#তবু_আছি_কাছাকাছি (Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_7
?
.
.
নীলের কথা শুনে সুমুর একটু সন্দেহ হচ্ছে। তাই জিজ্ঞাসা করলো,
—সত্যি সত্যি বলতো কি লুকাচ্ছিস?
নীলঃ(অপ্রস্তুত ভাবে) কিছু না! কি লুকাবো?
—(ভ্রু কুঁচকে) আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তুই আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছিস!
নীলঃ(একটু শ্বাস নিয়ে বলল) আসলে সাদি স্যারকে আমার খুব আজব লাগে। যখন ধাক্কা খেলি তখন তোকে বকা দেওয়ার জন্য স্যারের চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছিল মনে হচ্ছিল সে খুব রেগে গেছে। এবং সে আমার সাথে রাগ রাগ ভাবেই কথা বলেছে কিন্তু তোর সাথে যখন স্যার কথা বলে অজানা কারনেই স্যারের মুখে হাসি দেখেছি। আর একটু আগে যখন ফোনে কথা বললি তখন স্যারকে দেখলাম বিষন্নমুখে চলে যেতে। আচ্ছা তুই কার সাথে কথা বলছিলি?
—আমি? আমি তো ভাবীর সাথে কথা বলছিলাম।
নীলঃ কি বলেছিস বলা যাবে?
—হ্যাঁ হ্যাঁ বলা কেন যাবে না? তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আসলে ভাইয়া আর ভাবীর একটু ঝগড়া হয়েছে যদিও এটা একপক্ষীয়! আর ভাবী তো অসুস্থ! ভাইয়ার মেসেজ পেয়ে ভাবীকে ফোন লাগাই আর কথায় কথায় ভাবী আমাকে দাদি বলে তাই জিজ্ঞেস করেছি যে তার দাদা মানে আমার জামাই কই? আমিই দেখি নি! তার যেন ছবি পাঠায়!
নীলঃ(মাথায় হাত দিয়ে) কাম সারছো!
—(অবাক হয়ে) কি কাম সারছি?
নীলঃ(একটু হেসে) স্যার তোর প্রেমে পড়ছে!
—(অবাক হয়ে) বাজে কথা বলিস না নীল!
নীলঃ আমি বাজে কথা বলছি না। স্যার সত্যিই তোর প্রেমে পড়ছে! এর জন্য হয়তো তোর শেষের কথা শুনে মন খারাপ করে চলে গেছে।
—মন খারাপ করার কি হইলো? আমি তো ভাবীর দাদার কথা কইছি!
নীলঃ আরে গাধি! বাঙালিরা ভাইকেও কিন্তু দাদা বলে!
নীল সুমুর দিকে আর সুমু নীলের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকেই হো হো হেসে উঠলো দুজনে।
—তাহলে তো বিষয়টা দেখতে হয়!
নীলঃ তোর মাথায় আবারও শয়তানি ঘুরতেছে না?
সুমু হেসে মাথা নাড়ালো।
.
সাদি কটেজ ছেড়ে নিজের বাসায় উঠেছে। এখানে একটা ফ্লাট কিনে নিয়েছে। আগে যখন পড়াশোনা করতে এসেছিল তখন প্রথমে হোস্টেলে ছিল তারপর বাসা ভাড়া করে থেকেছে। আর আজ নিজের টাকায় এখানে ফ্লাট কিনে ফেলল। সাদির মা দুইদিনের জন্য এসেছে, ছেলেকে মোটামুটি সব গুছিয়ে দিয়ে সে আবার ঢাকা ব্যাক করবে।
মামুনিঃ সাদি! তোকে তো মোটামুটি সব গুছিয়েই দিলাম। তবু কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে!
সাদিঃ কেন? সবই তো কিনলাম, হাড়ি পাতিল থেকে জুতো পর্যন্ত নতুন! তাহলে?
মামুনিঃ আরেকটা জিনিস মিসিং!
সাদিঃ কি?
মামুনিঃ একটা বউয়ের!
সাদিঃ চিন্তা নিয়ো না সময় হলে এসে যাবে।
মামুনিঃ তুই এই একটা কথা বলে আমাকে চুপ করিয়ে দিস। হ্যাঁ ও বলিস না আবার নাও বলিস না। পাজি কোথাকার!
সাদি উত্তরে হাসলো।
.
সাদি মনে মনে নিজেকে বলছে,
সাদিঃ কাজটা ঠিক হলো না। আমি একজন এডাল্ট মানুষ। অথচ বাচ্চাদের মতো জেলাসি ফিল করে চলে আসলাম। আগে তো বিষয়টা বুঝা উচিত ছিল। আর এইকয়দিনে সুমুকে যা চিনেছি তাতে স্পষ্টত সে একটা দুষ্টু মেয়ে। তাই আগে বিষয়টা পরখ করতে হবে।
মনে মনে ভেবেই সাদি হাসলো।
.
বিকেলে সুমু নাদিয়া আর তার আরেক রুমমেট ইকরাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো। পার্কে ঘুরে সন্ধ্যার দিকে নিজেদের খাবার নিয়ে হলে যাবে। হোস্টেলের ওই পানসে খাবার খেতে ভালো লাগে না। তাই প্রায়শই তারা এই কাজটা করে থাকে। রাতে ঘুরে এসে সবাই যে যার মতো রুম গুছাতে থাকে। তারপর সবাই একসাথে ডিনার করে পড়তে বসে।
কিছুক্ষন পরই সুমু কি যেন খুজঁতে থাকে। ইকরা খেয়াল করে বলে,
ইকরাঃ সুমু বেবি! কি খুঁজিস?
—আরে আমার স্কেপুলা খুঁজে পাচ্ছি না!
ইকরাঃ তোর স্কেপুলা তোর ভিতরেই আছে।
—(আড়চোখে তাকিয়ে) আই মিন কংকালের স্কেপুলা!
ইকরাঃ খুঁজে দেখ! যাবে কোথায়? তোর বক্সে খুঁজেছিস?
—(তাড়াহুড়ো করে) এই রে বক্সে খোজা হয় নি।
অতঃপর বক্সে সবগুলো অংশই খুঁজে পায় সুমু।
—পেয়েছি!
ইকরাঃ আমার গুলো তো সেই কবেই বিক্রি করে দিয়েছি। তুই কবে করবি?
—তার জন্যই তো এতো খোঁজাখুঁজি। এইসব প্যাকেট করে রাখছি, ভাইয়াকেও বলেছি। আর এখানে দুই একজন জুনিয়রকে জিজ্ঞাসা করলেই পাওয়া যাবে।
ইকরাঃ হুম! আমিতো দুই হাজার টাকা লাভে বিক্রি করছি।
—এই একটা জিনিসে কখনো লস নাই। কাজের সময় কিনো। পরে কাজ শেষ হলে বিক্রি করে দাও!
ইকরাঃ(হেসে) হুম!
.
রাতে পড়তে পড়তে দেড়ি হওয়ায় আজও দেড়ি করে উঠতে হয়েছে সুমুকে। উঠে দেখে ৬: ৩০ বাজে! কি আর করার! তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে দিল নীলকে ফোন।
নীলঃ ওই গরু! তুই আজকেও লেট করে উঠছোস?
—ওই গাভী! আমি তোর মতো সারারাত ঘুমাই?(রেগে)
নীলঃ(দুষ্টামি করে) তো কি করস দোস্ত? জামাই পাহারা দেস?
—থাকলে অবশ্যই দিতাম! বাদ দে তুই কই এখন?
নীলঃ এই যে কলেজে যাইতেছি। রিক্সায়।
—তুই এখনো না পৌছাইয়া আমারে ঝাড়ি দেস!! হারামি আজকে তোরে পাইয়া লই!
নীলঃ(হাসতে হাসতে) আচ্ছা আয় আগে!
.
সুমুও কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলো। কলেজে রিক্সা পৌছাতেই দেখে নীল গেটে দাঁড়িয়ে আছে। সুমু যে পরিমান ঝাড়ি দিসে! বেচারা বাধ্য হইছে দাঁড়াইতে।
—কিরে মফিজ! কান্দোস কেন?
নীলঃ বিশ্বাস কর বইন! আমি অনুর জন্যও এতো দাঁড়াইয়া থাকি না! যত তুই আমারে দাঁড় করিয়ে রাখোস! পা ব্যাথা হয়ে গেছে!
—সমস্যা নাই পরে ওষুধ নিয়ে নিস! এখন চল।
নীল আর সুমু পাশাপাশি কথা বলতে বলতে হাঁটছে। এর মধ্যেই সুমুর নজর পড়ে শুভ্রতায় ঘেরা সাদির দিকে। সাদা শার্ট গায়ে পেন্টের সাথে ইন করে পড়েছে, ফোনে কথা বলতে বলতে এদিক দিয়েই যাচ্ছে। চোখে চশমা পড়ার জন্য তাকে অনেক বেশি শুভ্র লাগছে। যেন চশমাটার জন্যই তাকে মানিয়েছে। যদিও সুমু নিজেও চশমা পড়ে। নিজেকে তার কাছে চশমা পড়লে জোকার জোকার লাগে কিন্তু সাদিকে তার অত্যধিক ভালো লেগেছে।
.
সাদি পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই সুমু জোরে সালাম দিল।
—আসসালামু আলাইকুম ডাক্তারসাহেব!(হেসে)
সাদিঃ(ফোন কেটে) ওয়ালাইকুম আসসালাম!(মৃদু হেসে)
নীলও সালাম দিল। সাদি চলে যেতে নিলেই সুমু আবার ডাক দিল,
—ডাক্তারসাহেব!
সাদি পিছন ফিরে সুমুর দিকে তাকালো।
—(মিনমিন করে) আসলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করতাম!
সাদিঃ বলো!
—আপনার নাম কি?
সাদি চোখ বড় করে কয়েক সেকেন্ড সুমুর দিকে তাকিয়ে ছিল। যার প্রেমে ড. সাদি হাবুডুবু খাচ্ছে সে কি না তার নামই জানে না! এর মধ্যে নীল সুমুকে একটা খোঁচা দিল।
নীলঃ উনি সাদি স্যার! উনি আমাদের মেডিসিনের ক্লাস নেয়! ওইদিনই তো স্যার তার নাম সবার সামনে বলল।(হাসার চেষ্টা করে)
—আরে ওনাকে তো আমি চিনিই! ওইদিন শুনেছিলাম কিন্তু মনে নেই। আসলে আমি পুরো নাম জানতে চাইলাম!
সাদি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
সাদিঃ আমি ড. সাইমান সাদি!
—ওয়াও! বিউটিফুল নেম! আমার নামও ‘স’ দিয়ে! আচ্ছা এখন তো আমি আপনার নাম জানি! তাহলে এখন আপনাকে কি ডাকবো? সাদি স্যার নাকি ডাক্তারসাহেব?
সাদি একটু হেসে বলল,
সাদিঃ তোমার ইচ্ছা!
.
বলেই চলে গেল। আর সুমু বলছে,
—বুঝলাম না! উনি হাসলো কেন?
নীল সুমুর মাথায় বারি দিয়ে বলল,
নীলঃ গাধী!
এদিকে সাদি মনে মনে এতো হাসছে! কিন্তু সামনে তা প্রকাশ করছে না। নয়তো বিনা খরচায় পাগলের পদবীটা মানুষ তাকে দিবে। সাদি ভাবছে দুনিয়ায় আর কোন মেয়ে ছিল না? এই আধপাগলী সুমুকেই কেন তার এতো পছন্দ! সরাসরি বলে দিল নাম মনে নেই! পাগলী!
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..