তপ্ত সরোবরে পর্ব-১৫+১৬+১৭

0
724

#তপ্ত_সরোবরে
#তেজস্মিতা_মর্তুজা

১৫.

তিনমাসে একটা অদ্ভুত সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ইরফান আর লাবন্যর। এর কৃতিত্বটুকু বোধহয় ইরফান লোকটারই! লাবন্য মাঝেমধ্যেই ভাবতে লেগে যায়–পুরুষ তাহলে এতটাও মুক্তমনের হয়! সে বড়ো হওয়ার পর থেকে শুধু ফারজাদকে দেখেছিল, ফারজাদকে পুষে রেখেছিল ভেতরে, যে কারণে আর কাউকে পরখ করে দেখার অবকাশটুকু মেলেনি। আজ লাবন্য ভাবে–ফারজাদ পুরোটা ভুল বলেনি–মানুষের উচিত নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে আরেকবার নিজেকে সুযোগ দেয়া। সে সেদিন ফারজাদকে ত্যাগ করেছে এটার আক্ষেপ মাঝেমধ্যে হয়, তবে বেশিক্ষণ আর স্থায়ী হতে পারে না আজকাল। আর তার দায়টুকুও ইরফানেরই। লাবন্য একটা বন্ধু পেয়েছে, অমায়িক সুন্দর সেই বন্ধুর ব্যক্তিত্ব।

রাত দশটার দিকে বাড়ি ফিরল ইরফান। লাবন্য বিকেলে ছাদ থেকে তুলে আনা কাপড়গুলো ভাজ করতে বসেছে। ইরফান ক্লান্ত শরীরে এসে দাঁড়াল লাবন্যর পাশে। লাবন্য ঘাঁড় ফিরিয়ে ওকে দেখে হালকা হেসে বলল, “বেশ ভালোই গরম পড়তে শুরু করেছে, আজ বেশি দেরী করলে যে ফিরতে!ʼʼ

ইরফান ক্লান্ত মুখেই দুষ্টু হাসে, “ডেটিংয়ে গেছিলাম বহুদিন পর, তোমাকে নিয়ে যে রেস্টুরেন্টে দেখা করেছিলাম, সেখানেই গেছিলাম।ʼʼ

লাবন্য ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ইরফান মুখ চেপে হাসছে। লাবন্য বিভ্রান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। ইরফান গায়ের শার্ট খুলতে শুরু করল, লাবন্য বলল, “কার সঙ্গে গেছিলেন?ʼʼ

“গেছিলাম এক সুন্দরীর সাথে। কী করব বলো? বউ থাকতেও ব্যাচেলর, এমন জীবন পায় ক’জন। আর তাছাড়াও আমার বউ মানে তুমি তো জেলাস ফিল করো না। আমার মতো সুখী বিবাহিত ব্যাচেলর রূপকথার রাজ্যেও পাওয়া যাবে না।ʼʼ

লাবন্য কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা ভুলে গেল। কয়েক সেকেন্ড পর হঠাৎ-ই মুচকি হেসে ফেলল, “আচ্ছা! তো আমি জেলাস ফিল করলে আপনি মেয়েবাজি ছেড়ে দেবেন?ʼʼ

দুজন দুজনের চোখে তাকিয়ে নিঃশব্দ অথচ প্রানখোলা মিষ্টি হাসিতে লুটিয়ে পড়ে। চট করে হাসি থামায় ইরফান, বলে ওঠে, “ওয়েট, ওয়েট, ওয়েট! ইনডিরেক্টলি, না না ডিরেক্টলিই তুমি আমাকে মেয়েবাজ বললে? বউ হয়ে পারলে এ কথা বলতে?ʼʼ

লাবন্য হাসি চেপে কাপড় গোছাতে মনোযোগী হবার ভান করল। ওভাবেই বলল, “ পারা উচিত না? স্বামী হয়ে অন্য মেয়ের সাথে ডেটিংয়ে যাওয়া যায়, আর না তা আবার গলাবাজি করে বলে বেড়ানো যায়।ʼʼ

লাবন্যর কথায় ইরফান হাসল একগাল। সতর্ক দৃষ্টিতে তাকানোর ভঙ্গিতে বলল, “উহুহু, পোড়া পোড়া গন্ধ বেরিয়েছে, চুলায় কিছু দিয়েছ নাকি?ʼʼ

লাবন্য কপট গোমরা মুখে তাকায়। ইরফান তা দেখে মাথা নেড়ে বলল, “প্লিজ লাবু, তুমি আর সব বউদের মতোন পতি-সন্দেহীনা হয়ে উঠো না। আমার গার্লফ্রেন্ডদের একটাকে ছাড়াও বাচতে পারব না আমি। সবগুলোকে টুরু ভালোবাসি।ʼʼ

এমন একটা কথায় না হেসে উপায় কী? ইরফান ক্লান্ত ও ঘর্মাক্ত দেহ নিয়ে চলে যায় বাথরুমে। লাবন্য খেয়াল করল, আজকাল সে খুব হাসে। সে কেমন যেন তার গম্ভীরতা থেকে বেরিয়ে চঞ্চল, হাস্যজ্জ্বল হয়ে উঠছে, কারণটা কি এই লোকটা? লাবন্য তাকায় একবার বাথরুমের দরজার দিকে। সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত দেহে বাড়ি ফিরেও লোকটার মুখে একটুও বিতৃষ্ণার ছাপ নেই, ঘরে আসতেই যেন প্রাণ ফিরে পায় রুমটা, সাথে লাবন্যও। লোকটার এই প্রাণবন্ত আচরণের সঙ্গে খুব নিবিরভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে লাবন্য, তা মেয়েটা বোঝে আজকাল। এই বন্ধুত্বের প্রগাঢ় বন্ধনে বন্দি হয়ে গেছে সে নিজের অজান্তেই। লোকটাকে এক কথায় সুন্দর চরিত্রের অধিকারী খেতাব দেয়া যায়। যে প্রায় সবদিকে নিখুঁত। বিশেষ করে স্বামী হিসেবে, পরিশেষে একটা বন্ধু হিসেবে।


ফারজাদ আলামিনকে এখনও ডিপার্টমেন্টের হাতে তুলে দেয়নি। সেদিন রাতে তাকে নিজের ফ্লাটে নিয়ে এসে শোবার ঘরের পাশে ফাঁকা ঘরটাতে আটকে রেখেছে। ওর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে–সেদিনের ওর বলা সব কথাগুলো পুরোপুরি মিথ্যা না হলেও সবটা সত্য নয়। একসময় বস্তিতে থাকতো ওরা। কিন্তু এখন সেখানে আর থাকে না। ফারজাদের ধারণা–ওকে ড্রা গ সাপ্লাইয়ের একটা ভালো এজেন্ট হিসেবে রেখে দিয়েছে স্মাগলাররা। এর বিনিময়ে ভালো একটা এমাউন্ট দিয়ে কেনা হয়েছে ওকে। নয়ত টানা দুইদিন জিজ্ঞাসাবাদের পরও ওদের ডেরা বা ডিলারের ব্যাপারে কোনো তথ্য দেয়নি। কেবল বলে, জানে না, ও কিছুই জানে না।

ফারজাদ ওকে সারাদিন পর কেবল একটা বোন রুটি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বাইরে থেকে নব ঘুরিয়ে তালা মেরে এসে বারান্দায় দাঁড়াল। এভাবে আরামদায়ক ভাবে জিজ্ঞেস করে কাজ হবে না, তা সে জানে। এদের ওপর সবসময় নজর রাখা হয়, কোনোরকম স্বীকারক্তির পূর্বেই জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয় এদের চালানো পার্টিরা। আজ দু’দিন শুধু দুটো বোনরুটি খেয়েও কোনোরকম স্বীকার করে নেয়ার লক্ষণ দেখা গেল না। এদের দেখলে মনে হয়, নেহাত রাস্তার ছেলে, কত কষ্টে জীবন ধারণ করছে, অথচ এরাই একেকজন একাই গোটা জাতির দুশমন।
ফারজাদ বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাল। আজ দু’দিন শরীরে হালকা-পাতলা হলেও প্রভাব পড়েছে সেদিনের ড্রাগটুকুর। ফারজাদ সেদিনের আগে একবার কয়েক বছর আগে প্রথমবার ড্রাগ ইঞ্জেক্ট করেছিল, এক বড়ো ভাইয়ের প্ররোচনায়। ফারজাদ প্রথম সিগারেটে টান দিয়েছিল পরীক্ষার রেজাল্ট শিট হাতে ধরে।

হঠাৎ-ই আজ সে-সব মনে পড়ায় আপন মনেই নিজের ওপর উপহাসের হাসি হাসল। বিশ্রী ভাষায় বকে উঠল নিজেকে। অস্পষ্ট স্বরে বলল, শালার আবেগ! এই ফারজাদ যাবে স্কলারশিপ নিতে বিদেশ, ফারহানা বাপের বাড়ির জমি বেঁচে এনে সেই কবে ব্যাংকে রেখেছিলেন। সেই টাকা রয়ে গেছে, ফারজাদ এল এল বি নিয়ে অনার্স করল শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে! জীবনের অপ্রাপ্তিগুলো এত নিষ্ঠুর কেন হয়? কিছু মানুষের জীবনের সমীকরণ এত গড়মিলে কেন হয়ে যায় কিছু ক্ষেত্রে এসে। সকলের সাথে তো হয় না এমন, তাহলে ফারজাদের সাথেই কেন এমন কঠোর খেলায় মত্ত হলো নিয়তি! কেন তার মাঝে টগবগে যুবক র ক্তে র অভিশাপ মিশে গেল সেই সময়ে। সেই নষ্টা আবেগের দুর্ঘটনা না ঘটলেও তো পারত। আজ ফারজাদ স্বপ্ন হারিয়ে অমানবিক, আমানুষিক, আজব এক মেশিনে পরিণত হতো না। কী আছে এ জীবনে? সাধারণ অনুভূতি নেই, সাধারণ ভাবনা নেই, নেই ভবিষ্যতের চিন্তা, নেই মায়া, টান অথবা আকর্ষন! কী আছে?

ফারজাদের ভাবনা ভঙ্গ হয়। শোবার ঘরের বিছানায় পড়ে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে শব্দ করে। হাতের সিগারেট পুড়ে অনেকখানি ছাই জমা হয়েছে। ফারজাদ পুরো সিগারেটাই ফেলে দিলো। গলাটা জ্বলছে বুকের সাথে সাথে। মাঝেমধ্যে সিগারেটের প্রতিও চরম ক্ষোভ জন্মে। এই সিগারেটে ঠোঁট ছুঁয়েছিল সেই অভিশপ্ত দিনে, জীবনের সবটুকু স্বপ্ন ভেঙে ছাই হয়ে যাবার সার্টিফিকেট সরূপ কাগজটার দিকে চেয়ে টলমলে চোখে। সেদিন বোধহয় এই ছেলেটা শেষবার কেঁদেছিল, এই এক জীবনে শেষবারের মতো কেঁদেছিল। এরপর আর কাঁদা হয়নি, আর কারও কান্নায় বুক কাঁপেনি, আর কারও কান্নায় খারাপ লাগেনি, মন কাদে নি, গলে যেতে ইচ্ছে করেনি, নরম হয়নি মন, কাবু হয়নি ছেলেটা।

ফোন তুলে নিলো কানে। ওপাশ থেকে চিকন মেয়েলি স্বর ভেসে আসে। ফারজাদ ভ্রু কুঁচকায়, চারদিকে ভরা সন্ধ্যা। মাগরিবের আজান শেষ হচ্ছে, এ সময় কেন ফোন করেছে মেয়েটা প্রায় মাস-দেড়েক পর? ফারজাদ জিজ্ঞেস করল,

“কী হয়েছে? অসময়ে কল কেন?ʼʼ

“কেমন আছেন আপনি?ʼʼ

“আছি আলহামদুলিল্লাহ।ʼʼ

বেশ কিছুক্ষণ আর দ্বিজার কোনো কথা শুনতে পাওয়া গেল না। শুধু ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ আসছে মাঝেমধ্যে। ফারজাদ বুক ফুলিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে একটু কড়া কণ্ঠে বলার চেষ্টা করল, “কল দিয়ে চুপ থাকার স্বভাব যাবে না তোর এ জনমে?ʼʼ

দ্বিজা ডেকে ওঠে, “ফারজাদ!ʼʼ

ফারজাদ ভ্রু কুঁচকে ফেলল। এভাবে এমন অদ্ভুত স্বরে নাম ধরে ডেকে ওঠার মানেটা কী? মেয়েটার পাগলামি বাড়ছে দিনদিন। ফারজাদ জবাব না দিয়ে শক্ত মুখে চুপ রইল।

চলবে..

#তপ্ত_সরোবরে
#তেজস্মিতা_মর্তুজা

১৬.

মাগরিবের ওয়াক্ত ঘনিয়ে আসা মুহূর্তটা। মুসল্লিরা দলে দলে মসজিদে ঢুকছে। গোধূলি ছেঁয়ে আসা আসমানের নিম্নদেশ ঘেঁষে পাখিরা সারাদিন পর দল বেঁধে নীড়ে ফিরছে। ফারজাদ ফোন কানে অপেক্ষারত—দ্বিজা কী বলবে তা শুনতে। দ্বিজা কেমন একটা ক্ষোভের সাথে বলে উঠল, “ওয়াহিদ প্রত্যেকদিন বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে, বলেছিলাম না সেদিন আপনাকে?ʼʼ

অন্য সময় হলে ফারজাদ নিশ্চিত বলত, ‘প্রত্যেক দিন আবার কী? প্রতিদিন।ʼ তা বলল না, মেয়েটা অভিযোগ জানাচ্ছে, অভিযোগ জানাতেই কল করেছে! বেশ গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল, “কেন দাঁড়িয়ে থাকে? সমস্যা কী ওর? কবে থেকে করছে এমন? এর বিরুদ্ধে কিছু বলিসনি কেন এতদিনে? জবান বন্ধ তোর? পাড়ার লোকে খুব ভালো বলে এতে?ʼʼ

ধমকে ওঠে ফারজাদ। দ্বিজা আবেশে চোখদুটো বুজে নিলো। ভারী একটা শ্বাস ফেলে বলল, “আমি কী বলব? আমার..ʼʼ

কথা শেষ হয় না। ফারজাদের কণ্ঠস্বর এবার একটু ক্ষ্যাপা লাগল, “আচ্ছা রাখ, দেখছি।ʼʼ

ফারজাদ সব ক্ষেত্রে নির্লিপ্ত থাকতে পারলেও মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের পেছনে লেগে থাকাকে প্রশ্রয় দেবার মানুষ না—তা জানে দ্বিজা। নিশ্চিত খারাপ কিছু তামাশা করে ফেলবে এবার। তবে সে সেজন্য তো জানায়নি এ-কথা। ফারজাদ কি বোঝে না, সে কী বোঝাতে চায়? দ্বিজা শুধু ফুফাতো বোন হিসেবে ফারজাদ কল কাটার আগ মুহূর্তে দ্বিজা বলে উঠল, “কাল ওদের বাড়ি থেকে দেখতে আসছে আমাকে।ʼʼ

কথাটুকু শেষ করতে কণ্ঠস্বরটা কেঁপে উঠল দ্বিজার। শেষের দিকে বিক্ষিপ্ত এক গাঢ় শ্বাস ছুটে যায় মেয়েটার বুক চিরে। ফারজাদ এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেল, পরক্ষণেই হঠাৎ-ই বেশ উৎফুল্ল চিত্তে বলল, “আরে বাপরে! ওয়াহিদ মালটা তো দারুন এডভান্স! দেখ, একে বলে প্রেমিক। তোর পাত্তা না পেয়ে সরাসরি কাজের কাজ করতে চলে আসছে। তো কী? আমায়.. দাওয়াত করছিস নাকি? ডিউটির খুব চাপে আছি, আসতে পারব না এখন। একেবারে বিয়েতে আসব, যাহ! তো এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলবি? বলেছিলাম না, তোর বাপ ফিরলে বেশিদিন ঘরে রাখবে না তোকে, তবে পড়ালেখাটা কন্টিনিউ করিস।ʼʼ

দ্বিজার নিঃশব্দ কান্না বোধহয় ফারজাদ অবধি পৌঁছায় না। বুকে গাঢ় এক ক্ষত অনুভূত হলো দ্বিজার। বুকটা মুচরে, পিষে, ছি ন্ন ভি ন্ন হয়ে যাচ্ছে। উফফ, কী অসহ্য যন্ত্রণা! দ্বিজা কার কাছে জানাচ্ছে নিজের অন্যের হয়ে যাবার আগাম বয়ান? যার কোনো যায়-ই আসে না? সে বরং উৎসাহিত করছে। আজব ভালোবাসা তার, যেখানে অপরপক্ষের বিস্তর উপেক্ষা আর অবহেলার পরও তাকে ভালোবেসে যেতে হবে। দ্বিজা বুঝল না–তার কী হচ্ছে। তবে কেমন একটা ঘৃণা বিচ্ছুরিত হলো যেন নিজের জন্য! আর কতদিন, কতভাবে এই মানুষটাকে তার দুর্বলতার ফিরিস্তি দেবে সে, আর তারপর উল্টো উপেক্ষিত হবে? মানুষটা এমন কেন করে, সে জানে না। তবে আজ হঠাৎ-ই মনে অদ্ভুতুরে এক বিতৃষ্ণা টের পেল ফারজাদের নির্বিকার, দায়সারা, নির্লিপ্ত কথাগুলোর প্রভাবে। নিজের ওপর উপহাসের হাসি ঠোঁটে জমা হতেই চোখের নিচ গড়িয়ে জল পড়ল। নিঃশব্দে ফুঁপিয়ে উঠল মেয়েটা। ফারজাদ ফোনটা কানে চেপে ধরে চোখ বুজে বড়ো একটা টান দেয় সিগারেটে। ধোঁয়া উড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,

“কাঁদছিস কেন? চোখের পানি র ক্তে র চেয়ে মূল্যবান, মানুষ যেখানে একফোঁটা র ক্ত ঝরলে অস্থির, উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে, সেখানে চোখের পানি কত সস্তা আর বেকার জিনিসের ক্ষয় করে দেয়।ʼʼ

দ্বিজার নিঃশব্দ কান্না এবার গোঙানির মতো শোনায়। ফারজাদ হতাশ এক শ্বাস ফেলল। ভারী নিঃশ্বাসের সাথে হালকা ধমকের মতো করে ডাকল, “দ্বিজা, দ্বিজা, দ্বিজা! থাম। কাঁদছিস কেন? আমায় একটা কারণ বলতো, আমায় ভালোবাসার? দ্বিজা, ভালোবাসা বলতে পৃথীবিতে কিছু হয়না। ক্ষণিকের একটা মায়াক্ষেত্র তৈরী হয় মাত্র, আর মায়া কেটে যায়–এ এক চিরন্তন সত্য। আচ্ছা! আমি তোকে আমি ভালোবাসলে তুই চিরসুখী হয়ে যাবি, তাই তো? তাই মনে হয় তোর? এত সহজ না জীবনটা, শোন আমার কথা..ʼʼ

ঘরে পদচারনার আওয়াজ পেল দ্বিজা। সেদিকে চোখ ফিরিয়ে তাকাতেই দুইজোড়া গম্ভীর আরেকটা দুঃখী চোখ তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেল। দ্বিজার ধ্বংসপ্রাপ্ত বিষাদে ঘেরা চোখ-মুখে উপচে পড়া কান্না, কানে ফোন। ফোনের ওপাশে এখনও এক পুরুষালি কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। হাবিব সাহেব ঝড়ের বেগে এগিয়ে এলেন, থাবা দিয়ে ফোনটা কেঁড়ে নিলেন দ্বিজা কান থেকে। স্ক্রিনে এখনও জ্বলজ্বল করছে ইংরেজি হরফে লেখা, ‘Farjaadʼ নামখানা। সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে একবার দ্বিজার দিকে কঠিন মুখে তাকিয়ে তৎক্ষণাৎ সর্ব শক্তি দিয়ে ছুঁড়ে মারলেন ফোনটা মেঝেতে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দিলরুবা বেগম ও সদ্য এ বাড়িতে প্রবেশ করা লাবন্য ছিটকে দাঁড়ায় একপাশে। দ্বিজার প্রতিক্রিয়া ঠিক দুর্বোধ্য। বুঝতে পারা যাচ্ছে না–মেয়েটার কী হচ্ছে ভেতরে। হাবিব সাহেব চিৎকার করে বললেন,

“তুই কী করতেছিস, ঠিক বুঝে আসতেছে না আমার। ঠিক কোন নতুন উপায়ে নিজেকে খারাপ মেয়ে বানিয়েছিস? একদম নতুন পদ্ধতি। একজন বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর হুট করে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসার তারিখ দেয়। আর সেই দিনের আগের রাতে আরেক প্রেমিকের কাছে তার নালিশ জানিয়ে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছিস? তোরে ঠিক কোন নামে ডাকলে তোর চরিত্র বর্ণনা করা যাবে ঠিকমতো? এই তো আমার সম্মান রাখছিস দুই মা-মেয়ে!ʼʼ

কথা শেষ হলো কিনা, কষে একটা থাপ্পড় লাগালেন হাবিব সাহেব দ্বিজার গালে। মেয়েটার গালে লালচে দাগ স্পষ্ট হয়ে সবে গেল। ভেঙে খণ্ড হয়ে যাওয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই নষ্ট হবার যন্ত্র ফোন আমি কত শখ করে বিদেশ থেকে পাঠাইছিলাম তোর জন্য? শালা আমিই তো বোকা। তোর মা ভালোই করছে তো। নানির বাড়ি থাকছিস, আর..

আর বললেন না কিছু। ভারী পা ফেলে নীরব গর্জন করতে করতে দ্বিজার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। দ্বিজার বুকের উঠা-নামা টের পাওয়া যাচ্ছে, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। জীবন এ কোথায় নিয়ে এলো তাকে, কী ঘটছে তার সঙ্গে? লাবন্য এগিয়ে এসে দাঁড়াল তার দিকে। তার গায়ে এখনও বোরকা জড়ানো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সবে এসে পৌঁছেছে। যেহেতু ওরই শশুর বাড়ি থেকে দেখতে আসবে, আর তাছাড়াও দ্বিজার একটা সঙ্গর প্রয়োজন আজকের দিনে। বহুদিন পর মেয়েটা এসেছে ফুপুর বাড়ি। দিলরুবা বেগম যেন কিছু বলতে গিয়েও বললেন না, চরম অনীহার সাথে মুখ গম্ভীর করে চলে গেলেন। তিনি জানেন না, এর দায়ে তার সঙ্গে কী হতে চলেছে। লাবন্য বসল দ্বিজার পাশে। দ্বিজার চোখে এখনও বাধ মানে নি। অনবরত, অবিরাম ঝরছে নোনাজল। লাবন্য কিঞ্চিৎ শুকনো হাসিমুখে তাকিয়ে রইল দ্বিজার কান্নাজড়িতে ভাঙা মুখটার দিকে। তার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে আজে–আসল পাগলি তো এই দ্বিজাই! সে আসলেই ফারজাদকে ওসব ভালো-টালো কিছু বাসেন, শুধু একটু পছন্দ ছিল আর কী! ভালো তো বেসে ফেলেছে এই পাগলিটা! বেপরোয়া ভালোবাসা, এই পাগলির ভালোবাসা অদম্য, দুর্দমনীয়।

হাবিব সাহেব রুমে এসে হাতরে নিজের ফোন হাতে নিলেন। দিলরুবা বেগম পেছনে এসে দাঁড়ালেন তার, তার চোখে-মুখে ভাবনা–তাহলে লাবন্যর বিয়ের পরের দিন যে বড়োআপা দ্বিজা আর ফারজাদকে একঘরে দেখেছিল, সেটা অহেতুক ছিল না? সত্যিই কোনো সম্পর্ক আছে এদের মাঝে? তিনি নাহয় মেয়ের ভুলকে মেনে নিলেন হাবিব সাহেব ব্যাপারটাকে ঠিক কতটা খারাপ পর্যায়ে নিতে পারে, তা তিনি খানিক আন্দাজ করতে পারছেন। এর সম্পূর্ণ দায় এসে পড়বে তার ওপর। মায়ের বাড়ির অতি যাতায়াতকে কারণ বানিয়ে এই বদমেজাজি লোকটা এই জলকে কোথায় গড়াবেন কে জানে? ফারজাদকে এমনিতেও ভালো চোখে দেখেন না হাবিব সাহেব।

ফারজাদ কিছুটা হলেও আন্দাজ করেছে–কিছু একটা ঘটেছে। হঠাৎ-ই দ্বিজা থেমে গেল, কলটা কেটে গেল। এমনটা তো দ্বিজার করার কথা নয়! নাকি মেয়েটা ফারজাদের কথায় কষ্ট পেয়ে… তাহলেই ভালো। ভালো থাক পাগলিটা। এখন রাগ করলেও, পরে বুঝবে তার জন্য সঠিক কী? ফারজাদ জড়াবে না নিজেকে। কোনোভাবেই সংসারধর্ম অথবা মেয়েলোকের আঁচলে বাঁধা পড়বে না। সে জানে–সব মেয়ে এক না, তবুও তার ভেতরে অতি গভীরে লুকিয়ে থাকা আতঙ্ক আর ভয়টুকু কাটে নি আজও

মানুষের জীবনের সবচেয়ে খুশির অথবা অতি ধ্বংসের ঘটনাগুলো মস্তিষ্কে প্যানিক অথবা নিদারুন আতঙ্ক হিসেবে সংরক্ষিত থাকে, যা সেই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত বিষয় পুনরাবৃত্তি ঘটার সুযোগ আছে, এমন ঘটনায় মস্তিষ্ক সক্রিয়ভাবে খুব বিরুদ্ধাচারণ করে। এটা এক প্রকার মানসিক রোগ। মানুষ কোনো রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় জখম হলে, সেই ক্ষত ভরে ওঠার পরেও পরবর্তিতে সেই রাস্তায় গেলে মস্তিষ্কে সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ খুব বাজেভাবে প্রভাব ফেলে। পুরোনো ব্যথাগুলো কোথাও একটা জেগে ওঠে। এটাকে বলে মস্তিষ্কের একটা অস্বাভাবিক মানসিক অবস্থা। যেটাকে প্যানিক অ্যাটাক বলা হয়। এতে মানুষ কোনো ঘটনায় হুটহাট আতঙ্কিত বা হতবিহ্বল হয়ে যায়।

আর যেখানে ফারজাদের জীবনে তো সেই ক্ষতির প্রভাব আজও বিদ্যমান। স্বপ্ন ও বৃত্তিহারা এক ব্যর্থ পথিক সে জীবনের পথে। এতগুলো বছর ধরে এই আতঙ্ক আর ব্যর্থতার হাহাকার তাকে এতটা কঠিন আর অস্বাভাবিক অনুভূতিহীন এক মানুষে পরিণত করেছে। ফারজাদের অবশ্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞও আছে রিজার্ভ। যার কাছে ফারজাদ মাঝেমধ্যেই যায়। তবে কিছু রোগের বাহ্যিকভাবে চিকিৎসার থাকে না। বিশেষ করে মনের গভীর ক্ষত অথবা অপূর্ণতার হাহাকার থেকে যে মানসিক রোগের সৃষ্টি, তাতে কোনো উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা থাকে না সচরাচর।

ফারজাদের হাতের ফোনটা বেজে উঠল। বারান্দার রেলিংয়ে হাত রেখে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে ছিল সে। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ভ্রুটা কুঁচকে সোজা হয়ে দাঁড়াল। সে যা আন্দাজ করেছে তা বোধহয় ঠিক। ফোন কানে লাগাতেই কর্কশ আওয়াজ ভেসে এলো, “তুমি যে অপদার্থ তা আরেকবার প্রমাণ না করলেই হতো না? নিজের জীবনটা তো নষ্ট করছো প্রেম কইরা, ছ্যাঁকা খাইয়া। লজ্জা করার দরকার ছিল না তোমার? তোমার ফুপু তো ফাজিল মহিলা, ছেলে মেয়ে দুইটারে তোমাদের বাড়ির সাথে কলিজা মিশায়ে মানুষ করছে, তার সুযোগ নিতে ভুলো নাই না? একে তো একজন পিছনে পড়ছে, রোজ রোজ বাড়ির সামনে আইসা দাঁড়ায়ে থাকতে থাকতে বিয়ের প্রস্তাব আনছে, তুমি আবার কি বিয়ে হবার আগেই নিয়া ভাগবা নাকি?ʼʼ

ফারজাদ চুপচাপ শুনছে। হাবিব সাহেব আবার গর্জে উঠলেন, “শোনো, ফারজাদ! আমার মেয়ের আশপাশ থেকে দূরে থাকবা। তোমাদের বাড়ির সাথে আগে যেমন আমার কোনো লেনদেন ছিল না, হবেও না। আর চেষ্টাও করবানা যোগাযোগ করার। আমি জানি তুমি কতবড়ো হারামি আর স্বার্থপর ছেলে। আমার মেয়েরে আশা দিবা, অথচ সুখে রাখতে পারবা না। এমনকি তুমি তো আশাও দিবার পারবা না। তুমি কি মানুষ নাকি? তোমারে চিনি না আমি? জা নো য়া রে র চামড়া গায়ে তোমার। মায়া দয়া, ভালো-মন্দের হিসাব আছে নাকি তোমার? মেয়েটারে কাঁদায়েও ঠিক পথরের মূর্তির মতোন ঘুরে বেড়াবা। এই জন্য তোমার ফুপু বোকা মহিলারে কইছিলাম–ওই শালার অমানুষের বসবাস করা বাড়ি থেকে আমার ছেলে মেয়ে দুইটারে যেন দূরে রাখে। তোমার এই শয়তানের মতোন শক্ত স্বভাবের জন্য তোমাদের ওই গোটা বাড়িটা অভিশাপে ভরা।ʼʼ

ফারজাদ কেবল হাসল একটু, “ফুপা, শয়তানের স্বভাব শক্ত হয়, তা জানতাম না।ʼʼ

হাবিব সাহেব এবার যেন মেজাজের খেঁই হারালেন, “তোমার মতো বদমাশের পরিবারের সাথে আমার আমার যে কোনো সম্পর্ক আছে এইডা ভাবতেও ঘেন্না হয় আমার। হারামি পরিবার!ʼʼ

ফোন কেটে ফোনটা ছুঁড়ে মারলেন বিছানার ওপর। দরজার কাছে সংকুচিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন দিলরুবা বেগম। হাবিব সাহেবের এই রাগ ওই বাড়ির ওপর আজকের নয়। ষোলোটা বছর ধরে পালন করছেন উনি। ষোলো বছর আগে হাবিব সাহেবের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তবুও তার ব্যক্তিত্ব আর শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে বিয়ে দিয়েছিলেন দিলরুবা বেগমের বাবা। কিন্তু একটা সময় কর্মের আর কোনো ব্যাবস্থা হয়ে উঠল না তেমন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন বিদেশ যাওয়ার। শশুরবাড়ির কাছে টাকা চেয়েছিলেন। যৌতুক হিসেবে নয়, ধার। যেটা তিনি উপার্জন করে আস্তে আস্তে শোধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফারজাদের বাবা আজাদ সাহেব টাকা না দিয়ে বরং কটুক্তি ঝারলেন, “যে দেশে থাইকা কোনো কর্ম খুঁইজা পায় নাই, অই আবার বিদেশ যাইয়া যেন কোটি মাল কামাইব। বিদেশ যাইয়াও কিছুই করতে পারবা না, বরং আমার আড়ৎয়ে খেটে খাও। কত মানুষ তোমার মতোন খাটতেছে প্রতিদিন। ওরে সংসারও চলে যাইতাছে বেশ, ওগোরে বিদেশ যাওয়া লাগতাছে না।ʼʼ

সেই কথা তিনি ভুলতে পারেন না। এরপর মায়ের টুকটাক পুরাতন গহনা, দিলরুবা বেগমের হাতে বালা, দুল এক অংশ জমি বিক্রি করে কোনোমতো গেলেন বিদেশ। আল্লাহর রহমতে আস্তে আস্তে তিনি চোখে পড়ার মতো উন্নতির দেখা পেয়েছেন, তবে মেজাজি, তেজ্বী লোক হওয়ায় অপমান করে বলা সেই কথা ভুলতে পারেন নি।

লাবন্য দ্বিজার ঘরে বসে শুনল সবটা। কোনো কথা বলল না। দ্বিজার চোখের পানি শুকিয়ে লেপ্টে আছে চোয়ালে। উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ভার ছেড়ে দিয়ে বসে আছে বিছানার ওপর। জীবনটা আসলেই জটিল, ভয়াবহ এক কুরুক্ষেত্র। যেখানে বাঁচতে হলে লড়তে হবে। কখনও আশপাশের পরিস্থিতির সঙ্গে, তো কখনও নিজের মনের সঙ্গে। এ আজীনের লড়াই।

ফারজাদ কান থেকে ফোন নামিয়ে নিজের মনেই হেসে উঠে বিরবির করে বলল, “তোর বাপ কত ভালোভাবে চেনে আমায়, অথচ তুই বুঝিস না, দ্বিজা! তোর বাপের কাছে একটু জানলেও তো পারিস কত জঘন্য এক ব্যক্তিত্ব আমি।ʼʼ

চলবে..
[রিচেইক করিনি, ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।]

#তপ্ত_সরোবরে
#তেজস্মিতা_মর্তুজা

১৭.

সকাল এগারোটার পরপরই গোসল করে এলো দ্বিজা। মেয়েটার ভারী মুখের দিকে চেয়ে লাবন্যর মনটা বিষণ্ন হয়ে ওঠে। সবকিছু বদলাচ্ছে–সে গম্ভীর থেকে হাস্যজ্জ্বল হয়ে উঠছে, অপরদিকে সারাদিন নেচে-কুদে বেড়ানো মেয়েটা কেমন ঝিমিয়ে গেছে। দ্বিজা গোসল করে এসে নিঃশব্দে এসে বসল বিছানায়। লাবন্য দেখল মাথায় প্যাচানো গামছাটা খোলেনি এখনও। লাবন্য এগিয়ে গিয়ে সযত্নে মাথা থেকে গামছাটা খুলে দিলো। ভেজা চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বলল, “দ্বিজা! এত নিরাশ হতে নেই রে বোন। আল্লাহ যা করবেন, তোর খারাপ হবে না।ʼʼ

দ্বিজা এড়িয়ে যেতে চাইল যেন কথাটা, “বাদ দে তো লাবন্য আপু এসব। ইরফান ভাইয়া কখন আসবে?ʼʼ

লাবন্য গামছাটা খাটের বক্সের ওপর মেলে দিতে দিতে বলল, “ওদের সাথেই আসবে হয়ত। ওয়াহিদ তো তোর ভাইয়ের লেজ। সাথে সাথে বেঁধে থাকে সবসময়।ʼʼ

দুপুরের পর বিকেল তিনটার দিকে এলো মেহমান। দ্বিজাকে শাড়ি পরানো হয়েছে একটা মেজেন্টা ও সোনালী রঙের সংমিশ্রনে সজ্জিত। হালকা সাজ, টুকটাক গহনা–দ্বিজার বাচ্চা বাচ্চা মুখটায় বেশ মানিয়েছে। তবে বড়োই বেমানান লাগল আজ তার মুখের বিবর্ণ ভাবটা। সেখানে কোনো উচ্ছ্বাস নেই, খুশির মাধুরী নেই। এমনিতে মেয়েরা পাত্রপক্ষের সামনে লাফালাফি করে না। তবে দ্বিজার চেহারায় অস্বাভাবিক রকমের প্রাণের অভাব যেন। ওয়াহিদ বারবার তাকাচ্ছে দ্বিজার দিকে। এই মেয়েটাকে প্রথম বার দর্শনেই একটা আকর্ষন জেগেছিল তার। দ্বিজার নজর উদাসীন অলক্ষ্যে। হাবিব সাহেবের একতলা পাকা বাড়ি, জমা অর্থও আছে যথেষ্ট, জমিজমা মিলে মধ্যবিত্ত হিসেবে ভালো অবস্থা ওনার। মেয়ে পছন্দসই, ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে। সবদিকেই মিলে গেল। ওয়াহিদের যেহেতু বাবা নেই, তাই বড়ো চাচা অর্থাৎ ইরফানের বাবা অভিভাবক হয়ে চূড়ান্ত একটা পাকা কথার ব্যাপারে কথা তুললেন। হাবিব সাহেবও আপত্তি করছেন না আর। তার ধারণা–দ্বিজাকে আর রাখা উচিত হবে না। পরিস্থিতি ভালো চলছে না। সম্মানহানীকারক কিছু ঘটে যাবার আগে সম্মানের সাথে তিনি একটা কূল করতে চান মেয়ের। ও-বাড়ি থেকে লাবন্যই এসেছে, আর কাউকে বলেন নি বা বলার কথা বলেননি হাবিব সাহেব। দ্বিজা চুপচাপ বসে আছে। লাবন্য পেছনেই দাঁড়ানো, তার পাশেই বাহুতে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে ইরফান। এরই মাঝে কোনো পাকা কথা দেবার আগে ইরফানের বাবা মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করলেন দ্বিজাকে,

“আমরা যাই-ই বলি, একসাথে জীবন কাটাবে তোমরা।তোমার সম্মতি আছে তো মা এই বিয়েতে?ʼʼ

পুরো পরিস্থিতিটাকে শিহরিত করে দ্বিজা কাষ্ঠল ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে দুপাশে, “না।ʼʼ

কয়েক মুহুর্ত গোটা পরিবেশটা একদম গুমোট হয়ে রইল। এরপর সবচেয়ে বড়ো ধাক্কা বোধহয় খেল ওয়াহিদ। চাচার দিকে তাকাল একবার, ইরফানের বাবা ওকে ছাপিয়ে ইরফানের দিকে তাকাল। ইরফান সন্তর্পণে ইশারা করে উঠে যেতে। আজকের এই পরিস্থিতিতে ব্যাপারটা এখানেই মিটে যাক, পরে দেখা যাবে বাকিটা। এখন এখানে বসে থাকা মানে তামাশার বহর বাড়ানো।

ওয়াহিদ কিছু বলতে যেয়েও যেন বলতে পারল না। ইরফান নিজে থেকে গেল এবং পুরো পরিস্থিতিটা নিয়ন্ত্রণে এনে আপাত বিদায় জানালো সকলকে। সে বাড়ির লোককে বুঝিয়ে বাইরে ছেড়ে আসতে যাওয়ার ফাঁকে হাবিব সাহেব নিজের মেজাজে খেঁই হারালেন। কষে দুটো থাপ্পড় বসালেন দ্বিজার গায়ে। দ্বিজার দাদী আমিনা বেগম ছেলেকে টেনে নিয়ে গিয়ে ঠেকালেও তার মুখ বন্ধ করবার উপায় কী?

“যে সম্মান হারাব না বলে নিজহাতে যাচাই-বাছাই ছাড়া না দেখে-শুনে তোরে সম্মানের সাথে বিদায় করতে চাইলাম। তুই তাদের সামনেও দুই আনার দাম রাখলি না আমার? সেই তামাশা করেই ছাড়লি? এবার ক্যান আসছিলাম দেশে আমি? কার জন্য আসছিলাম? সম্মানের দাফন করার জন্য ফিরছি এবার দেশে। এ কথা আগে জানা থাকলে আজীবনেও তোদের সামনে এসে দাঁড়াতাম না। বিয়ে করবা না? ক্যান? ক্যান করবা না বিয়ে? বাড়ির সামনে ব্যাটাছেলে এসে দর্শন দিয়ে যায় প্রতিদিন, আর তোমারে আমি ঘরে বসায়ে রাইখা মান-ইজ্জতের কবর দিয়ে দেব? চাইছিলাম তো পড়ালেখা করাইতে। তুই সুযোগ দিস নাই। শালা মা-মেয়ে মিলে শান্তি দিবা না তোমরা আমারে?ʼʼ

দ্বিজা মেরুদণ্ড শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। হাবিব সাহেব এবার দিলরুবাকে বললেন, “দেখছ পরিণতি? তোমারে এতবার মানা করছি, আমার কথা তো মাথায় ক্যান কানেও তো ঢোকেনা। জিগাও ওরে ক্যান বিয়ে করবে না। তোমার ভাইয়ের ছেলের বিরহ লাগছে ওর? কও আজও কল কইরা কাঁদতে একটু, আইসা নিয়া যাক ওরে। রুবা! তুমি আর তোমার মেয়েরে আমার চোখের সামনে সহ্য হইতেছে না। তোমার মেয়ে যা শুরু করছে, আমি কী করব ভাবনার কূল পাচ্ছি না। বিয়ে করবে না ও? ও নিজের পছন্দের দাবীদার হইছে? ওর পছন্দের আমি…

আমিনা বেগমকে সরিয়ে আবার তেড়ে গেলেন দ্বিজার দিকে। তখনই ইরফান এসে মাঝখানে দাঁড়ায়। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললেন, “আঙ্কের শান্ত হন আপনি। উত্তেজনায় কিছুই ভালো হয় না। আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুন। এরপর যা হবে করবেন না হয়, যান এখন। সরুন। মেয়ে বড়ো হয়েছে আপনার। তার মতামতের দাম দিতে বাধ্য আপনি।ʼʼ

দ্বিজাকে নিয়ে ইরফান দ্বিজার ঘরে এসে বসল। পেছনে এলো লাবন্য। দ্বিজার চোখে পানি নেই, তবে বুক ফেটে যাচ্ছে তা ওই কাতর মুখ দেখে স্পষ্ট উপলব্ধি করা যাচ্ছে। দ্বিজাকে বসতে ইশারা করল। দ্বিজা বসল একটা চেয়ারে। বিছানায় পা দুটো তুলে বসতে বসতে ইরফান বলল, “তো শালিসাহেবা! আপনি বিয়ে করতে চান না তাই তো? এই-যে এখানেই আপনার আমার ব্যাপক মিল। আমিও জীবনে বিয়ে-শাদি বিদ্বেষী ছিলাম, অথচ শেষ অবধি বলির পাঠা হতেই হলো।ʼʼ

ইরফানের রসিকতা মিশ্রিত কথায় দ্বিজার কোনো বিশেষ প্রতিক্রিয়া হলো না। শাড়ির আঁচলে আঙুল পেচাচ্ছে সে আনমনে। ইরফান কিছুক্ষণ চেয়ে রইল দ্বিজার দিকে। এবার একটু আন্তরিক স্বরে মাথা নেড়ে বলল, “ফারজাদ বাবুর প্রেমে পড়েছ! সে তো আমার লাবুও পড়েছিল। কিন্তু দেখো, তার মনোভাবের সাথে সাথে সে নিজেও বদলেছে। সে-সব পেছনে ফেলে সর্বোপরি আমাকে ভালোও বাসতে শুরু করেছে, তা আমি জানি।ʼʼ

লাবন্য এ পর্যায়ে অতি বিষ্মিত হওয়ার সাথে সাথে ভীষন অপ্রস্তুত বোধ করল, তবে কিছু বলল না, মাথাটা নত করে নিলো। অসভ্য লোকটাকে এ নিয়ে খিস্তি শোনানো যাবে। সে বলেছে নাকি সে ভালোবাসে লোকটাকে? কেবল তো সব ভুলতে শুরু করেছে! ইরফান সেদিকে খেয়াল করল না ইচ্ছে করেই। দ্বিজাকে বলল, “বুঝলে, দ্বিজা! আমাদের উচিত নিজেকে একবার হলেও সুযোগ দেয়া। আমাদের চাওয়াগুলোকে বিসর্জন দিয়ে ভবিষ্যতটাকে পরিস্থিতি ও ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেয়া। সব সময় যে নিরাশ হতে হবে, এমনটা নয়। মানুষ প্রেমে পড়ে, না পড়লেই বরং সেটা অস্বাভাবিক। তবে জীবন সেখানে থেমে থাকে না। সে ক্ষেত্রে আমাদেরও উচিত জীবনের গতির সাথে পা মিলিয়ে এগিয়ে চলা।ʼʼ

এ পর্যায়ে চমৎকার হাসল ইরফান, “তোমার বোন জানত না আমি জানি তার প্রেমবিরহের ইতিহাস। আজ জানল। কারণ, আমি তাকে সেভাবে ট্রিটই করিনি কখনও। কেন করব, কোন যুক্তিতে করব? যেখানে অতীত বড়োই শক্তিশালি ধরা ছোঁয়ার বাইরে অবস্থিত কাল। যেটাকে বদলানো যায় না, সেখানে ফেরা যায়না, তার সাথে লড়া যায় না। তাহলে সেই অতীতকে বর্তমানের সাথে বেধে রেখে লাভটা কী বড়োজোর কষ্ট পাওয়া ছাড়া! অতীতকে ঘুটনি দিয়ে ঘাটলে অতীতের কী বিগড়াতে পারবে তুমি। অতীতকে বড়োজোড় স্মৃতিতে রাখা যায়, তাতেও মনের হাহাকার ছাড়া পাওয়ার মতো কোনো উপকার নেই। অতীত থেকেই বর্তমানে আসতে হয়। তো সেই অতীতকে করার মতো আছে কী? আবার বর্তমান সময়টা অতীত হলে তবেই আমরা ভবিষ্যতে পৌঁছাতে পারি। তোমার বোন অতীতকে পাশ কাটিয়ে বর্তমানকে মেনে নিয়েছিল, আজ আমার মনে হয় না খারাপ আছে সে।ʼʼ

দ্বিজা মাথা তুলে তাকাল এবার। ইরফান হা করে একটা শ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করল, “ওয়াহিদ ভালো ছেলে। খারাপ রাখবে না তোমায়। আমারই চাচার ছেলে তো! লাবন্যকে ভালো রাখতে পেরেছি কিনা তা বলতে পারব না, তবে খারাপ সে নেই বোধহয়। পরের মেয়েকে ঘরে তুলে খারাপ রাখার সাহস বুকে নেই, আমি এ ব্যাপারে খুব ভিতু।ʼʼ

লাবন্যর দিকে ঘুরে বলল, “এক গ্লাস পানিও তো এনে দিতে পারো। এতক্ষণ ধরে তোমার বোনকে বিনামূল্যে মূল্যবান মোটিভেশন দিচ্ছি। তোমাকে আর শেখাতে পারলাম না স্বামীর খেদমত কেমনে করে।ʼʼ

লাবন্য কী অভিব্যাক্তি দেখাবে এর পরিপেক্ষিতে, সেটা ভুলে গেল। মানুষটা কী? হুটহাট কতরকম রূপে দেখা যায় তাকে। পানি আনতে গেল সে। ইরফান আবার বলতে শুরু করল, “শোনো দ্বিজা! আমরা যাদের চাই, তাদের চেয়ে বরং আমাদের তাদের বেছে নেয়া উচিত যারা আমাদের চায়। ভালো থাকতে এক জীবনে একটু যত্ন, ভালোবাসা আর ভরসার একটা হাত-ই তো চাই! ফারজাদের কাছে তুমি কী পেয়েছ? আমি যতটুকু জানি, ফারজাদ নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে নিজের খোলসে। তাকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। খোলস থেকে তাকে বের করা দুঃসাধ্য অবশ্য। তার কাছে কী পেয়েছ তুমি? নিজেকে প্রশ্ন করো। আমি উত্তর জানতে অপেক্ষা করছি, জিজ্ঞেস করো নিজেকে।ʼʼ

দ্বিজা এবার গা কাঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে। ওর কান্নায় ইরফানের পুরুষ হৃদয়টা কেঁপে উঠল মুহুর্তের জন্য। বুকে একটা ভারী ধাক্কা অনুভূত হলো। মেয়েটার বুকের ওঠানামা জানান দিচ্ছে–তার কলিজা কতটা নিষ্ঠুরভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে ভেতরে। কাঁদতে না পেরে হা করে জোরে শ্বাস নেয় দ্বিজা। বুকের মাঝ বরাবর হাতটা চেপে ধরল শক্ত করে। যে বুকে অসহ্য যন্ত্রণা আর কাতরানি। হাত ঘষতে লাগল বুকের মাঝখানটায় এমনভাবে–নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বোধহয়। কী পেয়েছে সে? এড়িয়ে চলা, ধিক্কার, অবহেলা, নীরব প্রত্যাখান বারবার। কিছুক্ষণ পর একদম জড়ো বস্তুর ন্যায় থেমে যায় দ্বিজা। আবার ফুঁপিয়ে উঠল। এবার ইরফান সামলে নেয় নিজেকে। ব্যস্ত কণ্ঠে বলে ওঠে,
“এই মেয়ে এই থামো, থামো, থামো! শোনো, আমার বহুত শখ ছিল ছোটো বোনের, নেই। শালি তো যতবার বিয়ে করব ততবার পাওয়ার চান্স আছে। প্রথম বউয়ের বোন হিসেবে তুমি নাহয় বোন হও। আর আমার কান্না জিনিসটা চরম অপছন্দের। গায়ে চিটচিটে অনুভূত হয়, বুঝলে! আমি জীবনে কখনও আপসেট থাকি নি, কাঁদিনি, কারণ বিষয়টা পছন্দ না আমার বুঝলে! এবার চোখ মোছো। সিদ্ধান্ত তোমার, আমি কি জোর করেছি? ঠিক আছে করতে হবে না বিয়ে।ʼʼ

ইরফান কিছুক্ষণ চুপ রইল। হঠাৎ-ই যেন কিছু একটা মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে বলল, “দ্বিজা! চ্যাহ! এ তো সিরিয়াস কেইস! নাহ, তোমার ব্যাপারটা মোটেই আমার লাবুর সাথে তুলনা করলে অঙ্ক মিলবে না মনে হচ্ছে। লাবু বোধহয় পছন্দ পেরিয়ে আর বেশিদূর যেতে পেরেছিল না, যে কারণে তাকে আমি এত সহজে হাসিল করে ফেলেছি, তবে তোমার চোখের ভাষা ভয়ানক বার্তা দিচ্ছে, মেয়ে!ʼʼ

এরপর আনমনেই আওড়াল, “লাবন্যর অনুভূতি ঠুনকো-ই ছিল বোধহয়! তোমারটা ঠিক বুঝে ওঠা যাচ্ছে না–তুমি কতটা গভীরে ডুবেছ!ʼʼ


রাত দশটার দিকে টুকটাক রাতের খাবার খেয়ে লাবন্যকে নিয়ে চলে গেল ইরফান। দ্বিজা খেতে আসেনি। দিলরুবা বেগম বিষন্ন মুখে খাবার নিয়ে হাজির হলেন মেয়ের ঘরে। দ্বিজা বিছানার এক কোণে হাঁটু থুতনিতে ছুঁয়ে জড়িয়ে বসে আছে। তিনি আস্তে করে গিয়ে বসলেন মেয়ের পাশে। কিছুক্ষণ নীরব থেকে ভাত মাখাতে মাখাতে জিজ্ঞেস করলেন হঠাৎ-ই নিষ্প্রভ গলায়, “ফারজাদের সাথে কোনো সম্পর্ক গড়বে না তোর, আব্বু। বড়ো হইছিস, নিজের ভালোমন্দ বুঝতে শেখ এখন। আমিও চাইতেছি না ফারজাদের সাথে আর কোনো যোগাযোগ থাক।ʼʼ

দ্বিজা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল–এরা কী ভাবে? তার আর ফারজাদের রহস্যজনক সম্পর্ক এদের মাথায় ঢুকবে না কোনোদিনও। ভুল ধারণাগুলোকে আর কতদূর গড়িয়ে নিয়ে যাবে এরা?


আজাদ সাহেবের বলায় আফসানা বেগম গোয়ালে দুটো কয়েল জ্বালিয়ে দিয়ে সবে এসে ড্রয়িং রুমে পৌঁছালেন। বাড়ির প্রবেশ দরজায় ধাক্কা পড়ছে মৃদু। তিনি আবছা অন্ধকারে ঘড়ির দিকে তাকালেন—রাত সাড়ে বারোটা বাজছে। এখন কে আসবে? কিছুক্ষণ দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগে এগিয়ে গেলেন দরজা খুলতে। ফারহানা বেগমের শরীর ভালো না। তিনি ঘরের দরজা আটকে আগেই শুয়ে পড়েছেন। আফছানা বেগম দরজা খুলতেই অর্ধভেজা কাকের মতো এলোমেলো বেশে ভেতরে ঢুকল ফারজাদ। হাতে বা কাধে ব্যাগ নেই। বাম হাতে মোবাইলে ফ্লাশ অন করা। বাইরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে বিকেল থেকে। আফছানা বেগম দরজা আটকে তাকিয়ে রইলেন ফারজাদের দিকে। সে এমন হুটহাট মাঝরাতে বাড়ি ফেরে–এ নতুন নয়, তাই তিনি অবাক হলেন না। বরং জিজ্ঞেস করলেন, “হঠাৎ-ই ফিরলা যে, ভিজে গেছ তো, তোয়ালে আনি দাঁড়াও।ʼʼ

ফারজাদ মাথা নেড়ে মোবাইলটা টেবিলের ওপর রেখে হাতের ঘড়ি খুলতে শুরু করল।

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে