তবুও তুমি পর্ব-০৯

0
1238

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০৯
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
–আর একটা কথাও বলবে না তুমি ছোঁয়া।
–রোদ আমাকে বিশ্বাস করো।
–না করি না বিশ্বাস আমার দাদা জানের সম্পর্কে তোমাকে এগুলা বলার সাহস কে দিয়েছে।
–রোদ আমাকে বিশ্বাস করো।
–বাসায় চলো
রোদ আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে বাসায় নিয়ে এলো।
বাসায় এনে ঠাস করে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো
আমি থুবড়ে গিয়ে মাটিতে পরলাম।
ব্যাথা পেলাম প্রচুর।
রোদ আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।
–তুমি আমার দাদা জানের সম্পর্কে আর একটাও বাজে কথা বলবে না আমি বলে রাখলাম।
–কিন্তু রোদ বিশ্বাস করো,
–বর্ষন নামের ওই ছেলেকে আমি দেখে নেবো ও নিশ্চিত তোমায় খুব বাজে ভুল বুঝিয়েছে।
কথাটা বলে ও হনহনিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল।
–হে আল্লাহ আমি যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো। এবর কি করব।
ভাইয়ার কোন ক্ষতি করে দিলে আমি মরে যাবো।
কি করব।
ভাবতে ভাবতে রোদ বের হলো।
আমি তখনো মেঝে তেই বসে ছিলাম।
রোদ আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বেডে গিয়ে শুয়ে পরলো।
আমি ধিরে ধিরে উঠে বারান্দায় চলে গেলাম।
আবার সেই মিষ্টি বাতাস।
গ্রামের মো মো করা পরিবেশ।
এতো ভালোবাসা এতো বিশ্বাস কিছুই আজ কাজে দিলো না।
রোদের বিশ্বাস হলো না আমকে।
ও ওর দাদা জানকে সব বলে দিলে সত্যি আমাকে তো মারবেই আমার ভাইয়া টাকেও ছাড়বে না।
ভাইয়ার কথা ভাবলে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠছে।
কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।
ভাইয়াকে কি করে বাঁচাবো।
আমি নিরুপায়।
ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলতে হবে ওকে জানিয়ে যদি কিছু করা যায়।
কিন্তু কি করব হে আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো।
চোখ বন্ধ করতে চোখ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি বেয়ে পরলো।
হটাৎ মনে হলো কেউ আমাকে কোলে তুলেছে।
হুট করে পরে যাওয়ার ভয়ে হাতের কাছে যা পেলাম তাই আঁকড়ে ধরলাম।
তার পর তাকালাম।
রোদ আমাকে তুলেছে।
কিন্তু কেন।
অবাক হলাম।
ও আমাকে তুলে বিছনায় নিয়ে গেল।
–কি ভাবছিলা ওখানে দাঁড়িয়ে? কি করে পালানো যায়?
তা আর হচ্ছে না তোমায় আমি পালাতে দিবো না।
সারা জীবনের জন্য বেঁধে রাখবো।
আমি না রাখলেও আমাদের অনাগত সন্তান বেঁধে রাখবে।
তুমি আর যাই করো এই রোদকে ত্যাগ করতে পারবা না।
তুমি চাইলেও না। না চাইলে তো ভালোই।
তোমায় আজ থেকে সারা জীনের জন্য বাঁধা করে রাখার ব্যাবস্থা করব আজ।
আমি ওর দিকে রসগোল্লার চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছি,
ও কি পাগল।হয়েছে কি বলছে এগুলা।
আরে আজব আমি কি পালাতে চেয়েছি নাকি পালানোর কথা ভাবছি।
বাইরে ভারি বর্ষা।
বৃষ্টির বেগ বেড়ে চলেছে।
শীতল বাতাসের আনাগনা।
চারিদিকে থমথমে পরিবেশ।
মিষ্টি ঠান্ডায় সবাই ঘুম।
সব ঘরের লাইট বন্ধ।
প্রচন্ড গরমের পর যখন বৃষ্টি হয় তখন এতোটা আরাম লাগে যে সবাই ঘুমিয়ে যায়।
এই থমথমে সুন্দর পরিবেশে রোদ ছোঁয়ার ভালোবাসাকে আজ সত্যি করে পূর্ণতা দিলো রোদ।
,
,
,
,
সকালে বৃষ্টির পর চিকচিক কাঁচের মতো সচ্ছ আলো বের হয়েছে।
চারদিকে সুন্দর আলোতো আলোকিত।
ছোঁয়ার মুখে আলোট ঝলকানি পরতে ছোঁয়ার ঘুম ভেঙে যায়,
,
,
ঘুম ভাঙতে নিজেকে রোদের বাহুডোর আবদ্ধ দেখতে পাই।।
ওর হাতের বাধন আলগা করার চেষ্টা করি কিন্তু ফলাফল শূন্য সে আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
তার মানে কি ও জেগে।
আমি আরও একটু নড়তে ও হুট করে আমার ঘাড়ে কামড়ে দিলো,
আমি ব্যাথায় ‘আউ’ বলে উঠলাম
–আমার ঘুম হয় নি নড়ছো কেন?
–আমি উঠবো।
–না ঘুমাবা চুপচাপ ঘুমাও।
–আল্লাহ।
–ছোঁয়া রাগ তুলো না।
কথাটা বলে সে আবার ঘুমোলো।
বাহ মহাশয় ঘুমোবেন আর আমি তার বুকের মধ্যে শুয়ে থাকবো।
এমনি তো দরকার।। ঘুম তো নয় ঢং যতোসব।
অসহ্য কর।।
ধুর ভালো লাগে না।
চোখ বন্ধ করে নিলাম আবার না চাইতেও।
,
,
,
এদিকে,
বর্ষন ছোঁয়ার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে।
ছোঁয়ার অবস্থা ঠিক কেমন তা বুঝতে পারছে না।
বর্ষা চেষ্টা করছে সব সময় বর্ষনের সাথে থাকার। কিন্তু জেনেশুনে বোনকে রাক্ষস গুহায় রাখার পর পৃথিবীর কোন ভাই এর চোখেই ঘুম থাকবে না।। বর্ষন জানে ছোঁয়া যদি কখনো ভুল করেও সত্যি রোদকে বলে রোদ তো বিশ্বাস করবেই না উল্টে তার বোনটার উপর টর্চার করবে।
ছোঁয়া বলেছিল ভাইয়া আমার বিশ্বাস রোদ আমার কথা বুঝবে।। কিন্তু রোদ যে তার দাদা জানকে ভিশন বিশ্বাস করে এটা ছোঁয়া বুঝতেছে ন।
বর্ষনের মাথায় শুধু মাত্র একটা কথা।
ছোঁয়া কখনো এ কথা রোদকে বললে রোদ ওকে তো মেন্টানি ফিজিকালি টর্চার করবেই সাথে বর্ষন কে হয় তো ছেড়ে দিবে ছোয়ার জন্য । কিন্তু এ কথা রোদ তার দাদা কে বললে বর্ষন কে তো মারবে বর্ষা কেও ছাড়বে না। ছোঁয়া তো দুরে থাক।
রোদকে না জানিয়েই ছোঁয়াকে মেরে দিবে।
এ কথা বর্ষন খুব ভালো করে জানে।
ওরা এতোটাই প্রভাবশালী যে ওদের কোন বিচার ই হবে না।
যদি হতো তবে তাদের মা বাবা খুনের বিচার টাই আগে হতো।
বর্ষনের ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে বর্ষার আগমন।
–কি করছো?
–কিছু না।
–তোমায় মুখটা সব সময় উদাস কেন থাকে বর্ষন।
–তুমি তো সবি জানো বর্ষা।
–হ্যাঁ সব জানি আমি কিন্তু তুমি এভাবে কেন ভেঙে পরছো। আমি তো আছি তোমার পাশে আমার বিশ্বাস ছোঁয়া রানির কিছু হবে।
রোদ আর যাই করুক ছোঁয়া কে ভিশন ভালোবাসে।
–আমার চিন্তা সব জায়গায় বর্ষা তোমায়কে নিয়ে ছোঁয়া কে নিয়ে সবাইকে নিয়ে।
আমার খুব স্ট্রেস লাগছে বর্ষা।
–আল্লাহ এতো চিন্তা করো তার উপরে ঠিক মতো খাও না তোমায় প্রেশার সব সময় লো থাকে।। দেখি এখন মেপে দেখি।।
বর্ষা বর্ষনের প্রেশার টা মেপে অবাকি হয়।
সত্যি ভিশন কম।
বর্ষনের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ও কতোটা চিন্তা করছে।
বর্ষা গিয়ে ডিম আর দুধ নিয়ে আসে।
যোর করে সেটা বর্ষন কে খাইয়ে দেয়।
ভালোবাসার মানুষ টার এমন অবস্থা কেউই দেখতে পারে না।।
,
,
,
,
সকাল না দুপুর ১২ টা বাজে।
মহাশয় এর ঘুম ভাঙতে সে আমাকে ছেড়ে দেয়।। এতোটা সময় শুধু শুধুই আঁটকে রেখেছিল।।
উঠে গোসল সেরে একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পরলাম।
আমি শাড়ি পরে বেরিয়ে এলাম।
আয়নার সামনে চুল গুলো আঁচড়াচ্ছি,
★★★
বেলকনি থেকে ছোঁয়াকে দেখা যাচ্ছে। গোলাপি রঙের শাড়িটা ওর উপর বেশ ফুটেছে।
বউ বউ লাগছে।
ছোঁয়ার এই সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেখ রোদের চোখ। কারন রোদ ছোঁয়া কে ভলোবাসে।
ভালোবাসা চোখ দিয়ে তুমি যাকে দেখবে সেই পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে সুন্দর মানুষ টি।
চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে