#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_18
?
.
.
সাদি সুমুকে হোস্টেলে নামিয়ে দিয়ে বাসায় চলে গেলো। বাসায় গিয়ে সাদি ফ্রেশ হয়ে সোফায় শুয়ে ফোন টিপছে। তখনই তার মোবাইলে কল এলো৷ যা দেখে তৎক্ষনাত সাদি উঠে বসে কল এটেন্ড করলো।
.
সুমু ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিল। তার মতে ঘুম জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেদিন পরিপূর্ণ ঘুম হবে না সেদিন মুড থাকবে খুবই বাজে। তাই ঘুমের সাথে নো কম্প্রোমাইজ! হঠাৎ কোন এক খারাপ স্বপ্নে ঘুম ভেঙে গেল সুমুর। উঠে কতক্ষণ হাঁপিয়ে মনে মনে বলল, ” ধুর! এটা তো দিনের স্বপ্ন! এটা দেখে ভয় পাওয়া লাগে!” পরক্ষণেই আবার বলল, ” না ভাই! রিস্ক নেওয়া যাবে না। আন্টি তো বলল সাদির জন্মদিন কালকে! আর কালকেই আমি ওকে আমার মনের কথা বলে দেবো। যেহেতু আমি জানিই যে ওর জন্য কি ফিল করি তাহলে আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। এর মধ্যে তো আবার ওই নিলা পেত্নীটা হাজির! ওরে দেখলে তো আমার মনে হয় সে একজন সাইকো! মেন্টালি অ্যাবনরমাল! যাই হোক! ডাক্তারসাহেবকে নিয়ে নো কম্প্রোমাইজ!” সুমু সেই কালো শাড়িটা হাতে নিয়ে মুচকি হাসলো!
ফোনটা হাতে নিয়ে সুমু নীলকে ফোন দিলো।
নীলঃ কি রে চুন্নি? ফুচকা পার্টনার পাস নি?
—কানের চেয়ে নে দিমু একটা থাপ্পড়! শয়তান কোনানকার! তোরে আমি এই কারন ছাড়া ফোন দেই না?
নীলঃ আরে চিল! সিস্টার! এতো হাইপার হস কেন? আমি বুঝি না তুই যেই পরিমান রাগী তাতে তোর প্রেশার হাই থাকা উচিত কিন্তু নাহ! তোর প্রেশার অলওয়েজ লো থাকে!
—আজাইরা কথা বাদ দিয়া আমার কথা শোন!
নীলঃ আচ্ছা বল!
—আমি কালকে ডাক্তারসাহেব কে সারপ্রাইজ দিতে চাই! তুই আমাকে হেল্প করবি!
নীলঃ সেতো খুব ভালো কথা! তা প্ল্যানিং করছিস?
—হুম! শুধু তোর হেল্প লাগবে! কালকে ডাক্তারসাহেব এর জন্মদিন তাই সবটাই স্পেশাল হওয়া চাই! বুঝলি?
নীলঃ বুঝছি আমার আকা!
—গুড জিনি!(হেসে)
তারপর দুইজনেই হেসে দিলো। নীলের সাথে সকল পরামর্শ শেষে সুমু সাদিকে ফোন দিলো। দুইবার রিং বাজার পরও সাদি ফোনটা তুলল না। সুমু বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। আবার ফোন দিতেই সাদি ফোনটা ধরলো,
সাদিঃ হ্যালো!
—ডাক্তারসাহেব! আপনি ফ্রি আছেন? একটু বের হতে পারবেন আমার সাথে?
সাদিঃ তোমার কি মনে হয়? আমি তোমার আজাইরা টাইম নিয়ে বসে আছি? ফোনটা যখন তুলিনি তখনই তো বোঝা উচিত ছিল যে আমি বিজি আছি! তাও ফোন দিয়েই চলেছো!
—সরি ডাক্তারসাহেব! আসলে আমি বুঝতে পারি নি। দুঃখিত!
সুমু মন খারাপ করে ফোনটা কেটে দেয়। এই প্রথম সাদি সুমুর সাথে খারাপ ব্যবহার করলো। হয়তো খুব বিজি আছে! সুমু আর কিছু না ভেবে একাই বের হলো ফুচকা খেতে। মনটা একদম ভালো নেই! একে তো সেই খারাপ স্বপ্ন আবার এই ডাক্তারসাহেব এর খারাপ ব্যবহার! এখন ফুচকা খেলে একটু মন ভালো হলেও হতে পারে। যেই কথা সেই কাজ!
.
ফুচকার দোকানে ফুচকার অর্ডার দিয়ে সুমু ব্যাগের টাকা চেক করলো। আজ ফুচকা খেয়ে পাশের স্টলে চিকেন স্যুপ খাবে। এখানের স্যুপটা নাকি খুব টেস্টি! যদিও এই প্রথমবার টেস্ট করবে সুমু। ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে খেতে খেতে হঠাৎ ডানদিকে তাকাতেই সুমুর চোখ ছানাবড়া! একি ডাক্তার সাহেব এখানে! হাতে অনেকগুলো ব্যাগ আর সাথে কে? একি? এই নিলা চুন্নি এখানে কি করে? তাও আবার ডাক্তারসাহেব এর হাত ধরে! রাগে সুমু হাতের ফুচকাটা চাপ দিতেই মচ করে ভেঙে গেলো। যেন সে ফুচকাটাকে নিলা মনে করে চাপ দিলো! নাহ! আর তো রিস্ক নেওয়া যাবেই না। এই ডাক্তারসাহেবকে আগে নিজের করতে হবে তারপর ওই নিলার ব্যবস্থা! আজকে ওই ডাইনির জন্য সাথে খারাপ ব্যবহার না! দেখাচ্ছি মজা! সুমু গপগপ করে ফুচকাগুলো শেষ করলো। তারপর তাদের পিছু নেবে। এদের জন্য তো আর ফুচকা মিস দেওয়া যাবে না! তাড়াতাড়ি শেষ করে সুমু ওদের ফলো করতে লাগলো! তারা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই সুমু আর ভিতরে গেলো না! একটা ছোকরাকে একটা ছোট চিরকুট হাতে দিয়ে বলল ওই হালকা গোলাপি শার্ট পরিহিত লোকটাকে দিয়েই দৌড় দিতে। পিচ্চিটা রেস্টুরেন্টের ভিতর গিয়ে সাদির হাতে কাগজ টা দিয়েই দৌড়!
সাদি কাগজটা খুলে দেখে,
” কাজটা ঠিক হলো না! মাশুল দিতে হবে!”
সাদি একটু চমকে এদিকসেদিক তাকালো কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো না। এই হাতের লেখাটাও চেনা নয়! কে হতে পারে?
.
সুমু বাসায় এসে রাগে ফুঁসছে! শালা! আমাকে ব্যস্ততা দেখানো! খালি কালকে জন্মদিন দেখে কিছু বললাম না! কালকের দিনটা যাক! তারপর বুঝাবো মজা! এখন তাড়াতাড়ি সব রেডি করি!
.
পরেরদিন সুমু কলেজ গিয়ে দেখলো সাদি ওই পেত্নীর হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন রাগ হলো তেমন অভিমান। তবুও কিছু বলল না। পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। এদিকে নীল আর সুমু দুইজনেই ব্যস্ত! সাদি ওই সকালে একবার দেখেছিল! তারপর আর দেখা পায় নি! খোঁজ করতে জানতে পারে সুমু দুইটা ক্লাস করেই চলে গেছে! তৃতীয় ক্লাস সাদির ছিল তা না করেই চলে গেলো। সাদি কিছুই বুঝতে পারছে না! কলেজ শেষে গেট থেকে বের হতেই ক্যাম্পাসের সাইডে দেখলো খুব সুন্দর করে সাজানো! ততটা গুরুত্ব না দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই কানে এলো কারো কন্ঠ! সেদিকে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলো সুমু সেই কালো শাড়িটা পড়ে হাতে গিটার নিয়ে সাদির দিকে তাকিয়ে গান ধরেছে,
“Tu Hi Ye Mujhko Bata De
Chahun Main Ya Naa
Apne Tu Dil Ka Pata De
Chahun Main Ya Naa
Tu Hi Ye Mujhko Bata De
Chahun Main Ya Naa
Apne Tu Dil Ka Pata De
Chahun Main Ya Naa
Itna Bata Doon Tujhko
Chaahat Pe Apni Mujhko
Yun Ton Nahi Ikhtiyaar
Phir Bhi Yeh Socha Dil Ne
Ab Jo Laga Hoon Milne
Poochhu Tujhe Ek Baar
Tu Hi Ye Mujhko Bata De
Chahun Main Ya Naa
Apne Tu Dil Ka Pata De
Chahun Main Ya Naa
Aisi Kabhi Pehle Hui Naa Thi Khwaahishein
O.. Kisi Se Bhi Milne Ki
Naa Ki Thi Koshishein
Uljhan Meri Suljha De
Chaahun Main Ya Naa
Aankhon Aankhon Mein Jataa De
Chaahun Main Ya Naa
Mere Chhote Chhote Khwaab Hain
Khwabon Mein Geet Hain
Geeton Mein Zindagi Hain
Chaahat Hai, Preet Hai
Abhi Main Na Dekhoon Khwaab Woo
Jin Mein Na Tu Mile
Le Khole Honth Maine
Ab Tak The Jo Sile
Mujhko Na Jitna Mujh Pe
Utna Iss Dil Ko Tujh Pe
Hone Laga Aitbaar
Tanha Lamhon Mein Apne
Bunti Hoon Tere Sapne
Tujhse Hua Mujhko Pyaar O O..
Poochungi Tujhko Kabhi Naa
Chaahun Main Ya Naa
Tere Khaabon Mein Ab Jeena
Chaahun Main Kyun Naa!
Tu Hi Yeh Mujhko Bata De
Chahun Main Ya Naa
Apne Tu Dil Ka Pata De
Chahun Main Ya Naa ”
সুমু গান টা শেষ করে সাদির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
—আই লাভ ইউ ডাক্তারসাহেব! আজ আপনার কথার উত্তর দিতেই এসেছি! শুভ জন্মদিন! (মিষ্টি হেসে)
সাদি দুইকদম পিছিয়ে গিয়ে আবার নিজেকে সামলে শক্ত হয়ে দাঁড়ালো। সুমুর থেকে নজর সরিয়ে বলল,
সাদিঃ তোমার কি মনে হয় আমি তোমার মতো একটা মিডেল ক্লাস মেয়েকে এক্সেপ্ট করবো! নেভার! এন্ড আই এম অলরেডি ইন এ রিলেশনশিপ উইথ নিলা!
সাদি হাত বাড়াতেই নিলা এসে সাদির সাথে জড়িয়ে গেলো। সুমু প্রচন্ড রকমের ধাক্কা খেল! তবুও নিজেকে সামলে বলল,
—আপনি মজা করছেন তাই না ডাক্তারসাহেব! দেখুন আপনি বলেছিলেন আমি যদি এই শাড়িটা পড়ি তাহলে আপনি আমার উত্তর পেয়ে যাবেন, তাই না?
একটু থেমে আবার বলল,
—এই নিলা কিছু বলেছে তাই না? আপনি আমাকে বলুন! কোন সমস্যা থাকলে বলুন! আমি আপনাকে সাহায্য করবো!(সামনে এগিয়ে গিয়ে)
সাদিঃ ওহ শাট আপ! তোমার আসলেই মনে হয় তুমি আমার স্ট্যান্ডার্ডের? হাউ ফানি! গেট লস্ট ওকে! এটাই সবচেয়ে বেস্ট হবে!
সুমু নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। কারন সে সাদিকে বলেছিল যে আর যাই করুক কখনো ধোকা না দেয়! চোখ থেকে আপনা আপনি অস্রু ধারা বেয়ে চলেছে।
—দেখুন ডাক্তারসাহেব! আমি বুঝতে পারছি আপনি হয়তো কোন সমস্যায় আছেন! আপনি….
সুমু কথা শেষ করার আগেই নিলা সুমুকে একটা থাপ্পড় মারে! সুমু গালে হাত দিয়ে সাদির দিকে তাকাতেই দেখে সাদি ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। যেটা সুমু আর নিতে পারলো না। তার প্রেশার ফল করছে! মাথাটা ঝিমঝিম করছে! সে যখনই কোন বিষয় নিয়ে আপসেট থাকে তখনই তার প্রেশার ফল করে! এর মধ্যেই নিলা আবার সুমুকে ধাক্কা দেওয়ায় সে মুখ থুবড়ে নিচে পড়ে যায়। নীল বাইরে একটু কাজে গিয়েছিল। ফিরে এসে সুমুকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে দৌড়ে তার দিকে এগিয়ে গেলো৷ সুমুর পালস চেক করে সে অবাক! সুমুর প্রেশার নেই বললেই চলে তাড়াতাড়ি সুমুর ব্যাগ থেকে স্যালাইন পানি এনে ওকে খাইয়ে দেয়! সুমু কিছুটা স্বাভাবিক হতেই নীল সাদিকে বলে,
নীলঃ কি হয়েছে স্যার এখানে? সুমুর এতো প্রেশার কমলো কিভাবে? ও তো আপসেট থাকলে এমন হয়!
সাদির চোখ অকারণেই লাল হয়ে গেছে! নিলা খুব খুশি সুমুর অবস্থা দেখে! সুমু কোন মতে নীলকে বলল,
—নী..ল! আমাকে একটু দি..য়ে আস..বি!
নীলঃ হ্যাঁ! কিন্তু কি হয়েছে! তুই তো স্যার কে কনফেস করতে এসেছিলি! যদিও এই নিলার হাসি মুখ দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি! আচ্ছা তুই আগে চল!
নীল সুমুকে কোলে তুলে চলে গেলো! সাদি ও একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ওখান থেকে চলে গেল।
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..