#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_15
?
.
.
সুমু আর সাদি একসাথে ডিনার শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো!
—ডাক্তারসাহেব! এবার আমি আসি! হোস্টেলে গিয়ে আবার পড়া শেষ করতে হবে।
সাদিঃ নাহ! আমি তোমাকে দিয়ে আসবো! চলো সিএনজি নিই!
—আপনি আবার কষ্ট করে কেন আসতে যাবেন?
সাদিঃ আরে! আমার সুবিধার জন্যই! তোমার হোস্টেলের আগে আমার বাসা তাই! আমি আগে নেমে যাবো!
—যেমন আপনার ইচ্ছা!
সাদি একটা সিএনজি ঠিক করে দুজনেই উঠে পড়লো! সাদির বাসার কাছে আসতেই সাদি ব্যাগগুলো নিয়ে নেমে পড়লো। সুমু বলল,
—ডাক্তারসাহেব! ব্যাগগুলো গুনে নিয়েছেন তো! যদিও এখানে আমার কিছু নেই!
সাদিঃ হ্যাঁ আমি সব নিয়েছি! কিছু বাকি থাকলে তুমি চেক করে নিও!
সুমুর কেমন খটকা লাগলো তবুও ড্রাইভারকে যেতে বলল! কি মনে করে আবার সুমু পিছন ফিরে দেখলো একটা ব্যাগ পড়ে রয়েছে সুমুর সাইডে! তাই ভাবলো হয়তো অন্ধকারে দেখতে পায় নি! সুমু ব্যাগটা নিয়েই হোস্টেলে চলে গেলো!
.
ব্যাগটা খাটের উপর রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। রাতে টেবিলে পড়ার সময় হঠাৎ করে বিছানায় চোখ গেলো ব্যাগটার দিকে! কিছুক্ষণ ভেবে সুমু ব্যাগটা হাতে নিয়ে ভিতরে একটা কালো শাড়ি দেখলো। কিন্তু সে তো কোন কালো শাড়ি কিনে নি তাহলে? শাড়িটা ব্যাগ থেকে বের করতেই ভিতর থেকে একটা চিরকুট নিচে পড়লো। হলুদ রঙের একটা কাগজের টুকরায় লিখা,
” আমি আমার জন্য বেস্ট একজনকেই বেছে নিয়েছি! তোমার ব্যবহারে আমি মুগ্ধ! তোমার জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে এতোগুলো টাকা দিয়ে নিজের জন্যই কিনতো কিন্তু তুমি নিজের জন্য একটা সুতোও কিনলে না! এই প্রথম তোমার জন্য আমি একটা শাড়ি পছন্দ করে কিনেছি প্লিজ পড়ো! আর হ্যাঁ জীবনেও এই প্রথম শাড়ি কিনলাম! তুমি যেদিন এই শাড়িটা পড়বে আমি বুঝবো তুমি আমাকে মেনে নিয়েছো!”
—–তোমার ডাক্তারসাহেব
সুমু চিরকুট টা পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে! এই লোক নির্ঘাত পাগল! সুমু মুচকি হেসে চিরকুট সহ শাড়িটা তার ট্রাংকে রেখে দিল। সাদি তো সুমুর মনে সেদিনই বসে গেছে যেদিন সে সুমুকে দেখে একই জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সুমু সেদিন ফাইল চেক করলেও বুঝতে পেরেছিল কেউ তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। তাই হালকা আড়চোখে সে সাদিকে দেখে ক্রাশ খেয়েছিল! কিন্তু পরিচয় পাওয়ার আগেই দুজন হারিয়ে যায়। ভাগ্যক্রমে রাকিব সুমুকে সাদির কথাই বলে যেদিন সুমুর আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়ে! সাদির কেবিনে গিয়ে সুমু প্রথমে অবাক হয়ে যায়! যেদিন সাদি তাকে প্রপোজ করে সেদিন সুমু মনে মনে প্রচুর হেসেছিল! কেননা তার ক্রাশ তাকেই প্রপোজ করছে আবার সময়ও দিচ্ছে। কিন্তু খুব শক্ত হয়ে বসেছিল কিন্তু শেষ মুহূর্তে সাদি সুমু গালে চুমু দিতেই বেচারি ডোজটা নিতে পারে নি! চরম অবাক হওয়ার জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।
সুমু আগের কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই হেসে দিল! সাদি একটা পাগল! কি সুন্দর করে বলেছিল সুমুকে সে তার অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে! অথচ সুমু এমনিতেই তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে! সাদির আশেপাশে কোন মেয়েকেই সহ্য হয় না তার!
সাদি বাসায় এসে একটা দম নিয়ে হেসে দিল। খুব আশা নিয়ে সে সুমুর জন্য শাড়িটা কিনেছে। এখন সুমুর পছন্দ হলেই হলো! ফ্রেশ হয়ে সাদি তার মাকে ভিডিও কল দিল।
মামুনিঃ কিরে! সাদি তোর চোখমুখ এমন শুকিয়ে গেছে কেন? খাওয়াদাওয়া ঠিক ভাবে করিস না?
সাদিঃ কি বলো আম্মু? আমার তো আগের থেকে ২ কেজি ওজন বাড়ছে!
মামুনিঃ বাড়বেই তো আইলসা একটা! কালকে থেকে আবার জিমে যাবি তুই!
সাদিঃ তুমি না এইমাত্র বললা যে আমি শুকাইয়া গেছি!
মামুনিঃ ওইটা তো এমনিই কইছি! এটা সব মায়েদের কমন ডায়লগ!
সাদিঃ আম্মু তুমি পারোও!!!!
মামুনিঃ এবার বল রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ?
সাদিঃ জ্বী আম্মাজান! আপনের হবু পুত্রবধূ আমাকে একটা বিশাল ডিনার প্যাকেজ খাইয়েছে! পেট পুরো ফুল!
মামুনিঃ সুমুকে নিয়ে ঘুরতে গেসিলি?
সাদিঃ হ্যাঁ! সে যে কি পরিমাণ ফুচকা পাগল! আম্মু তুমি দেখলে বলতা!
সাদি তার মাকে আজকের সব ঘটনা বলল। দুজনেই হেসে দিল। তারপর সাদি সবগুলো জিনিস মাকে দেখালো। পরে তার বোন আর আহানার সাথেও কথা বলে ফোন রাখলো।
.
পরদিন সকালে খুব সুন্দর করে রেডি হয়ে নীলকে ফোন দিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলো। নীলকে বলতে হবে সাদির বিষয়ে! শুধুমাত্র নীলই জানে সুমুর অনুভূতি গুলো সাদির প্রতি!
কলেজে এসে নীল সুমুর জন্য অপেক্ষা করছে! এটা নিত্যদিনের ঘটনা। বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। সুমু যেভাবে তাড়াহুড়ো করে আসতে বলেছে অথচ তারই কোন পাত্তা নেই! কিছুক্ষনের মধ্যেই সুমু এসে নীলকে ধাক্কা দিল। নীল চমকে গিয়ে রাগী ভাবে সুমুর দিকে তাকালো। সুমু একটা কিউট ফেস বানিয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে বলল,
—গুড নিউজ আছে তো! তারপরও বকবি???
নীলঃ(দুষ্টামি করে) দোস্ত তুই বিয়ের আগে সাদি স্যারের সাথে আকাম করছোস????
—(চোখ বড় করে) মানে?????
নীলঃ তুইই তো বললি গুড নিউজ আছে!
—হ্যাঁ গুড নিউজই তো……
চোখ বড় করে সুমু আবার নীলকে মারা শুরু করলো!
—শয়তান পোলা! আমি কি কইসি আর তুই কি কইতাছোস!!!!!! ফাজিল! অসভ্য! বান্দর! মাকাল ফল!
নীল হাসতে হাসতে পড়ে যাচ্ছে! সুমুকে বিরক্ত করতে তার ব্যাপক আনন্দ হয়! কোন মতে হাসি থামিয়ে বলল,
নীলঃ এবার গুড নিউজটা বল!
—আমি শিওর হয়ে গেছি! ডাক্তারসাহেব এর ব্যাপারে!
নীলঃ(জোরে) ওয়াট!!!!! রিয়েলি..৷।। দোস্ত তাড়াতাড়ি ট্রিট দে! এখন দিবি চল!
—পাগল হইছোস? এখন পর্যন্ত ডাক্তারসাহেবকেই বললাম না আর তুই ট্রিট চাস????
নীলঃ তা কবে বলবি???
—খুব জলদি! কিন্তু মনটা কেমন যেন খঁচখঁচ করতেছে! সব ঠিক হবে তো!
নীলঃ আরে সব ঠিকই হবে! চিন্তা করিস না! এখন বল কিভাবে কি?
সুমু নীলকে বলে দিল কি কি করতে হবে! নীলও খুব খুশি!
.
দুইটা ক্লাস শেষ করে সুমু আর নীল ক্যাম্পাসে আসলো। আজকে একবারও সুমু সাদিকে দেখে নি। তাই নীলকে বসিয়ে সাদির কাছে যেতে নিল! আজ সুমু খুব খুশি! এট লাস্ট সে তার মনের কথা সাদিকে জানাবে! কিন্তু কিছুদিনের অপেক্ষা! সুমু সাদিকে খুব সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দিতে চায়! সুমু সাদির কেবিনে নক করে কিন্তু বিপরীতে কোন আওয়াজ না পেয়ে কেবিনে ঢুকে দেখে সাদি একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে! সুমুকে দেখে সাদি মেয়েটার থেকে সরে আসে। তৎক্ষনাত সুমু দুইজনকেই সরি বলে।
মেয়েটিঃ এই মেয়ে! ভদ্রতা বলতে কিছু নেই! নক করে আসা যায় না?(রেগে)
—সরি আপু! আসলে আমি নক করেই এসেছি হয়তো শুনতে পাননি! আবারও বলছি আমি দুঃখিত!
মেয়েটিঃ(রেগে) থার্ড ক্লাস মেয়ে! আবার মুখে মুখে তর্ক করছে! সাদি! এই মেয়ে কি এখানের স্টুডেন্ট??
সাদিঃ নিলা! স্টপ!
মেয়েটিঃ আমি কেন থামবো বলতো? এই মেয়েটার মধ্যে কোন ম্যানার্স নেই! ফালতু!
—(জোরে) হেই!!! ডোন্ট ক্রস ইয়োর লিমিট! আপনি আমাকে যা নয় তাই বলছেন! যেখানে আমার বিন্দুমাত্র দোষ নেই তবুও আমি আপনাকে সরি বলেছি! আমাকে বলছেন ম্যানার্স লেস! অথচ আপনার মধ্যে এতো ম্যানার্স যে ডোর লক না করেই অন্তরঙ্গ মুহূর্ত পালন করছেন! এতোই বিভোর ছিলেন যে আমি ডোর নক করার পরেও টের পান নি! আর বললেন না মুখে মুখে তর্ক করার কথা! দ্যান শুনে রাখুন সুমু অন্যায় দেখতে পারে না। আর সত্যি কথা বলাতে সে তার বাপকেও ছাড়ে না। সো আপনি নিজের রাস্তায় চলুন! আর আমার কাজ করতে দিন।
মেয়েটিঃ কি পরিমান অসভ্য! দেখেছো সাদি!
—(সাদিকে উদ্দেশ্য করে) স্যার! আপনার সাথে কিছু কথা ছিল!
সাদি চমকে উঠলো। এই প্রথম সুমু তাকে স্যার বলে সম্বোধন করলো! তাহলে কি সুমু তাকে ভুল বুঝলো?
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..