#তবু_আছি_কাছাকাছি (Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_11
?
.
.
কলেজের ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে সুমু ও তার বন্ধুবান্ধব! বন্ধুমহলে আজ শুভ্রতার রানী সেজে সবার মধ্যমণি হয়ে আছে সুমু।
নীলঃ ওই! সুমু চুন্নি তোরে আজকাল এমন উদাস! উদাস লাগে ক্যারে?
—নীলের বাচ্চার বাপ!!! তুই আমারে চুন্নি কইছোস কোন সাহসে?
নীলঃ সত্যি সত্যি বল তোর কি হইছে?
—আরে বাপরে!!!! কিছু হয়নি তো!
নীলঃ(সামনের দিকে তাকিয়ে) কিন্তু এখন হবে!
—(ভ্রু কুঁচকে) কিহ! কি হবে?
নীল সুমুর মাথায় একটা গাট্টা মারলো। আর বলল, ” সামনে তাকা ছাগল!”
” তুই সবসময় এমন করি,,,,,স!!” সুমু সামনে তাকিয়ে তার কথা সম্পুর্ন করতে পারলো না। সাদি তাদের ক্রস করে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ সাদিকে সাধারনের মাঝেও অসাধারণ লাগছে। একদম ফর্মাল লুক! কিন্তু সুমুর কাছে সাদিকে আজ অতিরিক্ত ফ্রেশ লাগছে। বেহায়া চোখ তো ফিরতেই চাইছে না। সুমুর মনে হলো এই প্রথম কোন ছেলেকে দেখে তার হৃৎপিন্ঠের রক্তসঞ্চালন কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
.
সাদি চোখ নিচে রেখেই হেঁটে যাচ্ছে কিন্তু হঠাৎ করেই সাদির ঠোঁটে হাসি ফুটলো আর এক মুহুর্তের জন্য সুমুর দিকে তাকিয়েই একটা চোখ টিপ দিল। যা দেখে সুমু চোখ বড় বড় করে সাদির দিকে তাকালো। সাদি হয়তো বিষয়টা খেয়াল করেছে। সুমুর দিকে না তাকিয়েই অন্যদিকে ফিরে আবারও হেসে দিয়ে স্থান ত্যাগ করলো। কিন্তু সুমু এখনো বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।
.
হঠাৎ নীলের ধাক্কায় সুমুর হুশ ফিরে! তাকিয়ে দেখে নীলের ঠোঁটে বাঁকা হাসি।
—কিরে! এমন শয়তানের মতো হাসতেছিস ক্যান?
নীলঃ আশেপাশে তাকাও চাঁদু!
সুমু নীলের কথামতো আশেপাশে তাকিয়ে দেখল প্রায় সব মেয়েই হা করে তাকিয়ে ছিল সাদির দিকে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো সাদি কেন সুমুর দিকে তাকিয়েই চোখ টিপ দিল? শুধু চেনাজানা বলে নাকি অন্যকিছু?
নীলঃ সাদি স্যার তো আজকে একদম নরমাল ভাবেই এসেছে কিন্তু এই চুন্নিগুলো এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে ক্যান? ইভেন তুইও!!
সুমু নীলের মাথায় জোরে গাট্টা মেরে বলল,
—মেয়েদের এটেনশন পেতে শুধু বাইক আর বড়লোকি লুক দরকার হয় না। একটু স্মার্টনেসই যথেষ্ট!
নীলঃ ভাগ্য ভালো আমার বাইক নাই!(হাফ ছেড়ে)
—(বাঁকা হেসে) থাকলেও পাত্তা পাইতি না!
বলেই হেসে দিল সুমু সহ বাকি সব। আর নীল বেচারা চুপ করে গেল।
.
এখন সুমুর প্যাথলজি ক্লাস চলছে! কিন্তু সুমুর পড়াশোনায় মন কোথায়? সে তো ব্যস্ত সাদিকে কল্পনা করতে! ভাবছে আজ সাদি এতোটা অন্যরকম বিহেভ কেন করছে? সুমুকে চোখ মারলো! যা কিছুই সুমুর মাথায় আসে নি।
টিচারঃ মিস. সুমাইয়া ইসলাম! আপনি কি এই ক্লাসে আছেন? নাকি ভাবনার জগতে চলে গেছেন?(রাগী কন্ঠে)
—(মিষ্টি হেসে) সরি স্যার! আমি ঠিক আছি স্যার। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার!
টিচারঃ(নরম গলায়) ওকে সিট ডাউন!
এর মধ্যেই নীল ফিসফিস করে বলে উঠল,
নীলঃ শুরু হয়ে গেলো তোর ফালতু ট্রিক! ক্যামনে যে স্যারদের পটাইয়া ফেলাছ!!! ওই মিষ্টি হাসি দেখেই স্যাররা কুপোকাত!
—ওই চুপ যা! এই সেমিস্টারে উনিই প্রথম পাঠা!!! হাহাহাহা!!!
ক্লাসে চলাকালীন হঠাৎ করে সাদি এসে ক্লাসরত টিচারকে কিছু একটা বলে সুমুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
সাদিঃ মিস. সুমাইয়া ইসলাম মিম! আমার সাথে আসুন!
সুমু সাদির সাথে বের হতেই সাদি বলে,
সাদিঃ ব্যাগ নিয়ে আসো!
—কেন ডাক্তারসাহেব?
সাদিঃ আমি বলেছি তাই! নিয়ে আসো যাও!
সুমু ব্যাগ নিতে ভিতরে যেতেই নীল বলল,
নীলঃ কিরে ফিরে আসলি যে?
—ব্যাগ নিতে এসেছি! কেন ডেকেছে আল্লাহই জানে।
নীলঃ(হেসে) যা! যা! তোকে নিয়ে শিওর ঘুরতে যাবে!
—কচু যাবে!
সুমু ক্লাস থেকে বেরিয়ে দেখে সাদি দাঁড়িয়ে আছে। সুমুকে দেখে মৃদু হাসল।
—আচ্ছা ডাক্তারসাহেব! আমরা কোথায় যাচ্ছি? কিছু বলছেন না কেন?
সুমু সাদিকে এতো এতো প্রশ্ন করে যাচ্ছে কিন্তু বেচারি তার বদলে পাচ্ছে একরাশ নিরবতা! সাদি সুমুকে কোন প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছে না। শুধু একটা কথা বলেছে, ” গেলেই দেখতে পাবে!” ব্যস! আর কোন কথা এই বান্দার মুখ থেকে বের হয় নি।
.
সাদি সুমুকে নিয়ে একটা রিক্সায় উঠে পড়লো! উঠার সঙ্গে সঙ্গে রিক্সা চলতে শুরু করলো যেন রিক্সাটা আগে থেকেই ঠিক করা! একে তো সাদির এই বিরক্তিকর নিস্তব্ধতা তার সাথে এই ভরদুপুরের জ্যাম!
.
সাদি হঠাৎ করে সুমুর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে তার দিকে চেয়ে রইলো! এই কাঠফাটা রোদে রিক্সায় বসে থাকা এক শুভ্র রানী! কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম রোদের কারনে চিকচিক করছে। ভ্রু জোরা হালকা কুঞ্চিত হচ্ছে বিরক্তিতে! গাল দুটো লাল মোহনের মতো আভা ছড়াচ্ছে! সাদির ইচ্ছে করছে কামড় বসিয়ে দিয়ে! এই যে বিরক্তির জন্য বারবার উফ বলছে তাতেও যেন সাদির অন্য এক রুপ উপলব্ধি করছে!
হঠাৎ পাশের এক রিক্সা থেকে বলে উঠলো,
:::অসম্ভব সুন্দর মানিয়েছে আপনাদের!(ছেলে)
সেই ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে তার গার্লফ্রেন্ড অথবা ওয়াইফ হবে হয়তো বলছে,
:::দেখেছো কি সুন্দর ম্যাচিং করে পড়েছে! কাল থেকে আমরাও পড়বো!
সুমু ভ্রু কুঁচকে সাদির দিকে তাকিয়ে দেখ সাদি একটা সাদা শার্ট পড়া। আর আজ ভাগ্যবশত সুমুও সাদা ড্রেস পড়েছে। পাশের রিক্সা থেকে কথাগুলো শুনে সাদি মুচকি হেসে দিল যা দেখে সুমু ভ্রু আরো কুঁচকে গেলো। হঠাৎ রিক্সা চলে উঠায় সুমু পড়ে যেতে নেয় তৎক্ষনাত সাদি সুমুকে ঝাপ্টে ধরে।
সুমু নিজেকে সামলে নিলেই সাদি সুমুকে ছেড়ে ঠিক হয়ে বসে। সাদির বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না সুমুকে ছাড়ার কিন্তু সমস্যা একটাই এখন তার সুমুর উপর কোন অধিকার নেই। আগে অধিকার বানাতে হবে তারপর শুধু ঝাপ্টে ধরবে না আরো অনেক কিছু করবে! এই চিন্তা করেই সাদি নিজেকে বুঝ দিল।
.
রাকিব প্রতিদিন নিয়মকরে তার মা আর বউকে নিয়ে পার্কে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করে! রাকিব মাঝে মাঝে নিজেই অবাক হয়ে যায় যে তার পরিবারে এতো মিলমিশ! কারো নজর না লাগুক! আমিন! হঠাৎ মাহবুবা বলে উঠলো,
মাহবুবাঃ এই! দেখো বাদাম! তাড়াতাড়ি বাদাম নিয়ে এসো আমি আর আম্মা এই বেঞ্চে বসে আছি! তাড়াতাড়ি যাও!(উত্তেজিত হয়ে)
রাকিবঃ আরে! যাচ্ছি তো! লোকটা তো পালিয়ে যাচ্ছে না।
রাকিব এগিয়ে গিয়ে বাদাম নিয়ে এলো। বাদাম দিয়ে সে একটু অন্যদিকে গেল কল এটেন্ড করতে! কথা বলে আসতে আসতে দেখে তার মা ও বউ কিছু নিয়ে কথা বলছে আর প্রান খুলে হাসছে! মাহবুবা এখন খুব কমই হসপিটালে যায়! রাকিব কড়াভাবে বারণ করেছে। বেবী হওয়ার পরই সে হসপিটালে জয়েন করতে পারবে! মাহবুবাও আর তার স্বামীর অবাধ্য হয় নি।
.
এদিকে হঠাৎ সুমুর গালে সাদি একটা চুমু দিয়ে দিল! সুমু বড় চোখ করে সাদির দিকে তাকাতেই সে বলে,
সাদিঃ(অসহায় ভাবে) সরি! আই কুডোন্ট কান্ট্রোল! আজ এই কথা বলতেই তোমাকে নিয়ে এসেছি! আজ থেকে প্রতিদিন নতুন নতুন চমক পাবে! আমার প্রতিটা অনুভূতি দিয়ে তোমাকে বোঝাবো কতটা ভালোবাসি! আমি অন্যসব ছেলেদের মতো ফুল দিয়ে প্রপোজ করবো না। কেননা এখন ফুল দিয়ে প্রপোজ করার মানেই ভালোবাসা হয়না! তাই আমি তোমাকে আমার অনুভূতির সাথেই পরিচয় করাবো! আর এটাই হবে আমার ভালোবাসার ভিন্নতা!
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..