#তবু_আছি_কাছাকাছি (Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_4
?
.
.
সাদি দরজার দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিলে মায়ের কোল থেকে উঠে পড়লো। সাদির মা ও আগন্তুক ব্যক্তিকে দেখে মুচকি হাসি দিল।
সায়মাঃ সাদির বাচ্চা!!!!!!!
মামুনির কোলে সায়মা তার তিন বছরের মেয়েকে দিয়ে সাদিকে তাড়া করতে শুরু করলো।
সায়মাঃ(সাদিকে তাড়া করতে করতে) তোকে আমি কতবার করে মনে করিয়ে দিয়েছি যে ঠিক ৫ টার সময় যেন তোকে এয়ারপোর্টে পাই! কিন্তু তুই আসিস নি! কই ছিলি তুই?
সাদিঃ(দৌড়াতে দৌড়াতে) আরে! আমি ভুলে গেসিলাম। আর তোর সাথে তো এহসান ভাই আছেই! এমন করিস কেন?
সায়মাঃ ওহ! তাই না। এখন তোর দুলাভাই আছে! নিজে যে আস্তে আস্তে ভুলাক্কার হচ্ছে তার কোন খেয়াল নাই! ফাজিল কোথাকার!
.
সায়মা হয়রান হয়ে সোফায় ধপ করে বসে পড়লো। আর সাদি ও বসে পড়ে। সাদি বসতেই তার পিঠে এক ধুম করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় তার বড় বোন সায়মা।
.
সাদি মায়ের কোল থেকে ভাগ্নিকে নিয়ে তার সাথে আদরমাখা কথা বলতে থাকে।
সাদিঃ আমার আহানা পাখি! মামাকে ভুলে গেসে?
আহানা মাথা নাড়িয়ে না বলল,
আহানাঃ মামাকে কেন বুলবো! তুমি তো বেস্ত,,
ছোট আহানার কথা শুনে সবাই হেসে দিল। তারপর মামুনি সায়মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
মামুনিঃ তোর ভাইয়ের তো এখন আর এই সব কাজে মন বসবে না। সে এখন অন্য চিন্তায় ব্যস্ত!
সায়মাঃ(অবাক হয়ে) মানে? অন্য চিন্তা মানে কি?
মামুনিঃ কোন এক মেয়েকে তার মনে ধরেছে তাও মারাত্মক ভাবে।(হেসে দিয়ে)
সায়মা এবার বুঝতে পারলো আসল কাহিনী। এবার সে তার ভাইয়ের দিকে ফিরে বলতে লাগলো,
সায়মাঃ ভাই! মেয়েটা কেমন রে?
সাদিঃ তোমরা কিন্তু এখন বাড়াবাড়ি করছো!
সায়মাঃ মোটেই বাড়াবাড়ি না। জীবনে এই প্রথম কোন মেয়ে আমার ভাইয়ের মনে ঢুকতে পেরেছে, তার মানে অবশ্যই সে স্পেশাল।
সাদিঃ(বিড়বিড় করে) আসলেই সে স্পেশাল।
সায়মা আর মামুনি সাদির দিকে তাকাতেই সে লজ্জা পেয়ে হেসে উপরে চলে যায়।
.
সুমুর মাকে কালকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কারন তার টেস্টের রেজাল্ট অনেক ভালো। যতটুকু সমস্যা আছে তা ওষুধ দ্বারা কাটানো সম্ভব।
.
মায়ের পাশে বসে আছে সুমু। এই কয়দিন তার উপর অনেক ধকল গেছে। তার উপর বেচারির প্রেশার লো। বেডে মাথা দিয়ে হেলান দিয়ে ছিল সুমু৷ তার মা ঘুম থেকে উঠে মেয়েকে এমনভাবে দেখে একটু কষ্ট পেল। যতই হোক এবার সে এক বড় মেয়ের মতোই তাকে আগলে রেখেছে। মুচকি হেসে মেয়ের মাথায় হাত রাখল।
.
হঠাৎ কারো স্পর্শ পেয়ে সুমু জেগে গেল। মাথে তুলে মাকে দেখেই ম্লান হাসল।
—কিছু লাগবে আম্মু?
মাঃ নাহ! রাতে তুই খেয়েছিস?
—এই রে ভুলে গেছি। পরে খেয়ে নিবো নে। তুমি টেনশন করো না।
মাঃ তুই যে পরে কি খাবি তা আমার জানা আছে। এখনই খা! নয়তো অসুস্থ হয়ে পরবি!
—হুম!
.
সাদি ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো সবার সাথে বসে ডিনার করার উদ্দেশ্যে। পিচ্চি আহানা মামাকে দেখা মাত্র দোড়ে এসে সাদির কোলে উঠল।
সাদিঃ এহসান ভাই কই? এখনো পৌছায়নি?
সায়মাঃ হ্যাঁ বাসায় আসছে, ফ্রেশ হচ্ছে। কি যেন কাজে গিয়েছিল।
এহসান সাহেব এলে সবাই মিলে ডিনার করে নেয়৷ খেতে খেতে সায়মা বলে,
সায়মাঃ আব্বু ট্যুর থেকে কবে ফিরবে?
মামুনিঃ কালকেই। যখনই শুনেছে তার ছোট বউ এসেছে তখনই ট্রেনে উঠে পরেছে।
সায়মাঃ আব্বু পারেও!
হঠাৎ সায়মা খেয়াল করলো তারা যে এতো কথা বলছে কিন্তু তাতে সাদির কোন মনযোগ নেই। এমনকি মুচকি মুচকি হেসে অল্প অল্প খাবার খাচ্ছে। তা দেখে সায়মা নিজেও একটু হেসে দিল। তারপর মাকে ইশারা করে দেখালো। মামুনিও সাদিকে দেখে হেসে দেয়।
মামুনিঃ এই যে আমার ভাবনারাজ্যের রাজপুত্র! খাওয়ার সময় তার চিন্তা বাদ দিয়ে আগে খাবারটা খান।
সাদিঃ আম্মু তুমিও না! কি বলো এগুলা? তোমরা যা ভাবছো এমন কিছুই না৷ এই অল্পসময় কেউ কিভাবে প্রেমে পরতে পারে?
সায়মাঃ সম্ভব! ভাই,,,প্রেম কখনো বলে কয়ে আসে না।
সাদিঃ তবে মিথ্যে বলবো না। আই ফিল ফর হার!
সায়মাঃ যাহ! তাহলে তোর ২৮ বছরে কাউকে মনে ধরলো।
সাদি বোনের কথা শুনে মুচকি হাসলো।
মামুনিঃ এখন তাড়াতাড়ি মেয়ের বাড়ির ঠিকানা বল! আমরা সবাই প্রস্তাব নিয়ে যাই!
সাদিঃ আয় হায়! তোমরা এতোদূর চলে গেছো! আমি এখনো শিওর না! আর আমার মনে হয় এটা জাস্ট ভালোলাগা। অন্যকিছু না।
.
সবার সামনে বললেও সাদি মনে মনে ঠিকই বুঝতে পারছে যে সুমুর সাথে তার কোন না কোন সংযোগ তো আছেই।
.
পরদিন সকালেই সুমুর মাকে ডিসচার্জ করা হয়। রাকিব এসে তাদের নিয়ে যায়।
.
আজকে সাদি একটু দেড়ি করেই হসপিটালে পৌছায়। নিজের কেবিনে বসে আজকের সব সিডিউল দেখতে থাকে। এর মধ্যেই সুমুর চেহারাটা সাদির মাথায় আবার চাড়া দিয়ে ওঠে। এখন কোন কাজেই তার মন বসছে না। আজ সকাল থেকে একবারও সুমুর সাথে দেখা হয়নি। তাই ফাইল ঠেলে সাদি বাইরে বেরিয়ে এলো। উদ্দেশ্য ৩০৪ নাম্বার কেবিন। কেবিনের কাছে এসে দেখে এখানে কেউই নেই৷ আয়ারা কেবিনটা পরিষ্কার করছে। সাদি একটা নার্সকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
সাদিঃ এই রুমের পেশেন্ট কোথায়?
নার্সঃ তাকে আজ সকালেই ডিসচার্জ করা হয়েছে। তাই চলে গেছে।
সাদিঃ ওহ! ওকে।
.
সাদির কেন যেন মনটা খুবই খারাপ করছিল। কেন তা সে জানে না। অন্য একটা মেয়ের জন্য তার কেন খারাপ লাগছে তা ভেবেই সাদি বিরক্ত। তার এই ২৮ বছরের জীবনে এমন অনুভূতি প্রথম হচ্ছে। অনেক মেয়ের প্রপোজ পেয়েছে সে। কিন্তু মনে ধরার মতো কাউকে সু্যোগই দেয় নি।
কিন্তু আজ কেন এমন লাগছে তার। নাহ! এই মেয়ের ব্যাপারে আর ভাবতে চায় না সে। তাও আবার মেয়েটা যখন তারই সিনিয়র এর বোন।
.
একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাদি আবার নিজের কাজে মন দিল। কিছুতেই মন থেকে ওই মেয়েটাকে বের করতে পারছে না। তাই ঠিক করলো নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখবে তাতেই হয়তো মেয়েটার চিন্তা মাথা থেকে বের হবে।
.
তবে থেকেই শুরু হলো সাদির ব্যস্ততা।
.
এদিকে সুমুও তার স্টাডি নিয়ে সম্পুর্ন সচেতন। ও তো বেচারি জানেও না যে তার জন্য কেউ তার নিজের প্রতিই বিরক্ত হয়ে পরেছে। সুমু নিজেও জানে না কেউ তাকে নিয়ে এতোই বিভোর যে তাকে ভোলার জন্য ব্যস্ততাকে বেছে নিয়েছে।
কি হবে এদের ভবিষ্যৎ? সাদি আর সুমুর কি আবার দেখা হবে? নাকি দুইজন দুই প্রান্তে হারিয়ে যাবে?
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..