#তবু_আছি_কাছাকাছি (Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_12
?
.
.
সাদির এমন প্রপোজ করার স্টাইল দেখে সুমু অবাকের শীর্ষে পৌছে গেছে৷
সাদিঃ আমি জানি তোমার এই বিষয়টা মেনে নিতে সময় লাগবে। এন্ড ইউ ক্যান টেক ইয়োর টাইম! বাট এট দ্যা লাস্ট! আই ওয়ান্ট মাই এন্সার এন্ড ইট শুড বি পজিটিভ এন্সার!
সুমু কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ও শুধু হা করে তাকিয়ে আছে! এটা কনফেশন না থ্রেট? সাদি কিছুক্ষন সুমুর দিকে তাকিয়ে আবার ধীর গতিতে বলল, ” আই লাভ ইউ!”
বেচারি সুমু আর নিতে পারলো না। ঢলে পড়তে নিলেই সাদি ধরে ফেলল। সুমুকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে মুচকি একটা হাসি দিল। আর মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
সাদিঃ পাগলি!
সাদি সুমুকে নিয়ে তার হোস্টেলের দিকে গিয়ে সুমুর ফোন থেকে রুমমেট লিখা দেখে কল করলো।
নাদিয়াঃ হ্যালো সুমু!
সাদিঃ সুমু নয়! আমি ড. সাদি! তুমি কি সুমুর রুমমেট?
নাদিয়াঃ জ্বি!
সাদিঃ এখন রুমে আছো?
নাদিয়াঃ জ্বি কেন?
সাদিঃ গুড! একটু নিচে আসো! সুমু সেন্সলেস হয়ে গেছে। আমাকে তো হোস্টেলে ঢুকতে দিবে না তাই তুমি এসে যদি একটু নিয়ে যেতে।
নাদিয়াঃ জ্বি অবশ্যই! আমি এক্ষুনি আসছি!
নাদিয়া গায়ে ওড়নাটা জড়িয়ে নিচে দোড় দিল। গিয়ে সুমুকে নিয়ে এলো।
.
বিকেলবেলা সুমুর ঘুম থেকে জাগতেই মাথা চেপে ধরে! বড্ড মাথা ব্যাথা করছে! চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে তার রুমে অবস্থান করছে। কিন্তু তাকে রুমে কে দিয়ে গেল? সাদি? অটোমেটিকেলি মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,” ডাক্তারসাহেব?”
নাদিয়া সুমুকে জাগতে দেখে বলল,
নাদিয়াঃ তুই সেন্সলেস কি করে হলি রে?
—(অবাক হয়ে) আমি সেন্সলেস ছিলাম?
নাদিয়াঃ জ্বি ম্যাডাম! পাক্কা ৫ ঘন্টা! যদিও এতোক্ষন সেন্সলেস ছিলি না! দুর্বলতার কারনে ঘুমিয়ে গিয়েছিলি।
—আমাকে এখানে কে নিয়ে এলো?
নাদিয়া সুমুর দিকে এক মগ কফি এগিয়ে দিয়ে উত্তর দেয়,
নাদিয়াঃ কে আবার তোর ডাক্তারসাহেব!
সুমু কিছুক্ষন চুপ থেকে মনে করে আজকে ওর সাথে কি কি হলো! সাদির কনফেশন এর কথা হঠাৎ মনে হতেই একটা ঢোক গিলল! কফিতে একটা চুমুক দিয়ে হাতরে পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে তৎক্ষনাত নীলকে ফোন করলো!
নীলঃ কি রে চুন্নি! তুই তো পুরো হাওয়া হয়ে গেছিস। একটাবারও আমাকে কিছু জানালি না?
—(দাঁতে দাঁত চেপে) বেশি পকপক না করে দেখা কর! কথা আছে!
নীলঃ সব ঠিক আছে তো?
—না নাই! তাড়াতাড়ি আয়!
নীলঃ আচ্ছা তুই নিচে নাম!
সুমু রেডি হয়ে নিচে নেমে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই নীলের দেখা পেল। হাটতে হাটতে দু জনে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো।
নীলঃ এবার বল! কি হইছে?
—নীল রে…….তুই ঠিকই বলছিলি!
নীলঃ কি কইছিলাম?(ভ্রু উচিয়ে)
—আরে ছাগল! আমি…আমি!!
নীলঃ কি আমি আমি করতেসোস? ঝেড়ে কাশ তো!
সুমু সামনে থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিল। তারপর একটা শ্বাস নিয়ে নীলকে সবটা বলল!
নীল সব শুনে জাস্ট হা হয়ে গেছে! অবশেষে এই সাদি স্যার তাহলে মনের কথাটা বলল!
নীলঃ আমি জানতাম এমন কিছুই হবে!(খুশি হয়ে)
—এখন আমি কি করবো?(অসহায়ভাবে)
নীলঃ কি করবি মানে? অবশ্যই এক্সেপ্ট করবি!
—তোর মাথা খারাপ! হ্যাঁ এটা ঠিক যে আমি ওনাকে একটু একটু পছন্দ করি তা বলে কি উনি বলল বলে আমি নাচতে নাচতে চলে যাব নাকি?
নীলঃ তো কি করতে চাস?
—তুই বল!
নীলঃ চল আগে কিছু খেয়ে নি! তোর কথা শুনে তো মনে হলো কিছুই খাস নি। মানে খাওয়ার সময় পাস নি! আগে কিছু খা তারপর আমি তোকে কিছু বুদ্ধি দিচ্ছি!
—আগে কিছু বল! তারপর খাওয়া দাওয়া!
নীলঃ আচ্ছা তাহলে শোন!
সুমুও উৎসুক হয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে তার কথা শুনতে।
.
সাদি তার মাকে ফোন দিয়ে সবটা খুলে বলল। সাদির মাও বেশ খুশি যে তার ছেলে অবশেষে তার ভালোবাসা বুঝতে পেরেছে! তাই মনে মনে ঠিক করে নিল সুমুর বাসায় প্রস্তাব পাঠাবেন তিনি। কিন্তু সাদিকে এর কিছুই বলা হয় নি!
.
সুমু রাতে ঘুমাতে গিয়ে বেশ বিরক্ত হলো। এই ডাক্তারসাহেব সুমুর মকথায় ঝেঁকে বসেছে। আবার হঠাৎই হেসে উঠলো সুমু সাদির কনফেশন এর কথা মনে করে। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো, ” এহ! আসছে! তোমাকে আমার অনুভূতির সাথে পরিচয় করাবো! কে হ্যাঁ উনি? ”
সুমু আবার হেসে দিয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরলো। সুমুকে এভাবে অকারণে হাসতে দেখে ইকরা ভ্রু কুঁচকে ফেলল।
ইকরাঃ সুমু বেবি! তুই এমন শুধু শুধু হাসছিস কেন? পাগল টাগল হয়ে গেলি নাকি?
সুমু ইকরার কথার কোন জবাব দিল না। জবাব না পেয়ে ইকরা নাদিয়ার দিকে অসহায় ভাবে তাকালো! নাদিয়া ইকরার অবস্থা দেখে হেসে দিয়ে বলল,
নাদিয়াঃ অতোসতো জানি না! শুধু জানি আজকে উনি সেন্সলেস হয়ে ড. সাদির কোলে চড়ে হোস্টেলে এসেছেন।
ইকরা কিছু একটা ভেবে নীলকে ফোন দিয়ে সবটা শুনে নিজেও হেসে দিল। তাহলে তাদের সবার প্রিয় সুমুও প্রেমে পড়েই গেল। ইকরা নাদিয়াকেও সব বলল।
পরদিন সকালে সুমু ফ্রেশ হয়ে কলেজের জন্য রেডি হয়ে নিল। নিজেকে আজ কোন কারন ছাড়াই বারবার আয়নায় দেখছে। তারপর ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বেরিয়ে পরলো কলেজের উদ্দেশ্যে!
আজকে ফরেনসিক মেডিসিনের ক্লাস আছে যা সাদি করাবে। ক্লাসে এসেই সুমু নীলকে হাইফাইভ দিলো। একটু হেসে নিজের সিটে বসে পড়লো। সাদি যথাসময়ে ক্লাসে এসে ক্লাস নিতে শুরু করলো। কিন্তু কেন যেন সুমুকে দেখে একটু খটকা লাগলো। কালকের ঘটনার পর তো এর লজ্জা পাওয়ার কথা কিন্তু এ তো দিব্বি সেজেগুজে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে হাটছে। সাদি ক্লাসের মাঝে মাঝে প্রায়শই সুমুর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে! ব্যাপারটা সুমু বুঝতে পেরে মুচকি মুচকি হাসতে শুরু করে! যা দেখে সাদির ভ্রু কুঁচকে এলো। সাদি সুমুর দিকে তাকাতেই সুমু একটা চোখ টিপ দিয়ে দিল! যা দেখে সাদি ছোটখাটো একটা ঝটকা খেলো! হাত থেকে ঠাস করে বইটা পড়ে গেল। যা দেখে সুমু কিছুতেই হাসি কন্ট্রোল করতে পারছিল না। কিন্তু বহু কষ্টে হাসি আটকে এবার খুব সিরিয়াস মুডে চলে গেল। একদম গম্ভীর! মনে হচ্ছে সে কোন রকম মজা করা পছন্দই করে না! পড়াশুনার বিষয়ে খুব বেশি সিরিয়াস! সাদি নিচ থেকে বইটা উঠিয়ে আবার সুমুর দিকে তাকাতেই অটোমেটিক ভ্রু কুঁচকে এলো। এ হঠাৎ এমন সিরিয়াস কেন হয়ে গেল? কিছু তো গোলমেলে আছেই।
.
ক্লাস শেষ করে সাদি সবার উদ্দেশ্যে বলল ল্যাবে চলে যেতে। সবাই এক এক করে বেরিয়ে যাচ্ছে। সুমুও সবার সাথে বের হতে নিলেই সাদি সুমুর হাত ধরে আটকে দেয়! সুমু বিস্ফোরিত চোখে আশে পাশে দেখছে সবাই যে যার মতো গল্প করতে করতে বেরিয়ে যাচ্ছে। সুমু নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সাদি যে তার হাত ধরে আছে তা তার ওড়নায় ঢেকে গেছে তাই কেউ কিছু খেয়াল করে নি। সবাই এগিয়ে যাচ্ছে খালি সুমু এগোতে পারছে না। নীল সামনে গিয়েও একবার পিছনে এসে দেখলো সাদি আর সুমু রুমে একা আছে। তাই সেও একটু বাঁকা হাসি দিয়ে ল্যাবের দিকে চলে গেল।
ক্লাস ফাঁকা হতেই সাদি সুমুর হাতটা ছেড়ে দিল। সুমু ছাড়া পেতেই যেতে নিলে সাদির কথায় ঠায় দাঁড়িয়ে যায়।
সাদিঃ এক পাও আগাবে না। খুব সুন্দর করে জিজ্ঞাসা করছি, উত্তর দাও! সেসময় চোখ মারলে কেন?
—(থতমত খেয়ে) কো..কোন সময়?
সাদিঃ মনে নেই? আমি কোন টেকনিক ইউজ করবো?
—আরে! হ্যাঁ মনে পড়েছে! আরে আমি তো আপনাকে চোখ মারিনি! এমনি চোখে কিছু পড়েছিল!(এক নিশ্বাসে)
সাদিঃ শোনো সুমু! বাইরে তুমি আমার সাথে যা খুশি তা করতে পারবে কিন্তু ক্লাসে নয়! ক্লাসে আমি এগুলো এলাউ করবো না৷ এমনি আমি তোমার প্রতি বেশ দুর্বল! আই থিংক আমার কথাটা বুঝতে পেরেছো!
সুমু অবাক হয়ে শুধু মাথা নাড়ালো।
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।