#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_27
?
.
.
সুমুকে খুব সুন্দর সজ্জিত একটা রুমে রাখা হয়েছে। সাদি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসা। তাকে ঘিরে আছে সব পুরুষ, সাথে কাজি, উকিল সহ আরো অনেকে। কাবিননামায় সাদির সাক্ষর নেওয়া হয়ে গেছে। এখন কবুল বলতে বলা হয়েছে তাকে। সাদিও কাউকে অপেক্ষা না করিয়ে সুন্দর ভাবে কবুল বলে দিয়েছে।
পরবর্তীতে কাজি আর উকিল সহ সুমুর বাবা, রাকিব, সুমুর শ্বশুর সহ অনেকেই রুমে প্রবেশ করে। সুমুর ভাবী সুমুর মাথার ঘোমটা টা আরেকটু টেনে দেয়। সুমুর নজর নিচের দিকে। সে কিছুতেই তার কান্না আটকাতে পারছে না। অনেক নিয়মকানুন পরে সুমুকে কাবিননামায় সাক্ষর করতে বলা হয়। কিন্তু সুমুর মাঝে কোন ভাবান্তর ঘটেনা। সে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
—বাবা! তোমার আপত্তি না থাকলে আমি এই কাবিননামা একবার পড়ে দেখতে চাই। এটা তো আমার অধিকার!
সুমুর বাবাসহ সবাইই জানে সুমু সবসময়ই একজন সচেতন মানুষ। সে জানে কেউই তাকে ধোকা দিবে না তবুও সে তার অধিকার চায়। সুমুর বলা কথা সঙ্গে সঙ্গে সাদির কানে পৌছাতেই সে মুচকি হেসে কাউকে বলে পাঠায়। লোকটা রুমে এসে সবার সম্মুখে বলে,
লোকটাঃ সাদি ভাই বলছে ভাবীকে তার অধিকার দেওয়া হোক। সে নিজেও চায় ভাবী তার অধিকার বুঝে নিক!
সবার মুখেই হাসি ফুটে ওঠে। সুমুও মৃদু হেসে কাবিননামার পুরোটা পড়ে তারপর সই করে দেয়। তাকে যখন কবুল বলতে বলা হয় সে প্রথমেই তাকায় তার বাবার দিকে, সুমুর বাবার চোখ ছলছল করছে। তারপর ভাইয়ের দিকে তাকায় সেখানেও একই অবস্থা! তার নিজেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে। সুমুর বাবা সুমুর হাতটা ধরে। রাকিব এগিয়ে এসে সুমুকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
রাকিবঃ কবুল বলে দে বোন! কান্না করিস না!
সুমু চোখ বন্ধ করে কবুল বলে দেয়। তার গলা কেমন যেন আটকে আসছিলো! কবুল বলেই বাবাকে জড়িয়ে কান্না করে দেয় সুমু। আর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে একসাথে মোনাজাত ধরে। সুমুর কান্না কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। আর সুমু মনে একটা কথাই ভাবছে, “কি করে সে এক পলকে সাদির অর্ধাঙ্গিনী হয়ে গেলো৷ আল্লাহর কালেমা পড়ে সে সাদির হয়ে গেলো। এখন যে তাকে সব ছেড়ে সাদির সাথে যেতে হবে।”
.
সুমুকে ড্রয়িং রুমে আনা হলো। সাদির পাশে বসিয়ে দিয়েছে। সুমু এক নজর সাদিকে দেখেছে। আজ কেন যেন লজ্জায় তাকাতে পারছে না। সাদি হালকা কাজের শেরওয়ানি পড়েছে। এখন আবার সে ড্রেস চেঞ্জ করে হলে যাবে, যেখানে বিয়ের সকল এরেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে। সুমু এখনো ফুপাচ্ছে। সুমুর বাবা সুমুর হাত সাদির হাতে দিয়ে কি সব নিয়ম পালন করলো। সকল নিয়ম সম্পন্ন করে সবাই একে একে গাড়িতে উঠছে হলে যাওয়ার জন্য। সাদি সুমুর হাত ধরে গাড়ির সামনে নিয়ে এলো। সুমুর কান্না কে দেখে সে এই বাড়িতে আজ আর আসতে পারবে না। তার যে বিয়ে হয়ে গেছে৷ এখন এই বাড়িতে আসতে হলেও তাকে পারমিশন নিয়ে আসতে হবে। এটাই মেয়েদের নিয়তি। কান্না পর্ব শেষে সাদি সুমুকে নিয়ে ফুলে সজ্জিত গাড়িতে উঠে পড়ে। রুমুও খুব কান্না করেছে তার পিপির কান্না দেখে।
গাড়িতে সাদি সুমুকে থামানোর চেষ্টা করছে।
সাদিঃ প্লিজ! জান! কান্না করো না। আমরা পরশু আবার আসবো এ বাড়িতে। তুমি কান্না করো না। এখন হলে যাবো, সবাই কি ভাববে জান! প্লিজ! দেখি একি ফিরো।
সুমুর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
সাদিঃ ইশ রে! কি করছো? এই মেয়ে! তোমার সাহস তো কম না?
সুমু চমকে সাদির দিকে তাকাতেই সাদি বলে,
সাদিঃ তুমি ড. সাইমান সাদির ওয়াইফের চোখের পানি নষ্ট করছো! এর জন্য তোমাকে শাস্তি দেওয়া হবে কঠোর শাস্তি। আজ থেকে মশারী টাঙানোর দায়িত্ব তোমার! হুহ!
সুমু এবার একটু হেসে দিলো।
—মশারী টাঙালে আমার সাথে ঘুমাতে দিবো না। মশারী নিলে আমি ঘুমাতে পারি না।
সাদিঃ হায় আল্লাহ কয় কি! মশারী ছাড়া কেমনে ঘুমামু?
—এহ! মশারী ছাড়া ঘুমাতে না পারলে বউকে ভুলে যান।
সাদিঃ বিয়ে করছি কি বউকে ভুলে যাওয়ার জন্য? একটু সদয় হও! আমি মশারী ছাড়া ঘুমাতে পারি না।(অশায় মুখ করে)
—আমার কিছু করার নাই। মশারী টাঙালে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে! আমি জীবনেও মশারী নেই না। মশা বেশি থাকলে গুড নাইট জ্বালাই বাট তবু মশারী নয়!
সাদিঃ(অসহায় মুখ করে) কি আর করার আচ্ছা মশারী ছাড়াই ঘুমাবো!
সুমু কি ভেবে সাদির দিকে তাকাতেই দেখে সে মিটমিট করে হাসছে। তার মানে এতোক্ষন সে অযথাই সুমুর সাথে ঝগড়ার নাটক করছিলো! সুমু বুঝতে পেরে সাদির বাম বাহুতে শক্ত পোক্ত এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। সাথে সাথেই সাদির শরীর দুলানো হাসি শুরু হলো। সে সুমুর মন ভুলানোর জন্য এই সব কথা বলেছে।
.
গাড়ি হলে পৌছাতেই সুমুর ভাবী এসে সুমুকে নিয়ে হলের একটা রুমে গেলো সুমুর মেকআপ ঠিক করতে। সুমুকে ঠিক ঠাক গুছিয়ে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দিলো। সাদি, সুমুর পাশে কিছুক্ষণ বসে ছিল। তার ফ্রেন্ডসরা, কলিগরা আসতেই দাঁড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। সুমুকে পুতুলের মতো বসিয়ে রাখা হয়েছে। সুমু ভাবছে হলটায় এসি আছে! নয়তো খবর হয়ে যেত৷ একবার গ্রামে ঘুরতে গিয়ে একটা বিয়ের দাওয়াত পেয়েছিল, হলে গিয়ে দেখে এসি নাই। তাতে সুমুর কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু যে বউ সেজে স্টেজে বসে থাকে তার আর রক্ষে থাকে না৷
.
অনুষ্ঠান শেষ করে আরেকবার বিদায় পর্ব শেষ করে সাদি চলল তার বউ নিয়ে নিজের বাড়ি। সাদির বাড়িতে এখন হইহই কান্ড! যতই হোক বাড়ির একমাত্র বউ বরণের ব্যবস্থা তো ধুম ধামে করতে হবে। সাদির পুরো পরিবার খুব খুশি কিন্তু তার মধ্যে মুখ বেজার করে আছে সায়মা আপুর ননদ এমি! তার মোটেই এই আদিখ্যেতা পছন্দ হচ্ছে না। সে এখানে আসতেও চায় নি। কিন্তু তার ভাই ভাবীর জন্য জোর করে আসতে হয়েছে। তার মনে একটা কথাই চলছে,” সাদি তার হলে কি ক্ষতি হতো? কেন তার ভাই তার কথা বুঝলো না?” এর মধ্যেই সাদি তার বউকে নিয়ে চলে এসেছে। সাদির মা বউ বরণের সব নিয়ম পালন করছে। সুমু সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে তার সাথে খুব খুশিও। মামুনি সুমুর দেওয়া শাড়িটা পড়েছে। আর সবাইকে বলেছে,” দেখো আমার ছেলের বউ আমাকে কত ভালোবাসে, সে নিজের কামাই থেকে আমাকে উপহার দিয়েছে! কজনের ভাগ্যে এমন ছেলের বউ থাকে!”
.
সুমুকে দেখে পাড়াপ্রতিবেশি সবার মুখেই সুনাম। কি সুন্দর মিশে গিয়ে কথা বলে সবার সাথে। আর বুয়া খালা তো সুমুর প্রতি খুব খুশি। সে প্রথমদিনই সুমুর প্রতি ইম্প্রেজড! এই যে এমি বারবার রাগ নিয়ে সুমুর দিকে তাকাচ্ছে তাও সে খেয়াল করে। সে সুমুর কানে কানে এমির নামে সব তথ্য দিয়ে দিয়েছে অলরেডি। সুমুও মুখে হাত দিয়ে হেসেছে৷ কেন যেন কন্ট্রোল হচ্ছিল না। সাদি তখন সিড়ি দিয়ে নামছিলো। সুমুকে হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে নিজেও হেসে দিল।
.
রাত প্রায় ১২! সুমুকে সায়মা ফ্রেশ করিয়ে হালকা একটা শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে৷ আর হালকা সাজ! যেমন একটু কাজল, হালকা লিপস্টিক। হাতে কিছু চুড়ি তাও স্বর্নের, নাকে ডায়মন্ডের নোজপিন, কানে ছোট এক জোড়া দুল। তাকে পুরো নতুন বউ নতুন বউ লাগছে। এখন তাকে এই সজ্জিত রুমে সাদির জন্য অপেক্ষা করতে বসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সুমুর তো টেনশনে হাত পা কাঁপছে। এই রুমে এখন থেকে তাকে সাদির সাথে থাকতে হবে। ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। এ কি অসহ্য অনুভূতি হচ্ছে তার?সুমু পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখতে দেখতে রুমের কর্নারে গিটার দেখতে পেলো! এটা নিশ্চয়ই সাদির। সুমুর ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। হাতে নিয়ে গিটারে টুংটাং শব্দ করতে লাগলো। এর মধ্যেই সাদি দরজা খুলে ভিতরে আসে! সুমু চোখ বড় করে বলে,
—আপনি এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে আসলেন?
সাদিঃ(ভ্রু কুঁচকে) মানেহ?
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।