তবু আছি কাছাকাছি (Doctors love) Part-16

0
3236

#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_16
?
.
.
সাদি নিলাকে পাশ কাটিয়ে সুমুর সামনে দাঁড়ালো। সুমুর দৃষ্টি নিচের দিকে। তা দেখে সাদির যেন বুকটা ফেটে যাচ্ছে! সুমু কখনো তার নজর নিচে রেখে কথা বলে না যেটা সাদিকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষিত করে কিন্তু আজ কি হলো! এটা কি হতেই হতো! কিন্তু সুমু সাদিকে ভুল প্রমান করে নিজের নজর একদম সাদির চোখ বরাবর! হালকা হেসে বলল,

—আরে ডাক্তারসাহেব! চিল! আমি এই পেত্নীর কথায় কিছু মনে করি নি! আর মনে মনে ভয় পেতে হবে না! আমি খারাপ কিছুই মনে করি নি। এই মেয়েটা নিশ্চয়ই আপনার বন্ধু হবে! সো চিল! আসলে আজকে আপনার দেখা পাইনি তাই আপনাকে দেখতে এসেছিলাম! কিন্তু অনেক বেশিই দেখে ফেলেছি!(উদাস গলায়)

সাদি সুমুর কথা শুনে যেন স্বস্থির নিশ্বাস ফেলল। হ্যাঁ!এই তার সুমু যে কখনোই সবটা না জেনে ভুল বুঝবে না। কেন যে মনে মনে উল্টাপাল্টা চিন্তা করতেছিল! সুমু সাদির ভয়ার্ত চেহারাটা বেশ এঞ্জয় করেছে! কিন্তু সুমুর কথা নিলার বিন্দুমাত্র পছন্দ হয়নি!

নিলাঃ এই মেয়ে তোমার নাম কি? তোমাকে তো আমি দেখে নেব! কিভাবে এই কলেজ থেকে পাশ করে বের হও তাই আমি দেখবো!

—ওয়াও! আপনি এই কাজটা করতে পারবেন? প্লিজ করে দিন না! আমিও এই কলেজ ছেড়ে যেতে চাই না! আর মাত্র কয়েকটা বছর এখানে আছি! বের হলেই তো আর ডাক্তারসাহেবকে দেখতে পাবো না!(দুষ্টু হেসে)

নিলাঃ কত বড় বেয়াদব! সাদি একে তুমি কিছু বলবে না?(ন্যাকামি করে)

সাদিঃ নিলা প্লিজ! মানুষ বিবেচনা করে কথা বলো! তুমি জানো ও কে? আর তুমি ওকে ফেইল করাবা? ও আজ পর্যন্ত একটা আইটেমেও ফেইল করে নি। সবগুলো সাকসেসফুলি কম্পলিট করেছে। টপে আছে!

সাদির মুখে সুমুর প্রশংসা মেনে নিতে পারছে না নিলা।

নিলাঃ(শয়তানের মতো হেসে) তাতে কি? মাইক্রোবায়োলজিতে পাশ করে দেখাক!

—(বাঁকা হেসে) আপনি আমায় ফেইল করিয়ে দেখান! (সাদিকে উদ্দেশ্য করে) আসি ডাক্তারসাহেব!

সাদির ঠোঁটে হাসি ফুটে আছে। সুমু যেতে যেতে বলল,

—ডাক্তারসাহেব! আপনার এই বান্ধবীকে আমার থেকে দূরে থাকতে বইলেন! নয়তো পরে আফসোস করবে!

নিলা ফুঁসতে ফুঁসতে সাদিকে বলল,

নিলাঃ তুমি কিছু বললে না কেন সাদি? কতটা অপমান করলো আমাকে! অসভ্য মেয়ে! থার্ড ক্লাস….

সাদিঃ ইনাফ!!!নিলা! যথেষ্ট বলে ফেলেছো! আমার সুমু তোমাকে টাইট দিতে একাই একশ! আর কতবার বলছি যে আমাকে এভাবে জড়ায় ধরবা না! কানে যায় না কথা! সেই কলেজ লাইফ থেকে জ্বালাচ্ছো! এখানেও তো মনে হয় ক্ষমতার জোরে চাকরিটা নিছো! যত যাই করো আমাকে পাবা না!

সাদি যেতে যেতে আবার পিছন ফিরে বলল,

সাদিঃ আর হ্যাঁ! স্টে এওয়ে ফ্রম মাই সুমু এন্ড মি!

সাদি নিলাকে কথা শুনিয়েই কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। উদ্দেশ্য সুমুকে খোঁজা! বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখলো সুমু কদম গাছের নিচ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে কদমফুল পাড়ার চেষ্টায় আছে আর পাশে নীল সুমুকে দেখে হাসছে! সাথে সাথে নীলের পিঠে ধুম করে কিল বসিয়ে দিল সুমু।
আর দুজনে তুমুল ঝগড়া করছে। সাদির হাইট ভালো হওয়ায় গাছের কাছে গিয়ে বলল,

সাদিঃ কদমগুলো আমি পেড়ে দিবো?

—না! ধন্যবাদ! আপনাকে এতো কষ্ট করতে হবে না! এই নীল তুই পেড়ে দে!

নীল কিছু একটা ভেবে বলল,

নীলঃ আমার খাইয়া দাইয়া কাজ নাই এখন কদম পাড়তে গিয়ে নিজের কোমড়টার বারোটা বাজামু! আমারে অনু ফোন দিতেছে আমি যাই! তুই থাক!

নীল চলে যেতেই সুমুর রাগ বেড়ে গেলো। ওইদিন না বলতেই কতগুলো করমচা পেড়ে দিলো তাও উঁচু থেকে আর আজ কয়টা কদম পেড়ে দিলে কি হতো! মনে মনে সুমু আকাশপাতাল ভাবছে আর বলছে, আম্মু শুধু শুধুই পাম দিতো। আরো ৪-৫ ইঞ্চি বাড়লে লাভ হতো! তাহলে ৫ ফুট ৮ বা ৯ হতো হাইট! কিন্তু এই পাশের খাম্বাটার হাইটই তো মেবি ৫ ফুট ১০ বা ১১! যাই হোক আমার কি!

সাদি সুমুর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে আড়চোখে বারবার তার দিকে তাকাচ্ছে। সাদি একটু হাসি দিয়ে বলল,

সাদিঃ আমি পেড়ে দি কদমগুলো!

—(মুখ গম্ভীর করে) নাহ! আমি লাগবে না!

বলেই সুমু ওখান থেকে চলে গেলো৷ আর সাদি হতাশাজনক ভাবে সুমুর যাওয়ার পানে চেয়ে আছে। কিছুক্ষন পর নীল এসে সাদিকে বলল,

নীলঃ স্যার! সুমু কি কদম নিয়েছে?

সাদি নীলের দিকে তাকিয়ে,

সাদিঃ নাহ! মুখ গোমড়া করে চলে গেল!

নীলঃ স্যার! আমি জানি না আপনাদের মধ্যে কি হয়েছে কিন্তু সকালে সুমুর মুড খুব ভালো ছিল। হঠাৎ করে সুমুর এমন মুড সুইং এর বিষয়টা বুঝতে পারছি না। কিছু বলছেও না। বড্ড অভিমানী! একটু খেয়াল রাখবেন।

বলেই নীল চলে গেল। আর সাদি ভাবতে বসলো সুমুর মনে আসলে কি চলছে!

ক্লাস শেষ করে সুমু গেটের কাছে আসতেই একটা পিচ্চি ছেলে হাতে একগুচ্ছ কদম নিয়ে দৌড়ে সুমুর কাছে এসে ওগুলো দিয়ে যায়। ফুলের সাথে সুমু একটা চিরকুট পায়। লিখা,

“গাছে উঠে এই কদমগুলো শুধু আপনার জন্যই পেড়েছি! আমার অভিমানীনি! আর সকালের জন্য এত্তগুলা সরি!”
—তোমার ডাক্তারসাহেব

সুমু মনে মনে খুশি হলেও বাইরে প্রকাশ করলো না। গম্ভীর ভাবে একবার চারপাশে চোখ বুলালো তারপর একটা রিক্সা ডেকে হোস্টেলের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। আর এদিকে সুমুর আড়ালে থাকা সাদি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। সুমু যতই স্ট্রং দেখাতে চাইলেও সাদি ঠিকই বুঝতে পারছে সুমু সকালের বিষয়টা ভালো ভাবে নেয় নি। তাই এবাত তাকে বেশ খাটতে হবে সুমুর অভিমান ভাঙাতে।

.
পরদিন সকালে সুমু কলেজের জন্য হোস্টেল থেকে বের হতেই দেখলো সাদি রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে। সুমু পাত্তা না দিয়ে একটা রিক্সা ডাকলো। রিক্সায় উঠতেই সাদি তাড়াতাড়ি এসে রিক্সায় উঠে পড়লো। সুমু অবাক হয়ে সাদির দিকে তাকিয়ে বেশ রেগেই বলল,

—কি সমস্যা আপনার? রিক্সায় উঠলেন কেন?

সাদিঃ আমিও যেহেতু কলেজ যাব তাই আর অন্য রিক্সা ডাকি নি। একসাথেই যাওয়া যাবে। মামা চলুন তো!

—না মামা দাঁড়ান। এই আপনি নামুন তো! যেতে হলে অন্য রিক্সায় যান! আমি আপনার সাথে যাব না!

সাদিঃ তাহলে আমি কি করে যাব?

—কেন? ওই ন্যাকা নিলাকে ফোন দিন! আপনাকে কোলে করে নিয়ে যেতেও রাজি হবে!

সাদিঃ কিন্তু আমি তো আমার অভিমানীনির সাথে যেতে চাচ্ছি!

সুমু আড়চোখে সাদির দিকে তাকিয়ে আছে!

—আপনি এখানে কেন এসেছেন বলুন তো! আপনার বাসা তো বিপরীত দিকে!

সাদিঃ কাজে এসেছি! আর কথা বলো না এমনিই লেট হয়ে গেছি!

—মামা রাখুন তো আমি নেমে যাব!

সাদিঃ(ভ্রু কুঁচকে) নেমে যাবা মানে? এখনো তো অনেক দূর!

—এতো কথা না বলে এই রিক্সা করে আপনি চলে যান!

সুমু নামতে নিলেই সাদির সুমুর হাত ধরে আটকে দেয়। আর গম্ভীর ভাবে বলে,

সাদিঃ সুমু! এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে! চুপচাপ বসো! মামা আপনি রিক্সা চালান!

—আরে! দেখুন আপনি এটা করতে পারেন না!

সাদিঃ অবশ্যই করতে পারি! আমার পুরো কথা শুনবা দ্যান তোমার উত্তর দিবা!

সাদি সুমুকে বলা শুরু করলো,

সাদিঃ নিলা হলো বড়লোক বাপের দুইমাত্র কন্যার দ্বিতীয় জন। নিলার বড়বোন মিলা যতটা ভালো আর ভদ্র। এটা তার পুরো উল্টো! যেটা চাই তার সেটা নিয়েই ছাড়ে৷ আর দুর্ভাগ্য বশত নিলার বাবা মইনুল আহমেদ আমার বাবার বন্ধু! তাই সেই সুত্রেই এই আপদ আমাকে সহ্য করতে হয়। যেখানে আমি যাই সেখানেই হাজির হয়ে যায়। আর আরো একটা দুর্ভাগ্য হলো মিলা আর নিলা দুজনেই আমাকে পছন্দ করে!

সুমু আড়চোখে সাদির দিকে তাকাতেই সাদি আবার বলা শুরু করে

সাদিঃ নিলা যেদিন শুনেছে মিলা আমাকে পছন্দ করে সেদিন তাদের বাড়ির সবকিছু তছনছ করে ফেলে ভেঙে। তাই আংকেল বাধ্য হয়ে মিলাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়। তখন আমরা মেডিকেল স্টুডেন্ট ছিলাম। নিলাকেই বিদেশ পাঠাতে চেয়েছিল কিন্তু নিলা রাজি হয় নি।

—ওহ! তো নিলা আপনার দিওয়ানী! বুঝতে পারলাম! এখন কথা হচ্ছে আপনি কি নিলাকে চান না মিলাকে?

সাদিঃ(সুমুর দিকে তাকিয়ে) আমি তোমাকে চাই!

—(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে) যদি কখনো শুনি ওই নিলার সাথে আপনার লটরপটর ছিল বা আছে সেদিনই আপনি আমাকে ভুলে যাবেন!

সাদিঃ পাগল হইছো?ওই চুন্নির সাথে আমার????(দাঁতে দাঁত চেপে) আমি তো ওর থেকে মুক্তি চাই! যেভাবে চিপকে থাকে!!!!

—(বাঁকা হেসে) নিশ্চিন্তে থাকুন ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে