজিটেশন দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি!
২. তোমার স্বামীর যথেষ্ট কন্ট্রোল করার ক্ষমতা আছে তাই আমাকে কখনো ভয় পাবে না।
৩. তোমার যত ইচ্ছা সব আমার সাথে শেয়ার করবে।
৪. আমিও শেয়ার করবো আমার সব ইচ্ছা! আমার স্ত্রী তুমি, তাই তোমাকেই আমার সকল ইচ্ছা পুরণ করতে হবে।
৫.সবার আগে আল্লাহর কাজ করবে, আমাকে পথভ্রষ্ট হতে দেখলে সাবধান করবে। ধৈর্য ধারন করবে। সংসারে সমস্যা হবেই তবুও একজন আদর্শ স্ত্রী এবং আদর্শ বউ হওয়ার চেষ্টা করবে। আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো একজন আদর্শ স্বামী হওয়ার। আমার প্রতি কোন অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমাকে বলবে।
এবং সবশেষে বলবো আমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসবে।
সুমু সাদির কথাগুলো শুনে জাস্ট অবাক। এতো সুন্দর করে কেউ তার মনের কথা বলতে পারে। সুমু হেসে সাদির হাত শক্ত করে ধরে হেসে দিয়ে বলল,
—আমি সবটা সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ! শুধু তুমি পাশে থেকো।
সাদিঃ(অবাক হয়ে) তুমি আমাকে তুমি করে বললা!
সুমু সাদি দিকে লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলল,
—আজকে থেকে তুমিই বলবো।
সাদিঃ আচ্ছা ঘুমাবে তো নাকি? অনেকটা ক্লান্ত তুমি!
—হুম!আসলে বুঝতে পারিনি হঠাৎ করে পিরিয়ড হয়ে যাবে!(মাথা নিচু করে)
সাদিঃ হুম! যার জন্য নামাজটাও মিস হয়ে গেল! সমস্যা নেই তুমি সুস্থ হও তখন একসাথে সালাত আদায় করবো।
—হুম! জানো ডাক্তারসাহেব! তোমার কাছে আমি সবচেয়ে বেশি সেফ ফিল করি! আই লাভ ইউ!
সাদিঃ(সুমুর গাল হাত দিয়ে ধরে) আই লাভ ইউ টূ মাই জান।
সুমু লাফ দিয়ে উঠে বলল,
—ইশ রে ভুলে গেছি!
সাদিঃ কি ভুলে গেছো?
—তোমাকে সালাম করতে! এখন তুমি বলো তোমাকে মুখে সালাম দেবো নাকি পায়ে ধরে?
সাদিঃ খবরদার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবে না। শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই মাথা নত করবে। আর আমাকে মুখে সালাম দিবে!
—ওকে স্বামীজি! আসসালামু আলাইকুম জনাব!
সাদিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। তোমার দেনমোহর কিন্তু পুরণ করে দিয়েছি তুমি ওটা বুঝে নিও!
—আচ্ছা ওতোগুলো টাকা আমি কি করবো? তুমি শুধু শুধুই,,,
সাদিঃ আমার বউ হিসেবে ওটা তোমার প্রাপ্য তাই ওই টাকা দিয়ে কি করবে তা একান্তই তোমার ইচ্ছা।
—আচ্ছা! চলো ঘুমাবো! আমি ফ্রেশ হয়ে নিয়েছি! তুমি ফ্রেশ হবে?
সাদিঃ হুম! আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি! তুমি একটু কষ্ট করে এই ফুলগুলো সরাও!
—হুম! কি সুন্দর করে সাজানো! ইচ্ছে করছে না।
সাদিঃ(ওয়াশরুম যেতে যেতে) হুম তোমার জন্যই সব মাটি!
—(অবাক হয়ে) আমি কি করলাম আজব! হুহ!
.
সাদি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সুমু গালে হাত দিয়ে ঝিমুচ্ছে। একদম বাচ্চাদের মতো!
সাদিঃ তুমি শুয়ে পড়লে না কেন?
—আসলে! একটা কথা!
সাদিঃ হুম বলো।
—এই শাড়ি পড়ে ঘুমাবো? আসলে আমার খুব অস্বস্থি হচ্ছে।
সাদিঃ না পারলে চেঞ্জ করে নাও! কোন সমস্যা নেই। কেউ তোমায় কিছুই বলবে না।
—আচ্ছা বসো তুমি আমি আসি!
সুমু ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিং টেবিলে বসে চুলগুলো নিয়ে বেনী পাকাচ্ছে। সাদি একটু হেসে সুমুর পিছনে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। সুমুর কেমন যেন অনুভূতি হলো।
—কি করছো ডাক্তারসাহেব?
সাদিঃ বউকে আদর!
—(লজ্জা পেয়ে) ইশ! সরো তো!
সাদি সুমুকে আরো নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। সুমুর কানের নিচে একটা ছোট করে চুমু দিলো। সুমু আবেশে চোখটা বন্ধ করে নিল। সুমুর বেনুনি পাকানো শেষ। সাদি সুমুকে পাজকোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দিলো। সাদি এসে সুমুর পাশে শুতেই সুমু বলে,
—ডাক্তারসাহেব! আমার কোলবালিশ লাগবে! নয়তো আমার ঘুম আসবে না।
সাদিঃ এখন থেকে কোলবালিশ চলবে না। আমাকে ধরো! আমি পুরনো হলে কোলবালিশ নিও!
—ডাক্তারসাহেব!
সুমু সাদিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলো। আর সাদিও একটু হেসে সুমুর কপালে একটা চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে গেলো। সাদির কথাগুলোই যথেষ্ট ছিল সুমুকে কম্ফোর্ট ফিল করানোর জন্য! নয়তো বেচারি আজ পুরো রাত ভয়েই কাটাতো যে সাদি না আবার তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে!
.
সকালের প্রথম আলো ঘরে পড়তেই সাদির ঘুম ভেঙে যায়। তার উপর গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে সুমু। ঠোঁটটা উল্টে আছে। মুখের উপর কিছু চুল উড়ে এসে পড়ে আছে। সাদি আলতো হাতে চুলগুলো সড়িয়ে দিলো। এই যে সে সুমুর জন্য অপেক্ষা করছে তাতেও সে এক ভালোবাসা খুঁজে পায়। তার মতে শারীরিক সম্পর্কের চেয়ে বেশি নারীকে সম্মান দেওয়ায় বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়। যদিও সেটা সব পুরুষ উপলব্ধি করতে পারে না। এই যে সুমু তার বুকের উপর কত নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে, সেটা কখনোই সম্ভব হতো না যদি সে সুমুর উপর তার পুরুষত্ব ফলাতো! সে সুমুর এই নির্ভয় চেহারাটাই দেখতে চেয়েছিল। সুমুর কপালে একটা চুমু দিয়ে তাকে ঘুরিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। তারপর বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
.
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখে সুমু পা মেলে দিয়ে বসে ঠোঁট উল্টে, ভ্রু দুটো কুঁচকে আছে। সাদি কাছে এসে বসে জিজ্ঞাসা করলো,
সাদিঃ কি হইছে জান। ঘুম ভেঙে গেছে?
—আলো আসে যে! ঘুমোতে পাসসি না!(ঘুম ঘুম কন্ঠ) আচ্ছা কয়টা বাজে?
সাদি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
সাদিঃ ৬ঃ৩০!
—তুমি এতো তাড়াতাড়ি কেন উঠেছো?
সাদিঃ আমি এতো তাড়াতাড়িই উঠি। তারপর ব্যায়াম করি! ডাক্তার হয়ে যদি নিজেরই স্বাস্থ্যের খেয়াল না রাখি হবে?
—হুম! ঠিক বলেছো! আমিও ফ্রেশ হয়ে আসি! এমনিতেও ঘুম ভেঙে গেছে।
সুমু বিছানা ছেড়ে উঠতেই সাদির ফোনে ফোন এলো।
সাদিঃ আসসালামু আলাইকুম!
সাদিঃ ওকে! বাট আমার রিপ্লেসমেন্টে ড. মাহমুদ ছিলেন! আমার আজকে রিসেপশন! একটু তো বুঝুন! ওকে!
— কে?
সাদিঃ ইমার্জেন্সি একটা হার্ট সার্জারী করতে হবে! তাই হসপিটাল যেতে হবে।
—আচ্ছা তুমি যাও! কেননা আমাদের অনুষ্ঠানের আগে কারো জীবন! তুমি যাও!
সাদি এসে সুমুর চোখে চুমু দিয়ে রেডি হতে শুরু করে! সুমুও রেডি হয়ে যায়। রুম থেকে বের হতেই দেখে মামুনি কাজের লোকদের কি কি বলছেন আর খালাও নিজ দায়িত্বে কাজ করে যাচ্ছে। সুমুকে দেখে মামুনি এগিয়ে এলো।
মামুনিঃ আয় আয়! এতো সকালে উঠে গেলি কেন?
—আসলে ডাক্তারসাহেব এর একটা ইম্পর্ট্যান্ট সার্জারী আছে তাই ও বের হচ্ছে। এমনিতেও উঠে গিয়েছিলাম।
মামুনিঃ কি! সাদি এখন বের হচ্ছে মানে? আজ ওর কোথাও যাওয়া হবে না।
—মামুনি! এটা কারো জীবনের প্রশ্ন! তুমি আর না করো না। সার্জারী শেষে তো চলেই আসবে।
মামুনিঃ খুব লক্ষ্মী মেয়ে রে তুই!
মামুনি আর সুমু যখন কথা বলছিল তার মাঝেই সায়মা হাজির! সাথে সাথে এমিও হাজির! মামুনি একটা কাজে চলে যেতেই সায়মা বলল,
সায়মাঃ কি গো আমার পিচ্চি ভাবী! কেমন হলো বাসর?(চোখ টিপে)
—সায়মা আপু! তুমি তো সবটাই জানো তাও!???
সায়মা হেসে দিলো। পাশ থেকে ফোড়ন কেটে বলে উঠলো এমি,
এমিঃ বুঝো না ভাবী!!! বেচারাকে মনে হয় সুখ দিতে পারে নি তাই মনের দুঃখে হসপিটাল যাচ্ছে।
সায়মাঃ এ কি ধরনের কথা এমি? বিহেভ ইয়োরসেলফ!
এর মধ্যেই সাদি সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,
সাদিঃ বুঝলে এমি আমার সুমু আমাকে এতো সুখ দিয়েছে যে ইচ্ছে হয় ওকে নিয়ে রুমেই পড়ে থাকি! যদিও তুমি এগুলো বুঝবে না। বিয়ে করো তারপর বুঝবে!
সাদির কথা শুনে সুমু লজ্জায় নিচে তাকিয়ে আছে। সাদি ওর কাছে এসে দু হাত দিয়ে আলতো করে সুমুর গাল ধরে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলে,
সাদিঃ আসি জান! নিজের খেয়াল রেখো আর আমি তাড়াতাড়ি এসে যাবো।
সাদি মামুনিকে বলে বেরিয়ে গেলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। সুমু একটু হেসে এমিকে বলল,
—শুনলে তো সাদি কি বলল! নাকি আমি ডিটেইলস এ বলবো? শুনবে?
এমি রেগেমেগে হন হন করতে করতে রুমে চলে গেলো।
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন ।