#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_26
?
.
.
রাতে দেড়ি করে ঘুমানোর জন্য সকালে উঠতেও দেড়ি হয়ে গেলো। কেউ ডাকলো না কেন তাই বুঝতে পারলাম না। ঘুম থেকে উঠলামই রুমুর কান্নার শব্দে। কে জানে মেয়েটা কেন কান্না করছে! এমনিতেই ভাবী আজকাল অনেক ব্যস্ত থাকে তার মধ্যে রুমু! যাই গিয়ে দেখে আসি মেয়েটা কান্না কেন করছে!
ফ্রেশ হয়ে সুমু রুম থেকে বের হতেই দেখে রুমু তার মায়ের পিছনে ঘুরে ঘুরে কান্না করছে! ইশ! ভাবী একটু কোলেও তুলছে না। আমার খুব কষ্ট লাগলো৷
—আমার মা টা কান্না কেন করছে! এদিকে আসো তো আমার কুটুসপাখি!
রুমু ঠোঁট উল্টে কান্না করতে করতে আমার কাছে এলো। আমি কোলে নিতেই আমার কাধে মাথা এলিয়ে দিলো। আর কিছুক্ষণ পর পর ফুঁপাচ্ছে।
—আমার পিপি কেন কান্না করে?
আমার কোলে উঠতেই রুমুর কান্না বন্ধ এবং মুখে বুড়ো আঙুল পুরে চোখ বন্ধ করে আছে। কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম রুমু ঘুমিয়ে গেছে। মেয়েটা একদম আমার স্বভাব পেয়েছে। কান্না করতে করতে ঘুম! আমি ভাবীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
—ভাবী! রুমু এমন কান্না করছিলো কেন?
ভাবীঃ আর বলিস না! ওর কান্নার আবার রিজন লাগে? ঘুমিয়ে গেছে?
—হুম! কোলে উঠতেই ঘুম!
ভাবীঃ বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আয়!
—নাহ! ঠিক আছে আমার কোলেই থাকুক! নয়তো উঠে আবার কান্না করবে!
আম্মু, ভাবী খুব ব্যস্ত! আজ বিয়ে বলে কথা! কিন্তু আমার মধ্যে তেমন কোন ভাবাবেগ নেই। কেন যেন মনে হচ্ছে অতি দুঃখে আর অতি আনন্দে আমার অনুভূতি শুন্য। রুমুকে কোলে নিয়েই আমার রুমে এসে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসলাম। হঠাৎই মনে হলো এই যে আমার কোলে আমার জানটা! এটাকে ছেড়ে আমি কিভাবে থাকবো? ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসছে। আম্মু, আব্বু, ভাইয়া, ভাবী এদের ছাড়া থাকতে হবে ভেবেই কান্না পাচ্ছে। নাহ! পারছি না আমি কান্না আটকাতে! হয়তো নতুন মানুষ পাবো কিন্তু পুরোনোদের কি এতো সহজে অভ্যাসচ্যুত করা যাবে? আমার চোখ থেকে অটোমেটিক পানি পড়ছে। এক অসহ্য অনুভূতি হচ্ছে। পাশ থেকে ফোনটা বেজে উঠতেই তাকিয়ে দেখলাম সাদি ফোন করেছে। কি সুন্দর নামটা ভেসে উঠলো, “ডাক্তারসাহেব”। আমার ভিতর থেকে কেমন যেন দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসছে। কিছুতেই থামতে পারছি না। এর মধ্যেই কলটা কেটে গেলো। কিছুক্ষণ পর আবার বেজে উঠতেই আমি বা হাত দিয়ে কলটা রিসিভ করে ফোনটা কানে তুলতেই ওইপাশ থেকে কিছুক্ষণ নিরবতার পর সাদি বলল,
সাদিঃ কাঁদছো কেন?
—ডাক্তারসাহেব! বিয়েটা না করলে হয় না?
সাদিঃ(চমকে উঠে) কি বলছো পাগলে মতো এসব?(কিছুক্ষণ চুপ থেকে) কি হইছে জান? কেউ কিছু বলেছে? মন খারাপ?
—আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ডাক্তারসাহেব! সবাইকে ছেড়ে কি করে থাকবো আমি? আমি রুমুকে ছাড়া কিভাবে থাকবো?
বলতে বলতেই কান্না করে দিয়েছি।সাদি ওপাশ থেকে শান্ত স্বরে বলছে,
সাদিঃ কান্না থামাও জান! প্লিজ! দেখো এরকম করলে হয়? প্লিজ কান্না করো না। আমার সহ্য হচ্ছে না। আর কে বলেছে ওদের ছাড়া থাকতে? আমরা এক সপ্তাহ আমার বাড়িতে থাকবো আর একসপ্তাহ তোমার বাড়িতে! খুশি! আমিও কেন শ্বশুরবাড়ির আদর মিস করবো? তাই শ্বশুরবাড়িতেও থাকতে হবে। কি বলো?
সাদির কথা শুনে সুমু হেসে দিলো। তা শুনে সাদি বলল,
সাদিঃ যাক! আমার বউটাকে হাসাতে পারলাম! নাস্তা করেছো?
—নাহ! রুমু সকালে কান্না করছিলো, আমার কোলে উঠতেই ঘুম!
সুমু আর সাদি কথা বলছিল এর মধ্যেই রুমু ঘুম থেকে উঠে যায়। সুমুর কাধ থেকে মাথা তুলে নিজের পিপিকে দেখেই হেসে দিলো। সুমুর গালে পাপ্পি দিতেই সুমুও রিটার্ন রুমুর গালে পাপ্পি দিলো। ওপাশে সাদি শব্দ শুনে বলছে,
সাদিঃ এই তুমি আমাকে চুমু দিলা?
—জ্বি না! আমি আমার কুটুসপাখিকে দিলাম!
সাদিঃ রুমু উঠে গেছে?
—(রুমুকে ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে) হুম!
রুমুঃ পিপি? তুমি কার সাতে কতা বুলো?
—তোমার পাপার সাথে!
রুমুঃ আমিও কতা বুলবো!
সুমু রুমুর কানে ফোন দিতেই রুমুর বকবকানি শুরু হয়ে গেলো সাদির সাথে!
রুমুঃ পাপা! আমাকে কিন্তু এতুগুলা মিল্কি দিবে, থিকাছে?
সাদিঃ আচ্ছা মা দিবো! আর কি লাগবে আমার পাপার?
রুমুঃ তুমি তাড়াতাড়ি চুলে আসু! আমরা একসাতে ঘুরবো! পিপিকেও নিবো, কিন্তু আহানা আপুকে নিবো না!
সাদিঃ কেন মা? আহানা আপুকে নিবে না কেন?
রুমুঃ আপু সুদু পিপির কোলে উথে!
সাদিঃ তুমিও তো আমার কোলে উঠবে তাহলে? আহানা যদি তোমার পিপির কোলে ওঠে তো তুমি আমার কোলে উঠে পড়বে! ঠিক আছে?
রুমুঃ হুম ঠিক আছে? তাইলে আহানা আপুকেও নিবো! হিহি!
ফোন লাউডে দেওয়ার জন্য এদের সব কথাই শুনতে পাচ্ছিলাম। আমিও হেসে দিলাম ওদের কথা শুনে। সাদির সাথে কথা বলা শেষ করে রুমুকে নিয়ে ডাইনিং এ গিয়ে বসলাম। আম্মু নাস্তা দিয়ে গেলো। রুমুকে ব্রাশ করিয়ে দুজনেই নাস্তা করলাম। রুমুটাও বড্ড পাজি! আমার হাতে শান্ত বাচ্চার মতো খাবে কিন্তু ভাবী খাইয়ে দিতে আসলেই তার যত বাহানা শুরু হয়! খাওয়া শেষ করে রুমে আসতেই দেখি ভাবী আর আম্মু বসা৷ ভাবী আমার বিয়ের লেহেঙ্গা ঠিক করছে। আম্মু ভাবীকে এটা সেটা বলে দিচ্ছে। আমি গিয়ে আম্মুকে জড়িয়ে বসে রইলাম। খুব কান্না পাচ্ছে। আম্মু হয়তো বুঝতে পারলো। সেও চোখ থেকে পানি ঝড়াচ্ছে। মুখে না বললেও বুঝতে পারছি আম্মুর অনেক কষ্ট হচ্ছে। ভাবীরও মুখটা থমথমে। আমি কান্না শুরু করতেই আম্মু আর ভাবীও কান্না করা শুরু করলো। আর আমি এক কথাই বলে যাচ্ছি, “আম্মু আমি তোমার ছেড়ে যাবো না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা! কিভাবে থাকবো তোমাদের ছাড়া?”
মাঃ সব মেয়েকেই যেতে হয় রে মা! এই দেখ আমি, তোর ভাবী আমরাও তো বাপের বাড়ি ছেড়েই এসেছি। এখন এই বাড়িটা ছেড়ে কোথাও যেতেও মন চায় না। তোর ও অভ্যাস হয়ে যাবে মা। কান্না করিস না।
ভাবী আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
ভাবীঃ বাবু! আর কান্না করিস না। আজ বিয়ে! একটু পর পার্লার থেকে আর্টিস্টরা চলে আসবে। দেখি! ইশ! মুখটা একদম লাল করে ফেলেছিস কেঁদে! আর কাঁদিস না বাবু!
ভাবীকে জড়িয়ে ধরেও কিছুক্ষণ কান্না করলাম। হঠাৎ করেই এই বাড়ির প্রতিটা কোনার জন্য আজ অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। জানি সাদি কখনোই আমাকে মানা করবে না এখানে থাকতে কিন্তু তবুও কেন যেন খুব মিস করবো সবাইকে।
.
আম্মু আর ভাবী আমাকে খাইয়ে দিয়ে গোসল সারতে বলল। বাসায় এতো মানুষের ভীর বলে বোঝানো যাবে না। আমার মামী, মামাতো ভাইয়েরা, তাদের বউয়েরা মানে আমার ভাবীরা, সব আপু আর তাদের হাসবেন্ডরা। সবাই যেহেতু আমাদের আত্মীয় তাই পুরো বাসাই লোকে সমাগম। আমার বান্ধবীগুলোও খাটছে। বেচারীরা! আবার সময় করে নাচ প্রেক্টিস করছে। আমি বারবার নীলকে কনুই দিয়ে গুতো দিচ্ছি আর বলছি,
—দেখ! কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে ঘুরছে আশেপাশে, একটা পছন্দ করে নে না!
নীলঃ সুমু তুই বড্ড বদমাইশ হয়ে যাচ্ছিস!
—ভাই আমার আর কত দুঃখ পালন করবি ওই অনু পরমানুর জন্য! ফাজিল মহিলা! কেমনে পারলো আমার ভাইটাকে এমন দুঃখ দিতে! অসভ্য! বিয়ে করবিই না যখন প্রেম করার কি দরকার ছিল?
নীলঃ বাদ দে না সুমু! আমি সিংগেল লাইফেই ভালো আছি! শুনেই সাত মাসের প্রেগন্যান্ট সে!
—হুম! বেশি বড়লোক পাইছে আর ভাগছে। তুই চিন্তা করিস না। আল্লাহ আমার ভাইয়ের জন্য বেস্ট কাউকে রাখছে!
নীলঃ হুম! এখন শুধু তারই অপেক্ষা! কিন্তু আমার ভালোবাসায় খাঁদ ছিলো না।
—আমি জানি! এই এখন এই পেঁচার মতো মুখ ঠিক করে মেয়েদের নাচ দেখ!
মেকআপ আর্টিস্টরা আসতেই আমাকে নিয়ে গেলো সাজাতে। ভারী লেহেঙ্গা, ভারী ভারী জুয়েলারি পরে নিজেকে মনে হচ্ছে পুরো দোকান! এই সাজ গোজ নিয়ে বসে আছি এসি ছেড়ে। এই সাজ নিয়ে বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়! গরমে মরেই যাবো। বারবার ভাবীরা এসে দেখে যাচ্ছে কোন সমস্যা হয় কিনা! আর আমি ঠোঁট উল্টে ফোনে গেমস খেলছি! আম্মু আর ভাবীরা মিলে আমার সব জিনিসপত্র লাগেজে ভরে দিয়েছে তাই চার্জার খুঁজে পাচ্ছি না। ফোনটা চার্জ দিবো। এর মধ্যেই একটা লাগেজ খুলতেই আমার চোখ চড়কগাছ! ভাবীগুলো এতো দুষ্টু কেন? আল্লাহ! এটা যদি কেউ দেখে? ছিঃ! কি করি? ফেলে দেবো? নাকি লুকিয়ে রাখবো! এর মধ্যেই ভাবীকে আসতে দেখে আমি রাগী লুক নিয়ে তাকাতেই ভাবী জিজ্ঞাসা করলো,
ভাবীঃ কি হইছে বাবু?
—আমাকে ডাকো বাবু আর বাবুর ব্যাগে বড়দের জিনিস কেন দিছো?
ভাবী আমার হাতের জিনিসটা দেখে মুচকি হেসে বলল,
ভাবীঃ ভবিষ্যতে এটা আমার বড় বাবুর কাজে লাগবে! তুই এটা কেন নিয়েছিস?
—ভাবী! এগুলো ফালাও! আমি এগুলা নিবো না।! ছিঃ!
ভাবী আমার হাত থেকে নিয়ে আবার ব্যাগের পকেটে রেখে বলল,
ভাবীঃ ছিঃ বলোনা ননদিনী! এটা কাজে আসলে ভাবীকেই ধন্যবাদ দিবা!
—তুমি দিন দিন বহুত অসভ্য হয়ে যাচ্ছো! দাঁড়াও তোমাকেও কিভাবে লজ্জায় ফেলতে হয় আমি জানি!
এর মধ্যেই কিছু মেয়ে এসে চেঁচাতে শুরু করলো,”বর এসেছে,বর এসেছে!”
আমি উল্টো ঘুরে বুকে হাত রাখলাম। কেমন যেন ধুক করে উঠলো।
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।