#তবু_আছি_কাছাকাছি (Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_10
?
.
.
সুমু আর সাদি, সাদির আম্মুর জন্য খুব সুন্দর একটা শাড়ি কিনলো। যদিও পছন্দ করেছে সুমু। তারপর সুমু সাদিকে নিয়ে একটা কেকশপে গেলো।
—ভাইয়া! এই চকলেট কেকটা দিন!
দোকানদারঃ ইয়েস! ম্যাম কেক এর উপর কি লিখবো?
—থ্যাংক ইউ আম্মু লিখবেন।
সাদি অবাক হয়ে সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে৷ সুমু কি করে বুঝলো যে সে তার মাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যই এই প্ল্যানটা করছে?
—(মুচকি হেসে) আজকে আন্টির জন্মদিন হলে আগেই বিষয়টা উল্লেখ করতেন নয়তো এতোক্ষণে আন্টিকে কয়েকবার ফোনও করতেন। কিন্তু যেহেতু এমন কিছুই আপনি করেন নি তার মানে আন্টিকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যই এতো প্ল্যান। আর তার মধ্যে আবার বললেন আপনি ফ্ল্যাট কিনেছেন। তার মানে আন্টি আপনার ফ্ল্যাট গুছিয়ে দিতে অবশ্যই সাহায্য করেছে! আর কিছু?
সাদিঃ(অবাক হয়ে) নাহ! তোমার লজিক সেন্স অনেক ভালো!
—(ভাব নিয়ে) আগেই বলেছি!
সাদিঃ(হেসে) হুম!
অতঃপর সাদি আর সুমু কেক নিয়ে কেকশপ থেকে বের হলো।
—আন্টি কি পছন্দ করে? আই মিন ফ্লাওয়ার ওর মেকআপ?
সাদিঃ আম্মু তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরে তাই মেকআপ খুব কম ব্যবহার করে আর আম্মুর অর্কিডস পছন্দ।
—হুম! ওকে চলুন!
সুমু সাদিকে নিয়ে একটা লাইব্রেরিতে গেলো। সেখান থেকে কয়েকটা ইসলামিক বই কিনলো আর অনেক সুন্দর একটা তসবিহ কিনলো। সাদি একটা বিষয় খেয়াল করলো যে সুমু কেনাকাটায় বেশ পটু। কোন দোকানদারই সুমুকে ঠকাতে পারছে না। খুব দক্ষতার সাথে দরদাম করছে। শুধু বই কেনার বেলায় সুমু কোন দরদাম করে নি দেখে সাদি জিজ্ঞাসা করলো,
সাদিঃ আচ্ছা সুমু একটা কথা জিজ্ঞাসা করি! তুমি সব কিছুতেই বারগেইনিং করলে বাট বই কেনার সময় বারগেইনিং করলে না কেন?
—(বইয়ের পৃষ্ঠা খুলে) কারন এখানে বইগুলোর হাদিয়া দেওয়া আছে। আর ইসলামিক বইয়ে এক্সট্রা চার্জ নেয় না যদি তারা সৎ ব্যবসায়ী হয়ে থাকে তো। আর আমি এই লাইব্রেরি থেকে মাঝে মাঝেই বই কিনি৷ আমিও ইসলামিক বই পড়ি তাই এর প্রাইজ জানি! বুঝলেন?
সাদিঃ হুম! খুব বুঝেছি?
—কি বুঝলেন?
সাদিঃ এটাই যে তুমি কেনাকাটায় অনেক দক্ষ!
—(হেসে দিয়ে) সেটা তো আমিই!
সাদি ও হেসে দিল। দুইজনে কেনাকাটা করে একটা ফ্লাওয়ার শপে গিয়ে অর্কিডের একটা বুকে নিলো! সুমু আলাদা একটা ছোট কিউট কার্ড কিনে তাতে সাদিকে দিয়ে ছোট বার্তা লিখিয়ে তার হাতে দিল। সাদিও ফুল নিয়ে রেখেছে। এর মধ্যেই সাদি সুমুকে এক গুচ্ছ গোলাপ দিল।
—এটার দরকার ছিল না। বাট থ্যাংক ইউ।
সাদিঃ তোমার গোলাপ ফুল পছন্দ না?
—কে বলল? ভালোই লাগে কিন্তু লাফানোর মতো পছন্দ করি না। এমনি ভালো লাগে!
সাদিঃ হুম! তোমার এক্সপ্রেশন নরমাল দেখে বুঝতে পারছি!
—সরি ফর দ্যাট!
সাদিঃ নো! নো! ইটস ওকে!
সুমু উত্তরে একটু মুচকি হাসি দিল। কেনাকাটা শেষে সুমু সাদিকে বাই বলে চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সাদি জোর করে বলল,
সাদিঃ এতো সব আয়োজন করতে সাহায্য করেছো এখন অনুষ্ঠানে ও থাকবে। প্লিজ বাসায় চলো! আম্মু তোমাকে দেখে খুব খুশি হবে। আমার ছাত্রী হিসেবে না যাও! কিন্তু সিনিয়র এর বোন হিসেবে যেতেই পারো!
সুমু কিছুক্ষন চিন্তা করে বলল,
—ঠিক আছে। চলুন!
সাদিঃ ধন্যবাদ!
—স্বাগতম!
.
সাদি আর সুমু এক সাথে সাদির ফ্ল্যাটের সামনে এসে সুমু বলল,
—আপনি বুকেটা নিয়ে দরজায় দাঁড়ান। আর আন্টি গেট খুলতেই সুন্দর একটা হাসি দিয়ে ফুলটা ওনার হাতে দিয়ে জড়িয়ে ধরবেন।
সাদিঃ ওকে ম্যাডাম!
সাদি বাধ্য ছেলের মতো সুমুর কথা পালন করলো। সাদির আম্মু গেট খুলতেই অবাক৷ প্রথমে সুমুকে লক্ষ্য করে নি কেননা ইচ্ছে করে সাদি সুমুকে আড়াল করে রেখেছিল। সাদি তার মাকে জড়িয়ে ধরে কানে ফিসফিস করে বলল,
সাদিঃ তোমার ইচ্ছে পূরণ করলাম৷ নিয়ে এসেছি সুমুকে তোমার কাছে। দেখো তো পছন্দ হয় কিনা?
মামুনিঃ(খুশি হয়ে) সত্যি?
সাদিঃ আস্তে আম্মু! ও কিছু জানে না!
সাদি সরতেই সাদির আম্মু সুমুকে ভিতরে এনে কথা বলতে লাগল। সুমু প্রথম দেখায় প্রথমেই সালাম দেওয়ায় খুব খুশি হয়েছেন তিনি। সুমুর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছেন যেন সুমু তার হারিয়ে যাওয়া কোন মেয়ে! সুমুকে নিয়ে সোফায় বসে খুব খুশি মনে কথা বলে যাচ্ছে, সুমুকে এটা সেটা জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছে আর সুমুও সবকিছুর জবাব দিচ্ছে৷ তার মুখে বিরক্তির লেশমাত্র নেই। সাদি বুকে হাত ভাঁজ করে দরজায় হেলান দিয়ে তার মা আর সুমুকে দেখে যাচ্ছে। কি সুন্দর প্রথম পরিচয়ে এরা মিশে গেছে একে অন্যের সাথে। সুমুকে সাদির আম্মু যেতে দেয় নি। একসাথে কেক কেটে প্রথমেই সুমুকে খাইয়ে দেয় সাদির আম্মু। যা দেখে সাদি একটু রাগ করার নাটক করে,
সাদিঃ এটা কি হলো আম্মু! তুমি আমাকে আগে কেন খাইয়ে দাও নি?
বলে পরক্ষনেই হেসে দিল সাদি। সাদির আম্মুও কম যায় না। যেই কেকের অংশ সুমুকে খাইয়েছে সেটা থেকেই সাদিকে খাইয়ে দিতে দিতে সাদির কানে কানে বলল,
মামুনিঃ সুমুর ঠোঁটের এক্সট্রা মিষ্টতা ছোঁয়াতে! কি ভালো লাগে নি?
সাদি জাস্ট অবাক! তার মা এগুলো কি করছে। সাদি তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
সাদিঃ ইউ আর দ্যা বেস্ট আম্মু!
মামুনিঃ হুম হুম আই নো!
এরা মা ছেলে মিলে কি করছে তা সুমুর বোধগম্য হচ্ছে না। সে বোকার মতো তাকিয়ে আছে। এবার পালা গিফট খুলে দেখার। সাদির আম্মু ইসলামিক বইগুলো পেয়ে অনেক খুশি।
মামুনিঃ তোরা কি করে বুঝলি আমার এই বইগুলো দরকার ছিল?
সাদি হেসে বলল,
সাদিঃ অল ক্রেডিট গোজ টু সুমু!
—(মৃদু হেসে) আসলে আমিও ইসলামিক বই পড়ি আর যেহেতু আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরেন তাই ভাবলাম বইগুলো আপনার ভালো লাগবে। এই বইগুলো আমি পড়েছি খুব ভালো লাগে। এই বইটায়(একটা বই দেখিয়ে) অনেকগুলো হাদিস একসাথে পাবেন। ভালো একটা সমগ্র!
মামুনিঃ আমার বইগুলো খুব পছন্দ হয়েছে। এই বইগুলো আমি আনাতে চেয়েছিলাম তার আগেই গিফট পেয়ে গেলাম!
সুমুকে দুপুরে খাইয়ে তারপর যেতে দিল সাদির আম্মু!
—এখন তাহলে আসি আন্টি!
মামুনিঃ হুম এসো! আর মনযোগ দিয়ে পড়ালেখা করবে। আর আমি তো তোমার ফোন নাম্বার নিলামই। মাঝে মাঝে ফোন দিব কিন্তু!
—আচ্ছা! যখন ইচ্ছা ফোন দিবা আন্টি। আমি কিছু মনে করবো না।
মামুনিঃ সাদি! মেয়েটাকে পৌছে দিয়ে এসো!
—না আন্টি দরকার হবে না। আমি চলে যেতে পারবো। তাছাড়া আমার একটু কেনাকাটা করতে হবে।
সাদিঃ তাহলে মার্কেটে বসে কিনলে না কেন? একসাথেই কেনা হয়ে যেত।
—না না সমস্যা নেই। আমি এখন মার্কেটে যাব না। আশপাশে থেকে কিনে নেব। আর হোস্টেলে ডাক্তারসাহেব আর আমাকে একসাথে দেখলে শুধু শুধু বাজে কথা ছড়াবে মানুষ! আমি চলে যেতে পারবো!
সাদিঃ আচ্ছা চলো তোমাকে রিক্সা করে দেই।
—(তাড়াহুড়ো করে) না! তার প্রয়োজন হবে না। আমি পারবো। আসি আন্টি!
সুমু তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যেতেই সাদিও সুমুর পিছু পিছু গেলো। সে কোনভাবেই সুমুকে একা ছাড়বে না। সুমু খালি রিক্সা রেখে একটা ফার্মেসীতে আগে ঢুকলো, তারপর কিছু কিনে আবার রিক্সায় উঠে পড়লো। তা দেখে সাদি মনে মনে একটু স্বস্তি পেলো। আর বলল,
সাদিঃ ওহ! তো ম্যাডাম এর জন্য এতো তাড়াহুড়া করছিল!
সাদিও বাসায় ফিরে এসে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে রেডি হতে লাগলো। সাদির মা সন্ধ্যার পর গাড়িতে ঢাকা যাবেন। তাই বাসে উঠিয়ে দিতে যাবে সাদি।
.
সাদি তার মাকে বাসে তুলে দিয়ে বাসায় ফিরলো। সোফায় ক্লান্তি নিয়ে বসতেই আজকের কথাগুলো মাথায় ঘুরতে লাগলো৷ কিছুক্ষণ আগেও এই বাসা খুশিতে ঝলমল করছিল। পরিপূর্ণতায় ভরে গেছিল বাসার প্রতিটা কোনা! কিন্তু এখন আবার সাদি একা! একাকিত্ব ঘিরে ধরছে সাদিকে! আর সম্ভব নয় তার এই বাসায় একা থাকা। তার এই একাকিত্বের জীবনে এখন কাউকে চাই! খুব করে চাই! আর এই একাকিত্ব শুধু সুমুই দূর করতে পারবে। সুমু সাদির মনে একদম ঝেঁকে বসে আছে। সাদি নিজেও বুঝতে পারছে যে সুমু তার জীবনে খুব বাজে ভাবে জড়িয়ে আছে৷ তার পাশে শুধু সুমুকেই দরকার। সাদি খুব ভালো ভাবে তার অনূভুতি বুঝতে পারছে এখন শুধু সুমুকে বুঝানো বাকি! ভাবতে ভাবতে আনমনেই হেসে দিল সাদি। একা একা বলতে লাগলো,
সাদিঃ সুমু…..!!!!! মাই লাভ!!! বি রেডি জান!!! অনেক ছাড় দিসি তোমাকে! আর সম্ভব না৷ এবার একটু রোমিওগিরি দেখাবো তোমাকে!!!
.
এদিকে বেচারি সুমু সন্ধ্যায় নাস্তা খেতে বসেছিল রুমমেটদের সাথে। খাবার মুখে দিতেই হিঁচকি উঠে গেলো। পানি খেতে খেতে মনে মনে বলল,
—কোন শালায় যে আমারে গালি দিতেছে আল্লায় জানে। এতো হিঁচকি কেন উঠতেছে!
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..