#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_৩০_শেষ
#Jechi_Jahan
আমি অভি ভাইয়ার মেয়েকে না নিয়ে সামনে হাঁটা ধরলাম।তন্ময় আমাকে পেছন থেকে অনেক বার ডেকেছে কিন্তু আমি তাকাইনি।তখন বাচ্চা টিকে নিয়ে গিয়ে মনে হয়েছিলো যে আমার কারণে তো আমার নিজের বাচ্চাটা মারা গেছে।এখন যদি আমার কারণে অভি ভাইয়ার মেয়ের কোনো ক্ষতি হয় তাই আমি ওকে আর কোলে নিইনি।
তন্ময়-তুমি হাসপাতালের বাইরে কেনো এসেছো?
(বাইরে এসে)
আমি-আমার কেমন কেমন লাগছিলো তাই চলে এলাম।(মিথ্যা বললাম)
তন্ময়-তনু কি হয়েছে তোমার??
আমি-কি হবে??
তন্ময়-তুমিও কি আমার মত কষ্ট পাচ্ছো?
আমি-কষ্ট কেনো পাবো??
তন্ময়-এই যে সবকিছু ঠিক থাকলে আমাদের বাচ্চাটাও কিছুদিন পর পৃথিবীর আলো দেখতো।
আমি-এতো বাচ্চা বাচ্চা করছেন কেনো?(মাথা নিচু করে)
তন্ময়-কষ্ট হয় তাই.
আমি-(চুপ করে আছি)
তন্ময়-আচ্ছা তুমি পিচ্চিকে নিলেনা কেনো??
আমি-এমনে,,,
তন্ময়-এমনে এমনে ওকে নাওনি?
আমি-হুম,
তন্ময়-তনু সত্যি টা বলো
আমি-আমার শরীল খারাপ করছিলো তাই নিতে চাইনি যদি ভালো মন্দ কিছু হয়ে যায় তাই।
তন্ময়-ওহ তাই বলো।
আমি-হুম,,
তন্ময়-চলো এখন ভেতরে চলো।
আমি-তন্ময় আমার শরীলটা খারাপ করছে আমি এখন যেতে পারবোনা।
তন্ময়-ওকে চলো।
আমি-কোথায়??
তন্ময়-আরে মা আমার ক্যান্টিনে।
আমি-ওহ।
আমি আর তন্ময় ক্যান্টিনে বসে আছি।তন্ময় দু টো কফি আর সিঙ্গারা অর্ডার করেছিলো।আমি শুধু কফিটা খেয়ে বসে আছি।আর তন্ময় বসে বসে সিঙ্গারাও খাচ্ছে আর কফিও গিলছে।ওনার এমন শান্ত মুখের দিকে আমি তাকিয়ে আছি।
তন্ময়-কি??(সিঙ্গারা খেতে খেতে)
আমি-কিছু না।
তন্ময়-আমার দিকে নজর দিচ্ছো।
আমি-কি???
তন্ময়-হ্যাঁ,,,,সামনে একটা হ্যান্ডসাম ছেলে বসে থাকলে তো নজর দিবেই।
আমি-ফালতু কথা কম বলবেন।
তন্ময়-সত্যিই তো বললাম।
আমি-আমি আপনার স্ত্রী তন্ময় আমি নজর না দিলে কে দিবে শুনি।
তন্ময়-ওই,,,অতীত এ গেলে কিন্তু তুমি আমার বউ হতে না।
আমি-তো,,,(বলতে গিয়ে থেমে গেলাম,,আসলে তো অতীত এ গেলে উনি আমার দুলাভাই হতো আর আমি ওনার শালী)
তন্ময়-তনু,,,
আমি-হুম…
তন্ময়-আমি জাস্ট ফান করেছি তোমার সাথে প্লিজ সিরিয়াসলি নিওনা।
আমি-হুম।
তন্ময়-নাও সিঙ্গারা খাও।
আমি-না আমি খাবো না।
তন্ময়-শুনেছিলাম সিঙ্গারা তোমার প্রিয় তাই,,,
আমি-প্রিয় হলেও খেতে ইচ্ছে করছে না।
তন্ময়-ওকে তো হাসপাতালে চলো।
আমি-চলুন।
তন্ময় আর আমি হাসপাতালে ভাবীর কেবিনে ডুকে দেখি সবাই ওখানে বসে আছে।মেয়েটা ভাবীর কোলে শুয়ে আছে।সবাই এখন বাবুর নাম রাখার জন্য নাম চয়েস করছে।
অভি-তন্ময়,,,,আমার মেয়ের জন্য একটা নাম চয়েস করে দে না।
তন্ময়-আমি কি চয়েস করবো।
অভি-নিজের সময় তো আগেই চয়েস করেছিলি।
তন্ময়-আমি তো করেছি তুমি কেনো করলেনা।
অভি-আমি কি সময় পেয়েছি নাকি।
তন্ময়-নাম চয়েস করতে সময়ও লাগে।
অভি-চয়েস করে দিবি,,
তন্ময়-আমি পারবোনা।(মুচকি হেসে)
জেনি-ভাইয়া আমি চয়েস করেছিলাম।কিন্তু অভি ভাইয়া আমার নাম গুলোকে পাত্তাও দেয়নি।
তন্ময়-তুই কি নাম চয়েস করেছিস??
জেনি-কলি,মেহেক,রিহা,তমা…….
অভি-হয়েছে থাম থাম।
তন্ময়-কেনো কি হয়েছে??
অভি-এগুলো কোনো নাম।
তন্ময়-ভালোতো এগুলা থেকে একটা চয়েস কর।
অভি-না তুই পছন্দ করলে কর।
তন্ময়-ওকে ভেবে দেখি।
নিহা-ভাইয়া,,,(দরজার সামনে দাঁড়িয়ে)
অভি-আরে নিহা যে,,,আব্বু-আম্মু কই???
নিহা-ওরা আসছে কিন্তু আমি আমার প্রিন্সেসকে আগে আগে দেখার জন্য আগেই চলে এসেছি।
নিসা-নে কোলে নে।(নিহাকে ধরিয়ে)
নিহা-পুরো দুলাভাইর মতো।(বাবুকে কোলে নিয়ে)
অভি-দেখতে হবেনা মেয়েটা কার।
এসব নিয়ে অনেকক্ষণ হাসাহাসি হলো।ভাবীর মা আর বাবাও এলো।আমরা ওনাদের সাথে কিছু ক্ষণ বললাম।হঠাৎ নিহা বলে উঠে..
নিহা-আচ্ছা,,,বাবুর নাম কি রাখবে?
অভি-ওহ,,,তন্ময় চয়েস করেছিস???
নিহা-তন্ময়কে চয়েস করতে বলেছো ভালো করেছ।ও তো নাম রাখার মধ্যে ফাস্ট কিন্তু ভাগ্য খারাপ নামগুলো কাজে লাগলোনা।
নিসা-নিহা,,,(চোখ রাঙিয়ে)
তন্ময়-নিহা ঠিক বলেছে আমি চয়েস করল ওই নামগুলো কাজেই লাগবেনা।তারচেয়ে তুই এক কাজ কর তুই তনু কে চয়েস করতে বল।(নিহার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে)
নিহা-তনু কেনো চয়েস করবে।
অভি-যে কেওই করুক সমস্যা নেই।
নিহা-তাই বলে তনু,,,
অভি-তনু একটা নাম বলো।
আমি-আমি কি নাম চয়েস করবো??
তন্ময়-তুমি পারবে নাম চয়েস করো।
আমি বাবুটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখে বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম কি নাম রাখা যায়।হঠাৎ আমার মাথায় একটা নাম এলো।
আমি-আনিশা,,,
তন্ময়-আনিশা???নট বেট,,তোর কেমন লেগেছে ভাইয়া??
অভি-ভালো বাট নিসা তোমার কেমন লেগেছে??
নিসা-আমাদের নামের সাথে মিলেছে দেখছি।
অভি-হুম।
তন্ময়-তোমার কেমন লেগেছে নিহা??
নিহা-নিজের বাচ্চার তো রেখেও রাখতে পারলেনা তাই শুধু অন্যের বাচ্চারই রাখতে পারলে।
তন্ময়-পেরেছি বলে রেখেছি।
আমরা সবাই বাড়ীতে চলে এলাম।এবার ভাবীর মা-বাবা আর নিহাও এসেছে।আমি এখন পর্যন্ত আনিশাকে কোলে নিইনি।এই কয়দিনে তন্ময় বেশ কয়েকবার আমার কোলে আনিশাকে দিতে চেয়ে ছিলো আমি ওকে না নিয়ে শুধু ইগনোর করতাম।কিন্তু আজ আনিশার আকিকা থাকায় সকালে আমরা আমি,জেনি,নিহা ভাবীর কাছেই ছিলাম।
নিসা-তনু আমি তো তোমায় একবারও আনিশাকে কোলে নিতে দেখলাম না।
আমি-ভাবী আসলে…..
নিসা-এত কাজ করো যে কোলে নেওয়ার সময়ও পাওনা।নাও এখন কোলে নাও(আমার সামনে আনিশাকে ধরে)
আমি-(আমার তো সদিন থেকে বাচ্চাদের নিতেই ভয় লাগে।এখন ভাবীকে কিভাবে বারণ করি)না ভাবী আমি পরে আনিশাকে কোলে নিব।
নিসা-কোলে নেওয়ার সময়ই পাওনা।
আমি-আমি পরে আনিশাকে কোলে নিবো।
নিহা-আপু তুই পরে কোলে নিতে দিস না।
নিসা-নিহা কি বলছিস এসব?(রেগে)
নিহা-রাগ দেখিয়ে লাভ নেই,,,যে নিজের বাচ্চাকে সামলাতে পারেনি সে তোর বাচ্চাকে কি সামলাবে তাই পরে হলেও দিসনা।
জেনি-নিহা তুমি কিন্তু ভাবীকে অপমান করছো।
নিহা-জেনি আমি কাওকে অপমান করছিনা শুধু সত্যি টা বলছি।
নিসা-কি এমন সত্যি বলেছিস তুই যে আমার মেয়ের ভালো হয়ে গেলল।তুই এখানে আসার পর থেকেই আমি ভয় ভয় আছি।যে কি না কি করে ফেলিস কি না কি বলে ফেলিস।শুন তুই আজ আমার মেয়ের আকিকায় থাকবিনা চলে যাবি।
আমি-ভাবী এসব কি বলছো???
নিসা-তুমি চুপ থাকো তনু।ও অনেক বেশি বেড়ে গেছে।তোমায় পছন্দ করে না বলে কি যা নয় তাই বলবে।(রেগে)
আমি-থাক বাদ দাওনা।
জেনি-হ্যাঁ ভাবী,,, এখন ছাড়ো এসব।
নিসা-ওকে বারণ করে দাও এসব করতে।
জেনি-ভাবী তুমি রুমে যাও।
আমি-হুম।
আমি রুমে এসে খাটে বসে পরলাম।আজ আমার চোখের পানি যেনো বাঁধ মানছে না।আমি কান্না করতেই আছি।আজ নিহার কথা গুলো সত্যি হলেও আমার শুনতে খুব খারাপ লেগেছিলো।
আমি কান্না করার সময় বুঝতে পারি কেও রুমে এসেছে তাই তারাতারি চোখের পানি মুচে ফেলি।
তন্ময়-তনু,,
আমি-হুম।
তন্ময়-আজ আকিকায় কি পরবে??
আমি-শাড়ী পরবো হয়তো এখনো ঠিক করিনি।
তন্ময়-শাড়ী পরোনা এটা পরো।(আমার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে)
আমি-কি আছে এতে??
তন্ময়-খুলে দেখো।
আমি বাক্সটা খুলে দেখি লেমন কালারের একটা লং ড্রেস।ড্রেস টা খুব ঘেরওয়ালা কিন্তু বেশি ডিজাইন নেই শুধু শুধু ছোট ছোট স্টোন বসানো।
তন্ময়-কেমন লেগেছে??
আমি-সুন্দর।
তন্ময়-এটা পরে মেচিং মেকআপ করবে,ডিজাইন করে খোপা করবে,গোল্ডেন কালারের লং কানের দুল পরবে,আর হাতে ব্রেসলেট পরবে।ব্যাস!!!
আমি-আপনিই রেডি করে দিয়েন।
এটা শুনে তন্ময় আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হাসলো।হঠাৎ উনি আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আমার গালে হাত দেয়।
আমি-কি হয়েছে??
তন্ময়-কেনো কেঁদেছো তুমি?
আমি-ক কই??(ঘাবড়ে গিয়ে)
তন্ময়-কি কি বলেছে আমাকে বলো তনু।
আমি-আরে আমি কাঁদিনি।
তন্ময়-তোমার চোখ লাল হয়ে আছে আর তুমি বলছো তুমি কাঁদোনি।
আমি-আরে এমনি চোখে কি একটা পরেছিলো।
তন্ময়-বাচ্চা নিয়ে আবার কেও কথা বলেছে।
আমি এবার নিজেকে সামলাতে পারাম না তন্ময় কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম।তন্ময় স্বাভাবিক হয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
আমি-তন্ময়,,,আমি মা হওয়ার যোগ্য না তাইনা??(কেঁদে)
তন্ময়-চুপ,,(ধমক দিয়ে)মা হওয়ার যোগ্য না মানে টা কি???তুমি মা হবে আর সঠিক সময়েই হবে।
আমি-আমি আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছি তন্ময়।
তন্ময়-আর একবার এ কথা বললে আমি কিন্তু ভুলে যাবো তুমি আমার স্ত্রী।
আমি-আমি তো সত্যিটাই বললাম…..
তন্ময়-কোনো সত্যি বলোনি তুমি,,,,এখন বলো তোমাকে কে কি বলেছে??
আমি এবার তন্ময়কে হাসপাতাল আর এখন এর ঘটনাটা বললাম।তন্ময় এসব শুনে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।
তন্ময়-এই কারণে তুমি আনিশাকে নাওনি।(রেগে)
আমি-আমার যেটা মনে হয়েছিলো…..
তন্ময়-মাথা মনে হয়েছিলো তোমার।তুমি আনিশা কে কোলে নিলেই আনিশার ক্ষতি হবে তাইনা।ওয়েট!!!(বলে চলে গেলো)
তন্ময় চলে গেলে আমি আবার খাটে বসে পরি।কিছুক্ষণ পর তন্ময় আবার রুমে আসে কিন্তু উনি একা আসেনা আনিশাকেও নিয়ে আসে।উনি এসে এই হুট করে আমার কোলে আনিশাকে দিাকে দিয়ে দেয়।এমন হওয়ায় আমি চমকে উঠি।
তন্ময়-তোমার কোলে দিয়েছি তো,,,আনিশা কি কাঁদছে আনিশার কি কোনো ক্ষতি হয়েছে??
আমি-তন্ময় ওকে নিন।
তন্ময়-আনিশা কে দিয়ে গেছি ওর খেয়াল রাখবে আর নিজেকে নরমাল করবে।(বলে চলে গেলো)
তন্ময় চলে গেলে আমি আনিশার দিকে তাকাই।আনিশা আমার হাতটা ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আনিশা কে এখন এতো কাছ থেকে দেখে ওকে নিয়ে এখন আর আমার কোন ভয় হচ্ছেনা।
***দুপুরে***
আমি রেডি হচ্ছিলাম কারণ লোকজন আসা শুরু করেছে।আমি ঠিক সেই ভাবে রেডি হচ্ছি যেভাবে তন্ময় আমাকে রেডি হতে বলেছিলো।আমি রেডি হয়ে যেই রুম থেকে বের হলাম ঠিক তখনই আমি ইমনের সামনে পরে গেলাম।ইমন আমাকে দেখে পুরো হা করে তাকিয়ে আছে।
আমি-কি???
ইমন-(নিশ্চুপ)
আমি-ইমন??[জোরে)
ইমন-(ধ্যান ভাঙ্গে)কোথায় যাচ্ছো??
আমি-কোথায় যাবো।
ইমন-এভাবে রেডি হলে যে।
আমি-পাগল হয়ে গেছো বাড়ীতে আকিকা অনুষ্ঠান আর আমি রেডি হবো না।
ইমন-ওহ সরি সরি,,,কি যে বলছি।
আমি-তুমি ঠিক আছো??
ইমন-হুম,,,তনু।
আমি-বলো।
ইমন-আমরা কি এখন বন্ধু হয়ে থাকতে পারিনা।
আমি-তুমি চাইলে অবশ্যই পারবো।
ইমন-মানে???
আমি-মানে তুনি যদি আমাকে বন্ধুর মতো ভাবো তাহলে আমরা বন্ধু হয়ে থাকতে পারি।
ইমন-আমি তোমাকে বন্ধুই ভাবি।
আমি-আমি তাহলে নিচে যাই।(বলে চলে এলাম)
ইমন-(আমি আসলে নিজেই তোমাকে আমার থেকে দূরে করে দিয়েছি তনু।আমি যদি তখন তোমার মর্মটা বুঝতাম তাহলে আজ তুমি আমার হতে।কিন্তু আমার ভুলের জন্য তুমি আমার পাশে নেই।যাই হোক,,,আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু)
আমি নিচে এসে কিছু কাজ করছিলাম।কাজ করছিলাম বলতে ফল খাটছিলাম।হঠাৎ জেনি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
আমি-কি জেনি??
জেনি-তোমাকে ভাইয়া ডাকছে।
আমি-অভি ভাইয়া আবার কেন ডাকলো,,,আচ্ছা আমি গিয়ে দেখে আসি।(বলে যেতে লাগলাম)
জেনি-ও ম্যাডাম,,
আমি-কি??
জেনি-অভি ভাইয়া ডাকছে না।
আমি-তাহলে???
জেনি-তন্ময় ভাইয়া ডাকছে।
আমি-কিন্তু আমি তো কাজ করছি।
জেনি-সেটা আমি করে নিবো তুমি যাও।
আমি-না জেনি আমিই করছি,,তুমি তোমার ভাইয়াকে বলো ভাবি কাজ করছে।
জেনি-ভাইয়া কিন্তু রাগ করবে।
আমি-কিছু হবেনা।
জেনি-অভি ভাইয়া ডাকলে তো দৌঁড়ে চলে যেতে।
আমি-এটা তোমার ভাইয়াকে বলোনা।আর তাছাড়া অভি ভাইয়া তো গুরুজন।
আকিকার অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় বিকাল হয়ে গেছে।তন্ময় আমার পাশে পাশেই ছিল কিন্তু তেমন কথা বলেনি।অনুষ্ঠানে অনেকে আমার কথাও জিজ্ঞেস করেছে।যে কিভাবে মিসক্যারেজ হলো,কয় মাসের সময় মিসক্যারেজ হল ইত্যাদি।
কিন্তু এসবে তেমন কেও পাত্তা দিলোনা।আমরা রাতে সবাই বসে কিছুক্ষণ গল্প করে যে যার রুমে ঘুমাতে চলে গেলাম।
আমি-আজকে অনেক ভালো লেগেছে তাইনা?
তন্ময়-হুম,,,(ফোন টিপতে টিপতে)
আমি-আসলেই আজ আমার খুব খুশি খুশি লাগছে।(তন্ময়ের পাশে বসে)
তন্ময়-তনু,,
আমি-হুম।
তন্ময়-তুমি কত সহজ সরল।
আমি-এমন কেনো মনো হলো??
তন্ময়-চালাক ও আছো।
আমি-কি বলছেন এসব???
তন্ময়-আমি ডাকলে আসোনা অথচ ভাইয়া ডাকলে দৌড়ে চলে যাও।
আমি-আসলে আমি তো তখন কাজ করছিলা,,,,,
তন্ময়-কাজ করছিলে,,,,(মুচকি হেসে)
আমি-সরি,,,,
তন্ময়-সরি বললেই সবকিছুর ক্ষমা হয়না।(আমার দিকে এগিয়ে)
আমি-এগোচ্ছেন কেনো???(পিছাতে পিছাতে)
তন্ময়-তুমি পিছচ্ছো কেনো??(আমাকে খপ করে ধরে)
আমি-আপনি কি এখন আমায় শাস্তি দিবেন???
তন্ময়-উু হু আদর করবো।
আমি-কি??(অবাক হয়ে)
তন্ময়-হুম(বলে আমাক ধরে শুইয়ে দিলো)
“”বেশ কিছুদিন পর””
আজকে সকাল থেকে আমি অপেক্ষা করছি শুধু সবার থেকে শুভ বিবাহ বার্ষিকী টা শুনার জন্য।কালকে রাত ১২ টার পরে তন্ময় আমাকে উইস করেছিলো।কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে সবাই কথা বলছে,হাসছে শুধু উইস করা ছাড়া।
সাবিয়া-কি হয়েছে তনু???
আমি-ক কই???(রান্না করতে করতে)
সাবিয়া-আজ তুমি রান্না করো না।
আমি-কেনো???
সাবিয়া-আমি রান্না করবো তাই,,,
আমি-তুমি কেনো রান্না করবে মা???
সাবিয়া-আজ করি কিছু হবে না।
আমি-আচ্ছা।(বলে চলে এাম)
আনি রুমে এসে দেখি তন্ময় কি একটা করছে।আর যেটা করছে সেটা বার বার লুকানোর চেষ্টা করছে।আমি আস্তে আস্তে গিয়ে হুট করে ওনার পাশে বসে যাই আর এতে উনি বেশ ঘাবড়ে যায়।
তন্ময়-উফ,,,তুমি একবার ডাকবে না।
আমি-কি করছেন??
তন্ময়-কিছু না।
আমি-তন্ময় আমি মাত্র দেখলাম আপনি কিছু একটা লুকিয়েছেন।
তন্ময়-ওকে,,,চোখ বন্ধ করো।
আমি-কেনো??
তন্ময়-আরে বন্ধ করোনা।
আমি-আচ্ছা।(বলে চোখ বন্ধ করলাম)
কিছুক্ষণ পর””””
তন্ময়-এবার খুলো।
আমি চোখ খুলার সাথে সাথে অবাক হয়ে যাই।কারণ তন্ময় আমার সামনে বিভিন্ন রংয়ের চুরি,
শাড়ী আর ৫ জোড়া নুপুর রেখেছে।
আমি-এগুলা কি???
তন্ময়-তোমার বিবাহ বার্ষিকীর উপহার।
আমি-এতকিছু???
তন্ময়-এগুলা কি তোমার চিনা চিনা লাগছেনা।
আমি-না,,,
তন্ময়-তোমাকে নিয়ে প্রথম যেদিন ঘুরতে গিয়ে ছিলাম তখন তুমি এই জিনিস গুলো পছন্দ করে ছিলে বাট ভয়ে আমাকে বলোনি।
আমি-আপনি কি করে জানলেন??
তন্ময়-কারণ আমি তো তোমার সাথে ছিলাম।
আমি-আপনি আমার মনের কথা বুঝেছিলেন???
তন্ময়-বুঝেছি বলেই তো কিনে রেখেছিলাম যাতে বিশেষ কোনো দিনে দিতে পারি।
আমি-love You Tonmoy….(জরিয়ে ধরে)
তন্ময়-Love you too…
আমি-আজকে আমায় ঘুরাতে নিবেন??
তন্ময়-কখন যেতে চাও???
আমি-আপনি যখন নিয়ে যাবেন।
তন্ময়-তাহলে কিছুক্ষণ পরই রওনা দিই।
আমি-ওকে,,,,
বিকালের একটু আগে আমি আর তন্ময় ঘুরতে বের হই।তন্ময় আমাকে আজ অনেক জায়গায় ঘুরিয়েছে।আমরা ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যার সময় বাড়ীতে ফিরলাম।কিন্তু বাড়ীতে ডুকে আমরা অবাক হয়ে গেলাম।কারণ বাড়ীটা পুরো অন্ধকার হয়ে আছে আর এতে আমি ভয় পেয়ে যাই।
তন্ময়-মা,,,কোথায় তোমরা???জেনি,ভাইয়া,,,
আমি-ওরা কি বাড়ীতে নেই???
তন্ময়-বাড়ীতে না থাকলে দরজা খোলা থাকতো নাকি।
আমরা কিছুক্ষণ ওদেরকে ডাকাডাকি করার পর হঠাৎ ঘরের সব লাইট জ্বলে উঠে সাথে রংবেরং এর লাইটও জ্বলে।সামনে তাকিয়ে দেখি সবাই একরা কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এসব দেখে আমি আর তন্ময় তো জাস্ট অবাক।
সবাই-Happy Anniversary tonmoy & tonu.
আমি-😱😱😱
তন্ময়-😳😳😳
অভি-কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
তন্ময়-তোমরা এসবও করো।
অভি-তো কি মনে হয়।
তন্ময়-Thank you…(জরিয়ে ধরে)
জেনি-ভাবী কেমন লাগলো সারপ্রাইজ??
আমি -তোমরা এমন করবে আমি ভাবিও নি।
নিসা-তো কি ভেবেছিলে যে আমরা ভুলে গেছি।
আমি-ধন্যবাদ।
সবাই আমাদের উইস করে কেকের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।আর আমরাও হাসিমুখে যেই কেক কাটতে যাবো ইমন ওমনি বলে উঠে।
ইমন-ওয়েট ওয়েট,,,
তন্ময়-কি??
ইমন-এই কেকটা কাটা মানে তোমাদের নতুন জীবনের শুরু।সো কেকটা কাটার আগে কিছু একটা প্রমিস করো।যেমনঃ-আমরা দুজন সারা জীবন একসাথে থাকবো মানে তনুর তন্ময় আর #তন্ময়ের_তনু হয়ে থাকবো আর কারোর না।
এবার আমি আর তন্ময় একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।আর নতুন জীবনের জন্য প্রার্থনা করে কেকটা কাটলাম।
–সমাপ্ত–