#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_19
?
.
.
সাদি তার বাসায় এসে এমন কিছু নেই যা সে ভাঙে নি! আজ সে নিজের ভালোবাসাকেই সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে! জানে না সুমু তাকে ক্ষমা করবে কিনা কিন্তু সে নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না! সব ভাংচুর করছে তার মুখে শুধুই সুমুর নাম! চোখ থেকে অটোমেটিক পানি ঝরছে! চেয়েও সে কন্ট্রোল করতে পারছে না। ভাঙতে ভাঙতে এক পর্যায়ে তার রুমের টেবিলের কাছে সুমু ছবিতে হাত দিয়েই থেমে যায়! যেখানে পুরো মানুষটাকেই ভেঙে ফেলেছে সেখানে এই ছবি ভেঙে কি লাভ? সুমুর ছবি হাতেই ধপ করে মাটিতে বসে পড়েছে! মনে মনে একটা কথাই আওড়াচ্ছে, ” সব শেষ ”
.
এদিকে সুমু বিছানায় পড়ে রয়েছে! সে অনেক বেশিই দুর্বল হয়ে পড়েছে। আসলে আজ সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে খেতেই ভুলে গেছে আর সাথে এই জঘন্য ব্যবহার! ইকরা আর নাদিয়া সুমুর সেবা করে যাচ্ছে৷ তারাও জানে সুমুর বিষয়ে তাই কিছু জিজ্ঞাসা করে সুমুকে বিব্রত করলো না। সুমু একটু সুস্থ হতেই বিছানা থেকে উঠে বসলো। ভালো ভাবে খাওয়াদাওয়া করে, গোসল করলো! ইকরা আর নাদিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না। সুমু এতো নরমাল কিভাবে আছে? ইকরা নীলকে ফোন দিয়ে সবটা বলল, সব শুনে নীলও কোন রিয়েক্ট করে নি। যেন সে জানে পরবর্তীতে কি হবে! গোসল করে সুমু একটা লং কুর্তি পড়ে বের হলো। বের হয়েই ইকরাকে জিজ্ঞাসা করলো,
—কয়টা বাজে?
ইকরাঃ সুমু বেবি তুই ঠিক আছিস?
—আমার কি হবে? তুই শুধু বল কয়টা বাজে?
ইকরাঃ ৪ঃ৫৬!
—হুম! ঠিকাছে! আমি বের হচ্ছি! টেনশন নিস না! আমি কোন আবেগি মেয়ে নই যে সবটা এভাবেই ছাড় দেব! আসছি!
সুমু হোস্টেল থেকে বের হয়ে নীলকে ফোন দিল।
নীলঃ হ্যাঁ সুমু বল!
—কই আছিস তুই?
নীলঃ পার্কে! কেন?
—আচ্ছা! আমি যাচ্ছি!
যাচ্ছি শুনেই নীল চমকে গেলো!
নীলঃ কই যাস তুই?
—আরে কাম ডাউন! আমি ডাক্তারসাহেব এর বাসায় যাচ্ছি! তুই আয়! আমি ঠিকানা টেক্সট করছি!
নীলঃ আচ্ছা!
সুমু একটা রিক্সা নিয়ে সাদির বাসায় চলে এলো! ফ্ল্যাটের দরজায় দাঁড়াতেই বুকটা কেমন ধক করে উঠলো! তাড়াতাড়ি দরজা নক করতেই ভিতর থেকে কোন সাড়া এলো না। এর পর কন্টিনিউয়াসলি নক করার পর সাদি ঢুলতে ঢুলতে এসে দরজা খুলল। সে মনে করেছে হয়তো নিলা এসেছে! তাই ইচ্ছে করেই দেড়ি করে দরজা খুলেছে! দরজা খুলে সুমুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সাদি চমকে গেলো। ও এখানে কেন! সুমু সাদির অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি ঘরের ভেতর ঢুকলো সাদিকে ধাক্কা দিয়ে! ভিতরে গিয়ে সুমুর চোখ চড়কগাছ! সব তছনছ করে রেখে দিয়েছে! সুমু প্রচুর রাগ উঠতেছে মাথায়! দাঁত কিরমির করে সাদির দিকে তাকাতেই দেখে সাদির অবস্থা আরো করুন! সুমুর এতো রাগ লাগছে! সবচেয়ে বেশি রাগ লাগছে সাদি তার নজর নিচের দিকে রেখেছে!
.
সুমু ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আর পারলো না! এগিয়ে এসে সাদির গালে লাগিয়ে দিলো এক থাপ্পড়! সাদি গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে সুমুর দিকে তাকাতেই দেখে সুমু রণমুর্তি ধারণ করেছে! রাগে ফুঁসছে!
—(চিৎকার করে) এগুলো কি? এই অবস্থা কেন ঘরের??
সাদি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে! সেতো অবাক! সুমুর কি হলো হঠাৎ!
—পুরো ঘর দেখে মনে হচ্ছে এখানে মানুষ বাস করে না! কোন গোঁয়াল ঘরে আসছি! আর নিজের কি হাল করছেন?
সুমু সাদিকে টেনে একটা টুলে বসিয়ে দিলো। বিছানাপত্র তো এদিক সেদিক পড়ে আছে! তার পর বহু কষ্টে ফার্স্ট এইড বক্স খুঁজে আনলো। সাদি অবাক হয়ে শুধু সুমুকেই দেখে যাচ্ছে! চোখ থেকে তো পানি পড়ছেই। চাইলেও কন্ট্রোল করতে পারছে না। সুমু সাদির হাত টেনে নিজের হাতে নিয়ে ড্রেসিং করাতে লাগলো।
—আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনার গার্লফ্রেন্ড নিলা আপনাকে ধর্ষণ করছে! এতো বিধ্বস্ত অবস্থা! কে কাকে ধর্ষণ করছেন বলুন তো! আরে ধুর আমিও না! এতে তো আপনাদের দুইজনেরই সমান মত থাকবে এটাকে ধর্ষণ বলা যায় না। এটা তো অবৈধ ভালোবাসা!
সাদিঃ সুমু আমি,,,,,,
—চুপ! একদম চুপ! একদম গলা টিপে মেরে ফেলবো! একটা কথা বলবি না! তুই কি মনে করছিস? আমি অবলা নারী? তোরা অপমান করবি আর আমি মুখ বুঝে সহ্য করবো! নেভার! তুই আমার ফিলিংস নিয়ে খেলছিস! এর শাস্তি তো তোকে আমি দিবো কিন্তু তার আগে তোর গার্লফ্রেন্ড নিলার ব্যবস্থা করবো! আর খুব ভয়ানক হবে! আমার গায়ে হাত তোলার পরিনাম সে বুঝবে এবার! আমি এখনো ভাইয়ার কানে কিছু তুলি নি! বললে জেন্ত পুতে ফেলতো তোর ওই নিলাকে! তখন কিছু বলি নাই দেখে আমাকে অবলা ভেবে খুব ভুল করছিস তোরা! এবার এই সুমু কি করে জাস্ট দেখ!
সুমু সাদির হাতে ড্রেসিং করে বের হতে নিলেই সাদি বলে উঠে,
সাদিঃ নিলার কিছু করো না প্লিজ!
সুমু তৎক্ষনাত ভ্রু কুঁচকে পিছনে ফিরে সাদির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,।
—এতো প্রেম? কতদূর এগোলো?
সাদিঃ(একটা শ্বাস ছেড়ে) কোন প্রেম নেই!
—কেন নেই! ক্যাম্পাসে তো চিৎকার করে বলে এলেন ইউ আর ইন রিলেশনশিপ উইথ নিলা!(ব্যঙ্গ করে)
সাদিঃ সুমু আমার কথাটা মন দিয়ে শোন! নিলা অসুস্থ! ও মানুষিক ভাবে খুবই দুর্বল! যদি ওর মন মতো কিছু না হয় তবে সে যেকোনো মুহূর্তে ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যেতে পারে! তাই ওই নাটকটা করেছি!
—(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে) তাই আপনি আমাকেই মেরে দিলেন?
সাদি সুমুর দিকে তাকাতেই দেখে সুমু চোখ ছলছল করছে! সাদি সুমুর কাছে এগিয়ে আসতেই সুমু পিছিয়ে যায় আর হাত দিয়ে সাদিকে আটকায়!
সাদিঃ সুমু বিশ্বাস করো! ওইটা শুধু নাটক ছিল! তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি!
—(চিৎকার করে) জাস্ট শাট আপ! এতো এক্সকিউজ শুনতে চাই না! আমার লাইফে আপনার আর কোন অধিকার নেই! আমি আগেই বলেছি যা মন চায় করুন কিন্তু ধোকা দিবেন না! বাট ইউ চুজ ইয়োরসেলফ! এন্ড নাও! আই চুজ মাইসেল্ফ!
সাদি চেয়েও সুমুকে আটকাতে পারলো না। বেরিয়ে গেলো সাদির বাসা থেকে!
.
সুমু নীলকে নিয়ে একটা পার্কে গেলো।
নীলঃ কি বুঝলি অবস্থা?
—আজকে ভয় দেখিয়ে আসছি! আর ওই নিলার খোঁজ নিতে হবে। ও কি আসলেই অসুস্থ! এটা তোকে ফাইন্ড আউট করতে হবে। বাকিটা আমি দেখবো!
সুমু নীলের সাথে কথা শেষ করে রাকিবকে ফোন করলো।
রাকিবঃ এতোদিন পরে ভাইয়ের কথা মনে পড়লো!
— আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া! ভালো আছো?
রাকিবঃ হ্যাঁ ভালো আছি! কি খবর বল!
—তোর হেল্প লাগবে!
রাকিবঃ কি হেল্প?
সুমু রাকিবকে কিছু একটা বলল যা আমরা পরে জানতে পারবো!
রাকিবঃ ওকে ডান!
—আল্লাহ হাফেজ!
ফোন টা কেটে সুমু বাঁকা হাসি দিলো। এদিকে সাদি টেনশনে আছে যে সুমু কি করবে! আবার ভয়েও আছে সুমু তার থেকে দূরে সরে যাবে নাতো? নাহ! এই জল বেশিদূর গড়ানোর আগেই কিছু ব্যবস্থা করতে হবে। সাদি আর অপেক্ষা না করে তার মাকে ফোন দিলো।
.
সুমুর থার্ড ইয়ারের প্রফের আর মাত্র একমাস বাকি আছে! সে এখন শুধু তার পড়াশোনায় ফোকাস করছে! সাদির বিষয়ে বা ওইদিনের ওই বিষয়ে কেউই কিছু বলে নি। আজব ভাবে ওই বিষয়ে কারো কোন গুঞ্জন ও শুনা যায় না। এইসব কাজের ক্রেডিট নীলের! নীল আর সুমু উঠে পরে লেগেছে পরীক্ষার জন্য! সাদি সুমুকে দেখে অবাকের উপর অবাক হচ্ছে! এ কোন সুমু? নিলাকে সাদির পাশে দেখেও কোন রিয়েক্ট করে না। পাশ কাটিয়ে হাসতে হাসতে চলে যায়। সাদি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে সে সুমু তাকে চরম ভাবে এভোয়েড করছে যা তার মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সে নিজেও কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসি দিয়ে চলে যায়!
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..