তপ্ত সরোবরে পর্ব-৮+৯

0
682

#তপ্ত_সরোবরে
#তেজস্মিতা_মর্তুজা

৮.

দ্বিজা বাড়িতে একা। সে গতকাল চলে এসেছে ও বাড়ি থেকে। ভালো লাগছিল না ওখানে থাকতে। দম বন্ধকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। ফারজাদের বাড়ি, ফারজাদের রুম, ও বাড়ির আনাচে-কানাচে ছড়ানো-ছিটানো ফারজাদের স্মৃতি। সারারাত ঘুম না হওয়ার ফলে চেহারায় একটা অসুস্থতার ছাপ পড়েছে। ওভাবেই দিলরুবা বেগমের কাছে গিয়ে বলেছে, “আম্মু আমার কিছু পোশাক আনতে হবে বাড়ি থেকে।ʼʼ

দিলরুবা বেগম না করেছেন, “কাউকে দিয়ে আনিয়ে নেওয়া যাবে। তোর বাড়িতে যাইতে হবে না।ʼʼ

দ্বিজা জিদ করেছে, তার বাড়িতে যাওয়া জরুরী। শেষ অবধি সুন্দর একটা গ্রহনযোগ্য মিথ্যা বলেছে, সে এ বেলা যাবে, বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসবে। তারপর এসে একটা দিন কেটে গেছে মাঝখানে, সে তার পরিকল্পনা আনুযায়ী রয়ে গেছে বাড়িতেই। সকাল থেকে কিছু খাওয়াও হয়নি। দাদি রান্না করে খাবার দিয়ে গেছে ঘরে, খেতে বলে গেছে বহুবার। তাকেও ঝাড়ি মেরে ঘর থেকে যেতে বলেছে দ্বিজা। মোটকথা, খাওয়ার মানিসকতা বা খিদেটাই নেই।

নিজের ছোট্ট ঘরটার বিছানার পাশে জানালার ধারে বসে আছে চুপটি করে। চাইলেও ভুলতে পারছে না সেদিনের বলা ফারজাদের কথাগুলো। ছোটোবেলা থেকেই ফারজাদের প্রতি আলাদা একটা টান কাজ করলেও সে কখনও সেটাকে আহামরি গুরুত্ব দিয়েছিল না। তবে বয়স বেড়েছে, মনের চাহিদা এসেছে, দিন দিন আবেগ-আনুভূতি গুলো পাল্টাচ্ছে। সেই হিসেবে মাসকয়েক ধরে কেন জানি ফারজাদকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে, ফারজাদকে চোখের সামনে দেখতে ইচ্ছে করে, তার সামনে নিজেকে আকর্ষনীয়ভাবে প্রকাশ করার সুপ্ত ইচ্ছেরা উড়ে বেড়ায় মনে। তবুও এগুলোকে সে মোটেই ভালোবাসা বলতে চায়নি। তবে সেদিন নিজের ভাবনা বদলেছিল তার, যেদিন লাবন্যর চোখে ফারজাদের জন্য অনুরাগ দেখে তার বুকে আগুন লেগেছিল। এক নজরে মুখের হাসি, বুকের প্রফুল্লতা যেন জলন্ত আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

দ্বিজার লাবন্যকে সহ্য হয়নি সেদিন। হঠাৎ-ই মনে হয়েছিল লাবন্যর চোখদুটো নষ্ট হয়ে যাক, যেন ফারজাদকে সে আর প্রেমময় নজরে দেখতে না পারে। সে নিজেও অবাক হয়েছিল নিজের এমন হিংসাত্মক ভাবনায়। সেদিন আর সাজসজ্জা, আনন্দ কোনটাই ভালো লাগেনি। সেদিঅন সকালে ফারজাদের সঙ্গে হাঁটার সময় মনে হয়েছে—এই পথ শেষ না হোক, ফারজাদ ওর ছোট্ট হাতটা চেপে ধরুক, এ জীবনে আর না ছাড়ুক। ফারজাদের সঙ্গে সে একটা জনম এভাবেই চলতে চায়। সেই যাত্রা শেষ করতে মন সায় দেয়নি।
অথচ সে নিজের আনুভূতিটাকে সঠিক নামকরণ করার আগেই ওই নির্দয় পুরুষ তার আনুভূতিকে ছিন্নভিন্ন করে রেখে চলে গেছে। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে ফারজাদের প্রতি ঘৃণার আনুভূতি আসছে না। দ্বিজা বুঝে পায়না, মন-মস্তিষ্ক এত বেহায়া কেন? মানসিক চাহিদাগুলো এমন বেলেহাজ কেন?

একটু মলিন হাসল দ্বিজা। কত আশা, স্বপ্ন ছিল তার লাবন্যর বিয়ে নিয়ে। সেদিন লাবন্যর ওপর খুব ইর্ষা হলেও আজ আর তা নেই। মেয়েটা আসলেই ভালোবাসার যোগ্য, অথচ ফারজাদের মতো পাষাণ্ড পুরুষেরই হয়ত যোগ্যতা নেই ওমন একটা মেয়েকে পাওয়ার। তার মনটা আরও অশান্ত হয়ে উঠছে এটা ভেবে—সে কী করে লাবন্যর বিয়েতে না যাওয়ার ব্যাবস্থা করবে? এমন কী আজুহাত দিলে আর ওই বাড়িতে যেতে হবে না, ফারজাদের সামনে যেতে হবে না? এক বাহানা করে চলে তো এসেছে সেখান থেকে, কিন্তু আজকালের মধ্যে না ফিরলে তামাশা হয়ে যাবে। ওই বাড়ির সাথে ছোটোবেলা থেকে রুহু জুরে আছে দ্বিজার। সেই দ্বিজা লাবন্যর বিয়েতে যাবে না, এর পরিপেক্ষিতে কী জবাব দেবে দ্বিজা?


দ্বিজাকে বহুবার ফোন করা হয়েছে। অথচ সে ফোন রিসিভ করে বিভিন্ন বাহানা দেয় পরে আসার। দিলরুবা বেগম ক্ষেপে আছেন প্রচণ্ড। এদিকে দ্বিজার গলা শুকিয়ে আসছে এটা ভেবে, খুব তাড়াতাড়ি একটা সন্দেহে পতিত হবে সে। নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে, নয়ত যে মেয়েকে দিলরুবা গালিগালাজ করে মামার বাড়ি থেকে নিতে পারেন না। সেই মেয়ে অনুষ্ঠান রেখে বাড়িতে গিয়ে একা রয়েছে?

বুধবার সন্ধ্যার পর ফারজাদ বাড়ি ফিরল। তখনও দ্বিজার ব্যাপারেই কথা চলছিল। সে বলেছে, তার জ্বর এসেছে হালকা। একটু শরীরটা ভালো লাগলেই চলে আসবে। এরপর আবার বলেছে দাদিকে সঙ্গে নিয়ে একেবারে আসবে। নিকট-আত্মীয়রা আসা শুরু করেছে বাড়িতে। বাজারের লিস্ট তৈরী ও লাবন্যর সঙ্গে দেওয়ার জন্য কেনা কিছু সামগ্রী ঠিকঠাক করে রেখে ফারজাদ খেতে বসল। খাওয়া শেষ করে রুমে যেতে যেতে ইশার আজান পড়ে যায়। গোয়ালে গরু আছে বেশ কয়েকটা, তবে সেগুলোর মধ্যে একটাও অনুষ্ঠানের মাংসের জন্য জবাই করবেন না আজদ সাহেব। কাল সকাল সকাল গরু কিনতে যাবেন, সে কথা জানিয়ে দিলেন ফারজাদকে।

আজাদ সাহেব ইশার নামাজে চলে গেলে ফারজাদ বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। দ্বিজাদের বাড়িটা আর সব চাচার বাড়িগুলো থেকে আলাদা। এবং ওদের সঙ্গে ওদের দাদি থাকে। ফারজাদ গিয়ে গেইট ঝাঁকালে দ্বিজার দাদি এসে খুলে দিলো গেইটটা। মরিয়ম বেগম বেশ খাতির করলেন ফারজাদের। ফারজাদ সে-সব কোনমতো কাটিয়ে দ্বিজার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল।

ছাদের এক-কোণে অন্ধকারচ্ছন্ন কুয়াশার ভেতরে গায়ে চাদর জড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দ্বিজা। মনে বিক্ষোভ চলছে তার। পরিবেশের বিপুল ঠাণ্ডা যেন স্পর্শ করতে পারছে না তাকে। আন্ধকারের মাঝে একা এই রাতে ছাদে দাড়িয়ে থাকতে এমনি সময় ভয় পাওয়ার কথা থাকলেও মনের অবস্থার কাছে সব ভয় ফিকে হয়ে গেছে যেন।তবুও হঠাৎ-ই ভারী কণ্ঠস্বর শুনে একটু চমকে উঠল দ্বিজা,

“কী হয়েছে তোর?ʼʼ

দ্বিজার একটু অবাক হলো, সঙ্গে মনের ভেতরে চাপা ক্ষোভ জেগে উঠল ফারজাদের প্রতি। কোন জবাব দিলো না সে। ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। ফারজাদ পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল, “জ্বর আসলে মানুষের ঠাণ্ডা লাগে, গরমের দিনেও লেপ-কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকে। তোর ঠিক কী ধরণের জ্বর এসেছে, ঠাণ্ডার মধ্যে ছাদে এসে দাঁড়িয়ে থাকা লাগছে?ʼʼ

দ্বিজা এবারেও উত্তর দিলো না কোন। ফারজাদের রাগ হলো, কিছুক্ষণ চুপ রইল নিজেও। এরপর বলল, “চল, ও বাড়িতে তোকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে, সেটা কোন তামাশার পর্যায়ে চলে যাওয়ার আগে ভালোভাবে আমার সঙ্গে চল।ʼʼ

এতক্ষণে দ্বিজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল কেবল। তার বুক ভেঙে আসছে হঠাৎ-ই। কেন এমন হচ্ছে? ফারজাদকে পাশে পেয়ে? আচমকা মনে এক অদ্ভুত ইচ্ছে জেগে উঠল তার—ফারজাদের বুকে আছড়ে পড়ে শক্ত করে জড়িয়ে করে বলতে ইচ্ছে করল, আমার এত কষ্ট কেন হচ্ছে, ফারজাদ? এরকম গুমোট ব্যথা আগে কখনও অনুভূত হয়নি। নিজেকে এত অসহায় লাগছে কেন? আমার কী হয়েছে, বলতে পারবেন? কেন খুব মূল্যবান কাছের জিনিস হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা হচ্ছে? এত কষ্ট হচ্ছে কেন, আমার? মাঝেমধ্যে এই ব্যথাগুলো অসহ্য লাগছে, আপনি নাকি বুদ্ধিমান, তো বলুন না কেন হচ্ছে এমন আমার সাথে?

এতটুকু ভেবে নিজের অজান্তেই এই ফোঁটা নোনাজল চোয়াল লেপ্টে গড়িয়ে পড়ল মেয়েটার। এই নিঃশব্দ কান্নারা খুব নিষ্ঠুর হয়, একদম ভেতরটা ক্ষয় করে বিনা আওয়াজে গড়িয়ে পড়ে চোখ বেয়ে। অন্ধকারে হয়ত দেখতে পেল না এই অষ্টাদশীর কান্না ভেজা কাতর মুখটা অনুভূতিহীন ফারজাদ। হঠাৎ-ই ফারজাদ বলতে শুরু করল,

“মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড়ো শত্রু হলো তারই নিজের চাওয়াগুলো। অথচ মানুষ সেগুলোই খুব যত্ন করে, নিজের ভেতরে পালন করে। যতদিন মানুষ চায়, সেই চাওয়ার ব্যাপারে কোন ভুল বা অপরাধ তার নজরে আসে না। দ্বিজা, তোর বয়স ছোটো, এ বয়সে স্বাভাবিকই মানুষ ভুলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আর তোর জীবনের সেই ভুলটা আমি। ভুলগুলোকে প্রশ্রয় দিতে নেই। যত বেশি পুষবি, তা পরবর্তীতে তত খারাপ পরিণতি হয়ে জীবনে ফিরে আসবে। পড়ালেখায় মনোযোগ দে। তোর আব্বু খুব একটা ভালো মানুষ না। হতে পারে সে এসেই তোর বিয়ের ব্যাবস্থা করে ফেলল।ʼʼ

দ্বিজা ঠোঁট কাঁমড়ে চুপচাপ শুনছে কথাগুলো। ফারজাদ আবার বলল,

“দ্বিজা, আমি ফেরারি। আমার কোন ঠিকানা নেই, মনের দিক থেকে যাযাবর আমি। পরিবার আত্মীয়র প্রতি অগাধ টান থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনে কোন নারীর প্রতি টান অনুভব করতে পারি না আমি। তোর এই ভালো লাগাটা ক্ষণিকের। কলেজ পার কর, ভার্সিটিতে যা, এই জায়গা থেকে নিজেকে মুক্ত কর, নতুন পরিবেশে পা রাখ; দেখবি এখনকার সব বোকামি ঘৃণ্য লাগবে। সব কেটে যাবে। মানুষ এক স্থানে পড়ে থাকে না চিরকাল। তুইও তোর এই আবেগী জায়গায় পড়ে থাকবি না। এই সময়ের ভালোলাগা গুলো কিছুটা সময় দিলেই কেটে যায়। তোরও যাবে। আমি ছাড়া তেমন কাউকে কাছ থেকে দেখার বা মেশার সুযোগ পাসি নি তাই মনে হচ্ছে আমার মাঝে আটকে আছিস।ʼʼ

এ পর্যায়ে ফারজাদ তাচ্ছিল্য হাসল, “আমার প্রেমে পড়া যায় না, আমি নিজে নিজেকে ঘৃণা করি। আমার পছন্দ না আমিটাকে। কারণ আমি তোর জায়গা পেরিয়ে এসেছি। তোর বয়সি মেয়েরা আমার মতো ছেলেদের প্রেমে পড়ে, তোর বয়স কাটিয়ে ওঠা মেয়েরা আমাদের ঘৃণা করে। এই পার্থক্যটা তুইও বুঝবি, কিছুদিন সময় দে নিজেকে। কোন ম্যাচিউরড মেয়েকে আমার মতো এমন হৃদয়হীন, কসাইকে ডেট করতে বল, তারা ফিরেও তাকাবে না। কারণ, তারা জীবনের মানে বোঝে। জীবনে এমন একজনকে সবটুকু দিয়ে ধরে রাখতে হয়, যে যত্নশীল হবে, সবসময় পাশে থাকবে। নিজেকে সময় দে, অনুভূতির পার্থক্য বুঝতে পারবি।ʼʼ

ফারজাদের কণ্ঠস্বর শান্ত স্বাভাবিক। দ্বিজার কেন জানি মনে হলো, এসবের পুরোটা সত্যি না। সব ক্ষেত্রে এই কথাগুলো শতভাগ খাটে না। ফারজাদ ওকে এসব কাটিয়ে ওঠার জন্য উলাটোপাল্টা বুঝ দিচ্ছে। ফারজাদের শরীর থেকে কড়া ম্যান পারফিউমের গন্ধ ভেসে আসছে। দ্বিজার শরীরটা আচমকা ঝাঁকি দিয়ে উঠল একটু। ফারজাদ তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, তারা দুজনে, কেবল তারা দুজন কুয়াশা ঢাকা রাতে ছাদের এক-কোণে পাশাপাশি বেশ কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে।

ফারজাদের এতক্ষণের বক্তৃতার সবটা কান দিয়ে পিচ্ছিল পদার্থের মতো বেরিয়ে গিয়ে, এই ভাবনাগুলো জড়ো হলো মনে। তবে সে চোখ-মুখে এক প্রকার কঠিন অভিমানি ভাব বজায় রেখছে। তার হঠাৎ-ই মনে হলো, খুব সহজ হবে না ফারজাদের প্রতি এই টান কাটিয়ে ওঠা। তবে নিজের আত্নসম্মান তো বজায় রাখাই যায়। তার অনুভূতি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। চাইলেও যেহেতু আপাতত কাটানো সম্ভব না। না চাইতেও এই নিষ্ঠুর মানবকে মনে মনে পুষতে হবে। তবে তা আর প্রকাশিত হবে না, দেখাবে না লোকে, বোঝাবে না দ্বিজা কাউকে, নিজের আত্মসম্মানকে বিক্রি করবে না এই বেহায়া অনুভূতির কাছে।

চলবে..

#তপ্ত_সরোবরে
#তেজস্মিতা_মর্তুজা

৯.

সকাল থেকে ফারজাদ ব্যস্ত। দৌড়াদৌড়ির মাঝে সকালের খাওয়াটা হয়ে ওঠেনি তার। বেলা এগারোটা বেজে গেছে। ডেকোরেটরের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ফারজাদ সেদিকেই তদারকি করছে। বাঁশ, খুঁটি কোথায় কোনটা গাঁড়বে, কয়টা টেবিল বসবে এসবের জন্য ছোটাছূটি তার ভালোই করতে হচ্ছে। লাবন্যকে বসিয়ে রাখা হয়েছে উঠানের একপাশে চেয়ার পেতে। ভাবীরা ঘিরে ধরে মেয়েটার নখ কেটে দিচ্ছে, তো কেউ পাশেই বসে হলুদ ও মেহেদী পাতা বাটছে। ফারিন ও ফিরোজা বরপক্ষের লোকদের জন্য বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরী করতে বসেছে চুলোয়। ভেতরে সিলিন্ডার গ্যাসে আরও সব রান্না বসানো হয়েছে।
হাসি-আমেজে পূর্ণ আশপাশের মাঝে সজল চোখে তাকিয়ে আছে লাবন্য ফারজাদের দিকে। না না, তার আফসোস নেই! সে আর ফারজাদকে চায় না, তবে কোথাও যেন ছিঁড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা হচ্ছে তার ভেতরে। মায়ার বাঁধন ছেঁড়ার যন্ত্রণা বুঝি! এতদিন যে পুরুষটাকে যতনে নিভৃতে বুকে পুষে রেখেছিল মেয়েটা, সেই পুরুষটিকে চিরতরে মুক্ত করে দেওয়ার সময় বুঝি ঘনিয়ে এলো। কোন পাখিকে খাঁচায় বন্দি করে রেখে তাকে রোজ দানা-পানি খাওয়াতে খাওয়াতে যে অভ্যাস, মায়া, টানটা জন্মে, সেই পাখিটি খাঁচা ভেঙে পালালে বা কোন কারণে তাকে নিজ হাতে খাঁচা ভেঙে মুক্ত করলে যে সূঁচাল ব্যথারা আন্দোলনে লিপ্ত হয়, আজ লাবন্যর তাই-ই হচ্ছে। আজকের পর থেকে আর কোনদিন এই পুরুষটির দিকে মনের নরম টানে তাকানো হবে না, আর কখনও তাকে পাওয়ার অভিলাষ করা হবে না, আর কোনদিনই তাকে একদিন চেয়েছিলাম—এ কথা স্বীকার করার সুযোগ থাকবে না। মনের গহীনে দাফন হয়ে যাবে এই ব্যর্থ চাহিদাটুকু।

ভেবে বুকটা হাহাকার করে উঠল—যেন মরুভূমির মাঝখানে দাঁড়িয়ে পানির অভাবে প্রাণটা বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে কোন বেদূইনের যেমন জীবনের প্রতি একটা মায়া অনুভব হয়। মনে হয়, আজ একটু পানি পেলে হয়ত বেঁচে যেতাম, আর কিছুদূর হাঁটতে পারতাম এই তপ্ত মরুতে। উহু, তপ্ত– তবে মরু নয়। এ যে প্রেমের মতো প্রবাহমান অনুভূতি, তাই এটা সমুদ্র-সরোবর। এ হলো— তপ্ত সরোবর!

অথচ লাবন্য চায়না আর। এই পুরুষটিকে আর চায়না। সে ভাগ্যে বিশ্বাসী, তার জন্য ভালো কিছু আছে। সে এই অনুভূতিটাকে ভালোবাসা বলতে চায়না। চোখ ফিরিয়ে নিলো। হাতের মেহেদী শুকিয়ে গেছে প্রায়। সেদিকে তাকিয়ে রইল ক্ষণকাল। দু’হাত ভর্তি মেহেদী, বেশ কয়েক ঘন্টা বসে থেকে একঘেয়েমি লেগে গেছে, তবুও কিছু করার নেই। কয়েকটা দিন এভাবেই বিরক্তিকর পরিবেশে কেটে যাবে। মূর্তির মতো বোঝাই বোঝাই কাপড়-চোপড়, গয়না, সাজ শরীরে ঝুলিয়ে বসে থাকতে হবে।

সে চারদিকে তাকিয়ে দ্বিজাকে খুঁজল। মেয়েটার অভিমান খুব প্রকাশ্য! লাবন্য হাসল মনে মনে। পাগলি মেয়ে, বয়সটা এখনও পরিণত হয়নি। নিজেকে সামলে নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব পাগলিটার! নিপাকে ডেকে বলল, দ্বিজাকে ডেকে আনতে। নিপা ঘুরে এসে বলল, দ্বিজা আপু তোমার ঘরের বারান্দায় বসে মেহেদী লাগাচ্ছে হাতে। লাবন্য বুঝতে পারে, যাতে কেউ বিশেষ করে দিলরুবা ফুফু সন্দেহ না করতে পারে, তাই এই প্রচেষ্টা মেয়েটার। ফারিন বলে উঠল, “সকলে এইখানে মেহেদী লাগাইতেছে, মেডাম একা একা ভাব ধরছে ক্যান? যা যাইয়া বল, আমি ডাকতেছি। না আসলে কান ধরে টেনে নিয়ে আসব।ʼʼ

কিছুক্ষণ পর দ্বিজা এলো। মুখে তার কৃত্রিম হাসি ঝুলে আছে। যা লাবন্য ছাড়া সকলকে ধোঁকা দিতে কার্যকরী।
ফারজাদকে বাগান থেকে ধরে-বেঁধে টেনে নিয়ে এলেন আজাদ সাহেব, খিস্তি ঝারছেন বিনা থেমে—দামড়া ছেলে, সকাল থেকে না খেয়ে লেগেছে কাজে। এত বড়ো ব্যাটাছেলের পিছনে খাবার নিয়ে দৌঁড়ানো সাজে এখনও?

ফারজাদ বিরক্তিতে চোখ-মুখ জড়িয়ে আছে। আজাদ সাহেব একটা চেয়ারে জোর করে বসিয়ে এক লোকমা খিচুড়ি মুখে তুলে দিলেন। দৃশ্যটি উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে। বাবা-ছেলের আত্মিক সম্পর্ক বোধহয় একেই বলে। বয়স এখানে আসলেই কেবল সংখ্যা। বাপ-মায়ের কাছে আবার সন্তান বড়ো হয় নাকি! সারাদিন এই ফারজাদ সকলের সাথে খিটখিট করবে, বিশেষ করে বাপ-মায়ের সাথে। দিনশেষে বাপ-মা যেমন এই গোমরামুখোতে বেজায় দুর্বল, তেমন ফারজাদের ক্ষমতা নেই এই দুটো মানুষকে এড়িয়ে চলার। ফারহানা বেগম ভেতর বেরিয়ে এসে দেখলেন আজাদ সাহেব শুকনো খিচুড়ি খাওয়াচ্ছে ফারজাদকে। সে খাবার মুখে নিয়ে কোলের ওপর খাতা রেখে কিসের হিসেব কষতে বসেছে। দই ও সফ্ট-ড্রিংকস আনা হয়নি এখনও। ফারহানা বেগম বাবুর্চিদের কাছ থেকে কয়েক পিছ কষা মাংস এনে প্লেটে দিলেন। ফারিন চেঁচিয়ে ওঠে,

“আম্মা! এইটাকেই বলে সন্তান বৈষম্য। আপনাদের কোন বিবেক আছে নাকি? ওই হারামজাদা করছেটা কী সকাল থেকে। আমি এই-যে চুলার পাশে বসে বড়া ভাজার সাথে সাথে নিজেও ভাজা হয়ে যাচ্ছি, কই আমি তো এরকম খিচুড়ি-মাংস অফার পাইলাম না। আসলে এইদেশ থেকে ছেলে-মেয়ের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ কোনদিন যাবে না।ʼʼ

শেষের কথাটা ফারিনের ন্যাকা আর ঢঙ্গি কান্নার মতো শোনাল। তাতে উঠোনে উপস্থিত সকলে হো হো করে হেসে উঠল। ফারজাদ-ফারিন পিঠাপিঠি হওয়ায় এদের দুজনের কোনদিন বনিবনা হয়না। ফারজাদ হঠাৎ-ই তার বিরল হাসিটা ঠোঁটে চেপে ভাব নেওয়ার ভঙ্গিতে কলার উচিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে বসল আরেকটু। তাতে সকলে আরও খানিকটা হেসে উঠল ফারিনের ওপর। ফারিন মুখ ফোলাতে গিয়ে নিজেও হেসে ওঠে ফিক করে।


বরপক্ষের খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। লাবন্যর সাজও শেষ, শড়িটা পরানো হচ্ছে তাকে। দ্বিজা চুপচাপ বসে আছে লাবন্যর পাশেই। তার পাশে ইরফানের বোন ইমা সব স্বর্নের গয়না ও ও বাড়ি থেকে আসা জিনিস বুঝিয়ে দিচ্ছে। ঘরে উপস্থিত সকলে আনবরত ঠাট্টা-তামাশা করছে, তাতে দ্বিজা তার বানোয়াট হাসিটা হাসছে মুহুর্তখানেকের জন্য। এরপর আনমনে উদাসী চোখে চেয়ে আছে লাবন্যর দিকে। শাড়ি পরানো শেষ হলে লাবন্যর মাথায় ঘোমটা লাগানোর মাধ্যমে তার প্রস্তুতি শেষ হলো। কিছুক্ষণ বাদের ভিড় কমিয়ে ঘরে ঢুকলেন কাজী সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে আজাদ সাহেব, লাবন্যর বাবা, ফারজাদ, দিলরুবা, আফসানা বেগম আমিনা বেগম সহ বাড়ির অভিভাবকেরা সকলেই। ফারজাদের গায়ে সাদা টিশার্ট। ছেলেটা সারাদিন গোসল করারও ফুরসত পায়নি। গলায় ঝুলছে লাল গামছা। তা দিয়ে ক্লান্ত মুখটা মুছে নিলো। লাবন্য কয়েক মুহুর্তের জন্য চোখ তুলে তাকায় ফারজাদের দিকে। হঠাৎ-ই মনে হলো, শেষবারের মতো দেখছে ফারজাদকে সে। আসলেই তো! কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য পুরুষের হালাল স্বীকৃত স্ত্রী হয়ে যাবে। তারপর কি আর কোনদিন ফারজাদের দিকে প্রেমময় নজরে তাকানোর বৈধতা থাকবে?

লাবন্য দ্রুত চোখটা নামিয়ে নেয়। চোখ ভরে উঠেছে, লোকে দেখে ফেলার ভয়! আজ সে এ বাড়ি থেকে তিন কথায় পর হয়ে যাবে। আর সকালে উঠে বড়ো মার হাতের এক কাপ চা আর দুটো টোস্ট বিস্কুট খাওয়া হবে না। বিকেলে বড়ো আব্বার সঙ্গে পুকুর পাড়ে মাছের খাবার দিতে যাওয়া হবে না। ফারজাদের রুমটা সকাল সকাল উঠে গুছিয়ে রাখতে যাওয়া হবে না। আজ থেকে নতুন বাড়ি, নতুন সম্পর্ক, নতুন জীবনযাপন! এ বাড়ির অতিথি হতে আজ তাকে কবুল বলতে হবে। আফছানা বেগম ডুকরে কেঁদে উঠলেন। সকলের চোখের কোণই সজল জলে চিকচিক করে উঠেছে। লাবন্য তো জোরে কাঁদতে পারে না। মেয়েটা মোটেই চিৎকার করে ব্যথা প্রকাশ করতে জানে না। আজও কেবল ঝরনার মতোন জল গড়িয়ে পড়ল চোখ বেয়ে।

দ্বিজার চোখে পানি, তা লুকোতে সে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। হঠাৎ-ই চোখ পড়ল ভিড়ের এককোণে একটা ছেলে একদৃষ্টে চেয়ে আছে দ্বিজার দিকে। চট করে মস্তিষ্ক ধরে ফেলল এটা ওয়াহিদ না? দ্বিজা এলোমেলো দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।

মেয়েদের জীবনটা বোধহয় এমনই। এর থেকে ওর হাতে স্থানান্তর হতে হতেই ফুরিয়ে যায়। আজ বাবার হাত থেকে স্বামীর হাতে যাচ্ছে! ঘরটা একটু ফাঁকা হয়ে গিল কাজী সাহেব বিয়ে পড়িয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর। দ্বিজাও হঠাৎ-ই উঠে চলে গেল সেখান থেকে। দু-একজন মুরুব্বী ও ছোটো ছেলে-মেয়েরা বসে আছে। অন্য সকলে আসছে যাচ্ছে। ফারজাদ বের হলো না। লাবন্যকে বিষ্মিত করে পাশে এসে বসল আস্তে করে। লাবন্য তাকায় না, নিজের বাঁ হাতের স্বর্নের মোটা বালার দিকে তাকিয়ে আছে, যেটা ইরফানের বাড়ি থেকে দেওয়া হয়েছে। ফারজাদ হঠাৎ-ই বলে ওঠে,
“সুন্দর লাগছে তোকে দেখতে বউ সেজে।ʼʼ

বুকের রক্ত ছলকে দেওয়া কথাখানি! লাবন্য দম আটকে যায় এখানেই। কয়েক মুহুর্ত পরে দম ছাড়ল। তবে চোখ তুলে তাকাল না সে ফারজাদের দিকে। পারবে না ও।

“কষ্ট পেয়েছিস আমার থেকে? বোকার মতো প্রশ্ন করছি তাই না? তোরা অন্যকিছু আশা রাখিস কেন? আমি তো কষ্ট ছাড়া কিছু দেওয়ার সামর্থ রাখি না। সৃষ্টিকর্তা মানুষের কাছ থেকে এমন বহু জিনিস কেড়ে নেয়, যা তাৎক্ষণিক খারাপ লাগলেও, পরে বোঝা যায়–এটাতে মঙ্গল ছিল। এর বদলে উত্তর কিছু দিয়েছেন রব। ইরফান তোর জীবনে সেই মঙ্গল। যেটা তুই আমার মতো ফালতু লোকের পরিবর্তে পেয়েছিস। ইরফান ভালো, তুই কিছুদিন ওর সঙ্গে থাকলে বুঝতে পারবি আমার আর ওর পার্থক্যটা।ʼʼ

হঠাৎ-ই ফারজাদ একটু মলিন হাসল। তাকে দেখতে আর পাঁচটা মানুষের মতো আবেগী লাগল এক মুহুর্তের জন্য। হেসে বলল, “আজ থেকে এ বাড়ির জ্ঞানী মেয়েটাকে হারিয়ে ফেললাম। যার সঙ্গে বেশ ভালোই কথা জমতো আমার।ʼʼ

এ পর্যায়ে ঠোঁটটা ভেঙে এলো লাবন্যর। নিয়ন্ত্রণ থাকছে না নিজের প্রতি। এ প্রেমের নয়, এই ব্যথা বুঝি মায়ার। চাচাতো ভাই নামক এই মুখোশধারী, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন পুরুষটির প্রতি ছোটোবেলা থেকে জমে থাকা মায়ার বিচ্ছেদের ব্যথা। ফারজাদ আবার বলে, “ভালো থাকবি তুই, লাবন্য। আমার কামনা রইল। যেটুকু কষ্ট পেয়েছিস আমায় ঘিরে, তার কারণ যতটুকু আমি, হিসেব করে ততটুকু ক্ষমা করে দিস। আমি তোদের সকলকে অনেক ভালোবাসি বোধহয়। কিন্তু ওই-যে, আমার স্বভাব!ʼʼ

আচমকা লাবন্য ফারজাদের বাঁ-হাতটা চেপে ধরল। ফারজাদ ছাড়ালো না, কোন প্রতিক্রিয়া দেখাল না। লাবন্যর চোখের কাজল লেপ্টে ছড়িয়ে গেছে চোখের চারপাশে। ফুপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা। ফারজাদ মৃদুহাস্য নজরে তাকায় সেদিকে। লাবন্যকে বোধহয় প্রথম কাঁদতে দেখা গেল, আর তা দেখল ফারজাদ। এদের সম্পর্কটাই এমন। দুজনেই চাপা স্বভাবের, এজন্য এ দুজন দুজনের কাছে খোলা বইয়ের মতো ছিল। লাবন্য কান্না মেশা স্বরে বলে,

“এসব কেন বলছেন, ফারজাদ ভাই! লাবন্যর সাধ্যি কোথায় ফারজাদকে অপরাধে বাধিয়ে রাখে। ফারজাদের অপরাধগুলো ধরা গেলে লাবন্য তার প্রেমে পড়ত নাকি কোনকালে? আপনাকে আমি জানি, আর কেউ না বুঝুক আমি চিনি। আপনার আমার সম্পর্কের নাম নেই, এ এক আজব নীরব বন্ধন, যার কোন পরিণতি নেই। পরিণতি এলে এ সম্পর্ক শেষ হয়ে যেত সেদিনই। পরিণতি হবে না, বিধায় চিরদিন আমি-আপনি বেধে থাকব এই নাম না থাকা রহস্য সম্পর্কে। আমি নিজেও মাঝেমধ্যে বুঝি আপনার ওপর আমার এই অনুভূতি প্রেম বা ভালোবাসা নয়, এ হলো একে-অপরকে বোঝা ও জানার মায়া। শুধুই অদমনীয় মায়া!ʼʼ


বাড়িটা শোকে ছেয়ে গেছে যেন। মেয়ের বিয়েতে মেয়ে বিদায়ের পর এ এক পরিচিত দৃশ্য বটে। বাড়ির লক্ষী বাড়ির বাইরে কদম রাখে সকলকে শূন্যতার হাহাকারে ডুবিয়ে। আফছানা বেগম যতটুকু কাহিল হয়ে পড়েছেন, ফারহানা কম নয়। বাড়িটা নিশ্চুপ, বাইরে কুয়াশায় ঢাকা। পুরুষেরা কাজবাজ সামলে। বাকি কাজ লোকের হাতে সঁপে এসে বিছানায় গা এলিয়েছে।

ফারজাদ সেই সকালে খিচুড়ি খেয়েছিল, এরপর সারাদিন গোসল নেই, আরাম নেই, একনাগারে চারদিক সামলেছে। সারা শরীরে ধুলোবালি, খাবারের দাগ সঙ্গে ক্লান্তি। রাত আটটার দিকে গোসল করে এসে খেতে বসল। ফিরোজা ফারজাদকে খেতে দিয়ে নিজেও খেতে বসে গেল পাশে। টুকটাক আলোচনা হলো, আগামীকাল ও বাড়ি যাওয়া নিয়ে।

ফারজাদের রুমে যেতে লাবন্যর রুমটা পার করতে হয়। ফারজাদ একবার তাকাল আজ রুমটার দিকে। এ ঘর জুরে থাকা মেয়েটা আজ অন্যের ঘরের ঘরনী হয়ে গেছে। হঠাৎ-ই নজরে এলো রুমের বারান্দায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে গ্রিল ধরে। দ্বিজা! ফারজাদ ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে যায়। একটা লম্বা ঘুম দরকার। যা কাজ বাকি আছে পরে রাতে দেখা যাবে।

চলবে..

[ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করবেন]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে