তবুও তুমি পর্ব-০৮

0
1195

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০৮
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
রোদ আমার আবদার শুনে অবাক।
–এখন এই রাতে?
–চলুন না।
আমার মুখের হাসি দেখে রোদ সেটাকে ফেলতে পারলো না।
আমাকে নিয়ে বের হলো গ্রামের রাস্তায়৷
ফুরফুরে শীতল বাতাস।
আমি আর রোদ।
আমার মাথাটা রোদের কাঁধে।
চুপচাপ নিশ্বাস নিচ্ছি শুধু।
–রোদ৷
–হুম।
–আমার আপনাকে কিছু বলার আছে।
–কি?
–এদিকে বসুন।
আমরা একটা গাছের তলায় বসলাম।
–কিছু সিরিয়াস।
–আমার আজ আপনাকে অনেক কিছু বলার আছে।
–বলো,
–আমি কে জানেন?
আমার পরিচয় কি?
আমি যে এতিম আমার বাবা মা কে ছিলেন?
–এখন এসব প্রশ্নের কোন মানে নেই।
–আছে।
আমি আরিফ খান আর কোনিকা খানের দুই মাত্র সন্তান।
আমার বড়ো ভাই বর্ষন খান।
আমার কথা শুনে রোদের মুখের অবস্থা পুরোটাই পাল্টে গেল।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
–হ্যাঁ যে মেয়েটা আর ছেলেটাকে আপনি এতো দিন ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছেন মারবেন বলে।
আমরাই সেই দুই জন।
বর্ষন আমার আপন ভাই এ কথা আমিও জানতাম না।
আপনি চলে যাবার দিন ওর সাথে আমার দেখা৷
একটা কোর্ট দিয়েছিল আমাকে।
সেটা ফেরত দিতেই ওর সাথে আমার দ্বিতীয় বার দেখা,
অতিত,
–এই বর্ষন নামক ছেলেটার কোর্ট আমার কাছে কি করব এটার।
তাকে তো দিতে হবে। কিন্তু খোঁজ কি করে পাবো।
সব ভাবতে ভাবতে হুট করে ফোনটা বেজে উঠে।
অচেনা নাম্বার থেকে এই সময় কে ফোন করলো।
ছোয়া ভাবতে ভাবতে ফোন তুলে,
–আসসালামু আলাইলুম।
–আলাইকুম মসসলাম।
আমি বর্ষন বলছি।
–বর্ষন আচ্ছা আপনার কোর্ট টার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ওটা ফেরত দিবো কি করে।
–কাল দেখা করুন।
–কোথায়।
–ক্যাফেতে।
–আচ্ছা
ছোঁয়া ফোনটা রেখে দেয়।
পরের দিন সকালে,
ছোঁয়া সময় মতো ক্যাফেতে পৌঁছে যায়।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টি শেষে সবে রোদ বের হলো।
চারি দিকে পানির উপর আলোতে চিকচিক করছে পরিবেশ।
বর্ষন পেছন থেকে ছোঁয়াকে ডাক দেয়।
ছোঁয়া পেছনে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দেয়।
বর্ষন ছোঁয়ার সামনে আসতে ছোঁয়ার ব্যাগে।
থাকা কোর্ট টা বর্ষন কে দেয় আর বর্ষন সেটা গ্রহন করে।
এভবে তাদের সম্পকের শুরু হয়।
বর্ষন ছোঁয়াকে বরাবর ছোট বোনের মতো দেখতো ছোঁয়া বর্ষন কে ভাই এর মতো
রোদের অপূর্ণতা কে বর্ষন বুঝতে দেয় নি সব সময় ভায়ের মতো আগলে রেখেছে।
৫ মাস পর।
ছোঁয়া বসে আছে কলেজের বাইরে একটা ছাউনির তলায়।
দুর থেকে দেখা যায় বর্ষন দৌড়ে আসছে,
ছোঁয়া বর্ষন কে এভাবে দৌড়াতে দেখে ভয় পেয়ে যায়।। কিছু হলো নাতো।
ছোঁয়া উঠে দাঁড়ায়।
বর্ষন ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে ছোঁয়াকে হুট করে জড়িয়ে ধরে।
ছোঁয়া হুট করে এ বিষয় টাকে সহ্য করতে পারে না বর্ষন কে জোরে ধাক্কা দেয়।
বর্ষন ছিটে আবার ছোঁয়ার দিকে তাকায়
–ছোঁয়া।
বর্ষনের চোখের কেনে পানি চিকচিক করে।
–কি সমস্যা?
–তুই জানিস তুই কে?
–মানে কি?
–তুই আমার বোন আমার এক মাত্র বোন।
–কি বলছেন ভাইয়া এগুলা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
–তুই আমার বোন
আমরা দু’জন ভাই বোন তুই এক দম এতিম নস তোর আমি আছি।
বাবা আরিফ খান আর মা কোনিকা খান।
ছোঁয়া বর্ষনের মুখে বাবা মায়ের নাম শুনে আকাশ থেকে পড়লো।
–কিহ।
–হ্যাঁ এই দেখ পিচ্চি কলের ছবি যখন তুই অনেক ছোট আমিও আছি।
আমি ছবিটা দেখে পুরোই পাথর হয়ে গেলাম।। এমন ছবি আমার কাছেও আছে ঠিক যেন এর কর্বন কপি।
–এই ছবিটা কে তো আমি আমার বাবা মা আর ভাই হিসাবে চিনতাম।
–হ্যাঁ এটাই আমার কাছপও আছে
আমাদের বাবা মায়ের মৃত্যুর আগে ওরা দুইটা ছবি আমাদের দু’জনের সাথে দিয়ে দেয়।
–ওদের মৃত্যু কি করে?
–ছোঁয়া রোদ তোর ভালোবাসা আমাদের সব থেকে বড়ো শত্রু।
–মানে?
–আমার মা বাবাকে রোদের দাদা হত্যা করেছে। সে দিন হয়ত আমিও মারা যেতাম কিন্তু মা বাবা খুব কষ্টে আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
–কি বলছেন ভাইয়া?
–ঠিকি বলছি,
প্রায় ২০ বছর আগের কথা তুই তখন মায়ের কোলে আমার বয়স ৫-৬,
আমার বাবা মা ছিলেন সাংবাদিক,
তারা রিপোর্ট করতে করতে চৌধুরী বাড়ির এক মাত্র জ্বালের সম্পত্তির যে সমস্ত ডকুমেন্টস আছে সব কিছু জব্দ করে।
এদিকে রোদের দাদা সেটা জানতে পেরে মা বাবাকে প্রথম বলে সেটা দিয়ে দিতে কিন্তু সেটা দেয় না তারা।
হয়ত এটাই ভুল ছিল,
সেগুলা না দেওয়ায় মা বাবাকে নির্মম ভাবে মেরে ফেলে।
সেদিন বাসায় মা আমাদের নিয়ে পেছন দরজায় এসেছিল।
আমার পকেটে একটা ছবি আর তোর বুকে একটা ছবি দিয়ে তোকে আমার কোলে তুলে দিয়েছিল।
আমি তোকে বেশি সময় রাখতে পারি নি।
রাস্তায় একটা আন্টি ভেবেছিল হয়ত আমি শিশু চোর তাই তোকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েগেছিল তখন থেকে তুই একা আমি একা।
আমি যে পরিবারের সন্তান হিসাবে বড়ো হয়েছি আমাকে ওরা খুব ভালোবাসে আজ এই পর্যন্ত আমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছি তাদের ই জন্য।
কিন্তু আজ এই সব কথা আমি শুত্র ধরে ধরে জানতে পারলাম।
–ভাইয়ারে রোদ তাহলে আমাদের কেন ভুল বুঝবে।। দোষ তো ওর দাদার।
–না রে বোন রোদ তার দাদার কাছে পন করেছে আমাদের দু জনের এক জন কে পেলেও সে অবস্থায় সেই জায়গায় যাতে আমাদের মৃত্যু হয়।
–কেন?
–কারন বাবাকে মেরেছিল ওরা আগে। বাবার
মৃত্যুর সময় আমি মা তুই লুকিয়ে ছিলাম।
তখন বাবা বলেছিল,
*****
–আমাকে মেরে দিয়ে ভাবিস না সব কালো কাজ লুকিয়ে যাবে।
আমার দুই সন্তানের কাউকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখবে।। এবং তাদের হাত ধরে তোর শাস্তি হবে।
–তোর সন্তান দের বাঁচতে দিলে তো।
****
-কিন্তু যখন রোদের দাদা আমাদের কে পায় না তখন বুঝতে পারে সত্যি কিছু হয়েছে। আমরা পালিয়েছি তখন সে তার ভালোবাসা রোদকে তৈরি করে শুধু মাত্র জেদের কারনে আমাদের দুজনের এক জন কে সামনে পেলে রোদ সেখানে মেরে দিতে বাধ্য কারন রোদ ওয়াদা বদ্ধ এবং ও ওর দাদার কসম কেটে সপথ নিয়েছে।
–এগুলা কি করে জানলে ভাই।
–দেখ রোদ গত ১৫ বছর জবত আমাদের খুজতেছে এগুলা তার প্রমান।
বর্ষন কিছু কল রেকর্ড আর ছবি দেখায়।
ছোঁয়ার আর বুঝতে বাকি রইলো না হচ্ছে টা কি।
–ভাই এবার কি করব।
–জানি না বোন খবরদার তুই রোদকে তোর পরিচয় দিবি না।।
বর্তমান,
–সেদিন ভাইকে জড়িয়ে বহুত কেঁদে ছিলামম।
সেই ছবি গুলো তোমার গার্ড তোমাকে দিয়েছে রোদ।
রোদ আমার ভাই আর আমি জানি তোমার সাথে আমাদের মোকাবেলা কখনো সম্ভব না।
তাই আমি তোমার সামনে বসেছি এতো দিনের ভালোবাসার এইটুকু দাম দিও আমার ভাইকে ছেড়ে দেও।
আমার কথা শেষ হতে হটাৎ রোদ আমাকে জোরে একটা চড় দিয়ে দিলো।। আমি ছিটক রাস্তায় পরলাম।। পিজের কারনে হাত ছুলে গেল।
আমি গালে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকালম।
–মিথ্যা কেন বলছো ছোঁয়া আমার দাদা জান কখনো এমন করতে পারে না।
তোমার মা বাবা খুনি ছিল আমার মা বাবাকে মেরেছে।
যার জন্য আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি তোমাদের।
আমার মা বাবার খুনের শাস্তি দিবো বলে।
–না তুমি ভুল বিশ্বাস করো আমার মা বাবা সাংবাদিক ছিলেন।
তোমার দাদা জানের অনেক কালো কাজের ব্যাবসা আছে উনি শিশু ও পাচার করেন।
–ব্যাস
চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে